আপনি কি যে কোনো পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার সকল কলাকৌশল জানেন? বাংলা এবং ইংরেজী ছাড়া আপনি আর কয়টি ভাষা জানেন? আচ্ছা, আপনার ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং তার সকল তথ্য কি সুরক্ষিত? আপনি কি জানেন অন্যের বাড়িতে অতিথি হয়ে গেলে কী কী শিষ্টাচার মেনে চলতে হয়?
জানি, অধিকাংশ মানুষের কাছে এই প্রশ্নগুলোর কোনো সঠিক জবাব নেই! চাকরি বা ব্যবসার প্রয়োজনে অর্জন করা নানান দক্ষতার সাথে সাথে জীবনের প্রয়োজনে এমন কিছু দক্ষতা আছে যা আমাদের রপ্ত করতে হয়। আজকের নিবন্ধ এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, যা নিয়ে আমরা কখনোই ভাবি না। অথচ এই বিষয়গুলোর জন্যই নিত্যদিন আমাদের নানান ভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। চলুন বিষয়গুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিই।
১. আত্মরক্ষার কলাকৌশল
টিকে থাকতে হলে আপনাকে আত্মরক্ষার নানান কলা-কৌশল জানতে হবে। আধুনিক বিশ্বে বাঁচতে হলে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য নিজেকে রক্ষার কিছু বিশেষ কলাকৌশল রপ্ত করা আবশ্যক।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আত্মরক্ষার জন্য সে দেশের নাগরিকরা নিজের সাথে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অধিকার রাখেন। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বন্দুকধারীর গুলিতে বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় আত্মরক্ষার এই অধিকার অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবুও আত্মরক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে আমি এই উদাহরণটি ব্যবহার করলাম।
আত্মরক্ষার জন্য আপনাকে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার প্রয়োজন নেই। তবে কিছু শারীরিক কৌশল রপ্ত করলেই আপনি অনেকটাই নিরাপদ থাকবেন। এমনকি আত্মরক্ষার এই কলাকৌশল রপ্ত করার ব্যাপারে আপনার নিকট আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের সচেতন করে তুলতে পারেন। এর মাধ্যমে দুই ধরনের উপকার হবে। প্রথমত আত্মরক্ষার কলাকৌশল রপ্ত করার মাধ্যমে আপনি শারীরিকভাবে আরো বেশি সুস্থ হয়ে উঠবেন, আর দ্বিতীয়ত আত্মরক্ষা করা হবে।
তাছাড়া বাংলাদেশ ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়া নারীর শালীনতাহানি এবং উত্ত্যক্তের হাত থেকে রক্ষা পেতে নারীদের আত্মরক্ষার বিশেষ কলা কৌশল রপ্ত করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। সুতরাং বাঁচতে হলে আত্মরক্ষার কলাকৌশল আপনাকে রপ্ত করতেই হবে।
২. ইংরেজি ছাড়াও আরো দু’একটি ভাষা জানা
আপনি কি জানেন সারা পৃথিবীর প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ ইংরেজি বলতে জানে না! কী, অবাক হচ্ছেন? অথচ আপনি এতদিন জানে এসেছেন ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং সারা পৃথিবী লোক এই ভাষা বলতে এবং বুঝতে পারে।
বিশ্বকে এখন বলা হয় গ্লোবাল ভিলেজ। আর এই গ্লোবাল ভিলেজে সাফল্যের জন্য ব্যবসা বা কাজের প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষের সাথে আপনার যোগাযোগের প্রয়োজন হবে। একবার চিন্তা করুন তো, আপনি এমন অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে চান বা ব্যবসা করতে চান যাদের প্রথম বা প্রধান ভাষা ইংরেজি নয়। সেক্ষেত্রে আপনি যদি নিজের মাতৃভাষা বাংলা ছাড়া শুধুমাত্র ইংরেজির উপর নির্ভরশীল হন, তাহলে যথাযথভাবে যোগাযোগ করা আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। স্বভাবতই যা আপনার ব্যবসা বা প্রকল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
সুতরাং ইংরেজি ছাড়াও পৃথিবীর আরও দু’একটি বড় ভাষা আপনাকে জানতে হবে। বিশেষ করে আরবি এবং চীনা ভাষা আপনার অবশ্যই জানা উচিত। শুধুমাত্র বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা নয়, আপনার নিজের দিগন্ত বিস্তৃত করুন। পৃথিবীর অন্যান্য মানুষ সম্বন্ধে জানুন। নিজের যোগাযোগের ক্ষেত্র আরো বৃদ্ধি করুন। নিজেকে একজন বিশ্বনাগরিক করে গড়ে তুলুন।
৩. আঁকাআঁকি করার দক্ষতা
আঁকাআঁকি করার দক্ষতা মানুষের সঠিক মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে। ডেনিয়েল পিঙ্ক নামের একজন গবেষক বলেন, প্রতিটি নতুন মস্তিষ্কের মধ্যে ডান মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ মানুষকে অনেক বেশি দক্ষ করে তোলে। যেমন আঁকাআঁকি করার সৃজনশীল দক্ষতা।
আমরা জানি যে, শিশুকাল থেকে সব মানুষের মধ্যে আঁকাআঁকির প্রবৃত্তি কাজ করে। যারা এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারেন তাদের মধ্যে বিশেষ নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হয়।
সুতরাং নিজের নেতৃত্বকে আরো বেশি শক্ত পোক্ত করতে আপনার মধ্যে কোনো কিছু অংকন করার দক্ষতা থাকতে হবে। আঁকাআঁকির এই দক্ষতা আপনাকে আরো বেশি নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন, সহানুভূতিশীল এবং প্রভাববিস্তারী করে গড়ে তুলবে।
৪. অতিথি হওয়ার দক্ষতা
আপনি কি জানেন অন্যের বাড়িতে আতিথেয়তা গ্রহণ করার সবচেয়ে সম্মানজনক কলাকৌশল কী? অথবা অন্য কেউ আপনার বাড়িতে অতিথি হয়ে এলে তার সাথে ঠিক কী কী আচরণ করা উচিত?
আপনাকে অন্যের বাড়িতে অতিথি হওয়ার সব ধরনের সঠিক শিষ্টাচার জানতে হবে। এই দক্ষতা অন্যের বাড়িতে অতিথি হয়ে সম্মানিত হতে যেমন কাজে লাগে তেমনি অতিথি হয়ে আসা অন্য মানুষকেউ সম্মানিত করতে কাজে লাগে।
আপনি যদি নতুন কোনো আত্মীয় বাড়ি গিয়ে সঠিক শিষ্টাচার না মেনে চলেন তবে সেখানে সন্দেহজনক এবং অসম্মানজনক পরিবেশের সৃষ্টি হবে, যা উভয় পক্ষের জন্যই কাম্য নয়। সুতরাং দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক দক্ষতা হিসেবে অন্যের বাড়িতে অতিথি হওয়ার সকল শিষ্টাচার আপনাকে জানতে হবে।
৫. ব্যক্তিগত কম্পিউটারের নিরাপত্তা
কম্পিউটার এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী। সাথে সাথে কম্পিউটারে সংরক্ষিত সকল তথ্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার ও কর্মক্ষেত্র সব জায়গায় নিজের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সুতরাং নিজের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের নিরাপত্তা সম্পর্কে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে এবং আপনাকে জানতে হবে ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং তার মধ্যে থাকা তথ্য কিভাবে সংরক্ষিত রাখতে হয়।
অনেক সময় ব্যক্তিগত কম্পিউটার পারিবারিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দিতে হয়। এক্ষেত্রে সবার আগে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে কম্পিউটারে সংরক্ষিত সকল ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ পাসওয়ার্ড দিয়ে সংরক্ষণ করা আছে। কম্পিউটার শুধু কিনলে এবং ব্যবহার করলেই হবে না। এ ব্যাপারে সচেতন থাকা এবং এর যত্ন নেওয়ার সকল কলাকৌশলও আপনাকে রপ্ত করতে হবে।