ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর প্রাথমিকভাবে কিছু বিষয় সম্পাদনা করার প্রয়োজন হয়। এসব সম্পাদনা না করলে চ্যানেলের কোনো ক্ষতি হয় না, কিন্তু চ্যানেলটি দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় হয়েও ওঠে না। দীর্ঘদিন ধরে ইউটিউবিং করলেও অনেকে এই সাধারণ সেটিংসগুলো সম্পর্কে জানেন না।
আজকের নিবন্ধে ইউটিউব চ্যানেলের কিছু প্রাথমিক সেটিংস সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো। এ বিষয়গুলো সম্পাদনা করলে আপনার চ্যানেলটি কেবল দৃষ্টিনন্দনই হবে না, একই সাথে এসব সেটিংস চ্যানেলের এসইও বান্ধবও হবে।
১. বিবরণ
ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর ভিডিও আপলোড করলেই হবে না। চ্যানেলের পরিপূর্ণ বিবরণও যুক্ত করতে হবে। কেননা দর্শক আপনার চ্যানেল সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইবে। চ্যানেলটি কেন তৈরি করা হয়েছে? কোন ধরনের ভিডিও আপলোড করা হবে এবং কাদের উদ্দেশ্যে ভিডিও তৈরি করা হবে? এসব তথ্য চ্যানেলের বিবরণীতে তুলে ধরুন। চ্যানেলের বিবরণ সংযুক্ত করার জন্য অ্যাবাউট (about) পেজে ক্লিক করে ডেসক্রিপশন (description) তথা বিবরণের অংশটি সম্পাদনা করুন।
এই সম্পাদনা বক্সে চ্যানেলের বিস্তারিত তথ্য বর্ণনা করুন। তবে চ্যানেলের বিবরণ লেখার সময় সৃজনশীলতার চেয়ে বোধগম্যতার দিকে বেশি মনোযোগ দিন। কেননা এই চ্যানেলের বিবরণটি সর্বসাধারণের জন্য লিখতে হবে। সুতরাং সহজ, সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় চ্যানেলের বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরুন।
২.ই–মেইল এড্রেস
আপনি চাইলে চ্যানেলের বিবরণ লেখার পর আপনার ব্যক্তিগত ইমেইল এড্রেস যুক্ত করতে পারেন। আপনার চ্যানেল সম্বন্ধে কারো অধিকতর জিজ্ঞাসা থাকলে, অথবা কেউ ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে বা কোনো প্রস্তাব পাঠাতে চাইলে এই ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারবে। সুতরাং আপনার আগ্রহ থাকলে চ্যানেলের বিবরণ লেখার পর আপনার ইমেইল এড্রেস যুক্ত করতে পারেন।
৩. আপনার অবস্থান
বিশ্বের কোথায় আপনার অবস্থান, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়ার জন্য ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এই অবস্থান (Location) অংশটি সংযুক্ত করেছে। অর্থাৎ আপনি কোন দেশ থেকে চ্যানেল পরিচালনা করছেন, তা এখানে উল্লেখ করতে হবে।
ইউটিউবের অ্যাবাউট পেজের নিচের দিকে ইমেইল এড্রেসের ঠিক নিচে লোকেশন অংশটি খুঁজে পাবেন। নিচের দিকে নির্দেশিত তীর চিহ্নে ক্লিক করে নিজের দেশ সিলেক্ট করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ইউটিউব মনিটাইজেশন চালু করার অনুমতি দেয়নি। তাই বাংলাদেশি ইউটিউবাররা লোকেশন সিলেক্ট করার সময় বাংলাদেশ বাদ রেখে, পৃথিবীর অন্য যেসব দেশে মনিটাইজেশন চালু আছ্ সেসব দেশের কোনো একটি নাম সিলেক্ট করতে পারেন।
সুতরাং আপনিও আমাদের দেশে মনিটাইজেশন চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা এমন কোন দেশকে সিলেক্ট করে রাখতে পারেন। অথবা এই অপশনটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারেন। কেননা এড়িয়ে গেলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু বাংলাদেশ সিলেক্ট করলে মনিটাইজেশন চালু নাও হতে পারে। তবে মনিটাইজেশন চালু হওয়ার পর আপনি চাইলে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে দিতে পারেন।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লিংক
ইউটিউব চ্যানেলের সাথে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিংক সংযুক্ত করতে পারেন। অন্যান্যদের ইউটিউব চ্যানেলে দেখবেন চ্যানেল আর্টের ঠিক ডান দিকে নিচে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিংক সংযুক্ত করা আছে। সুতরাং আপনিও নিজের অথবা নিজের ব্র্যান্ডের অধিকতর প্রচার এবং বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের লিঙ্কগুলো সংযুক্ত করতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিংক সংযুক্ত করতে লোকেশনের ঠিক নিচে লিংকস (links) অপশনটি পাবেন। লিংক লেখার লাইন বরাবর ডান দিকে সম্পাদনা আইকন পাবেন। এখানে ক্লিক করলে সর্বোচ্চ পাঁচটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিংক যুক্ত করার সুযোগ পাবেন।
৫.সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রদর্শন
ইউটিউবের একটি চমৎকার ফিচার আছে, যা ব্যবহার করে আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা অন্যকে প্রদর্শন করা অথবা গোপন রাখা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। অনেকের কাছে মনে হতে পারে, সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রদর্শন করা বা না করার সাথে চ্যানেলের সাফল্যের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু আসলে তা নয়।
আপনার চ্যানেলে যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার না থাকে, এবং সে সংখ্যা যদি আপনি সর্বসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত রাখেন, তবে অনেক দর্শক আপনার চ্যানেলকে অবমূল্যায়ন করতে পারে। কোনো একটি ভিডিও ভালো লাগা সত্ত্বেও, সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বেশি না হওয়ায় আপনার চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করার আগ্রহ নাও পেতে পারেন। কিন্তু অল্প সাবস্ক্রাইবার থাকা অবস্থায় আপনি যদি তা প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকেন, তবে এই নেতিবাচক প্রবণতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রদর্শন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে, ক্রিয়েট স্টুডিও (Create Studio) তে ক্লিক করে চ্যানেলের ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করুন। ড্যাশবোর্ডে ভিডিও ম্যানেজার (Video Manager), লাইভ স্ট্রিমিং (Live Streaming), এবং কমিউনিটির (Community) ঠিক নিচে চ্যানেল (Channel) অপশনটি পাবেন। চ্যানেলে ক্লিক করার পর সংক্ষিপ্ত আরেকটি লিস্ট দেখতে পাবেন। এখান থেকে অ্যাডভান্সড (Advanced) অপশনে ক্লিক করলে যে পেজটি ওপেন হবে, তার ঠিক নিচে সাবসক্রাইবার কাউন্ট (Subscriber counts) অপশনে গিয়ে নির্ধারণ করুন, আপনি সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রদর্শন করতে চান কি চান না।
৬. চ্যানেলের কিওয়ার্ড
চ্যানেলের কিওয়ার্ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আপনার নির্ধারিত কিওয়ার্ডগুলোর ভিত্তিতে ইউটিউবের অ্যালগরিদম আপনার চ্যানেলকে সাধারণ দর্শকের পেজে প্রদর্শন করবে। সুতরাং, আপনার চ্যানেলে প্রকাশিতব্য ভিডিওর ছোট ছোট কিওয়ার্ড এখানে যুক্ত করুন। চ্যানেলের কিওয়ার্ড যুক্ত করার জন্য পূর্ববর্তী অংশে বর্ণিত অ্যাডভান্সড অপশনে প্রবেশ করুন। অ্যাডভান্সড পেজে চ্যানেল আইকানের ঠিক নিচে দেশ নির্বাচন এবং চ্যানেল কিওয়ার্ড যুক্ত করার অপশন পাবেন। পূর্বে বর্ণিত লোকেশন সিলেক্ট করার মত এখানেও দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিলেক্ট করতে পারেন। এরপর তার নিচে চ্যানেল কিওয়ার্ড অংশে আপনার চ্যানেল সম্পর্কিত কিওয়ার্ডগুলো যুক্ত করুন। তারপর পেজের ঠিক নিচে সেভ অপশনে ক্লিক করে সকল সম্পাদনা সেভ করবেন।
এই ছিল একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলার পর প্রাথমিক সেটিংসের সার্বিক দিক। সুতরাং আর দেরি না করে শুরু করুন ইউটিউবিং। আর ইউটিউব সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে আমার অন্যান্য নিবন্ধগুলো পড়ে আসার আমন্ত্রণ রইল।
ফিচারড ইমেজঃ tamol.om