বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেকারত্বের পরিসংখ্যান আমাদের সবার জানা। তবে আজকের আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে সচেতন এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা বেকারত্ব নামক অভিশাপকে নানাবিধ দক্ষতায় দূর করেছেন অনেকাংশে। বাক্যটিকে কঠিন মনে হলে, আসুন সহজ করে বোঝার চেষ্টা করি। বর্তমান সময়ে যেকোনো চাকরি পেতে মানসম্মত বা গঠনমূলক একটি সিভি তথা জীবনবৃতান্ত যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি নিয়োগকর্তাদের আপনার পার্সোনালিটি বা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মোদ্দাকথা, গঠনমূলক জীবনবৃতান্ত এবং ব্যক্তিত্বের সংমিশ্রণেই আপনি পেতে পারেন পছন্দের সব চাকরি। এজন্যই চাকরিদাতারা নির্দিষ্ট প্রার্থীর ব্যক্তিত্বকে বোঝার জন্য নজর দেন তার ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে।
মূলত নিয়োগকর্তাগণ সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে আপনি কেমন পোস্ট, লাইক, কমেন্ট বা শেয়ার করেন ইত্যাদি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখেন। আরো মজার বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণেই অনেকেই ভালো মানের চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন খুব সহজেই। এজন্যই ভালো এবং উচ্চমানের একটি চাকরি পেতে নিজের জীবনের সাথে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে গুছিয়ে নেওয়া অতীব জরুরী।
বায়ো পরিপূর্ণভাবে পূরণ করুন
প্রত্যেকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সংক্ষিপ্ত আকারে বায়ো তথা জীবনবৃত্তান্ত লেখার একটি অপশন থাকে। প্রতিটি গঠনমূলক প্রোফাইলের জন্য এটি পূরণ করা খুবই প্রয়োজনীয়। কেননা ছোট এই বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে খুব সহজেই বোঝা যায় ব্যক্তিগত জীবনে আপনি কতটা অধ্যবসায়ী। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চাকরিদাতারাও সবসময় চেষ্টা করেন প্রযুক্তিগতভাবে সহজ উপায়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেই উপযুক্ত দক্ষ প্রার্থী খুঁজে নিতে।
তাই আসুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিগত বায়োটি ফাঁকা কিংবা হাস্যকর বা অযৌক্তিক সব বৈশিষ্ট্যে ভরপুর না করে গঠনমূলক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলি। তাহলে গোছালো ব্যক্তিত্ব প্রকাশের সাথে সাথে নিয়োগকর্তাদের নজরে আসতে পারবেন খুব সহজেই।
আপলোডে বা শেয়ারে সতর্ক হোন
ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আপনার পরিচিতির জন্য ছবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সবসময় চেষ্টা করবেন আপনার সবচেয়ে পরিপাটি ছবিগুলো প্রোফাইল পিকচার হিসাবে ব্যবহার করতে। এছাড়াও যেকোনো ছবি, ভিডিও কিংবা পোস্ট আপলোড বা শেয়ারে সময় সতর্ক থাকবেন যাতে এটি কোনোভাবে আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে। এই বিষয়গুলো এখনেই সতর্ক না হলে, এগুলো আপনার ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বাস্তবিক জীবনেও বিপরীতমুখী প্রভাব ফেলতে পারে নানাভাবে। তাই মানসিকভাবে সর্বোচ্চ সচেতনতার মাধ্যমে চেষ্টা করুন ভার্চুয়াল এবং বাস্তবিক ভারসাম্য রক্ষা করতে।
আক্রমণাত্মক আচরণ থেকে বিরত থাকুন
আক্রমণাত্নক আচরণের সবচেয়ে বড় উদাহরণ রাশিয়ায় অবস্থিত এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ। ব্রাজিল, আর্জেনটিনা কিংবা জার্মানির সমর্থকরা কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। অন্য কোনো কাজ ধারাবাহিকভাবে করতে না পারলেও কাউকে আক্রমণ করে কথা বলার কেমন জানি একটা ভয়ানক পরিবেশ তৈরি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। কিন্তু কেউ কি একবার ভেবে দেখেছেন, আক্রমণাত্মক এই আচরণগুলো আপনার ব্যক্তিত্বকে কতোটা প্রশ্নবিদ্ধ করে? হয়তো ভেবেছেন কিংবা ভাবার সময় পান নি?
আরো ভয়ানক বিষয়, আমাদের আক্রমণাত্মক কিংবা কিছুকিছু ক্ষেত্রে হাস্যকর আচরণগুলো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও করতে আমরা সামান্যতম দ্বিধাবোধ করছি না। তাই আসুন মনের ভিতরে আত্নগোপনে থাকা নেতিবাচক প্রভাবগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ গড়ে তুলি সর্বত্র।
ব্যাকরণ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করার জন্য নিজস্ব মাতৃভাষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহার করি। কোনকিছু পোস্ট করার সময় বাংলা বা ইংরেজি যে ভাষাই ব্যবহার করি না কেন, আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে নির্ধারিত ভাষার ব্যকরণ সম্পর্কে। কেননা চাকরিদাতাগণ উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগে এসব ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখেন গুরুত্বের সাথে। তাই মন চাইলো আর পোস্ট করলাম, এ রকম মনমানুষিকতা থেকে বের হতে হবে এখন থেকেই।
কারণ ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ এই অভ্যাসগুলো আপনি চাইলেও একদিনে পরিবর্তন করতে পারবেন না। এরজন্য দরকার গঠনমূলক মানুষিক পরিবর্তনের সাথে সুষ্ঠ জীবনব্যবস্থাপনার।
উপযুক্ত লিংক সংযোজন করুন
বর্তমানে বড় বড় সোশ্যাল মিডিয়াগুলো প্রায় প্রত্যেকটিতে কার্যকরী সব লিংক সংযোজনের অপশন থাকে। বায়ো তথা জীবনবৃতান্তের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য লিংক সংযোজনের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, বায়োতে লিখলেন আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার। কিন্তু নিয়োগকর্তাগণ বা অন্যকেউ কিভাবে বুঝবেন যে আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার? এজন্যই সত্যতা প্রমাণের জন্য আপনি যে নির্ধারিত বিযয়ের উপর কাজ করেন তার লিংকটি সংযোজন করতে হবে। এছাড়ও ইমেইল এবং ইউজার নেম সংযোজনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যাতে এগুলো পঠনযোগ্য এবং সুন্দর হয়।
গোপনীয়তায় সচেতন হোন
কোনো কোনো সময় আমরা প্রাণের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলটিকে এত বেশি গোপন করে রাখি যেন প্রোফাইটি দেখার পর আমাদের সম্পর্কে কেউ কোনকিছু বুঝতে না পারে। ব্যক্তিগত কারণ ছাড়া বর্তমান সময়ে এসে এরকম গোপনীয় প্রোফাইল রাখা সত্যিই ভয়ানক সিন্ধান্ত ছাড়া কিছু না, যা এতক্ষণে উপরের বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোকে বুঝতে পারছেন নিশ্চই। অপরদিকে গোপনীয়তার পজিটিভ তথা ইতিবাচক ভুমিকাও কম নেই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে।
যেমন প্রথম অবস্থায় না বুঝার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহারে সামান্য ভুল হওয়া খুবই স্বাভাবিক। উদাহরণ সরূপ, ধরুণ ২০০৯ সালে ফেসবুকে আপনি বুঝে কিংবা না বুঝে নেতিবাচক কোনকিছু শেয়ার বা পোস্ট করতে পারেন এক্ষেত্রে আপনাকে সতর্কতার সাথে ঐসব পোস্ট ডিলিট অথবা গোপন করতে হবে যাতে অন্যকেউ বুঝতে বা দেখতে না পারে।
পরিচিত হোন গুগলের সাথে
“Important but not the list” অর্থাৎ তালিকার বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে প্রাথমিকভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হলেও অনলাইন দুনিয়ায় আপনাকে মর্যাদার সাথে পরিচিত করতে এর ভুমিকা অপরিসীম। লক্ষ্য করুণ, তথাকথিত সেলিব্রেটি তথা মহান ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে গুগল। কিন্তু ভাবুন তো, কোনোভাবে যদি আপনার নামটি গুগলের সার্চ দিলে আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক সব তথ্য চলে আসে তাহলে বিষয়টা কতোটা আত্নমর্যাদাপূর্ণ। অপরদিকে চাকরিদাতাদের এক ক্লিকে আপনার সম্পর্কে জানার জন্য এর চেয়ে সহজ পন্থা আর দ্বিতীয়টি নাই পৃথিবীতে। প্রশ্ন আসতে এটি কিভাবে সম্ভব?
এক্ষেত্রে বেশকিছু সমাধানের মধ্যে একটি হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহারে সঠিক দিকনির্দেশনা মেনে চলা। এছাড়াও গুগলের সাথে নিজেকে পরিচিত করার জন্য এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন নামক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আছে যা জানার জন্য প্রয়োজন সঠিক পড়াশোনার। তাই সঠিক দিকনির্দেশনা এবং এসইও দক্ষতার কল্যাণে অনলাইন দুনিয়ায় আত্নমর্যাদার সাথে নিজেকে পরিচিত করার মাধ্যমে চাকরির বাজারে এগিয়ে যান কয়েকধাপ উপরে।