জাতির অগ্রগতির জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়া কোনো রকম কমতি রাখতে রাজি নয়। প্রতি বছর শিক্ষা ও গবেষণা খাতে উন্নতির লক্ষ্যে ভিনদেশের হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সুযোগ দিয়ে থাকে দেশটি। এতে বাংলাদেশের মেধাবীরাও পিছিয়ে নেই। কোরিয়াতে বাংলাদেশের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ও গবেষক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন। যাদের অনেকেই নিজ নিজ পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে কোরিয়ার মাটিতে লাল-সবুজের পতাকাকে উজ্জ্বল করে চলেছেন। আপনিও তাদের মধ্যে একজন হতে চাইলে এ লেখাটি আপনার জন্য।
দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়ার জন্য আবেদন করবেন কীভাবে?
দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের স্কলারশিপ প্রোগ্রামে (কেজিএসপি) ‘গ্র্যাজুয়েট’ এবং আন্ডারগ্র্যাজুয়েট’ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। নিজ দেশের কোরিয়ান দূতাবাস থেকে অথবা কোরিয়ায় এই প্রোগ্রামের জন্য মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থী হিসেবে সরাসরি আবেদন করা যায়।
গ্লোবাল আইটি কোরিয়ার গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম (জিআইকেজিএসপি) সাধারণত স্নাতকোত্তর লেভেলে বৃত্তি দিয়ে থাকে। এটিও কোরিয়ান সরকারের বৃত্তি। তবে সে জন্য অধ্যাপকের সুপারিশ থাকলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়ে যায়।
কেজিএসপি প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করতে প্রথম একবছর কোরিয়ান ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক।
বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের কেউ কোরিয়ায় অধ্যয়ন করতে চাইলে সেখানকার অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে তথ্য নিতে পারেন।
কোরিয়ান গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (কেজিএসপি)
প্রতি বছর আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। প্রতিবছর এই স্কলারশীপের আওতায় বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এই স্কলারশীপের জন্য বাংলাদেশের কোটা থাকে ২ থেকে ৩ জন।
স্কলারশিপ পেতে হলে নিজেকে সবার চেয়ে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হয়। যেমন: একাডেমিক রেজাল্ট, আইইএলটিএস, কোরিয়ান ল্যাংগুয়েজ সার্টিফিকেট (যদি থাকে), এক্সট্রা কারিকুলাম সার্টিফিকেট ইত্যাদি। যদিও উল্লেখিত সার্টিফিকেটের কথা উল্লেখ থাকে না কিন্তু সবার চেয়ে নিজেকে যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হলে এই ধরণের সার্টিফিকেটগুলো কাজে দিবে। সেজন্য উচ্চমাধ্যমিকে থাকা অবস্থায় প্রিপারেশন নেওয়া উচিৎ বলে মনে করি। যদিও একই যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও ভাগ্যের কারণে অনেকেই এই স্কলারশীপ থেকে বঞ্চিত হন।
এই স্কলারশিপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা বিমান ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ পাবেন কোরিয়া সরকারের পক্ষ থেকে। শিক্ষার্থী নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী যে কোন বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করতে পারবেন। প্রথম ১ বছর কোরিয়ান ভাষায় পড়ে লেভেল ৩ পাশ করে তারপর অনার্সের মূল কোর্সের পড়াশোনা শুরু হয়ে থাকে। যদি আপনার পছন্দ করা সাবজেক্টে ইংরেজি লেকচার হয়, সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে পড়তে পারবেন। কিন্তু বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটিতে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে কোরিয়ান ভাষায় লেকচার হয়।
কেজিএসপি স্কলারশীপের আওতায় যা যা পাওয়া যাবে তার একটু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিই। আসা যাওয়ার বিমানের টিকেট, সেটেলমেন্ট এলাউন্স ২ লাখ উওন, লিভিং এলাউন্স ৮ লাখ উওন, মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স মাসিক ২০ হাজার উওন, ল্যাংগুয়েজ কোর্স ফি ৮ লাখ উওন, টিউশন ফি, এক্সিলেন্ট ল্যাংগুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি অ্যাওয়ার্ড বাবদ মাসিক অতিরিক্ত ১ লাখ উওন, রিসার্চ সাপোর্ট প্রতি সেমিস্টারে ২ লাখ দশ হাজার উওন। এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল খরচ কর্তৃপক্ষ বহন করবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীকে বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে চোখ রাখতে হবে। তবে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আগের বছরের আবেদন ফর্মের সাথে যুক্ত ‘প্রয়োজনীয় কাগজপত্র’ অংশ দেখে নিতে পারেন।
স্কলারশিপ কীভাবে পাবেন?
কোরিয়াতে দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। সরকারী স্কলারশীপের জন্য বছরে একবার আবেদন করার সুযোগ থাকলেও অন্যান্য অনেক স্কলারশীপের জন্য দুইবার আবেদন করা যায়। আগেই বলেছি আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ কম পাওয়া যায়। তবে কোথায় কোন ইউনিভার্সিটিতে কোন স্কলারশিপ পাওয়া যাবে সেটা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
কীভাবে খুঁজে পাবেন?
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গুগল আপনাকে সহযোগিতা করবে। গুগল থেকে ইউনিভার্সিটি খুঁজে বের করে সেই ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে গেলে সব তথ্য পাওয়া যাবে। ওয়েবসাইটে কোরিয়ান ভাষা দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নাই, ওয়েবসাইটের ডানপাশের কোনায় ইংরেজির একটা অপশন থাকে সেখানে ক্লিক করলেই ইংরেজি ওয়েবসাইট ওপেন হবে। ইউনিভার্সিটিগুলোর ওয়েবসাইট দেখে আপনাকে স্কলারশিপের লিস্ট করতে হবে এবং কোন ইউনিভার্সিটি কি সুবিধা দিচ্ছে সব দেখে এবার এপ্লাই করা শুরু করে দেন বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে। অনলাইন/ অফলাইন দুইভাবেই আপনি এপ্লাই করতে পারবেন।
ভিসার জন্য কী করবেন?
- আবেদনকারীর নিজ হাতে পূরণকৃত আবেদন পত্র।
- ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত ভর্তির সার্টিফিকেট (মূল কপি ও ফটোকপি)।
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের মূলকপি ও ফটোকপি।
- আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন (বার্থ সার্টিফিকেট) এর মূল কপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বাক্ষরিত সত্যায়িত ফটোকপি। বি দ্র: অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় এইটা নিয়ে। সচিবালয়ের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাউন্টারে কোন বার্থ সার্টিফিকেট জমা নেয় না। এইজন্য আগে থেকেই অন্য কোনোভাবে কাউন্টার পাস নিয়ে ভিতরে গিয়ে সত্যায়িত করতে হয়। এক্ষেত্রে অবশ্যই সাথে নোটারী কপি সাথে নিয়ে যাবেন।
- সিটি কর্পোরেশন (সমমান) থেকে দেয়া ফ্যামিলি রিলেশন সার্টিফিকেট।
- একাডেমিক ও অন্যান্য খরচ বহন করা হবে এই মর্মে কোন সার্টিফিকেট (সাধারণত স্কলারশীপ দাতা প্রতিষ্টান বা প্রফেসররা এটা দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো স্কলারশীপ হলে কতৃপক্ষ ভর্তির সার্টিফিকেটের সাথেই এই সার্টিফিকেট পাঠিয়ে থাকে। অন্যথায় একাডেমিক ও থাকা খাওয়ার খরচ বহনের জন্য আবেদনকারীর নিজের অথবা তার অভিভাবকের অর্থনৈতিক সামর্থের প্রমানপত্র দিতে হবে)।
- মাতাপিতার সম্মতিপত্র (সাধারণত ৫০ টাকার স্ট্যাম্পে)।
- মাতাপিতার বাংলাদেশী পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের ফটোকপি।
- পুলিশ ভেরিফিকেশন, যা অবশ্যই স্বরাষ্ট্র অথবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করে নিতে হবে (এটি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেলে খুব সহজেই সত্যায়িত করা যায়)।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদের মূলকপি ও ফটোকপির নোটারী করাতে হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে (এটি প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সত্যায়িত কপি নিয়ে আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে সত্যায়িত করতে হবে)।
বি দ্র: সকল বাংলা কাগজপত্রের ইংরেজি অনুবাদ জমা দিতে হবে।
উপরের কাগজপত্রসহ দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাম্বাসিতে জমা দিতে হবে। এসময় স্টুডেন্ট ভিসার ফি হিসেবে ৫৭ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাম্বাসি: ৪ মাদানী সরণি বারিধারা, ঢাকা ১২১২, ফোন: (+৮৮০২) ৫৮৮১- ২০৮৮~৯০।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনি খুব শীঘ্রই হাতে পেয়ে যাবেন আপনার স্বপ্নের দেশের ভিসা।
source: Syglobal