মার্ভেল অথবা ডিসি কমিকসের বিভিন্ন সুপারহিরোর সিনেমাগুলো দেখতে কারই ভালো না লাগে! সেসব সিনেমা দেখে অনেকের ইচ্ছে জাগে, “আমার যদি তেমন ক্ষমতা থাকতো?” যদিও সুপারহিরো হচ্ছে আমাদের ফ্যান্টাসির অংশ, তবে বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আমরা সুপার হিরোদের মত অনেক ধরনের কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। চলুন দেখে নেওয়া যায় বাজারের তেমন কিছু প্রযুক্তি যেসব আমাদের সুপারহিরোদের মত ক্ষমতা অর্জন করে দিবে।
১. ফ্লাইং এক্সোস্যুট: আয়রন ম্যান স্যুট
এক্সোস্যুটের আবিষ্কারক একজন ব্রিটিশ তেল ব্যবসায়ী। বাস্তব জীবনের টনি স্টার্ক বলা যায় রিচার্ড ব্রাউনিং নামের এই লোকটিকে। পিঠে আর বাহুতে তিন সেট জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করে তিনি এই এক্সোস্যুট তৈরি করেছেন। কোনো ধরনের স্টেয়ারিং মেকানিজম ছাড়াই শরীরের উপরিভাগের সাহায্যে দিক ঠিক করা এবং জেট ইঞ্জিন শক্তি পরিবর্তন করে তিনি এই এক্সোস্যুট নিয়ন্ত্রণ করেন।
যদিও আয়রন ম্যানের মতো অসাধারন নানা ফিচার যেমন প্রচন্ড পরিমান শক্তি, অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলা অথবা লেজার রশ্নির মতো অস্ত্র এই স্যুটটিতে নেই। ব্রাউনিং এর এই এক্সোস্যুট ঘন্টায় পাঁচ কিলোমিটার বেগে চলতে পারে। আর বাতাসে ভেসে থাকতে পারে দশ মিনিটের মত। যদিও ভেসে থাকার উচ্চতা মাত্র ছয় ফিট, তবে ব্রাউনিং আশ্বস্ত করেছেন তার পরবর্তী প্রটোটাইপে ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে আর মাটি থেকে ৩৫০ ফিট উপরে ভেসে থাকতে সক্ষম হবে।
তবে সেই এক্সোস্যুটের দাম কম হবে না আপনি নিশ্চিত থাকুন। কারণ তার এই বর্তমান এক্সোস্যুট তৈরিতেই ব্রাউনিংয়ের খরচ গিয়েছে আড়াই লাখ ডলারের মত।
২. সেল্ফ হিলিং: ওলভারিন
এক্স মেন সিরিজের মুভিতে সবার অন্যতম আকর্ষণ লোগান চরিত্রে অভিনয় করা হিউ জ্যাকমান। ওলভারিনের অসাধারণ সেল্ফ হিলিং ক্ষমতা আর দীর্ঘ আয়ু যেকোন ব্যক্তিকেই ঈর্ষান্বিত করে। কমিকস্ আর সিনেমার এই কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দিতে যাচ্ছে আমেরিকার সেনাবাহিনীর রিসার্চ ল্যবরেটরি।
ইলেকট্রিক্যাল প্রেসক্রিপশন প্রোগ্রাম যেটা কিনা ইলেকরেক্স নামেও ডাকা হয়। এই ইলেকরেক্স এর উদ্যেশ্য ছিলো ক্ষুদ্রাকৃতির একটি ইলেক্ট্রো ইমপ্লান্ট তৈরি করা। যেই ইমপ্লান্ট মানুষের দেশে অবস্থান করবে এবং শরীরের বিভিন্ন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে থাকবে। আর যখন প্রয়োজন হবে তখন প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক সিমুলেশন প্রদান করবে।
ইলেকরেক্সের আকৃতি এতটাই ক্ষুদ্র যে স্নায়ুতে একটি সুই দিয়েই প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। এই ইমপ্লান্ট ক্রনিক প্রদাহজনিত বিভিন্ন রোগ যেমন রিমিটয়েড আর্থাইটিস, সিস্টেমিকইনফ্লামেটরি রেসপন্স সিন্ড্রোম অথবা অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগের প্রতিকার করতে সক্ষম। তবে দুঃখজনক ভাবে ওলভারিনের দীর্য় আয়ু আপানাকে ইলেকরেক্স দিচ্ছেনা।
৩. জেটপ্যাক: ফ্লাশ
জেটপ্যাক জিনিসটি কল্পনা করলেও অন্যরকম অনুভূতি মনে চলে আসে। এখন যদি সেই কল্পনার জেটপ্যাক আপনাকে সুপারহিরো ফ্লাশের মত দ্রুত দৌড়াতে সহয়তা করে সহায়তা করে তাহলে নিশ্চিত এই আবিষ্কারটি হবে অসাধারণের কাতারে।
ডার্পার তৈরি এই জেটপ্যাক সাধারন ব্যাকপ্যাকের মতোই পিঠে বহর করা যায়। এবং এই জেটপ্যাকটি ব্যবহারকারীকে মাত্র ২০ সেকেন্ডে এক মাইল দূরত্ব অতিক্রম করতে সহায়তা করে। এছাড়া টানা ৫ মিনিট ২০ সেকেন্ড সার্ভিস দিতে সক্ষম। ডার্পার তৈরি এই প্রযুক্তি আবিষ্কারে মূল লক্ষ্য ছিলো যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধারা যাতে দ্রুত চলাচল করতে পারে। তবে বর্তমানে তারা বিভিন্ন ক্রিয়া প্রতিযোগিদের সাহায্যের জন্য এই প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য ডার্পা গবেষণা করে যাচ্ছে।
৪. টেলস: হাল্ক
ট্যাকটিক্যাল এসল্ট লাইট অপারেটর স্যুট সংক্ষেপে টেলস এর নাম আমরা আগে অনেকেই শুনেছি। ইউএস সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা এই স্যুট তৈরির উদ্যেশ্যে ছিলো যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের ভারী অস্ত্র
অথবা অন্যান্য ভারী জিনিসপত্র বহনে সহয়তা করা। হাল্কের মত শক্তি অপারেটরকে প্রদান করা ছাড়াও নতুন ধরনের বুলেট প্রুফ ম্যাগনেট্রিওলজিক্যাল প্রযুক্তি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।
৫. কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন: নাইট ক্রাউলার
মার্ভেলের নাইট ক্রাউলারের টেলিপোর্টেশন ক্ষমতা প্রায় প্রতিজনের কাছেই আকর্ষণীয়। কমিকস্ আর সিনেমায় অসাধারন সব টেলিপোর্টেশন ক্ষমতা দেখা গেলেও বাস্তাবে বিজ্ঞানীরা নেই পিছিয়ে।
কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট যেটা কিনা সাব এটমিক পার্টিকেলের লিংক এবং দূরবর্তী কণার সংযোগের প্রসেসে মহাকাশ সংযুক্ত নয়। যে কারনে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশনের সাহায্য সৌর জগতের হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে কোথায় কিছু পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে আশার বিষয় হচ্ছে, সর্বোচ্চ ১৪৫ কিলোমিটার দূরে বিজ্ঞানীরা জড় পর্দাথের বস্তু পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা আশাবাদী যে, কয়েক বছরের মধ্যেই এই টেকনোলজি ব্যবহার করে হ্যাক করা অসম্ভব এমন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সক্ষম হবে তারা। এই বিষয়ে কলোরাডোর ন্যাশন্যাল ইন্সটিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেকনোলজির কোয়ান্টাম গবেষক মার্টিন স্টিভেন বলেছেন, ” কোয়ান্টাম ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করলে, বর্তমানে বিভিন্ন যোগাযোগের চ্যানেলের যেগুলোতে লেটেস্ট এনক্রিপশন ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর থেকেও অনেক বেশি নিরাপত্তা প্রদান করা সম্ভব হবে।”
৬. টেলিকাইনেসি
মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার সাহায্যে কোন বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন বা চালনা করার ইচ্ছেটা মানুষের নতুন কিছু নয়। এই ইচ্ছের চাহিদা মিটাতে ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটার গবেষকরা তৈরি করেছেন ব্রেইন কম্পিউটার। যেটা কিনা ব্যবহারকারী ইচ্ছে অনুযায়ী বিভিন্ন জিনিসের অবস্থান পরিবর্তন করতে সহায়তা করবে।
প্রাথমিক এই প্রজেক্টে একটি রেডিও কন্ট্রোল কোয়াড কপ্টার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। ইলেকট্রোড লাগানো এক ধরনের ক্যাপ এই কাজের জন্য মাথায় লাগাতে হয়। ক্যাপে সংযুক্ত এই ইলেকট্রোডের সাহায্যে মস্তিষ্ক থেকে কম্পিউটার বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল সিগনাল গ্রহণ করে আর সেগুলোকে কোয়াড কপ্টরের মুভমেন্টে পরিবর্তন করে। মিনেসোটা ভার্সিটির প্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোয়াড কপ্টর উড়িয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে রিপোর্টাররা জানতে চাইলে তাদের প্রত্যেকের মন্তব্য ছিলো, “এটা অসাধারণ!”