যে ১১ টি পরামর্শ বিপদে কাজে লাগবে

সুকুমার রায়ের ‘জীবনের হিসাব’ কবিতাটির কথা মনে আছে? একজন বিদ্যেবোঝাই বাবু মশাই নৌকায় চড়ে যেতে গিয়ে ঢেউয়ের কবলে পড়েন এবং সাঁতার না পারার কারণ নৌকাডুবি হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। এরকম মানুষ সমাজে অনেক আছেন। পড়াশোনায় খুবই ভালো কিন্তু বাস্তব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো যোগ্যতা নেই। কেউ তখনই প্রকৃতভাবে সফল হতে পারে, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে যদি একাডেমিক যোগ্যতার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলোও থাকে। জীবনের চলার পথে, প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য আমরা বিভিন্ন বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করি। কখনো ক্যারিয়ারের প্রয়োজনেও অনেক কিছু শিখতে হয়। যার অনেকগুলোই আপাতভাবে অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। কিন্তু এর প্রত্যেকটিই বিপদের মুহূর্তে আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। জেনে নিন এমনই ১০ টি বিষয় সম্পর্কে-

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১। গিঁট বাঁধা শিখুন

Image source – pravesh2rajyapuraskar.wordpress.com

বিভিন্ন ধরনের গিঁট বাঁধা শিখে রাখলে বিশেষ মুহূর্তে কাজে দেবে। ভারি কিছু তুলতে কিংবা মাছ ধরতে, হাইকিংয়ে বেশ কাজে দেবে। আর বাসা-বাড়ির যেকোনো কাজে তো প্রায়ই বিভিন্ন কিছু বাঁধতে হয়। গিঁট অনেক ধরণের হয়ে থাকে। একেকটি একেক কাজে লাগে। এগুলো শিখে নিন, কখন কাজে লেগে যাবে বলতেও পারবেন না।

২। বিষাক্ত নয় এবং খাওয়া যায় এমন মাশরুম চিনে রাখুন

মাশরুম পুষ্টির ভালো একটি উৎস, কিন্তু বিষাক্ত মাশরুম থেকে সাবধান! Image source – wildernessawareness.org

প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরণের মাশরুম রয়েছে। মাশরুম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী, তবে বিষাক্ত মাশরুম থেকে সাবধান। যার মধ্যে বিষাক্ত ও খাওয়ার যোগ্য দুই ধরণের মাশরুমই প্রাকৃতিকভাবে জন্মায়। বিষাক্ত মাশরুম সাধারণত গাঢ় রঙের হয় এবং এতে কড়া গন্ধ থাকে। বিষাক্ত মাশরুম স্পর্শ করলেও ক্ষতি হতে পারে। কিছু মাশরুমের বিষাক্ত মিউকাস সদৃশ পদার্থ দেহের স্পর্শে এলে রেশ ও জ্বলুনি তৈরি করে। তবে অপরিচিত মাশরুম না খাওয়াই উচিত, আগে নিশ্চিত হয়ে নিন এটি কোন গোত্রের তারপর খান। পরিবার নিয়ে প্রকৃতিতে যাবার আগে এসব ধারণা বাচ্চাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

৩। বনের ভেতরে পথ খুঁজে পেতে জানতে হবে

বনের ভেতরে পথ হারানোর সম্ভাবনা থাকে, কম্পাস সাথে রাখুন; Image source – rbth.com

যখন কোনো ভ্রমণে যাবেন এবং তা যদি বনের মধ্য দিয়ে হয় তাহলে কীভাবে একটি অপরিচিত জায়গায় পথ চিনে চলবেন সেটা আপনাকে জানতেই হবে। দিক নির্ণয়ের প্রয়োজনে কম্পাস ব্যবহার করুন। গভীর বনে কিংবা অপরিচিত পথ ধরে যাবার সময় পথে পথে চিহ্ন রেখে যাবেন। যাতে চিহ্ন দেখে দেখে ফিরতে পারেন।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

৪। ডুবন্ত মানুষকে বাঁচানো ও সাঁতার জানা

সাঁতার জানলে নিজের নিরাপত্তার সাথে সাথে বিপদে অন্যদেরও সহযোগিতা করতে পারবেন। Image source – content.govdelivery.com

এখানে আপনার সামনে একটি বাঁধা হতে পারে আর সেটি হচ্ছে সাতার না জানা। যদি আপনি সাতার জানেন তাহলে খুব সহজেই মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবেন। ডুবন্ত মানুষটির পেছন দিকে এগিয়ে যান, কেননা সামনে থেকে গেলে ভয়ের কারণে সে আপনাকে জড়িয়ে ধরে ডুবিয়ে দিতে পারে। পেছন দিয়ে গিয়ে তার বগলের নিচে দুই হাত ধরে অথবা থুতনিতে ধরে তার মাথা আপনার পেটের উপর ফেলে সাঁতরে তীরে আসুন।

৫। কীভাবে ব্যয় কমিয়ে টাকা জমাতে পারেন

টাকা জমান, বিপদে কাজে দেবে; Image source- blog.lesroches.edu

একটি নির্দিষ্ট খরচের বাজেট রেখে বাড়তি অংশ সঞ্চয় করুন। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ জমান। উপার্জন যা-ই হোক না কেন, আপনাকে অপচয়কারী হলে চলবে না এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সঞ্চয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো শখের জিনিস কেনা থেকে শুরু করে বিপদে পড়লেও বড় অংকের টাকা প্রয়োজন হতে পারে। সেমিস্টার ফি সহ সব খরচ মিলিয়ে যে টাকা বাঁচে তা সঞ্চয় করুন।

৬। মাছ ধরা এবং নৌকা চালনা জানতে হবে

মাছ ধরতে জানলে খাবারের অভাব হবেনা।     Image source –  flwfishing.com

এজন্য জেলে হতে হবে না, তবে বিষয়টা ভালো জানতে হবে। প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য মাছ ধরে খাওয়া- সবচেয়ে সহজ খাবারের উৎস, যদি আশেপাশে বড় কোনো জলাশয় থাকে তাহলে তো কথাই নেই এবং একটি নৌকা থাকলে এবং চালাতে জানলে অনেক সহজেই মাছ ধরে পুষ্টির যেগান দিতে পারবেন।

৭। ছুটিতে কী পরিকল্পনা সেটা আগে থেকেই ঠিক করে রাখুন

একটি ভালো ছুটি কাটাতে চাইলে আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। যদি কাঙ্ক্ষিত স্থানে গিয়ে নিজেকে ঝামেলায় না ফেলতে চান তাহলেও পরিকল্পনা করে রাখতেই হবে আপনাকে। যত্নের সাথে চিন্তা-ভাবনা করে সব কিছু ঠিক করুন। স্মৃতির উপর নির্ভর না করে গুরুত্বপূর্ণ সব কিছু লিখে রাখুন। সাথে যা যা নিতে হবে তার একটি তালিকা তৈরি করুন। তাহলে অনেক সাজানো-গোছানো ছুটি কাটবে আপনার। না হলে প্রতি পদে পদে ঝামেলায় পড়তে হবে।

৮। পাগলা কুকুর থেকে বাঁচবেন কীভাবে?

ক্ষ্যাপা কুকুর থেকে সাবধান; Image source – Youtube.com

দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের অনেককেই পাগলা কুকুরের তাড়া খেতে হয়েছে। অথবা কখনো কুকুরের ভয়ে পথ বদলে অন্য পথে যেতে হয়েছে। জেনে নিন কীভাবে ক্ষ্যাপা কুকুর থেকে বাঁচবেন তারই কিছু উপায় –

যদি কুকুরটি বেশি বড় না হয়, তাহলে এটিকে ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করুন। প্রথমে কুকুরটির দৃষ্টি আকর্ষণ করুন, নজর আপনার দিকে ঘুরে গেলে মাটি থেকে কিছু ছুঁড়ে মারার ভান করুন। কুকুরটি দৌড়ে পালাবে।

যদি এই টিপসটি কাজ না করে তাহলে, আপনাকে আক্রমণ ঠেকানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। কুকুরটি যখন কামড়াতে আসবে তখন এর নাক বরাবর লাথি মারতে পারেন। তবে লাথি যে জায়গামত পড়বে তার তো নিশ্চয়তা নেই। এর চেয়ে আরও ভালো উপায় হচ্ছে- কুকুরটিকে কামড়াতে দেওয়া, তবে তার আগে অবশ্যই কুকুরের দিকে পিছন না ফিরে গায়ের জ্যাকেট বা কোটটি হাতে পেঁচিয়ে নিন। যখন সেটি কামড়াবে তখন কাপড়টি এর মুখে ঠেসে দিয়ে দৌড়ে পালান।

৯। গাড়ি মেরামতের প্রাথমিক ধারণা রাখুন

Image source – Cv pros

এক্ষেত্রে অল্প কিছু প্রাথমিক ধারণা আপনাকে বিভিন্ন ঝামেলা থেকে বাঁচাবে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু মেরামতের কাজ শিখে রাখুন। যদি যাত্রাপথে গাড়ির টায়ার ফেটে যায় তাহলে জ্যাক, স্ক্রু আর রেঞ্চ দিয়েই বদলাতে পারবেন। হতাশ হতে হবেন না এমন মুহূর্তে।

১০। ভূমিকম্পে নিজেকে নিরাপদ রাখা

ভূমিকম্পের ক্ষতি কমাতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত সতর্কতা।    Image source – Newsweek

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের সময় মেঝেতে শুয়ে পড়তে হবে, তারপর টেবিলের নিচে গিয়ে বালিশ বা অন্য কিছু দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন এবং অন্য হাত দিয়ে শক্ত করে টেবিলে ধরে রাখুন। বাসার ভেতরে থাকাকালীন সময়ে ভূমিকম্প শুরু হলে দৌড়ে বাইরে যাবার চেষ্টা করবেন না। ভূমিকম্পের সময় বাসার বাইরে যাওয়া সবচেয়ে অনিরাপদ। যদি বাসায় কোনো টেবিল বা এই জাতীয় কিছু না থাকে তাহলে ঘরের বীমের নিচে চলে যান এবং মাথার উপর শক্ত কিছু ধরে রাখুন যাতে মাথা নিরাপদে থাকে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১১। যন্ত্র ব্যবহার করে মেরামত করা শিখুন

Image source – Pinterest

প্রত্যেকেরই বাসা-বাড়ির ছোটখাটো মেরামতের কাজ জানা উচিত। তাতে সময় এবং অর্থ যেমন বাঁচবে তেমনি কিছু নষ্ট হলে অন্যের আশায় বসে থাকতে হবে না। নিজেই সারাতে পারবেন। দেয়ালে পেরেক লাগানোর নিশ্চয়ই আপনার জানা উচিত। তার জন্য বারবার মিস্ত্রি ডাকার প্রয়োজন নেই। ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি মেরামত করা শিখে রাখুন। কারণ দৈনন্দিন জীবনে যেকোনো সময়ই ছোটখাটো মেরামতের প্রয়োজন হবে। ধরুন, পানির ট্যাপ ভেঙে সব পানি পড়ে যাচ্ছে, যদি আপনি মেরামত করতে না পারেন তবে মিস্ত্রি আসার আগ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আপনার কোনো উপায় নেই। তাতে পানি এবং অর্থ দুটিরই অপচয়। কিন্তু যদি আপনি জানেন কীভাবে মেরামত করতে হয়, তাহলে সহজেই ঝামেলা এড়িয়ে যেতে পারবেন। অর্থ ও সময় দুইই বাঁচবে।

Feature image source – wildernessawareness.org

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *