সামনে লম্বা একটা ছুটি। ইশ! যদি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের মাঝে ঢুঁ মেরে আসা যেতো! চা পাতার রঙ গায়ে মাখিয়ে শ’খানেক ছবি তুলা যেতো? এমনটা অনেকেই ভাবছেন কিন্তু কোথায় যাবেন? ঠিক করতে পারছেন না। তাদের জন্যই সিলেটের ৭টি দর্শনীয় স্থান নিয়ে এ লিখাটি; শাহজালাল, শাহপরানের মাজার আর সুরমা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা ছোট্ট শহর সিলেট। এই সিলেটে আছে প্রকৃতির বলিষ্ঠ ছোঁয়া!
মাজার
শাহজালালের মাজার সিলেটের একটি অনবদ্য ধর্মীয় স্থান। যেখানে প্রতিদিনই হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে।
সিলেট শহরের কেন্দ্রে এর অবস্থান। লোকমুখে শোনা যায়, শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালালের কাছে পরাস্ত হয় এবং এ অঞ্চল শাহজালালের অধীনে যায়। এই সময়ে শাহজালাল তুরস্কের কুনিয়া শহর থেকে ইসলাম ধর্মকে মানুষের কাছে প্রচার এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে এদেশে আসেন। ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারা গেলেে তাকে এই সিলেটের মাটিতেই সমাহিত করা হয়। মাজারের ভেতরে হাজার হাজার জালালী কবুতর, গজার মাছ এবং শাহজালালের তলোয়ার রয়েছে।
চা-বাগান
কবিরা প্রসিদ্ধ কবিতায় আর সিলেট প্রসিদ্ধ চায়ে। এমনটা বললে ভুল হবে না একটুও। কেননা সিলেটের চা সারা দেশে প্রসিদ্ধ। সিলেটের বিমানবন্দর এলাকায় গড়ে ওঠা লাক্কাতুরা চা বাগান, যার পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম। লাক্কাতুরা চা বাগানটি ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন। এই একই এলাকায় আরেক চা বাগানের নাম মালনিছড়া চা বাগান।
মসজিদ
হযরত শাহজালালের মাজারের পাশেই রয়েছে পুরাতন এক মসজিদ। ১৪০০ খ্রীস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম নির্মাণ করা হয়।
শাহপরাণের মাজার
শাহজালাল শাহপরাণের সম্পর্ক মামা ভাগ্নে। মামার মতো শাহপরাণও ছিলেন একজন ধর্মপ্রেমিক পুরুষ। মাজারটি সিলেটের মেজরটিলা পেরিয়ে খাদিমপাড়া এলাকায় অবস্থিত। সূর্য উঠার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয় মাজারের পরিবেশ। ধনী, গরীবের মিলনস্থলে কেবল প্রার্থনার আওয়াজ হৃদয় জুড়িয়ে দেয়।
নদী
সিলেটের আরেক সৌন্দর্যের অনবদ্য ক্ষেত্র সুরমা নদী। সিলেটের মূল ফটক বন্দর বাজারস্থ জায়গার পাশ থেকেই উপভোগ করা যায় সুরমার উচ্ছলতা।
ঘড়ি
সিলেটখ্যাত ক্কিন ব্রিজের সুরমা নদীর তীরেই আরেক জমজমাট দৃশ্য চোখে পড়ে। আর তা হচ্ছে আলী আমজদের ঘড়ি। এটি তৈরি করেন সিলেটের কুলাউড়ার জমিদার আলী আমজদ খান।
ক্বিন ব্রিজ
সিলেটের ঐতিহ্য এ ব্রীজ ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয়। এটি লোকমুখে সুরমা সেতু নামেও পরিচিত। ইংরেজ শাসনামলের সময় ইংরেজ গভর্নর মাইকেল ক্বিনের নামেই এই ব্রিজটির নামকরণ করা হয়। এটি দৈর্ঘ্যে ১১৫০ ফুট লম্বা এবং প্রস্থে ১৮ ফুট। সিলেটের প্রাণকেন্দ্র বন্দর বাজারের পাশেই এ ব্রিজটি অবস্থিত।
শুকতারা নিবাস
কি নেই এ সিলেটে? অপরুপ যত দর্শনীয় স্থান, হৃদয় ছুঁয়ে যাবার মতো সবুজের সমারোহ। সবুজের সমারোহের একটি শুকতারা প্রকৃতি নিবাস। প্রকৃতির একাংশ যেন এরই মধ্যে বাস করছে। সিলেটের খাদিম নগরে অবস্থিত অপরুপ এ স্থানটি ৭ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। প্রিয়জনের সাথে ঘুরে আসবার জন্য একদমই মন্দ নয় স্থানটি!
জাফলং
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত ঘেঁষে মারি নদীর পাশে অবস্থিত সিলেটের এ দর্শনীয় স্থানটি। হিমালয় থেকে উৎপত্তি এই মারি নদী এখানে স্বেচ্ছায় পাথর বহন করে নিয়ে এসে যেন নিজের দায় মেটায়!
জাফলংকে সিলেটের একটি অবিচ্ছেদ অংশ বললে ভুল করবেন না। এর রুপে মুগ্ধ না হয়ে যাবার সামান্যতম কারণ নেই। জাফলং এর জলের কলকলানি যেন নুপূরের আওয়াজের মতোই দোলা দেয় মনে। সিলেট থেকে প্রায় ৬০ কি.মি. দূরে অবস্থিত জাফলং। শহর থেকে বাসে যেতে প্রায় ২ ঘন্টা সময় লাগে। আদিবাসী খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকের বাস এ অঞ্চলে। বিকেলে পাথরের গায়ে সূর্যের ঝলমলতা সঙ্গে চা বাগানের সবুজ রং আপনাকে অবসাদ থেকে মুক্তি দিবেই। তাই জাফলং এ একটি ঢুঁ মেরে আসা যাক!
বিছানাকান্দি
সিলেটের আরেক প্রানভোমরা বিছানাকান্দি।
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুরের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে গড়ে উঠা এ অপরুপ সৌন্দর্যের স্থানটি পর্যটকমহলে বেশ সমাদৃত। আগেকার জাফলং এর সঙ্গে অনেক খানিই মিল রয়েছে বিছনাকান্দির। বিছনাকান্দিতে যেমন পাথরের ঠাসাঠাসি তেমনি জাফলংও পাথরের ঠাসাঠাসি ছিলো এককালে। কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে পাথর তুলে ফেলার ফলে জাফলং এবং বিছনাকান্দির মধ্যে বেশ পার্থক্যই পরিলক্ষিত হয় এখন।
বিছনাকান্দি যেতে সিলেট থেকে সিএনজি করে প্রথমে যেতে হবে হাদারপাড় পোস্ট অফিস। সেখান থেকে পিয়াইন নদী দেখতে দেখতে একসময় চোখে পড়বে আকাশচুম্বী পাহাড়ের। পাহাড় ছুঁয়ে সবুজের সারির সঙ্গে জলের আপন ইচ্ছায় ছুটে চলা। এ যেন পৃথিবীর বুকে স্বর্গের এক টুকরো দৃশ্য। বর্ষাকালে পানিতে টুইটুম্বুর থাকে পিয়াইন নদী। তাই সাঁতার না জেনে অবশ্যই নদীতে নামবেন না! বর্ষায় স্রোতের টান থাকে খুব বেশি, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে সাবধানে থাকুন।
আর হ্যাঁ, বিছানাকান্দি সীমান্তবর্তী হওয়ায় চলাচলের ক্ষেত্রে সাবধানে থাকুন। কেননা এখানে চিহ্নিত নেই সীমান্তের কতটুকু অংশ বাংলাদেশ আর কতটুকুই বা ভারত। প্রকৃতি প্রেমিক জনগণের কাছে এইসব সাবধানতা নিশ্চয়ই ভয় পাবার নয়? ভালোবেসে প্রকৃতির টানে ছুটতে চাইলে, কার সাধ্য তাকে আটকানোর। তাই ছুটির দিন কিংবা মন খারাপের দিন অথবা বিয়ের সাতদিন পর, যে দিনই হোক না কেন সিলেট ভ্রমণ হয়ে যাক তবে একবার। যা বলতে বলতেও বলা হয়নি, সাত রঙ এর চায়ে এক চুমুক দিয়ে যাবেন অবশ্যই! অন্যথায় সিলেট ভ্রমণ অপূর্ণ রয়ে যাবে। শুভ হোক আপনার ভ্রমণ!
তথ্যসূত্রঃ বাংলা উইকিপিডিয়া, কালের কন্ঠ, সিলেট ভিও ২৪ ডট কম