বর্তমান যুগ ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে যেকোনো কাজ করার জন্য কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের প্রয়োজন। অনেক অফিসে কাজ করার জন্য ল্যাপটপ অপরিহার্য। তাই নিয়মিত ল্যাপটপের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। ল্যাপটপের যত্ন নিলে তা আপনার ল্যাপটপের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে। জেনে নিন কীভাবে খুব সহজেই আপনার ল্যাপটপের যত্ন নিতে পারেন।
১. ল্যাপটপের আশেপাশে তরল পদার্থ রাখা থেকে বিরত থাকুন
ল্যাপটপের ভেতরে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি আছে যেগুলোতে পানি কিংবা অন্য তরল পদার্থ পড়লে তা মুহূর্তের মধ্যে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমরা অনেকই ল্যাপটপে কাজ করার সময় তার আশেপাশে পানি, চা, কফি কিংবা কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে বসি। ভুলবশত ধাক্কা লেগে এই তরল পদার্থ ল্যাপটপে পড়ে গেলে তা ল্যাপটপের জন্য সর্বনাশ বয়ে নিয়ে আসবে। তাই ল্যাপটপের আশেপাশে তরল পদার্থ রাখা বর্জন করতে হবে।
২. ল্যাপটপে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়ার ইন্সটল করুন
ইন্টারনেট থেকে আমরা যা-ই ডাউনলোড করি না কেন তাতে সবসময় ভাইরাস থাকে। এই ভাইরাস আমাদের ল্যাপটপের কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। অনেক সময় ভাইরাস ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে থাকা তথ্য নষ্ট করে দেয়। তাই ল্যাপটপের সুরক্ষায় সবসময় অ্যান্টিভাইরাসের ব্যবস্থা থাকা জরুরি।
৩. ল্যাপটপের আশেপাশে খাবার রাখা থেকে বিরত থাকুন
তরল পদার্থের মত ল্যাপটপের আশেপাশে কোনো প্রকার খাবার রাখা থেকে বিরত থাকুন। অনেকসময় খাবারের ছোট ছোট টুকরা ল্যাপটপের কিবোর্ডের ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে ভিতরে ঢুকে ল্যাপটপের সাকির্ট বোর্ডকে নষ্ট করে দিতে পারে। এছাড়া ভিতরে খাবার ঢুকলে তার সাথে বিভিন্ন ছোট পোকামাকড়ও চলে যেতে পারে। এগুলো ল্যাপটপের ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতিকে নষ্ট করতে সক্ষম।
৪. পশুপাখি আছে এমন ঘরে ল্যাপটপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
অনেক সময় পশুপাখির লোম অথবা চুল ল্যাপটপের সার্কিট অথবা ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই এদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিবেন।
৫. ল্যাপটপ ব্যবহারের পূর্বে হাত ধুয়ে নিন
আপনার হাতে যদি কোনো ময়লা থাকে তাহলে ল্যাপটপের ট্যাচপ্যাড ব্যবহারের সময় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। পক্ষান্তরে পরিষ্কার হাত দিয়ে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে তা আপনার ল্যাপটপের উপর কোনো ময়লার প্রলেপ তৈরী করে না।
৬. এলসিডি মনিটরের যত্ন নিন
ল্যাপটপ বন্ধ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, এর কিবোর্ডের উপর কোনো পেন্সিল অথবা ইয়ার ফোন রেখে দিয়েছেন কিনা। এগুলো থাকা অবস্থায় যদি ল্যাপটপ বন্ধের চেষ্টা করেন তাহলে এলসিডি মনিটরের স্ক্রিনে চাপের সৃষ্টি করবে। সেই সাথে এটি স্ক্রিনে দাগ ফেলতে পারে। তাই ল্যাপটপ বন্ধ করার পূর্বে এটা খেয়াল রাখতে হবে।
৭. ল্যাপটপ বহনে সতর্ক হতে হবে
আমরা অনেকে ল্যাপটপ হাতে বহন করার সময় ল্যাপটপের শুধুমাত্র মনিটরের অংশটুকু ধরে নিয়ে যাই। এটি ল্যাপটপের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রথমত, এটি মনিটরে বা ডিসপ্লেতে চাপ সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত, এটি মনিটর আর কিবোর্ডের সংযোগ অংশের মারাত্মক ক্ষতি করে। অনেক সময় অনেকের ল্যাপটপের ঐ অংশগুলো দুর্বল এবং নড়বড়ে হয়ে যায়।
৮. পাওয়ার কর্ড টানাহেঁচড়া করে খুলবেন না
অনেক সময় আমরা চাকাবিশিষ্ট চেয়ার দিয়ে ল্যাপটপের পাওয়ার কর্ড বা তারকে টানাহেঁচড়া করি। এতে তার ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেক সময় ল্যাপটপের পাওয়ার বন্ধ করার জন্য আমরা দূর থেকে পাওয়ার কর্ড টান দিয়ে খুলি। এতে তারে চাপ পড়ে এবং ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ল্যাপটপের পাওয়ার বন্ধ করতে হলে আস্তে করে হাত দিয়ে কর্ড খুলে আনতে হবে।
৯. ল্যাপটপ সবসময় পরিষ্কার রাখবেন
আপনি চাইলে ল্যাপটপের যত্ন অনায়াসে নিতে পারেন। একটি ছোট্ট সাদা কাপড়ে অল্প একটু আফটার সেভ লাগিয়ে তা দিয়ে মনিটর পরিষ্কার করতে পারেন। সাদা কাপড়ে আঙ্গুল রেখে কিবোর্ডের বাটনগুলোকে পরিষ্কার করতে পারেন। এতে বাটনগুলোর আশেপাশে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। এছাড়া একটি টুথব্রাশ দিয়ে ল্যাপটপের ফ্যানে জমে থাকা ময়লাও পরিষ্কার করতে পারেন।
১০. তাপমাত্রা বিবেচনা করে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন
তাপমাত্রার পরিবর্তন বেশি হলে ল্যাপটপের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ে। অনেক সময় ল্যাপটপ ব্যবহারের পর তা বেশি গরম হয়ে গেলে কিছুক্ষণের জন্য তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। তারপর সাধারণ তাপমাত্রায় পৌঁছালে পুনরায় ব্যবহার করুন। আবার অনেক সময় বিশেষত শীতপ্রধান দেশে বাইরের ঠান্ডা আবহাওয়া থেকে ঘরের উষ্ণ পরিবেশে আসলে ল্যাপটপ সাথে সাথে ব্যবহার না করে, কিছুক্ষণ পর ব্যবহার করা উচিত। ল্যাপটপ কক্ষ তাপমাত্রায় পৌঁছানোর পর তা ব্যবহার করা উচিত |
১১. ল্যাপটপের উপর ভারী বস্তু রাখা থেকে বিরত থাকুন
অনেক সময় আমরা অনেক ভারী বই ল্যাপটপের উপর রেখে দেই। এগুলো ল্যাপটপের জন্য ক্ষতিকর। এতে কিবোর্ডের বাটন ল্যাপটপের মনিটরের উপর স্ক্রাচ বা দাগ ফেলতে পারে। অনেক সময় বেশি ভারী বস্তু হলে ল্যাপটপ ভেঙেও যেতে পারে।
১২. ল্যাপটপের বহনের জন্য সঠিক ব্যাগ ব্যবহার করবেন
সঠিক ল্যাপটপের ব্যাগ অনেক সময় আপনার ল্যাপটপকে সকল ধরনের আঘাত বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। ল্যাপটপের ব্যাগের সাইজ অবশ্যই ল্যাপটপের চেয়ে বড় হতে হবে। যাতে ল্যাপটপের তার সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যাগে রাখা যায়। ল্যাপটপের ব্যাগ ছোট হলে ল্যাপটপ পড়ে যেতে পারে। এছাড়া ল্যাপটপের ব্যাগ ভারী বা মোটা কাপড়ের হওয়া উচিত। তাহলে বহন করার সময় ব্যাগে আঘাত লাগলেও তা ল্যাপটপের কোনো ক্ষতিসাধন করবে না।