‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’- নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর কয়েক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। কিন্তু এখন নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।
সফল নারী উদ্যোক্তাদের কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়; Source: pariwisata.bolselkab.go.id
অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরো বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে৷ গ্লোবাল এন্টারপ্রেনারশিপ মনিটরের হিসেবে বিশ্বব্যাপী পুরুষদের ৫% এর তুলনায় ১৪% হারে নারী উদ্যোক্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। কী আছে এই সফলতার পেছনে? কিসের দ্বারা তারা সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠছে? হ্যাঁ, সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কাজ করে আরো অনেকগুলো বিষয়। যা প্রতিটি উদ্যোক্তার জানা এবং আয়ত্ত্ব করা দরকার। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে৷
১. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
আপনি যেই উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যার্জনের জন্য ব্যবসায় শুরু করতে চান সর্বপ্রথম সেটা নির্ধারণ করুন। কেননা আপনার লক্ষ্যের উপর নির্ভর করবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। বিশ্বের সবচেয়ে সফল নারী উদ্যোক্তাদের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন, তাদের সকল ব্যবসায়ের একটি শক্তিশালী কারণ রয়েছে এবং সেই কারণই তাদের ব্যবসায়ের প্রকৃত উদ্দেশ্য। আপনার লক্ষ্য যত স্পষ্ট হবে, ঠিক ততো দ্রুত আপনি সফল হতে পারবেন।
সাফল্য লাভের জন্য আগে লক্ষ্য নির্ধারণ করুন; Source: mam entrepreneures
যেমন একজন ছাত্রের লক্ষ্য যদি হয় ডাক্তার হওয়া, তাহলে সে ছোটবেলা থেকেই ডাক্তারি পড়তে হলে কোন লাইনে এগুতে হবে তা জেনে নেবে এবং সেই অনুযায়ী এগোনোর চেষ্টা করবে। আবার যদি তার নির্দিষ্ট লক্ষ্যই না থাকে তাহলে সে কী নিয়ে পড়াশোনা করবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাবে। ঠিক তেমনি আপনার লক্ষ্যই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে আপনি সফলতার পথ খুঁজে পাবেন না।
২. আত্মবিশ্বাস স্থাপন করুন
আত্মবিশ্বাস এমন একটা বিষয় যেটা না থাকলে মানুষ কোনো কাজে অগ্রসর হতে পারে না। ব্যবসায়ে সাফল্য লাভের জন্য নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যতক্ষণ না আপনি নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছেন ততক্ষণ কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। তাছাড়া নারীরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের ক্ষমতার অপ্রতুলতার জন্য পরিচিত। তাই যেকোনো ক্ষেত্রে লড়াই করে এবং ব্যর্থতাকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টির মাধ্যমে।
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আপনার যদি আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকে তবে কোনও বিনিয়োগকারী আপনার সাথে বিনিয়োগ করবে না। এমনকি আপনার অধীনস্থ কর্মীরাও আপনার সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে না। অতএব, আজ থেকেই নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজ শুরু করুন। নিজের প্রতিভাগুলোকে বড় করে দেখুন আর ভাবুন পৃথিবী আপনার এই প্রতিভাগুলোকেই চায়। নিজের গুণাবলীগুলোতে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপন করুন।
৩. ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিন
ব্যর্থতা হলো সফলতার অনুষঙ্গ। ব্যর্থতা না থাকলে মানুষ বুঝতেই পারতো না সফলতার মূল্য কতটুকু। তাছাড়া যে কোনো ব্যাবসায়ে ঝুঁকি থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই ব্যবসায়ের কোনো না কোনো সময় ব্যর্থতার মুখোমুখি হতেই হয়। তাই জীবনের যে কোনো সময় ব্যর্থতাকে মোকাবিলা করার মানসিকতা গড়ে তুলুন। নেপোলিয়ন হিল তাঁর “Think and Grow Rich” বইয়ে উল্লেখ করেছেন যে, “মানুষ যে চিন্তায় দিন রাত কাটায়, যে চিন্তা তার অবচেতনে সবচেয়ে বেশি জায়গা নিয়ে থাকে তার জীবনটা আসলে তেমনই হয়।”
ব্যর্থতা থেকে নতুন কিছু শিখুন; Source: enterprise-europe.co.uk
অর্থাৎ কেউ যদি সারাক্ষণ ভাবে যে সে ব্যর্থ হবে, তবে সে যত ভালো অবস্থাতেই থাকুক না কেন সে ব্যর্থ হবেই। কারণ, তখন তার কাছে কোনো সামান্য বাঁধাকেই ব্যর্থতার একটা অংশ বলে মনে হবে। আবার আপনার বিশ্বাস যদি হয় যতোই প্রতিকূলতা আসুক না কেন আমি এগিয়ে যাব, তাহলে আপনার সাফল্য অবধারিত। মনে রাখবেন ব্যর্থতার পরেই সফলতার বসবাস। তাই ব্যর্থতাগুলোকে সফলতার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ধরে নিয়েই আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে।
৪. নেতিবাচক লোকদের এড়িয়ে চলুন
জীবনে উপকার বা অনুপ্রেরণা দেওয়ার লোকের অভাব হলেও, আপনার কাজে বাগড়া দেওয়ার লোকের অভাব হবে না। কেননা কিছু কিছু মানুষ অন্যের সাফল্য সহ্য করতে পারে না। বিশেষ করে প্রায় সকল নারী উদ্যোক্তাদের এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই এমন লোকদের সবসময় এড়িয়ে চলুন যারা আপনাকে হিংসা করে, সন্দেহ করে এবং আপনাকে বা আপনার আকাঙ্ক্ষাকে উৎসাহ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। বরং এমন কারো সাথে মেলামেশা করুন যারা আপনাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিবে, সাহায্য করবে এবং আপনার কাজকে বাহবা দিবে।
৫. নিজের ব্যবসায় শুরু করুন
অনেক নারীই হয়তো নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে দেখার স্বপ্নকে লালন করে। কিন্তু ব্যর্থতার ভয়, শংকা, অনিশ্চয়তা এবং সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে তা আর হয়ে ওঠে না। অর্থাৎ শুধুমাত্র আরিয়ানা হাফিংটন, জেনি ক্রেইগ, ওপাহা উইনফ্রে এট আল- এর মতো বিখ্যাত নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্যের গল্পগুলো পড়েই লক্ষ্যার্জন করা সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন বাস্তবে তা প্রয়োগ করার মতো সাহস ও ক্ষমতা রাখা।
নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যবসায় শুরু করুন; Source: Beyond Pink
আপনার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপান্তর করতে হলে আপনাকেই সর্বপ্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। নিজের ব্যবসায়ের শুরুটা নিজেই করুন। বর্তমানে সফলভাবে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করা আগের চেয়ে অনেক সহজ। অনলাইনভিত্তিক নানা ব্যবসায় গড়ে ওঠার কারণে নারীরা ঘরে বসেই করতে পারছে নানারকম কাজ। তাই আর দেরি না করে নিজেকে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলুন সহজেই।
Featured Image Source: nttoman.com