খুব শীঘ্রই অথবা হয়তো এরই মধ্যে আপনি আর্কিটেকচার বা স্থাপত্যকলা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন। চা আর কফি খেয়ে সকালে ক্লাস, আর ঘুম চলে আসলে পিছনের ডেস্কে গিয়ে ঘুম, এটা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কিছু নয়। এটা সত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সময়টি আপনার জীবনের সবথেকে সুন্দর অংশ। তবে কিছু কিছু টিপস মেনে চলে সেটা আরো ভালোভাবে কাটানো সম্ভব।
১. কফির বিকল্প চা পান করুন
যদিও আমাদের দেশের মানুষের কফির থেকে চা খাওয়ার প্রবণতা বেশি, তবে অনেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে কফির প্রবণতা বেশি দেখা যায়। রাত জেগে যখন অটোক্যাডের উপর কাজ করবেন তখন এক কাপ কফির থেকে উত্তম কিছুই হতে পারে না।
কফিতে থাকা ক্যাফেরেন আমাদের রক্তের সাথে মিশে দ্রুত শক্তি প্রদান করে যেটা শেষমেষ শরীরেরই ক্ষতি করে। তবে চা তেও একই ধরনের ক্যাফেরিন থাকে যেটা আপনার মনোযোগ বাড়াতে আর মাথা ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া চায়ে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট কাজের প্রেশার এবং দুশ্চিন্তা দূর করে থাকে।
২. হাতে আঁকাআকি
অটোক্যাড আর বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে করতে আমরা অনেকে হাতে কাগজে আঁকা বন্ধ করে দেই। যেটা একজন শিক্ষার্থীর বড় ভুল। বিভিন্ন আঁকাআকির কাজটা কাগজে শুরু করুন। কারন এটা নতুন কিছু তৈরির অন্যতম মাধ্যম।
৩. নতুন এবং ধারালো স্কাল্প
এটা ঠিক, স্কাল্প পুরাতন হলেও সেটা যথেষ্ট ধারালো হয়ে থাকে। মোটামুটি প্রায় সব ধরনের কাজ তখনও সুন্দরভাবে করা যায়। তাই পুরাতন স্কাল্প ব্লেড দিয়ে অনেকে কাজ চালিয়ে থাকেন, যেটা এখনই বন্ধ করতে হবে।
হ্যাঁ এটা সত্য, স্কাল্প ব্লেড সস্তা নয়। তবে আপনার হাত যদি এই পুরাতন ব্লেড দিয়ে কাটে তাহলে বহুরকমের শারীরিক সমস্যা সেই কাটা স্থান থেকে দেখা দিতে পারে। এছাড়া আপনার হাত যদি নতুন ব্লেড দিয়ে কাটে তাহলে সেখানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং ক্ষতস্হান দ্রুত শুকায়।
৪. পিন ব্যবহার
আপনি যখন আপনার ড্রইং কাগজে শেষ করে প্রেজেন্টেশন বোর্ডে লাগাবেন তখন ভালো মানের পিন ব্যবহার করুন আর অবশ্যই সবসময় সোজা আর সমান্তরালভাবে আপনার ড্রইংগুলোকে লাগাবেন।
কারন এলোমেলোভাবে ভাবে সাজানো কাজের বিষয়ে আপনার উর্ধ্বতন কিছু না বললেও সেটা ভালো চোখে দেখবে না। এছাড়া দেখা যাবে আপনার সেই ড্রইংগুলো বহুদিন বোর্ডে লাগানো থাকতে পারে। সস্তা পিন হলে সেগুলোতে জং ধরবে ফলো আপনার ড্রইংয়ের কাগজ নষ্ট হবে।
৫. সিনিয়রের সাথে থাকুন
মনে রাখবেন আপনার থেকে কাজ ভালো পারে এবং অভিজ্ঞতা বেশি দেখেই তাদের অধীনে আপনি কাজ করছেন। সুতরাং তাদের সাথে সর্বদা থাকুন আর লক্ষ্য করুন তাদের কাজের উপর। সরাসরি উপদেশের জন্য কখনো অপেক্ষা করবেন না, খেয়াল করুন সে কিভাবে চিন্তাভাবনা করে, সমস্যা সমাধান করে।
৬. ঘুমের ক্ষেত্রে সতর্কতা
ঘুম মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও ইঞ্জিনিয়ারদের এমন সময় যায় যখন প্রজেক্টের কাজে ৮০ ঘন্টা নির্ঘুম কাটাতে হয়। অনেকে এই সময়ে অফিসে মধ্যেই নিজের ঘুমের ব্যবস্থা করে নেন। হয়তো বারো ঘন্টার পর আপনি বিশ মিনিট ঘুমিয়ে নিজেকে ফ্রেশ করে নিতে পারবেন তবে কর্মক্ষেত্রে যখন ঘুমাতে হবে তখন অতিরিক্ত পরিমাণ সর্তকতা অবলম্বন করবেন। কারন বিভিন্ন টুলস আর ধারালো যন্ত্রপাতি থাকবে যেগুলো বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার কারন হতে পারে।
আর একটা বিষয় মনে রাখবেন, জেগে থাকলে হয়তো আপনি কাজের সময় বেশি পাবেন, তবে কাজে সবথেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় যখন আপনি ফ্রেশ ঘুম থেকে উঠবেন। তাই ঘুমে অনিয়ম না করাই শ্রেয়।
৭. বিভিন্ন ম্যাগাজিন
বাজারের নিত্যনতুন বিভিন্ন ডিজাইনের উপর চোখ রাখুন। আর্কিটেকচার বিভিন্ন ম্যাগাজিন আপনার বিশাল সোর্স হতে পারে। সেসব বিভিন্ন ম্যাগাজিন আপনাকে নতুন নতুন বিভিন্ন আইডিয়া প্রদান করতে পারবে। তাই বিভিন্ন আর্কিটেকচার ও ডিজাইনিংয়ের ম্যাগাজিন নিয়মিত সংগ্রহে রাখুন।
৮. বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে আমাদের পড়াশোনার পদ্ধতি হচ্ছে অদ্ভুত। যার কারন আর্কিটেকচারের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। দেখা যায় প্রচুর খাটনির পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আপনি ভালো ফলাফল করতে পারেননি। তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে বলবো আশাহত না হতে। চাকরি জীবনের শুধু শুরুতে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফলের প্রয়োজন হতে পারে, তবে বাকি জীবনে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন কাজে আসেনা।
সবথেকে বড় বিষয় হচ্ছে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল করলেই যে চাকরি জীবনে সফল হতে পারবেন এমন কোন কথা নেই। বেশিরভাগ সময়েই কর্মক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা কিনা পড়াশোনায় তেমন ভালো ফলাফল দেখাতে পারেনি তারাই কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করে। আর বিশ্বে যদি সফল আর্কিটেক্টদের নাম উল্লেখ করেন তাহলে দেখবেন সেসব আর্কিটেক্ট ছিলো তাদের ব্যাচের মধ্যমানের অথবা খারাপ ফলাফল করা শিক্ষার্থী। অনেকের ক্ষেত্রে তো সেভাবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাও হয়নি। তাই কখনো নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।
৯. দেশ বিদেশে ভ্রমণ করুন
জীবনকে উপভোগ করতে অর্থের প্রয়োজন। আর অর্থ আয়ের জন্য দরকার চাকরি। তবে সমস্যাটি হচ্ছে আমরা চাকরি করে আয় করতে করতে ভুলে যাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নিজের জীবন উপভোগ করতে।
প্রতি চার মাসে কোথাও ঘুরে আসুন। যদিও হয় সেটা দুই তিন দিনের ট্যুর। আর সেই ট্যুর যে বড় বড় দেশের কোথাও হতে হবে এমনটা নয়। যেখানে ইচ্ছে হয় ঘুরে আসুন। আবহাওয়া পরিবর্তন আপনার কর্মক্ষেত্র সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করলে আপনি সে দেশের সংস্কৃতি আর স্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারবেন। যেগুলো আপনাকে অসাধারণ কিছু ডিজাইন করতে সহায়তা করবে।