দিন বদলাচ্ছে, সাথে বদলাচ্ছে জীবনযাপনের ধারা। প্রতিনিয়ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যুক্ত হচ্ছে নানান ধরণের নতুন প্রযুক্তি। যুগ বদলানোর সাথে সাথে কর্মক্ষেত্রে আসছে আমূল পরিবর্তন। আগে যেখানে জায়গা ছিল টাইপ রাইটারের, সেই জায়গা আজ দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার। এটিই সৃষ্টির নিয়ম। পুরাতনের বদলে তৈরী হবে নতুন জিনিস, পুরাতনের জায়গা নিবে নতুন সব জিনিস।
রাস্তার ধারে সোডিয়াম আলোর নিচে মোটামুটি সবাই হেঁটেছেন। কখনও কি দেখেছেন রাস্তার দুধারে সোডিয়াম লাইটের বদলে জ্বলন্ত মশাল? উত্তর টা না হবার সম্ভাবনাই বেশী কেননা এখন সেই জ্বলন্ত মশালের জায়গা করে নিয়েছে ইলেকট্রিক লাইট। উনিশ শতকের দিকে রাস্তার দুধারে ছিলো এমন জ্বলন্ত মশাল। অন্ধকার নামলে সেগুলোতে আগুন জ্বালানোর জন্য নির্ধারিত ব্যক্তিরা মই বেয়ে উঠতো এবং আগুন জ্বালাতো। এরকম অনেক পরিবর্তনই এসেছে। ল্যান্ডফোনের জায়গা করে নিয়েছে মোবাইল ফোন। এখন খুব কমই ফোনের বুথ দেখা যায়। এভাবে অনেক মানুষেরই চাকরির পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তনের নতুনত্বের তাগিদে। মানুষের কাজ সহজ করার জন্য নতুন উদ্ভাবন।
চলুন দেখে নিই যেসব কাজ বা চাকরিগুলো আগামী দশকের মাঝে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া যায় যে আগামী পাঁচ বছরের মাঝে প্রায় ৫.১ মিলিয়ন মানুষ তার কর্মস্থল হারাবে। এই অনুসন্ধান থেকে বুঝতেই পারছেন যে কি পরিমাণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়বে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটি তা হলো আপনি কি কাজ করছেন বা আপনি কি পেশায় আছেন! নিম্নোক্ত কাজগুলোর বিলুপ্ত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
- যারা ফাস্টফুড তৈরীর কাজে নিয়োজিত আছেন
- হিসাবরক্ষক
- নির্মাণকাজ পরিচালক
- নিরীক্ষক
- ট্রাক চালক
“বেশীরভাগ সময় দেখা যায় যে, যেসব কর্মক্ষেত্রগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তার পিছনের একমাত্র কারণ হলো সেইসব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়ে গিয়েছে”, এই কথাগুলো বলছিলেন ক্যারিয়ার বিল্ড এর মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা রোজমেরি। তিনি আরো বলেন, “যেমন আমরা যদি ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টগুলো দেখি তবে দেখা যাবে, সেখানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজ হচ্ছে এবং আরো উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।” দ্যা লস এঞ্জেলস টাইমে বলা হয়েছে, “আমেরিকার প্রায় অর্ধেক ট্রাক চালক তাদের চাকরি হারাতে পারেন কেননা বাজারে খুব শীঘ্রই স্বয়ংক্রিয় ট্রাক চলে আসবে।”
দক্ষ লোকের প্রয়োজনীয়তা
ধরুন, আপনার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, এখন আপনি কি ফোনটি ঠিক করতে আপনার ভাই যে কিনা ক্লাস সেভেনে পড়েন তার কাছে যাবেন নাকি একজন দক্ষ ব্যক্তির কাছে যাবেন যিনি কিনা মোবাইল ফোন ঠিক করতে পারদর্শী?
উত্তরটি অবশ্যই, দক্ষ ব্যক্তির কাছে যাবেন। জ্বী, এভাবেই সবসময়ে দক্ষ ব্যক্তির প্রয়োজন। আপনি যদি কোন কাজে পারদর্শী হয়ে থাকেন তবে আপনাকে সেই কাজ থেকে দূরে নেয়া অনেকটাই অসম্ভব। আবার ধরুন আপনি ডাক্তার হতে চান। আপনাকে সেজন্য হতে হবে অধ্যাবসায়ী, কেননা ডাক্তারদের জীবন আর দশটা সাধারণ মানুষের মত না। যেকোনো সময় আপনার কাজের ডাক পড়তে পারে। কিন্তু হ্যাঁ, এর আগে অবশ্যই নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত করতে হবে আর এর জন্য আপনাকে মোটা অংকের টাকাও গুণতে হবে। বিভিন্ন দেশে এই ডিগ্রী অর্জন করতে খরচ পড়ে প্রায় ৩০০,০০০ ডলার। তো সিদ্ধান্ত এখন আপনার, আপনি কিভাবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিজেকে দক্ষ হিসেবে প্রমাণ করবেন।
স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব কাজ সম্ভব নয়
ফোর্বস পত্রিকায় প্রকাশিত আর্টিকেলে বলা হয়েছে, মার্কেটিং, প্রচারের ব্যাপার এখন অনেকটা সহজ হয়ে গিয়েছে ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে। কিন্তু যখন বিভিন্ন বাজেট তৈরী করা প্রয়োজন কিংবা ব্যবসার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন তখন ব্যবসায়ীরা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপরেই ভরসা করে থাকেন। কম্পিউটার আপনাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতে পারবে, আপনার কাজকে সহজ করে দিতে পারে কিন্তু একজন মানুষের কাজ সম্পূর্ণ রূপে করা অসম্ভব কম্পিউটারের মাধ্যমে।
সুযোগ হাতছাড়া না করা
আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে চাকরি হাতছাড়া হবার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু সুযোগ আসবেই যদি আপনি মনে করেন সুযোগটি আপনার জন্য শুভ কিছু বয়ে আনবে সেক্ষেত্রে সুযোগ হাতছাড়া না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
“আমরা এক জরিপে দেখেছি যে দশজন মানুষের ভিতরে কেবল মাত্র একজন ব্যক্তির মাঝে এই ভয় থাকে যে তিনি তার কর্মক্ষেত্রে তার জায়গা হারাবেন একটি রোবটের জন্য” কথাটি বলছিলেন হেইফনার।
কাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে ফেলুন
কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য আপনাকে যেই কাজটি প্রথমেই করতে হবে তা হলো- কাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে ফেলা। আপনি নিজের কাজটি যতটা আনন্দের সাথে করবেন আপনি ততটাই সফলতা লাভ করবেন। আপনি যদি নিজেকে কাজের সাথে মানিয়ে তুলতে পারেন তাহলে দেখবেন কোনো কাজই কঠিন হবে না আপনার জন্য।
এ ছাড়াও আরো বিভিন্ন ভাবে আপনি আপনার কাজটিকে অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারেন। রোবট মানুষের জায়গা নিবে হয়তো একটা সময় কিন্তু তা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরী করেছেন। তাই রোবট যাতে আমাদের জায়গা দখল না করে তার জন্য নিজেদেরকে আরো দক্ষ করে তুলতে হবে এবং নিজেদেরকে কর্মক্ষেত্রে প্রমাণ করে দেখাতে হবে নিজের যোগ্যতা।