জীবনে সবাই সুখী হতে চায় তবে কেউ সুখী হতে পারে আবার কেউ পারেনা। শৈশবে নির্ভেজাল ও সহজ জীবন নিয়ে আমরা সুখী ছিলাম তবে যতই দিন যাচ্ছে ততই আমরা কেমন যেন অসুখী হয়ে যাচ্ছি। অভিজ্ঞতা অর্জনের সাথে সাথে আমরা আমাদের সুখকে হারিয়ে ফেলছি। হতাশায় ঘিরে যাচ্ছে জীবন। গত পর্বে প্রকৃত সুখী হওয়ার জন্য যে ৫টি ব্যাপারকে জীবন থেকে বিদায় জানাবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আলোচনা করবো আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে। আসুন জেনে নিই প্রকৃত সুখী হতে হলে কোন অভ্যাসগুলোকে আজই আপনার জীবন থেকে বিদায় জানাবেন তা সম্পর্কে।
জীবনের সকল দিকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করবেন না
জীবন অনিশ্চিত। জীবনে সুখ এবং দুঃখ উভয়ই থাকে। জীবনে সুখ ও সাফল্যের হিরন্ময় সকাল যেমন থাকে তেমনি থাকে দুর্বিষহ কষ্টের রাত। দুঃখ আছে বলেই জীবন এত সুন্দর। কোন এক কবি তার কবিতার চরণে দারুণ ভাবে বলেছিলেন “আলো বলে, অন্ধকা্র, তুই বড় কালো। অন্ধকার বলে, ভাই তাই তুমি আলো”।
এখন কথা হলো আপনি কিভাবে দুঃখ ও কষ্টের দিনগুলোকে অতিবাহিত করবেন। ধৈর্য সহকারে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকবেন নাকি হতাশায় জর্জরিত হয়ে মারা যাবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনার। জীবন সবসময় আপনার অভিমত ও পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে না। অপরিকল্পিত অনেক কিছুই ঘটতে পারে জীবনে। যে কঠিন ও দুরাবস্থার কথা আপনি স্বপ্নেও ভাবেন নি সেই কঠিন পথও কখনো কখনো পাড়ি দিতে হতে পারে।
আপনার যা করা উচিত
নিয়তিকে কোনো কিছু দিয়ে বাঁধা যায় না, ফ্রেমে বন্দী করা যায় না। তাই জীবনের কোন কিছুকে আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখবেন না। জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কথাগুলো বলছি। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম বিজ্ঞানী হবো। তাই বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করবো বলে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলাম। ফলাফল ভালো হওয়ায় বিজ্ঞান বিভাগ পেয়েছিলাম। তা স্বত্ত্বেও বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী আমাকে পড়াশুনা করতে হয়েছে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে। তারপর স্বপ্ন দেখতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার। এবং মনস্থির করেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ডিপার্টমেন্টে যদি চান্স না পাই তাহলে পড়াশুনা ছেড়ে দিবো।
অনেক দৌড় ঝাঁপ, পড়াশুনা করার পরও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হাসি হাসেনি। আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হোম ইকোনোমিকস কলেজে পড়াশুনা করতে হয়েছে। এমন আরো অনেক ঘটনা রয়েছে যার জন্য আমি স্বেচ্ছাচারী মনোভাব পোষণ করতাম। কিন্তু জীবন আমাকে ইঞ্চি ইঞ্চি করে শিখিয়েছে কখনো কখনো পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছু হয়না, তার মানে এই নয় জীবনকে নিঃশেষ করে দিতে হবে। বরং হতাশা, কষ্ট ভুলে দূর্বার গতিতে সামনের পথে এগিয়ে গেলেই বিজয়ী ও সুখী হওয়া সম্ভব।
অন্যের প্রত্যাশা বা সামাজিক অন্য কিছুর ভয়ে জীবন চালানো বন্ধ করুন
আমরা সবাই সামাজিক জীব। সমাজে সবার সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। নিজের মতো স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা ও মত প্রকাশের অধিকার আছে। তাহলে কেন সমাজের ভয়ে ত্রিশ বছরের পূর্বেই আপনাকে বা আমাকে বিয়ে করতে হবে? কেন অন্য লোকের অভিমত অনুযায়ী চলতে হবে?
আপনার যা করা উচিত
কখনো অন্যের কথা শুনে বিচলিত হবেন না। নিজের ভেতরের কথাগুলো শুনুন। নিজের ইচ্ছা, অভিলাষকে প্রাধান্য দিন। যেভাবে বাঁচতে ইচ্ছা করে সেভাবে বাঁচুন। তাহলে সুখী হতে পারবেন। লোকলজ্জার ভয়ে কোন কিছু করলে বা অন্যের ইচ্ছায় কোন কাজে পা বাড়ালে ফলাফল ভালো হয় না। তাই নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটান।
নিখুঁত হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিন
জীবনের সব কাজ নিখুঁত ও শ্রেষ্ঠ হবে তা ভাবা বাদ দিন। এটা বোকামী ছাড়া কিছু নয়। মানুষের জীবনের সব কাজ ভালো হয়না। ভুল ত্রুটি সবার থাকে। চাঁদ কত্ত সুন্দর! অথচ চাঁদেরও কলঙ্ক আছে। তাই বোকার স্বর্গ থেকে বেরিয়ে আসুন। আপনার ভুলকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিন।
আপনার যা করা উচিত
জীবনে সুখী হতে হলে ভুলকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিন। নিজের সৃজনশীলতাকে বাড়ি তুলুন। বেশি বেশি বই পড়ুন। ভালো ভালো সিনেমা দেখুন। জ্ঞান অর্জনে ব্রতী হন।
নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দেওয়া বন্ধ করুন
জীবনে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। অনেক প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে যখন স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়বে। তবে যত প্রতিকূলতা আসুক না কেন নিজের স্বপ্নকে কখনো বানের জলে বিসর্জন দিতে নেই। স্বপ্নকে লালন করতে হয়, বাঁচিয়ে রাখতে হয়।
আপনার যা করা উচিত
আপনার যে কাজে প্যাশন রয়েছে সেই কাজে যোগদান করুন। ধরুন, আপনার ফটোগ্রাফি ভালো লাগে কিংবা আপনি ভালো ছবি আঁকতে পারেন তাহলে সেই কাজ শুরু করে দিন। দেরি করবেন না। আপনি যদি লেখালেখি করতে ভালবাসেন, তাহলে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করুন। আপনার যদি ড্রেস ডিজাইন করতে ভালো লাগে তাহলে আজ থেকে তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু করে দিন। যে কাজ করে আপনি প্রশান্তি পাবেন সে কাজকে প্রাধান্য দিন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করতে মন চাইলে তাই করুন।
যে জিনিসগুলো অন্যকে সুখী করেছে, সে জিনিসগুলো আপনাকে সুখী করবে তা ভাবা বন্ধ করুন
প্রকৃতিগত কারণে মানুষ একে অন্যের চেয়ে আলাদা। সবার এক জিনিস ভালো লাগবে তা নয়। অনেকে আছে নদীতে ঘুরতে ভালোবাসে। ঘোরাঘুরি তাকে আনন্দ দেয়। আপনার সেটা ভালো নাও লাগতে পারে। বই পড়ে যদি আপনি আনন্দ পান তাহলে তাই করা উচিত।
আপনার যা করা উচিত
অন্যরা কী করছে, কিভাবে চলছে, কী খাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে এইসব নিয়ে সময় নষ্ট না করে একান্ত নিজের কথা ভাবুন। নিজেকে নিজেকে সময় দিন, ভালবাসুন। তাহলে সুখী হতে পারবেন।
জীবনের ছোট ছোট বিষয়গুলোকে অবজ্ঞা করা বন্ধ করুন
আমরা সবসময় ভাবি অনেক দামী কিছু হয়ত আমাদের সুখী করতে পারবে। দামী গাড়ি, বাড়ির পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত হয়ে যাই। জীবনে অনেক ছোট ছোট জিনিস আছে যা থেকে সুখ পাওয়া যায়। যেমন একগুচ্ছ গোলাপ কেনা, এক ডজন চুড়ি, এক পাতা টিপ কেনার মধ্যেও অফুরন্ত সুখ লুকিয়ে থাকে, যদি আপনি তা অনুভব করতে পারেন।
আপনার যা করা উচিত
প্রতিটি ছোট ছোট বিষয় থেকে আনন্দ খুঁজে নিন। আইস্ক্রিম, ফুচকা, ভেলপুরি খাওয়ার মাঝেও যে আনন্দ আছে তা খুঁজে নিন। তাহলে বড় রেস্টুরেন্টে না খেতে পাওয়ার দুঃখ কিছুটা হলেও ঘুচবে।