এইচ এস সি পরীক্ষার পর জীবনের একটি অন্যতম বড় যুদ্ধ হলো ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন টেস্ট। এই একটি এক্সাম জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়াটা সবারই স্বপ্ন থাকে। এরকম অনেক আপাত অসম্ভবকে সম্ভব হতে দেখেছি জীবনের এই সময়টাতে। এই অভিজ্ঞতার কথা বলার উদ্দেশ্য হলো লক্ষ্য কিভাবে ঠিক করা উচিত আর কিভাবে তা অর্জন করা যাবে সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য।
লক্ষ্য ঠিক করা এবং অর্জনের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকে মনের অজান্তেই লক্ষ্য নির্ধারণের মনোভাব গড়ে উঠে। যেমন ছোটবেলায় আমরা কেউ ডাক্তার হতে চাইতাম কিংবা পাইলট আরো অনেক কিছু। ওই বয়সটাতে আমরা বুঝতাম না সেগুলো আমাদের লক্ষ্য। বড় হওয়ার সাথে সাথে বুদ্ধি এবং পরিস্থিতির কারণে অনেকের লক্ষ্য পরিবর্তন হয়ে থাকে। তার মানে হলো লক্ষ্য নির্ধারণের বিষয়টি আমরা অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই শিখে থাকি। কিন্তু লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যে একাগ্রতা এবং শক্তিশালী মনোভাবের প্রয়োজন তা আমাদের মাঝে প্রায়শই অনুপস্থিত থাকে।
আর সেজন্যই বয়সের সাথে আমাদের নানান লক্ষ্যগুলোও কিন্তু পরিবর্তন হতে থাকে। যদি একাগ্রতা এবং অনুশীলন ধরে রাখতে পারি কোন পরিস্থিতিই কিন্তু আপনাকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারবে না। লক্ষ্য নির্ধারণ যেমন জরুরী ঠিক তেমনি অর্জণের জন্য আপনাকে কিভাবে কাজ করে যেতে হবে,কোন ধরণের একাগ্রতার প্রয়োজন তা জানাও কিন্ত জরুরী। আপনি টাকা উর্পাজন করতে চান, ওজন কমাতে চান কিংবা নতুন ব্যবসা করতে চান একটি স্বচ্ছ এবং কার্যকরী লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা ছাড়া কিন্তু এইসব শুধু আপনার স্বপ্ন বা ইচ্ছে হয়েই থাকবে। আর তাই সকল ইচ্ছে বা স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তা অর্জণের জন্য সঠিকভাবে কাজ করে যাওয়ার বিকল্প কিছু হতে পারে না। একবার লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেললে এরপর তা কার্যকরণের জন্য সবসময় কাজ করে যেতে হবে। এমন নয় যে আপনি লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেললেন কিন্তু এরপর বাস্তবায়নের জন্য যদি কাজ না করে যান তাহলে আপনার লক্ষ্য শুধুই একটি নিছক পরিকল্পনা থেকে যাবে।
লক্ষ্য নির্ধারণ থেকে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগোতে হলে আপনাকে তিনটি দিকে লক্ষ্য রাখত হবে। এই তিনটি বিষয় আপনি যদি আপনার জীবনে অর্ন্তভুক্ত করতে পারেন তাহলে যেকোন লক্ষ্য অর্জনের পথই আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
১. স্বচ্ছ ধারণা রাখুন
আপনি কি কাজ করতে চান বা কোন লক্ষ্যটি অর্জন করতে চান সে ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা রাখুন। ওজন কমাতে চান, টাকা উর্পাজন করতে চান, ব্যবসা করতে চান, পড়াশুনা করতে চান ঠিকমতো? আপনি আসলে কি চাচ্ছেন? নিজের ইচ্ছার ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে সেগুলো শুধু আপনার ইচ্ছেই থেকে যাবে। আপনি এরচেয়ে কিছু করতে না চাওয়ার ইচ্ছে ভালো যদি না কি করতে চান সে ব্যাপারে আপনার স্বচ্ছ ধারণা না থাকে।
যদি ওজন কমাতে চান, তাহলে কেন চাচ্ছেন? কি করতে চাচ্ছেন? খাবার কমাবেন নাকি ব্যায়াম? কতদিনের মধ্যে কমাতে চান? এরকম প্রশ্নগুলোর উত্তর যা আপনার লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত সে বিষয়ে স্বচ্ছ উত্তর নিজের কাছে রাখুন। মোট কথা আপনার লক্ষ্যটি কেন থেকে শুরু করে কতদিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করবেন তার সকল উত্তর আপনার আয়ত্তে থাকতে হবে।
অনেকগুলো লক্ষ্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটাকে আলাদা করে বাছাই করতে হবে। আপনি নতুন ব্যবসা করতে চান আবার ওজন কমাতেও চাচ্ছেন, আপনাকে বাছাই করতে হবে কোন লক্ষ্যটি আপনার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই লক্ষ্যের পেছনে সময় ব্যয় করুন, কেন কিভাবে, কতটুকু সময় এইসব প্রশ্নের স্বচ্ছ একটি ধারণার আপনার বাছাইকৃত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের পেছনে আপনাকে সময় ব্যয় করতেই হবে।
আপনি যখন কি, কেন, কখন, কতক্ষণ, কিভাবে এসব প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনার লক্ষ্যের জন্য পেয়ে যাবেন তার মানে আপনার লক্ষ্যের ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ ধারণা আপনার রয়েছে, আর সে উত্তরগুলোর জন্য যখন আপনি কাজ শুরু করবেন এরপর পরবর্তী সফল ফলাফলগুলো আপনার হাতের মুঠোই থাকবে।
২. সফলতার জন্য কাজের পরিকল্পনা
সফলতার জন্য কাজ করার পরিকল্পনা করলে আপনার লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে । প্রথমে লক্ষ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা এরপর সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কি কি করবেন তার একটি বিশদ পরিকল্পনা আপনার চেষ্টাকে সফলতার পথ দেখাবে নিঃসন্দেহে। একটি তালিকা তৈরি করে ফেলুন আপনি কি কি করতে চান এরপর সেই তালিকায় একটি করে কাজ শেষ আর চিহ্নিত করুন সেই কাজটি শেষ হয়েছে তার প্রমাণস্বরুপ। দেখবেন তালিকাটি বার বার দেখলে আপনার কাজগুলো জলদি শেষ করে লক্ষ্যটি অর্জনের স্পৃহা বেড়ে যাবে আরো দ্বিগুণ।
লক্ষ্য অর্জনের জন্য যদি আপনাকে ১০০টি কাজ ও করতে হয় তবুও সেই কাজের একটি লিখিত তালিকা তৈরি করে ফেলুন। এই অভ্যাসটি আপনাকে অনেক বেশি উদ্যমী করে তুলবে একই সাথে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার কাজের একটি বিশদ তালিকা সবসময় আপনাকে মনের অজান্তেই সতর্ক করবে কাজগুলো সফলভাবে শেষ করার জন্য। এই অভ্যাসটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেক বেশি সহায়ক একটি মাধ্যম।
৩. সঠিক এবং সবসময় কাজ
লক্ষ্য অর্জনের জন্য আপনার লক্ষ্য সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা হলো, এরপর কি কি করবেন লক্ষ্য অর্জনের জন্য তা পরিকল্পনা করলেন, শেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো এবার আপনার লক্ষ্যের জন্য সঠিক এবং একটানা কাজ করে যাওয়ার মতো একটি সংকল্প আপনার নিজের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমাদের মাঝে বেশিরভাগই কি করবো তার পরিকল্পনা করতে করতে সঠিক সময়গুলো নষ্ট করে ফেলি কিন্তু পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করি না। লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবশ্যই পরিকল্পনা মোতাবেক সঠিক কাজ আপনাকে করে যেতে হবে।
আপনি এরকম সফল কোন ব্যক্তিত্ব পাবেন না যারা লক্ষ্য অর্জনের জন্য শুধু পরিকল্পনা করে গেছে কিন্তু তা অর্জনের জন্য সঠিক এবং অধ্যবসায় নিয়ে কাজ করে নি। লক্ষ্য অর্জনেরর জন্য ধের্য্যশক্তি অনেক বড় একটি অনুপ্রেরণার উৎস। আপনি যদি ধের্য্য নিয়ে লক্ষ্যের জন্য সঠিকভাবে একটানা কাজ করে না যান তাহলে আপনার লক্ষ্য অর্জনের তালিকা কোন সুফল বয়ে আনবে না।
এছাড়া আপনার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত প্রতিটি কাজ নিয়মিত করার অভ্যাসও গড়ে তুলতে হবে। এভাবে লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিয়মিত, সঠিকভাবে একাগ্রতার সাথে কাজ করে গেলে যেকোন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।