হতাশা নামক ব্যাধির জন্য প্রায়শই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে অনেককেই। অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশুনাধীন এক আপুর কাছে শুনেছিলাম তার হতাশার গল্প। তিনি বলেছিলেন, রাতের পর রাত জেগেছেন। প্রচন্ড হতাশায় রাতে ঘুম হতো না বা ঘুমালেও দুঃস্বপ্ন দেখে মাঝরাতে উঠে বসে থাকতেন। এরপর শুরু করলেন চিকিৎসকের পরার্মশ নেওয়া।
১.সপ্তাহে অন্তত একদিন সময় কাটান বন্ধুদের সাথে
একটি গবেষণায় জানা গিয়েছে, হতাশায় আক্রান্ত ৮৬ শতাংশ ব্রিটিশ মহিলারা সপ্তাহে একদিন সময় কাটান বন্ধুদের সাথে, যাদের মাঝে ৬৫ শতাংশ মহিলারা অনেক বেশি ভালো এবং স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন যখন তারা বন্ধুদের সাথে থাকেন। এমনকি প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগ এক প্রকার মানসিক প্রফুল্লতা, যা কিনা ঔষধের মতো কাজ করে আপনার হতাশাকে নিরাময় করার ক্ষেত্রে। প্রতিনিয়ত বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ সাহায্য করবে আপনার আত্নবিশ্বাসকে বাড়াতে এবং উৎসাহিত করবে আপনার মাঝে ইতিবাচক ভাবনাগুলোকে নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে পারেন বন্ধুদের মাঝে কেউ কোনো শারীরিক ব্যায়াম করে স্বাস্থ্য রাখছে সুন্দর। নিয়ে নিতে পারেন সেই সব বন্ধুদের থেকে ব্যায়ামের কিছু টিপস। করতে পারেন গঠনমূলক আলোচনা কিংবা ঘুরে আসতে পারেন নতুন জায়গাগুলো থেকে।
২. পোষা কুকুর কিংবা প্রাণীর সাথে কাটাতে পারেন কিছুটা সময়
খুব বেশি অবাক হওয়ার মত ব্যাপারটি শুনালেও সায়েন্স ইতোমধ্যে এই বিষয়টি প্রমাণ করেছে যে, আপনি যদি আপনার পোষা প্রাণীর সাথে কিছুটা ভালো মুহুর্ত কাটান এই ব্যাপারটি আপনার ব্রেনের Oxytocin এবং Secrotonin নিঃসরণ করে যা আপনার মুডের পরিবর্তনের জন্য দায়ী, এই উভয় হরমোনই ইতিবাচকভাবে বৃদ্ধি পায়। কুকুর পোষার ব্যাপারটি আপনার হতাশার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করতে পারে।
৩.সপ্তাহে তিনবার করে বারো মিনিট করে নিতে পারেন ম্যাসাজ
আপনি কোনো পেশাদারের থেকে ম্যাসাজ নিন কিংবা আপনার পরিবারের কারো থেকে, ফলাফল একই। এটি একটি প্রাকৃতিকভাবে মানসিক অবস্থান পরিবর্তনের মাধ্যম। “ডিপ্রেসড ডায়ালসিস পেশেন্ট ” নামক একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা ম্যাসাজ নিচ্ছেন না তাদের থেকে যারা সপ্তাহে তিন বার ১২ মিনিট করে ম্যাসাজ নিচ্ছেন তারা বেশি উৎফুল্ল সময় কাটাচ্ছেন।
৪. প্রতিদিন সকালে চা কিংবা কফি পান করতে পারেন
Edward j. Cumella, phD, সাইকোলজিস্ট এবং পরিচালক, একটি গবেষণায় জানিয়েছেন, প্রতিদিন পরিমিত ক্যাফেইন ডিপ্রশনের হার কমিয়ে দেয় প্রায় ৫০ শতাংশ। তাই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই এক কাপ চা কিংবা কফি পান করুন। এই বিষয়টি আপনার দিনকে শুরু করবে চাঙা ভাবে।
৫. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
আখরোট, কিউয়ি, আনারস, টমেটো এই ফলগুলো ফলের বাজারে সবসময় পাওয়া যায়। এইসব ফলের এসিড ডিপ্রেশনের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ট্রিপ্টোফ্যান যা পাওয়া যায় মাছ, মুরগী, বাদাম কিংবা মটরশুঁটিতে। এইসব খাদ্যের শর্করা আপনার মস্তিষ্কের Secrotonin কে বৃদ্ধি করবে। যা সাহায্য করবে আপনার মুডকে পরিবর্তন করতে। তাই খ্যাদাভ্যাসের পরিবর্তন আপনাকে দিতে পারে একটি সুস্থ জীবন।
৬. নিয়মিত ভিটামিন ট্যাবলেট
অবশ্যই ডাক্তার থেকে জেনে নিবেন যেকোনো ধরনের ঔষধ সেবনের পূর্বে। তবে Duke University এর এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, যাদের অস্বাভাবিক ভাবে মনের ভাবের পরিবর্তন হয় বা যারা অল্পতেই খুব রেগে যায়, ওজন বেড়ে যাচ্ছে তারা সেক্ষেত্রে যদি ৬০০ মি.গ্রা. Choromium Picoliante প্রতিদিন একবার সেবন এবং সেই সাথে কিছু খাদ্য সংযমী হন তাহলে হতাশা কেটে যাবে জলদিই।
৭. ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেরুদণ্ড সোজা করে হাত দুটো উঁচু করে এবং হাত অবশ্যই মাথার পিছনের দিক দিয়ে উঁচু করবেন এবং জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিবেন ১০ বার। যতটা সম্ভব হাত দুটোকে প্রশস্ত করার চেষ্টা করবেন এবং দ্রুত বিছনায় শুয়ে আবারো হাত প্রশস্ত করে জোরে নিঃশ্বাস নিবেন এবং এই পুরো ব্যায়াম তিন বার করে করবেন। এতে করে সহজেই শরীর এবং মনের ক্লান্তিকে ঝেড়ে ফেলতে পারবেন নিমিষেই।
৮. হাসার চেষ্টা করুন
গবেষণায় জানা গিয়েছে, যেকোনো হতাশাকে ঝেড়ে ফেলার জন্য হাসি উত্তম প্রতিষেধক। হাসি আপনার ভালো এবং সুস্থ বোধ করার হরমোনকে উদ্দীপিত করে। চেষ্টা করবেন সব সময় হাসিখুশি থাকতে। সেক্ষেত্রে মজার মুভি সংগ্রহ করতে পারেন কিংবা কৌতুক পড়তে পারেন যা আপনাকে হাসাতে সাহায্য করবে।
৯. এলার্ম সেট না করে ঘুমান
এই নিয়মটি তাদের জন্য যারা ঘুমের রুটিন ঠিক করতে চান কিন্তু পারছেন না। এরকম অনেকেই আছেন যারা সারাদিন ক্লান্তির পরও ঠিক মতো ঘুমাতে পারছেন না। যত ক্লান্তিই ভর করুক শরীরে, রাত ৯ টা পর্যন্ত জেগে থাকুন। আগেই ঘুমিয়ে পড়বেন না যাতে মাঝ রাতে জেগে উঠেন। আর তাই রাত ৯ টার পর ঘুমাবেন। এবং ততক্ষণ ঘুমাবেন যতক্ষণ না প্রাকৃতিক ভাবে ঘুম ভাঙ্গে। ততদিন পর্যন্ত এই রুটিন মেনে চলুন যতদিন পর্যন্ত আপনার মনের ক্লান্তি দূর না হয়। এভাবে ঘুমালে কিছুদিন এর মাঝেই আপনার ঘুম আসবে সঠিক নিয়মে। আর নিয়ম মাফিক ঘুম হতাশা থেকে দূরে থাকার অন্যতম মাধ্যম।
১০. ঘুমের জায়গার পরিবর্তন করুন
অনেক হতাশাগ্রস্থ মানুষ আছেন যারা ইনসমনিয়ায় ভুগেন। যাদের এরকম সমস্যা রয়েছে তারা চাইলে ঘুমানোর জায়গা পরিবর্তন করে অন্য রুমে ঘুমানোর চেষ্টা করতে পারেন। আর প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস ইনসমনিয়ার সমাধান হতে পারে। এছাড়া দিনে ২০ মিনিটের বেশি ঘুমাবেন না, দুপুর তিন টার পর যেকোনো ধরনের ক্যাফেইন এড়িয়ে চলবেন এবং বিছানায় যাওয়ার আগে ১ ঘন্টা বিশ্রাম নিবেন।
১১. নিজেকে নিয়ে সহজ ভাবনা ভাবুন
যখনই কোনো কিছু নিয়ে মানসিকভাবে হতাশ অনুভব করবেন, নিজেকে বুঝাবেন আপনি মানুষ, রোবট নন। সব কাজই ১০০% সফল হবে তা নয়। যতবার নেতিবাচক ভাবনা মনকে গ্রাস করবে ততবারই ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে সেগুলোকে প্রতিস্থাপন করবেন। আর ইতিবাচকভাবে ভাবার এই অভ্যাসটি আপনাকে হতাশা থেকে দূরে রাখবে।
১২. প্রতিদিনের রুটিনে নিয়ে আসুন পরিবর্তন
মাঝে মাঝে একই রুটিনে চলতে চলতে জীবনে আসতে পারে একঘেয়ামি। তাই কখনো ছুটি নিয়ে ঘুরে আসুন পছন্দের জায়গাগুলো থেকে। ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে পারেন। নিত্য নৈমিত্তিক রুটিনে এইসব ছোট পরিবর্তন আনাটা জরুরী যাতে জীবনের ছন্দপতন না ঘটে, হতাশা যেন গ্রাস না করে ফেলে আপনার জীবনকে।
১৩. হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন
আবহাওয়ার সাথে মনের সূক্ষ্ম সম্পর্ক রয়েছে। অনেকেই শীতের মৌসুমে খুব মনমরা অনুভব করেন। শীতের মৌসুমে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না থাকায় একরকম অন্ধকার পরিবেশে কাজ করতে করতে বা একই রকম পরিবেশে থাকতে থাকতে মন অনেক সময় বিরুপ আচরণ শুরু করে। তাই শীতের মৌসুমে দিনে তিন বার করে দশ মিনিট করে হাঁটার অভ্যাস করুন যাতে মন এবং শরীরে কিছুটা সূর্যের আলো পড়ে। শুধু শীতকালই নয় প্রতিদিন বিকেলে হাঁটার অভ্যাস আপনার মনকে রাখবে সুস্থ।
Great write up