যখন টেলিভিশনের পর্দায় দেখি একটা বাচ্চা ছেলে খেলনা সামগ্রী নিয়ে খেলছে। দৃশ্যটা দেখতে খুব ভালো লাগে। তখন খেলনাগুলো নিজের বাচ্চার জন্য কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠি। আসলে কেউ একজন ক্যামেরার পিছন থেকে গল্পটি তৈরি করেছিল। যে গল্পের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পণ্যটি কিনতে আগ্রহী হয়েছিলাম। আর ঐ খেলনা বিক্রি করেই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু কীভাবে এত ভালো কনটেন্ট তৈরি করেন ক্যামেরার পিছনের ঐ মানুষটি? কীভাবে সমন্বয় করেন এতগুলো প্রতিভা সম্পন্ন মানুষদের? কীভাবে শব্দ, গল্প, চিত্র, অভিনয় সবগুলো প্রতিভা বের করে আনেন সবার মাঝ থেকে? জেসন বার্গার ক্যামেরার পিছনের একজন মহানায়ক। তিনি অধিকাংশ সময় সক্ষম হয়েছেন এরকম প্রতিভা বের করে আনতে। আজ তার কিছু পরামর্শ জানব। যে পরামর্শ গুলো সহায়ক হয়ে উঠতে পারে ক্যামেরার পেছনের একজন সফল উদ্যমী মানুষ হতে।
কাজকে ভয় পাবেন না
জেসন বার্গার এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ শুরু করেছিলেন ২০০২ সালে। ২০০৪ সালে সকল বাঁধা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছিলেন জগৎ বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের একজন প্রডিউসার। তিনি বলেন “আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রত্যেক শাখা থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। সবসময় জানতে চেষ্টা করেছি কীভাবে ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে হয়। এর জন্য আমাকে ময়লা আবর্জনাও ফেলতে হয়েছে”। তিনি আরও বলেন “যখন ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করি তখন প্রতিটি শাখায় যেতাম। যেমন: সাউন্ড, লাইটিং, কোরিওগ্রাফি থেকে প্রডাকশন। তাদের বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করতাম কোনো সাহায্য লাগবে নাকি? এমনকি তাদের সরঞ্জাম গুলো বাসে তুলে দিতে বা নামাতে পিছুপা হতাম না”।
একদিন জেসন বার্গারের সাথে প্রডিউসার ফ্রাঙ্ক সিনটন এর সাক্ষাত হয় এবং তার সাথে সহকারী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। বার্গার তার এই জীবন যুদ্ধে আরও বলেন “ফ্রাঙ্কের সাথে মূলত চুক্তি ছিল সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলার সময় এবং ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার সহকারী হিসেবে। কিন্তু আমি তার সাথে কাজ করতাম মধ্যরাত পর্যন্ত”। বার্গার এই কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য্য দ্বারা হতে পেরেছেন একজন সফল মানুষ। তাই আমি বলব তার জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। আমাদের উচিৎ কোন কাজকেই নিম্ন মানের না ভেবে প্রতিটি কাজ করে যাওয়া।
ঘুমিয়ে না থেকে সুযোগের সঠিক ব্যবহার করুন
বার্গার সবসময় সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতেন। এ প্রসঙ্গে বলেন “আমার বস ছিল একজন অসাধারণ মানুষ। তার সাথে অনেক ভালো ভালো কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। একদিন ফ্রাঙ্ক আমাকে বললেন ‘ফিয়ারলেস’ এবং ‘দি স্পোর্টস লিস্ট’ দুটির মাঝে যেকোনো একটির জন্য শুট নিতে। আমি ক্যামেরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম এবং দুটির জন্যই শুট নিলাম। এডিটরের সাথে কাজ করলাম। বলা বাহুল্য, দুটি কাজই কয়েকটি পর্বের মাধ্যমে শেষ হয়”।
এরপর একবার ফ্রাঙ্ক সিনটন একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যএর ছবিতে কাজ শুরু করেন। একদিন বার্গার ফ্রাঙ্ককে আবেদন করেন, তাকে অন্তত দুটি এপিসোডে কাজ করার সুযোগ দিতে। বার্গারের আবেদনে ফ্রাঙ্ক রাজি হয়। বার্গারের করা দুটি এপিসোডের একটির জন্য ছবিটি এ্যামি অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পায় । এভাবেই বার্গার প্রতিটি সুযোগের সঠিক ব্যবহার করেছিলেন। তার এই গুনের কারণেই হয়ে উঠতে পেরেছিলেন একজন বিখ্যাত প্রযোজক।
নিজেই নিজের সমালোচক হয়ে উঠুন
একজন ভালো প্রযোজক হতে হলে অবশ্যই আপনার প্রতিটি কাজ হতে হবে মানসম্পন্ন। মানসম্পন্ন কাজের জন্য সূক্ষ্মতা আবশ্যিক। কারণ সূক্ষ্মতার সমানুপাতে থাকে গুনগত মান। মানসম্পন্ন কন্টেন্ট তৈরি করতে হলে নিজেই নিজের সমালোচক হতে হবে। এতেকরে প্রতিটি কাজ হবে নির্ভুল।
এ প্রসঙ্গে বার্গার বলেন “আমি যখন কাজ করার জন্য মাঠে নামি তখন মাঠের গর্তগুলো অর্থাৎ সমস্যা গুলো খুঁজে বের করি। নিজেকে কল্পনা করি ক্লায়েন্টের জুতার মাঝে। এতে করে সমস্যা সমাধানে মনোযোগী হওয়া সহজ হয়। সমাধানের পর নিজেকে বলি এবার আমি প্রস্তুত”। এভাবেই জেসন বার্গার প্রতিটি কাজ সূক্ষ্ম ও নির্ভুল করে তুলতেন। তাই বলতে চাই নিজেই নিজের সমালোচক হন। সবচেয়ে ভালো কাজটি প্রকাশ করুন। তাহলে হাজারো প্রযোজকের মাঝ থেকে দর্শকই আপনাকে প্রকাশ করবে।
একটি স্বাভাবিক কর্মক্ষেত্র তৈরি করুন যা আপনার মনোভাবের সাথে মিলে যায়
এক্ষেত্রে বার্গার বলেন “আমাদের অফিস অনেকটা খেলার মাঠের মতো। যেখানে কাজের সাথে খেলাধুলাও হয়। এখানে আমরা সবাই মিলে বছরে শত শত কন্টেন্ট তৈরি করি।
আমরা এখানে কিছু মজার মানুষ পেয়েছি যারা অনেক মজার করতে পারে সেই সাথে একজন দক্ষ এডিটর, প্রডিউসার, ডিরেক্টর, লেখক যাদের সমন্বয়ে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান।
সময় থাকতে প্রয়োজনীয় ঝুঁকি গ্রহণ করুন
বিখ্যাত আমেরিকান বাস্কেটবল খেলোয়াড় মিশেল জর্ডান বলেন “আমি জীবনে একবার নয় দুইবার নয় বারবার ব্যর্থ হয়েছি। আর এজন্যই সফল হয়েছি।” এই নীতি বাক্যটি আমার খুব পছন্দের। কারণ ব্যর্থতা একজন উদ্যোক্তার জীবনে ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। ব্যর্থতার মাধ্যমেই একজন উদ্যোক্তা তার সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন। এই চিহ্নিত সমাধানের মাধ্যমে এগিয়ে যান সফলতার দিকে। এক্ষেত্রে মিশেল জর্ডান বলেন “যদি আপনি কনটেন্ট বিজনেস সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে “না” শব্দটি অবশ্যই শুনেছেন। কিন্তু এই নেগেটিভ শব্দটিরকে গুরুত্ব দিলে চলবে না। আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। কিছু ঝুঁকি অবশ্যই নিতে হবে।
ধরুন আপনি স্কি-ড্রাইভ করতে চলেছেন। আপনি জানেন আপনাকে নিচের দিকে নামতে হবে এবং এখানে বহু রকমের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য কি আপনি ড্রাইভ বন্ধ করে দিবেন? অবশ্যই না। কারণ এই ঝুঁকিটা গ্রহণ না করলে আপনার কারুকার্য দেখাতে পারবেন না। মনে রাখবেন, কিছু কাজ পাহাড়ের ওপর থেকেই করতে হয় নিচ থেকে নয়। তাই সময়ের সাথে ঝুঁকি গ্রহণ করুণ। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন এবং সমাধানের চেষ্টা করুন। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যান। সফলতা কেউ আঁটকে রাখতে পারবে না”।
feature Image: pressacademy.com