‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’।
ছোটবেলায় শেখা এ নীতিবাক্যটি কিন্তু আমরা ভুলিনি। সেই বয়সে এই কথার মর্ম সেভাবে না বুঝলেও বড়বেলায় অর্থাৎ কর্মজীবনে কিন্তু এর অর্থ খুব গভীর। কোনো একটি প্রতিষ্ঠান চালনার মূল শক্তিই হচ্ছে কর্মীরা। আর কর্মীরা যদি মিলেমিশে দলবদ্ধ হয়ে কাজ না করে তাহলে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই সেটি বিপদজনক। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতি বিশেষ একটা মানেন না, আবার অনেকে আছেন যারা এর বাইরে কাজ করেন না।
একসাথে দলগত হয়ে কাজ করলে অনেক সমস্যার সমাধান দ্রুত বের করা যায়। এছাড়াও তৈরি হয় নানা ধরনের নতুন ভাবনা। কিন্তু কীভাবে তৈরি হবে একটি সফল দল? চলুন জেনে নিই সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ।
লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা
দলের প্রধান লক্ষ্যই হতে হবে কাজের মূল উদ্দেশ্যকে জানা এবং সেগুলোকে পূরণ করার চেষ্টা থাকা। সফলভাবে একটা টিমওয়ার্ক করতে পারলে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই সেটা ফলপ্রসূ হয়। তাই কাজের আগেই স্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়ে দিতে হবে দলকে।
দলের সবারই লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি; image source: culturalawarness.com
একটি দল, একটি লক্ষ্য। এই দলের সব মানুষকেই কাজ নিয়ে সফলতার চেষ্টা করতে হয়। যখনই আপনি একটি দল নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন তখন তাদের সবাইকে কাজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিন। তাদেরকে জানান আপনাদের এই কাজের উদ্দেশ্য কী। আবার উদ্দেশ্য জানানো হলেও বিপত্তি হতে পারে সদস্যদের নিয়েও। দল যত সুগঠিতভাবেই তৈরি করা হোক না কেন প্রতি দলেই এমন কেউ থাকেন যিনি কাজ নিয়ে খুব একটা ভাবেন না। দল নিয়েও তার ভাবনা কম। এমন হলে সেই ব্যক্তির সাথে আলাদাভাবে কথা বলুন। তাকে দলের কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। সর্বোপরি দলকে দিয়ে কীভাবে কাজ করিয়ে নেওয়া যায় সেটি আপনিই সবচেয়ে ভালো বুঝবেন। আপনি যত দলকে সামলে নেবেন, ঠিক ততটাই কাজের ভালো সাফল্য পাবেন।
সম্ভাব্য ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা
দলের সকল সদস্য একে অপরের উপর বিশ্বাস করবে এমনটিই যেন হয় দলের পরিবেশ। এতে করে অনাগত সমস্যা থেকেও যেমন দূরে থাকা যাবে তেমন সমস্যা তৈরি হলে সেগুলো নিয়ে দলগতভাবে কাজও করা যাবে। কোনো কাজ করতে হলে সেখানে নানা ধরনের সমস্যা আসতে পারে। যেমন, যোগাযোগ সমস্যা, আইনি সমস্যা, সঠিক পরিকল্পনা না নেওয়ায় সমস্যা। হুট করে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিতে পড়ে গেলে যেন সেগুলো মেনে নিয়ে কাজ করতে সমস্যা না হয় এমন মানসিকতা থাকতে হবে দলের সবার মাঝে। যদি কোনো সদস্য কাজ করতে সম্মত না হয় তবে তার সাথে খারাপ ব্যবহার বা মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি করা যাবে না। একজন সদস্য কাজ করতে পারছেন না বা চাচ্ছেন না এমনটি হলে সেটিও দলের অন্যান্য সদস্যকে সহজে মেনে নিতে হবে।
যে কোনো পরিস্থিতিতে দলের সবাইকে ঝুঁকি নেবার মানসিকতা থাকতে হবে; image source: propelconsult.com
যোগাযোগ করতে হবে সম্মানের সাথে
যোগাযোগ সব সময় সৎ, মুক্ত আর সম্মানীয় হওয়া চাই। মানুষ যেন কথা বলার সময় দ্বিধায় না ভোগে, সমস্যা সমাধানের পথ যেন দলের সদস্যদের কাছ থেকে পায় এমন মানসিকতা থাকা উচিত সবার মাঝে। দলের সাথে বাহিরের যে কেউই কথা বলতে আসুক না কেন তিনি যেন নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারেন এমন পরিস্থিতি থাকতে হবে সব সময়। শুধু জরুরি প্রয়োজনে কেউ এসে কথা বলবে এমন নয়, সহকর্মীদের সাথেও কথা বলতে হবে সম্মানের সাথে। নিজ দলের বাইরে অন্য কারও সাথে কথা বলা যাবে না বিষয়টি যেন কখনোই এমন হয়ে না দাঁড়ায়।
অবশ্যই একে অপরের সাথে কথা বলার সময় শ্রদ্ধাশীল মনোভাব রাখতে হবে; image source: Entrepreneur
দলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে শক্তিশালী মনোভাব থাকা
দলের সকল সদস্যের দলীয় প্রতিশ্রুতি নিয়ে শক্তিশালী মনোভাব থাকতে হবে। এছাড়াও সিদ্ধহস্ত হতে হবে দলের সকল ধরনের সিদ্ধান্ত এবং কার্যকারিতা নিয়ে। যখন দলের সদস্যরা একে অপরের সাথে সময় কাটায়, কাজ নিয়ে আলোচনা করে, কীভাবে দলকে আরও সুগঠিত করা যায় সে নিয়ে ভাবে তখন এই প্রতিশ্রুতিগুলো যেমন আরও মজবুত হয় তেমন সবার মাঝে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
হতে পারে দল নিয়ে কাজ করার সময় একেকজনকে একেক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কারণ কঠিন অবস্থা সব সময় বলে কয়ে আসে না।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, মতের মিল না হওয়া, সঠিক জ্ঞানের অভাব, এবং একেকজনের একেক মত এইসব বিষয় নিয়ে হতে পারে নানা সমস্যাও। এইসব পরিস্থিতি হুট করে চলে আসলে দলীয়ভাবেই তার মোকাবিলা করতে হবে। দল গঠনের সুবিধা কিন্তু এটাই। একেকজন একেক বিষয়ে ভালো হবে। সবাইকে সাথে নিয়ে, সবার মতামত নিয়ে একসাথে কাজ করতে হবে। নইলে কেন অন্য একটি প্রতিষ্ঠান আপনার দলের কাছে তাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট সম্পাদন করতে দেবে? তার চাইতেও বড় কথা হচ্ছে, একেক দলে যখন একেক ধরনের মানুষ মিলে কাজ করে, তখন নানা ধরনের আইডিয়া শেয়ার হয়, আর এ থেকেই বেরিয়ে আসে বড় এবং সফল কোনো চিন্তা।
সৃজনশীলতা আর নতুনত্ব কাজে আনে উদ্দামতা
যে কাজে যত বেশি নতুনত্ব, সে কাজকে তত বেশি সৃজনশীল বললে ভুল বলা হবে না। বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া যখন একসাথে হয়ে নতুন কিছু তৈরি হয় তখনই আসলে কাজে উদ্দামতা আসে। কাজের প্রতি স্পৃহা বাড়ে। দলীয়ভাবে কাজ করার সময় কখনোই বলা যাবে না, ‘আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি’ বা ‘একদম বাজে আইডিয়া’! এই ধরনের কথায় কাজের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন বাকি সদস্যরা।
সবাই একসাথে কাজ করলে সৃজনশীল কাজের পরিবেশ তৈরি হয়; image source: theblog.adobe.com
একটি দলের প্রধান শক্তিই হচ্ছে সকল সমস্যা সমাধানে, কাজে আরও অগ্রগতি আনতে, লক্ষ্য নির্ধারণে, চমৎকার আর নতুন কিছু তৈরিতে। আর এই ধারা যেন বজায় থাকে সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে সব সময়।
উন্নতির ধারা ধরে রাখার চেষ্টা
দলের সব সময় চেষ্টা থাকে যে কাজটিই করা হলো সেটির উন্নতির ধারা যেন বজায় থাকে। প্র্যাকটিসের পাশাপাশি একে অপরের সাথে কাজ করার মানসিকতাও বজায় রাখতে হবে। কীভাবে নিজেদের পরিশ্রম, উদ্দামতা আর নিত্য নতুন আইডিয়া নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় সে ধারা বজায় রাখবে দলের সদস্যরাই।
দলকে সব সময় সামনের দিকে এগিয়ে চলার প্রত্যয় থাকতে হবে; image source: byurs
দলের সমস্যা এবং দ্বন্দ্বের সমাধান
দলীয়ভাবে সকল ধরনের সমস্যা আলোচনা এবং সেগুলো সমাধানের পথ বের করতে হবে নিজেদেরকেই। অন্য একজন দলীয় সদস্যের সাথে দ্বন্দ্ব এবং মতের মিল না হওয়া এমন ঘটনা ঘটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এমনটি যেন দলের কাজে বিরূপ মনোভাব না ফেলে সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি।
বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া
দলের সদস্যরা সবাই মিলে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এবং এই বিষয়টি কাজের শুরুতেই দলীয়ভাবে বলে রাখতে হবে। কাজ শেষে সঠিকভাবে রিপোর্ট জমা দিতে পারলে দলের ভালো দিকগুলোই সামনে আসে। এবং বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় সাপোর্টও পাওয়া যায়।
Feature image: cbmcint.com