কাজ ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। জীবনের প্রয়োজনে আমাদের প্রতিনিয়ত কাজ করতে হয়। আবার কোনো কাজ মানুষ একা করে না। পৃথিবীর সব মানুষ একে অপরের সাথে মিলে সংঘবদ্ধভাবে একটা বিশাল ক্লাবের মতো হয়ে যার যার কাজ করে চলেছে। এভাবে আমরা রোজগার করি এবং পৃথিবীকে সচল রাখি। সুতরাং নিয়মিত কাজ করে যাওয়া সত্যি প্রয়োজন। কিন্তু ক্যারিয়ারের উন্নতি বা বেশি লাভের আশায় আমরা যখন অতিরিক্ত কাজ করি তখনই ছোট ছোট ভুল হতে শুরু করে। এইসব ছোট ছোট ভুল থেকে জন্ম নেয় বিরাট বড় বিপর্যয়!
কাজেই অতিরিক্ত কাজ কখনো কখনো অকাজে পরিণত হয়। আপনিও কি অতিরিক্ত কাজ করেন? কাজের চাপে আপনার জীবন বিপন্ন হতে চলেছে? আপনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না আপনার সাথে কি হচ্ছে? আজকের এই নিবন্ধে আমি এমন কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যার নিরিক্ষে আপনি বুঝতে পারবেন কাজ করতে করতে কখন আপনাকে থামতে হবে, কখন বিশ্রাম নিতে হবে।
১. আপনার ছোট ছোট ভুল হচ্ছে?
আপনি কি গত সপ্তাহের কাজের রিপোর্ট তৈরি করেছেন? সেই রিপোর্টে কি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব তথ্য উল্লেখ আছে? অথবা গতদিন যে নতুন প্রকল্প শুরু করলেন তার কতটা অগ্রগতি হয়েছে? অফিসের নিয়ম মেনে আমরা নিত্যদিন নির্ধারিত কাজ শেষ করি। কিন্তু যখন আমরা নিজের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত কাজ করি তখন আমাদের মস্তিষ্ক সব কাজে যথেষ্ট মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। এই কারণেই সৃষ্টি হয় ছোট ছোট ভুল, স্বাভাবিক সময়ে যে ধরনের ভুল আমরা সচরাচর করি না।
অতিরিক্ত কাজ করলে যেকারো এমন হতে পারে। আপনি যদি একজন বিক্রয় কর্মী হন তাহলে অতিরিক্ত কাজ করলে অসংখ্য ভোক্তা ক্রেতাকে সামাল দিতে গিয়ে আপনি ছোট ছোট ভুল করবেন, যাতে আপনার কোনো কোনো ক্রেতা মনঃক্ষুন্ন হবেন। নিঃসন্দেহে আপনার ব্যবসার জন্য এটি একটি খারাপ দিক। অথবা একটি ভিডিও বা লেখা সম্পাদনা করতে গিয়ে আপনি এত সূক্ষ্ম ভুল করবেন যা আপনার চোখে ধরা পড়বে না, কিন্তু পাঠক বা দর্শক দেখামাত্রই ওই ভুলটি সবার আগে তাদের দৃষ্টিগোচর হবে।
এমন ছোট ছোট ভুল যেকোনো মহৎ ও বড় কাজ ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং আপনার সাথে যদি এমন হয় তাহলে বুঝে নিবেন এবার আপনার কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন।
২. কাজের চিন্তা আপনাকে বিষণ্ণ করে তুলছে?
কাজ করতে গিয়ে কখনো খুব বিষণ্ণ লাগে? নিজের কর্ম তালিকা দেখে ভীত হয়ে পড়েন? অথবা কিভাবে এত কাজ শেষ করবেন এই চিন্তায় কান্না পায়? আসলে কর্মজীবী মানুষের জন্য এটি খুব সাধারণ একটি ঘটনা। কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই আমাদের এমন মানসিক অবস্থায় পড়তে হয়। এমন হলে বুঝতে হবে এখন আপনার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন।
যত কাজের চাপে থাক না কেন, কিছু সময়ের জন্য অন্তত আপনাকে বিশ্রাম নিতেই হবে। আপনি চাইলে পরবর্তী দুই একদিন সম্পূর্ণ কাজ ছাড়া থাকার চেষ্টা করুন। পরিবারকে সময় দিন, বন্ধুদের সাথে গল্প করুন, অথবা পছন্দের কোনো সিনেমা দেখুন। এরপরও স্বাভাবিক দিনযাপন করতে গিয়ে যদি আপনার বিষণ্ণ লাগে তবে বুঝতে হবে কিছুটা দীর্ঘ ছুটি আপনার প্রয়োজন। সপ্তাহখানেকের ছুটি নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে যান। কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে নিজেকে সময় দিন। প্রকৃতি দেখুন, চারদিকের সৌন্দর্য নিয়ে ভাবনা, আপনার বিষণ্ণতা চলে যাবে।
৩. আপনি সব সময় ক্লান্ত থাকেন?
অফিসের করিডোরে অলসভাবে হাঁটার সময় কি আপনার কাজের চাপ অনুভব হয়? একটা অজানা তাড়না আপনাকে আচ্ছন্ন রাখে? একটা অজানা আকাঙ্ক্ষা অথবা ব্যস্ততা সব সময় আপনাকে তাড়া করে ফেরে? আবার মুহূর্তেই মনে হয় যথেষ্ট হয়েছে! মন বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে!
আপনি যদি বিশ্রাম ছাড়া টানা কাজ করতে থাকেন তাহলে এই প্রবণতা আপনার মধ্যে দেখা দিবে। কোনো রকম বিশ্রাম ছাড়া আপনি যেমন ব্যস্ত ভাবে কাজ করে যান, তেমন কর্মস্থলে যাওয়া এবং আসার পথেও আপনার একই রকম ব্যস্ততা অনুভূত হবে। এটা অনেকটা ছোট ছোট ভুল করার মতো।
আপনার চারপাশের সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে অথচ আপনার মনে হবে সবকিছুই বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন, এলোমেলো। যদি এমন বিশৃংখল মানসিক অবস্থায় উপনীত হন তবে বুঝতে হবে এবার আপনার কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন।
৪. আপনি নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন?
দৈনন্দিন কাজের চাপ, সহকর্মীদের সাথে মিথস্ক্রিয়া এবং আপনার খিঁটখিটে স্বভাব এই সব কিছু নিয়ে ভাবতে গিয়ে আপনি বেশ বিচলিত হয়ে পড়েন। মনে হয় কোনো কাজে ঠিকঠাক হচ্ছে না। এমন অবস্থায় নিশ্চিতভাবেই আপনি নিদ্রাহীনতায় ভুগতে শুরু করবেন! ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করার পরও আপনার ঘুম আসবে না।
এর অর্থ হলো আপনি প্রতিদিন অতিরিক্ত কাজ করছেন, যা আপনার মনকে বিক্ষিপ্ত করে তুলেছে। আর তাই অপ্রয়োজনীয় চিন্তা আপনার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
মনে রাখা দরকার কাজের প্রয়োজনেই আমাদের পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। প্রতিদিন পর্যাপ্ত এবং নিরাপদ ঘুম আপনার পরবর্তী দিনের কর্মশক্তি যোগায়। সুতরাং এমন নিদ্রাহীন অবস্থার সৃষ্টি হলে বুঝতে হবে আপনার কিছুটা বিশ্রাম প্রয়োজন। কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে নিজের মতো বাড়িতে থাকুন, অথবা কোথাও ঘুরে আসুন। এই বিক্ষিপ্ততা এবং নিদ্রাহীনতা চলে যাবে।
কাজ জীবনের জন্য, জীবন কাজের জন্য নয়। সুতরাং যারা কাজের মাধ্যমে জীবনকে সুখী, সুন্দর করে তুলতে পারেন তারাই বুদ্ধিমান, তারাই সফল। সুতরাং কাজ করুন এবং তার সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, আর সুখে থাকুন।