অনলাইনে কাজ করতে আগ্রহী ও উদ্যমী তরুণদের জন্য ইউটিউব এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম গুলোর একটি। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করতে হলে নিজস্ব কোনো সার্ভার মেনটেন করা দরকার হয় না। ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট লাগে না। বছর শেষে ডোমেইন ও হোস্টিংয়ের বিল দেওয়ারও প্রয়োজন হয় না। অথচ ইচ্ছামতো যত খুশি ততো ভিডিও আপলোড করা যায় এবং সবগুলো ভিডিও থেকে সবসময় রোজগার করা যায়।
ইউটিউবে ভালো কনটেন্ট দিতে পারলে দীর্ঘস্থায়ী আয়, খ্যাতি, সুনাম সব একসাথে অর্জন করা যায়। তাই তরুণদের কাছে ইউটিউব এখন একটি প্যাশনের নাম। কিন্তু শুধু প্যাশন থেকেই ইউটিউবিং শুরু করলে চলবে না। সাফল্য পেতে কাজে নামার আগেই কিছু বিষয় ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। তবে সব কথার শুরুতে বলতে হয়, পৃথিবীতে পরিশ্রম ছাড়া কোনো কাজে সাফল্য পাওয়া যায় না। সুতরাং অনলাইন বা অফলাইন যেকোনো ব্যবসায় সাফল্য পেতে আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। ইউটিউবও তার ব্যতিক্রম নয়।
আজ ইউটিউবিং শুরু করার জন্য কিছু প্রাথমিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল। যারা অন্যদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, অথবা নিজের প্যাশন থেকে ইউটিউবিং শুরু করতে চান আজকের নিবন্ধ তাদের জন্য।
১. লক্ষ্য নির্ধারণ
যেকোনো স্টার্টআপ শুরু করতে হলে যেমন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়, তেমনি ইউটিউবেও সফল হতে হলে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। কেননা একটি নতুন ইউটিউব চ্যানেল নতুন একটি স্টার্টআপ শুরু করার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সুতরাং ইউটিউবে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনি কেন ইউটিউবিং করতে চান, এবং শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছাতে চান, এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে নিন। শুধু পর্যাপ্তসংখ্যক সাবস্ক্রাইবার এবং ভিউ পাওয়া, আর তা থেকে রোজগার করা যেন আপনার প্রধান উদ্দেশ্য না হয়।
নিশ্চয়ই আমার এই কথা শুনে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন? ভাবছেন, ইউটিউবে সাফল্যের জন্য ভিউ, সাবস্ক্রাইবার এবং রোজগার করাই তো প্রধান উদ্দেশ্য! নিশ্চয়ই তাই। কিন্তু আপনি যদি শুধু ভিউ, সাবস্ক্রাইবার এবং রোজগারের পিছে ছুটতে থাকেন তাহলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে আপনি ব্যর্থ হবেন। কেননা পর্যাপ্ত ভিউ পাওয়ার জন্য নিম্ন মানের কনটেন্ট তৈরি করবেন, এবং দ্রুত সাফল্য পাওয়ার জন্য আপনি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, যা কোনভাবেই শুভ লক্ষণ নয়। সুতরাং এই প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে, এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
অর্থাৎ অন্যের সাফল্য দেখে একই ইউটিউব চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট আপলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে, এবং মনোযোগ সহকারে নিজের স্বতন্ত্র লক্ষ্য অর্জনের জন্য ক্রমাগত কাজ করে যেতে হবে। তবেই আসবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।
২. সাবস্ক্রাইবার
সাবস্ক্রাইবার পাওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্য ইউটিউবে আপনার সামগ্রিক সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা পর্যাপ্ত সংখ্যক সাবস্ক্রাইবার পাওয়ার অর্থ হলো তারা প্রত্যেকেই আপনার কনটেন্ট পছন্দ করে, এবং নিয়মিত দেখতে চায়। কিন্তু আপনি চাইলেই অল্প সময়ে অধিক সাবস্ক্রাইবার অর্জন করতে পারবেন না। আবার একটি চ্যানেলে বিভিন্ন ধরনের জনপ্রিয় কাজ করেও অধিক সাবস্ক্রাইবার অর্জন করতে পারবেন না।
সুতরাং ধীরে ধীরে হলেও ক্রমাগত একই জাতীয় কন্টেন্ট তৈরি করুন, এবং সাবস্ক্রাইবার তৈরি করুন। মনে রাখবেন, আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা যদি ঊর্ধ্বমুখী হয়, তবে ক্রমশ তা চক্রবৃদ্ধির হারে বাড়তে থাকবে। সুতরাং এ নিয়ে বিচলিত হবার কিছু নেই। আপনি শুধু মনোযোগ ধরে রেখে ক্রমাগত ভিডিও আপলোড করে যান। ভুলেও বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট আপলোড করে একই চ্যানেলে অধিক সাবস্ক্রাইবার আনার প্রচেষ্টা চালাবেন না। তাতে সাফল্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
৩. আয়
একটি নতুন চ্যানেল খোলার পর চ্যানেলটি মনিটাইজ করতে ইউটিউবের কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। অর্থাৎ যে কোনো নতুন চ্যানেলে ন্যূনতম ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং চার হাজার ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকার পর মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করা যায়। তারপর ইউটিউব কর্তৃপক্ষ সাত দিন থেকে এক মাস সময়ের মধ্যে কপিরাইট আইন এবং কমিউনিটি গাইডলাইন অনুসারে আপনার আবেদন পর্যালোচনা করে মনিটাইজেশনের অনুমতি দিয়ে থাকে।
পূর্বে এই নিয়মনীতি অনেকটাই সহজ ছিল। এখন থেকে দুই বছর আগে যে কোনো চ্যানেল খোলার পর প্রথম দিন থেকেই চ্যানেলটি মনিটাইজ করে আয় করা যেত। তারপর ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম পরিবর্তন করে ন্যূনতম ১০ হাজার ভিউ থাকার নিয়ম চালু করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে এই নিয়মটি ও পরিবর্তন করে ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং চার হাজার ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকার নিয়ম প্রবর্তন করে।
ইউটিউবের সাফল্য কি ভাগ্য নির্ভর?
অনেক অনলাইন বিশ্লেষক বলে থাকেন ,ইউটিউবের সাফল্য সম্পূর্ণ ভাগ্যনির্ভর। কিন্তু আসলে মোটেও তা নয় । যথাযথ পরিকল্পনা আর পরিশ্রম যদি যেকোনো স্টার্টআপকে সফল করে তুলতে পারে, তবে ইউটিউব কেন নয়? ইউটিউবে সাফল্যের জন্য প্রধান দুটি বিবেচ্য বিষয় হল ধৈর্য এবং একাগ্রতা।
ইউটিউবে সাফল্য পেতে হলে আপনাকে ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং একাগ্রচিত্তে ক্রমাগত কনটেন্ট তৈরি করে যেতে হবে। অবশ্য কনটেন্টের ধরন বুঝে ইউটিউবে সাফল্যের জন্য সময় নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ কনটেন্টের সময় উপযোগিতার কারণে কোনো কোনো চ্যানেল সফল হতে বেশি সময় নেয়, আবার কোনো কোনো চ্যানেল খুব দ্রুত সাফল্য অর্জন করে। এটা নির্ভর করে আপনি দর্শকের কতটা মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছেন তার ওপর।
এই ছিল ইউটিউব নিয়ে আজকের আলোচনা। সামনের দিনে ইউটিউবের আরও খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে লেখার আশা রাখছি।