মোবাইল ব্যবহারকারীরা নিয়মিত যে অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করে তার উপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালের মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের প্রবণতা নির্ধারণ করা যেতে পারে। আপনি যদি অ্যাপ্লিকেশন ডেভলপারদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আপনাকে আগে জানতে হবে বর্তমানে তাদের অ্যাপের উপর কত লোক নির্ভরশীল। এএনওডিএ মোবাইল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি একটি গবেষোর ভিত্তিতে একত্রিত করেছে শীর্ষ ৭টি মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট প্রবণতাকে।
বর্তমানে অ্যাপ্লিকেশনের উন্নয়ন বিপ্লবে রূপ নিয়েছ। প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে অ্যাপ্লিকেশনের পর্যায়ক্রমিক উন্নয়ণের জন্য খরচ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এসব সূচকের বিবেচনায় আমরা এখন দেখবো ২০১৮ সালের মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট প্রবণতা কতদূর এগিয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার
বেশিরভাগ জনপ্রিয় অ্যাপে ব্যবহার হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যার ফলে ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই অ্যাপগুলো ভালোবেসে ফেলছে। যখন কোনো অ্যাপ্লিকেশান ব্যবহারকারীর ইনপুট করা তথ্যের সাথে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হয় তখন তারা এটি বেশি পছন্দ করে। যদিও অন্যান্য শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অনেক বেশি কারণ তাদের শ্রম রোবট দ্বারা পরিচালিত হয়।
কোম্পানি তাদের অ্যাপে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করছে, সাথে মোট অপারেটিং খরচও কমাচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় এই পদ্ধতির মাধ্যমে তারা অটোমোবাইল শিল্পের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছে। এমন কিছু পরিসংখ্যান রয়েছে যা ২০১৮ সালের অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের প্রবণতা প্রকাশ করে।
জুনিপার গবেষণা মতে, কোম্পানির চ্যাটবটগুলো ২০২২ সালের মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সঞ্চয় করবে। যেখানে ২০১৭ সালে এই সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল ২০ মিলিয়ন ডলার। গার্টনারের মতে, ২০২০ সালের আগে চ্যাটবটগুলি কোম্পানির ৮৫ শতাংশ কাস্টমার সার্ভিসের দায়িত্ব পালন করবে।
মোবাইল ওয়ালেটের ব্যবহার
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সময়ের চাহিদা মেটাতে বর্তমানে ডেভেলপাররা মোবাইল ওয়ালেট অ্যাপ তৈরিতে অধিক আগ্রহী। তারা অধিক নিরাপত্তার সঙ্গে মোবাইল ওয়ালেট অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছে এবং গ্রাহক তা ব্যবহারও করছে অনেক বেশি।
এর মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের আর্থিক লেনদেন মোবাইল ফোনেই সম্পন্ন করার সুযোগ পাচ্ছে। এই প্রবণতা ইন্টারনেটের বুকিং সিস্টেম এবং ক্রয় সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। এর ফলে গ্রাহকগণ তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট না করে খুব সহজে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে পরছেন। এমন সব সুযোগ-সুবিধা গ্রাহকদের মোবাইল ওয়ালেট ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলছে।
ক্লাউডভিত্তিক অ্যাপস
মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের একটা বড় সমস্যা হলো স্টোরেজ জনিত সমস্যা। সকলে মোবাইলে অনেক ধরণের অ্যাপ ব্যবহার করে যা ফোনের স্টোরেজ থেকে জায়গা নেয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, এমন সময় আসে যখন স্টোরেজ পূর্ণ হয়ে যায় এবং কিছু অ্যাপ আনইনস্টল করতে বাধ্য হতে হয়।
এই সমস্যার সমাধান করা হয়েছে ক্লাউড-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাধ্যমে। এই পদ্ধতিতে ক্লাউড সার্ভারে অ্যাপ ডেটা সংরক্ষণ করা হয় যার ফলে মোবাইল ফোনের স্টোরেজ ব্যবহৃত হয় না এবং আগের তুলনায় অনেক বেশি অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড ও ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ক্লাউড প্রযুক্তি মোবাইল ব্যবহারকারীদের এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ক্লাউড অ্যাপ্লিকেশানের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লাউড-ভিত্তিক অ্যাপসগুলোতে মোবাইল ট্র্যাফিকের ব্যবহার ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৯০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উদ্দীপিত বাস্তবতা প্রযুক্তি
সামাজিক মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন এবং গেমিং অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মধ্যে ব্যবহার রয়েছে উদ্দীপিত বা উদ্দীপ্ত বাস্তবতা প্রযুক্তির। জনপ্রিয় সামাজিক মিডিয়া Snapchat এক্ষেত্রে একটি ভালো উদাহরণ, যেখানে এই প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। এছাড়া Instagram অ্যাপ্লিকেশনেও এই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপিত বাস্তবতা ২০১৮ সালের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রবণতাগুলোর মধ্যে একটি।
২০১৪ সালে উদ্দিপিত বাস্তবতা প্রযুক্তি প্রথম জনপ্রিয় হতে শুরু করে। খুব দ্রুত এবং কম সময়ে এটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন শিল্পে তার পথ খুঁজে পেয়েছে। ২০১৮ তে এর সম্পূর্ণ প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলা যায় ২০১৯ সালে ৫ বিলিয়ন এর বেশি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে উদ্দীপিত বাস্তবতা প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে।
পরিধেয় প্রযুক্তি বৃদ্ধি
পরিধেয়যোগ্য অ্যাপ্লিকেশন বর্তমানে অনেক বেশি জনপ্রিয়। স্বাস্থ্যসেবায় প্রযুক্তির জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে পরিধেয়যোগ্য অ্যাপ্লিকেশন। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যায়াম, রুটিন, হৃদস্পন্দন, আহার, অনুষ্ঠান ইত্যাদি নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পরিচালনা করতে পারেন।
এমন আরো অধিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে ২০১৮ সালে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপাররা স্মার্টফোনের জন্য নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করবে। iPhones এবং Android smartphones নির্মাতাদের লক্ষ্য করলে দেখা যায়, তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিধেয়যোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সুতরাং পরিধেয় অ্যাপ ২০১৮ সালে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের প্রবণতা হতে চলছে।
ইন্টারনেটে জিনিসপত্র বৃদ্ধি
আইওটি টেকনোলজি ২০১৭ সালে বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহার করা হয়েছে। রিয়েল এস্টেট কোম্পানি আইওটি ব্যবহারের মাধ্যমে সেন্সর ভিত্তিক স্মার্ট ভবন, স্মার্ট পার্কিং এবং স্মার্ট শহর নির্মাণ করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আইওটি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্কুলগুলো বাবা-মা এবং শিক্ষকের মাঝে সংযোগ স্থাপন করছে। এই সংযোগের মাধ্যমে তারা উভয় জানতে পারছে বাড়িতে এবং স্কুলে কী ঘটছে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আইওটি প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগী এবং ডাক্তার একে অপরের সাথে দূর থেকে যোগাযোগ করতে সমর্থ হচ্ছে। এমন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রবণতা ২০১৮ সালেও চলমান থাকবে। বর্তমানে কিছু গবেষক স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি সৃষ্টিতে কাজ করছেন। তারা স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির সাথে ইন্টারনেটের প্রযুক্তিকে একত্রিত করতে চান। সিসকোর মতে, ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫০ বিলিয়ন মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকবে।
দ্রুতগতির মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন
সময়ের সাথে সাথে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইট দ্রুত হচ্ছে। ব্যবহারকারী এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই বিষয়ের প্রতি অধিক তৎপর হওয়ার কারণে দ্রুততর মোবাইল পেজের উত্থান ঘটেছে।
এএমপি ইতিমধ্যে মোবাইল ব্যবহারকারীদের দ্রুত পৃষ্ঠা লোড করতে অনুমতি দিয়েছে। গুগল জানিয়েছে, তারা মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ মোবাইল সার্চ বক্স প্রদান করতে যাচ্ছে। এএমপির ক্ষমতা রয়েছে দ্রুত পেজ লোড করার, বাউন্স সংখ্যা কমানোর, ট্র্যাফিক আকর্ষণ করার, CTR বৃদ্ধি করার এবং সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্কিং বৃদ্ধি করার। এর ফলে আপনার সাইটম্যাপ ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না।
তথ্যসূত্র: মিডিয়াম অবলম্বনে।