বর্তমান বিশ্ব সামনের দিকে এগিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারদের হাত ধরে। সেটা হোক সিভিল, ক্যামিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল অথবা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফসল বর্তমানে আমাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি। আর এখনো সেগুলোর উন্নতি ঘটছেও এই ইঞ্জিনিয়ারদের হাত ধরে। আন্তর্জাতিকভাবে ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকলেও সকল দেশে নিজের ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে গড়ে তোলা সহজ বিষয় নয়। কারণ প্রায়শই দেখা যায়, অনেক দেশেই প্রয়োজনের তুলনায় ইঞ্জিনিয়ারদের সংখ্যা বেশি।
অন্যভাবে বললে, ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় অনেক দেশেই চাকরির প্রয়োজনীয় পদ সংখ্যা কম। আমাদের দেশে প্রায় দেখা যায় বহু দক্ষ এবং ভালো রেজাল্ট করা ইঞ্জিনিয়াররা বেকার পরিস্থিতি কাটাচ্ছে। আর এই বেকারত্ব ঘুচাতে তারা বাহিরের বিভিন্ন দেশে চাকরির সন্ধান করছে। যারা বাহিরের দেশে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। চলুন জেনে নেওয়া যাক যেসব দেশে ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা সবথেকে বেশি এবং দ্রুত একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব।
১. কানাডা
বিশ্বের সবথেকে অগ্রসর অর্থনীতি আর বৃহত পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য কানাডা বেশ শক্ত অবস্থানে নিজের জায়গা দখল করে নিয়েছে। যদিও এর মূল প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস এবং কাঠ তবে ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এদেশে নেই কাজের অভাব। পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং আর কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কানাডায় প্রথম শ্রেণীর চাকরির মধ্যে ধরা হয়।
তবে এর জন্য আপনাকে কানাডিয়ান সরকারের প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং এসোসিয়েশনের প্রদত্ত লাইসেন্স নিতে হবে। তবে আপনি যদি প্রফেশনাল লাইসেন্সটি অর্জন করতে পারেন তাহলে সেদেশে আপনি পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার অথবা ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে গড়ে তুলতে পারবেন অসাধারণ একটি ক্যারিয়ার।
২. নিউজিল্যান্ড
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভালো চাকরি অথবা নিজস্ব কোম্পানি খোলার জন্য নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ খুব কমই পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম স্থিতিশীল অর্থনীতির দেশে নিউজিল্যান্ড। তবে ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ হওয়ায় এই দেশের বাড়িঘরের অবকাঠামোর উন্নয়ন কিছুদিন পরপরই প্রয়োজন হয়। ফলাফল এদেশে তৈরি হয়েছে প্রচুর পরিমাণে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য নিউজিল্যান্ড স্বর্গ বলা চলে। দেশে যদিও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের ভালো চাহিদা এখনো রয়েছে, তবে আপনি চাইলে নিউজিল্যান্ডেও একটি চেষ্টা চালিয়ে দেখতে পারেন।
৩. সুইজারল্যান্ড
আপনি যদি মেকানিক্যাল অথবা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে কানাডার পাশাপাশি লিস্টে রাখতে পারেন সুইজারল্যান্ডের নাম। ইউরোপীয় দেশেগুলোর মধ্যে নাম কামাতে না পারলেও নিশ্চিত থাকুন বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ হচ্ছে সুইজারল্যান্ড। ইউরোপীয় শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে উচ্চ পরিমাণ পারিশ্রমিকের পাশাপাশি সুইজারল্যান্ড রয়েছে ক্যামিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের সবথেকে বেশি চাহিদা।
৪. জার্মানি
আটলান্টিকের নিকটে অবস্থিত জার্মানিতে প্রচুর পরিমাণে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। পৃথিবীর আবিষ্কারের ইতিহাসে সমৃদ্ধ দেশ জার্মানি। তেমন প্রচুর ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র তৈরিতে রয়েছে এর অবদান। শুধুমাত্র ফার্মাসিউটিক্যাল আর অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ নয়, মেকানিক্যাল এবং বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও এইদেশে ক্যারিয়ার দ্রুত গড়ে নেওয়া সম্ভব।
৫. ইংল্যান্ড
বল চলে, প্রায় সকল ধরনের ইঞ্জিনিয়ারদের কমবেশি চাহিদা রয়েছে এই দেশে। মেকানিক্যাল থেকে শুরু করে কম্পিউটার, কেমিক্যাল অথবা এরোনট্যিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং যেকোনো কর্মক্ষেত্রে সহজে উচ্চ বেতনে আপনি চাকরি পাবেন এই দেশে। তবে সমস্যা হচ্ছে এর জন্য আপনাকে টায়ার ৫ কোম্পানির লাইসেন্স প্রয়োজন হবে। যেটা অর্জন করা কিছুটা মুশকিল বটে। তবে ভালো দিক হচ্ছে ভাষা নিয়ে আপনাকে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করার জন্য প্রথম কয়েকটি পছন্দের মধ্যে আপনি ইংল্যান্ডকে চাইলে রাখতে পারেন।
৬. ভারত
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নাম শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যেতে পারেন। যেখানে নিজেদের দেশে বহু ইঞ্জিনিয়ারিং বেকার বসে রয়েছে সেখানে ভারতে চাহিদা শুনলে যে কেউ অবাক হতেই পারেই। প্রায় ১.৩ বিলিয়ন জনসংখ্যা এই দেশে প্রচুর পরিমাণে ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে।
যারা নিজেদের দেশের প্রায় সব সেক্টরে কম বেশি চাহিদা পূরন করছে। তবে ভারতে এরপরও বাহিরের বিভিন্ন দেশ হতে অনেক সেক্টরে ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিচ্ছে। তবে নিত্যনতুন ওষুধ কোম্পানির সৃষ্টি হওয়াতে বর্তমানে ভারতে সবথেকে বেশি চাহিদা হচ্ছে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের।
৭. জাপান
সারাবিশ্বের প্রযুক্তিতে সবথেকে এগিয়ে থাকা তিনটি দেশের মধ্যে একটি হচ্ছে জাপান। বেশিরভাগ ইঞ্জিনিয়াররা ভালো করেই জানেন জাপানে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে মতো ভালো সুযোগ খুব কম দেশেই পাওয়া যায়। ধনী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দেশ জাপান। নিত্যদিনের ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তিগত পণ্য হতে এদের প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে কর্মরত রয়েছে লাখ লাখ মানুষ। এরপরও এই দেশের ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা কমেনি। প্রতিনিয়ত দেওয়া হচ্ছে অসংখ্য চাকরির বিজ্ঞপ্তি। তবে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি মেকানিক্যাল, বায়োমেডিক্যাল, ক্যামিক্যাল এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে এই দেশটিতে।
৮. চীন
বিশ্বের বাণিজ্যে বর্তমানে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলছে চীন। চলতি বছরের হিসাবে অনুযায়ী আমেরিকার থেকে খুব শীঘ্রই সমৃদ্ধ অর্থনীতিতে পরিণত হতে চলছে চীন। এর মূল কারণ হচ্ছে এদেশে বৃহৎ পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এছাড়া সেদেশের ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্ভোধনী শক্তি আর সেগুলোর বাণিজ্যিক উৎপাদনও রেখেছে সম পরিমাণ প্রভাব। তবে অনেকে মনে করে থাকেন ইঞ্জিনিয়ারদের নতুন নতুন আবিষ্কার আর সরকারিভাবে সেগুলো প্রসারে সহায়তা করার কারনেই চীন বর্তমান সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তুলতে পেরেছে।
প্রায় প্রতিটি ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরেই চীন দেশে নিযুক্ত রয়েছে লাখ লাখ মানুষ। সিভিল, ক্যামিক্যাল, বায়ো মেডিক্যাল, এরোনট্যিক্যাল অথবা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারই হোক! কোনো ক্ষেত্রেই এর কমতি নেই। তবুও প্রতি বছর লাখ লাখ ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে চীনের বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছে। অথবা অনেক প্রবাসীরাও নিজেই নিজেদের কোম্পানি খুলে নিয়েছে। স্বনির্ভর হোক বা অন্য কোন কোম্পানির অধীনে হোক, চীনে ইঞ্জিনিয়ারদের ভাগ্য সবথেকে দ্রুত গড়ে তুলতে সহায়ক এই নিয়ে কারো মনে কোন সন্দেহ নেই।