কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই বিভিন্ন কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বিভিন্ন কারণেই নেয়া হতে পারে। কোনো কর্মচারী ভুল করলে, পেশাগত নিয়ম লঙ্ঘন করলে কিংবা কোনো কর্মকর্তা বা মালিকের সাথে ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্বের কারণেও এটি ঘটে থাকে। কর্মক্ষেত্রে কর্মচারী ও কর্মকর্তা বা মালিকের সম্পর্কটা ব্যক্তিগত হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উভয় পক্ষের উচিত, এই সম্পর্ককে সম্মান করা এবং একে অপরকে বিশ্বাস করা। যদি কখনো কর্মচারী এবং কর্মকর্তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়, তখন যেমন একজন কর্মচারীর চাকরি ঝুঁকিতে পড়ে যায়, তেমনি একজন কর্মচারীর জীবনেও তার প্রভাব পড়ে।
একজন মানুষ যখন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন, তখন শুধু তার কাজই হুমকির মুখে পড়ে না, সেই তার আয়ের উৎস, জীবনধারা এবং সামাজিক মর্যাদাও হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। কর্মক্ষেত্রে ছোট ছোট সমস্যা কখনো কখনো বেশি আকার ধারণ করলে সমাধানের পথও রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে, এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। চাকরি হারানোর পর কেউ কেউ আবার চাকরি খুঁজে পেতে বেশ সমস্যায় পড়ে যান। কিংবা পুনরায় চাকরি পেলেও তার ক্যারিয়ারে উন্নতির যে সম্ভাবনা ছিল, সেটা থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়েন।
এসব ছাড়াও যখন মালিকপক্ষ কিংবা কর্মকর্তারা কোনো কর্মচারীকে তার বিরুদ্ধে উঠা অসদাচরণের বিষয়ে জবাবদিহি করার জন্য নিয়মশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠকে ডাকেন, তখন অনেকেই কোনো প্রকার পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই সেই বৈঠকে যোগ দেন। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে সঠিক জবাব দিতে না পারার কারণেও চাকরি হারান অনেকে।
একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে যখন অসদাচরণের অভিযোগ উঠে তখন সাথে সাথে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় না। নিয়োগদাতা বা মালিকপক্ষ একটি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অসদাচরণের বিষয়টি বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যার বিরুদ্ধে অসদাচরণেরর অভিযোগ উঠে, তার উচিত মালিকপক্ষের বিবেচনা করার এই সুযোগটি কাজে লাগানো।
এখন ধরুন, আপনার বিরুদ্ধে নিয়মলঙ্ঘন বা অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে এবং আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাহলে আপনি কী করবেন? কীভাবে আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তকে মোকাবেলা করবেন? চলুন জেনে আসা যাক, কীভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্তকে মোকাবেলা করতে হয়।
১. আপনার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আনিত হয়েছে, বুঝে নিন
প্রথমেই আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে আপনার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগটা কী এবং আপনাকে যখন অভিযোগের বিষয়ে জবাবদিহি করার জন্য ডিসিপ্লিনারি মিটিংয়ে ডাকা হবে তখন আপনি কোন অভিযোগের বিষয়ে প্রাধান্য দেবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যখন কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ উঠে, তখন তাকে কর্মকর্তারা ডিসিপ্লিনারি মিটিংয়ে ডাকেন এবং সেখানে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত শোনেন।
এখন আপনি যদি সেই মিটিংয়ে আপনার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে আপনার কর্মকর্তাদের সকল প্রশ্নের সদুত্তর দিতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে আপনার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগটা কী হতে পারে। তাই সে অভিযোগের বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। এরপর যখন আপনাকে আপনার প্রতি অভিযোগের বিষয়ে জানানো হবে, তখন আপনি যদি যথোপযুক্তভাবে আপনার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিখণ্ডন করতে পারেন, তাহলে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।
২. আপনার নিয়োগদাতার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রণালির একটি কপি সংগ্রহ করুন
আপনার বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠার পর যদি আপনার নিয়োগদাতা বা মালিকপক্ষ কীভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সে বিষয়ে কোনো কোনো তথ্য সরবরাহ না করে, তাহলে তাদের কাছে এ বিষয়ক নিয়মাবলির একটি কপি চেয়ে নিন।
তবে অনেক কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীরদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে জানার অধিকার থাকে না এবং কীভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে বিষয়েও কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয় না। সেক্ষেত্রে আপনার উচিত, পূর্বের এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে তা থেকে ধারণা লাভ করা এবং সেভাবে প্রস্তুতি নেয়া।
৩. সবসময় ডিসিপ্লিনারি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকুন
যখন আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং আপনাকে ডিসিপ্লিনারি মিটিংয়ে ডাকা হয়েছে, তখন অবশ্যই আপনি সেই মিটিংয়ে উপস্থিত হবেন। আপনি যখন মিটিংয়ে যোগ দিবেন, তখন সাথে করে আপনার ট্রেড ইউনিয়নের কোনো প্রতিনিধি কিংবা কোনো সহকর্মীকে সাথে করে নিয়ে যাবেন। মিটিংয়ে আপনার সাথে একজন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি আপনাকে শুধুমাত্র সমর্থনই যে দেবেন তাই নয়, সেই সাথে ভবিষ্যতের সাক্ষী হিসেবেও কাজে লাগতে পারেন।
নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে, মিটিংয়ে আপনার নিয়োগদাতাদের সরবরাহ করা কোনো তথ্যের উপর নির্ভর করে যুক্তিখণ্ডন করতে হবে নাকি আপনি স্বাধীনভাবে আপনার নিজস্ব তথ্য উপাত্তও উপস্থাপন করতে পারবেন।
আপনি চাইলে মিটিংয়ের ঘটনাগুলো নোট করে লিখেও রাখতে পারেন। তবে যদি আপনার নিয়োগদাতারা তাদের কার্যপ্রণালী অনুসারেই সুষ্ঠু এবং সুন্দরভাবে সবকিছু করেন তাহলে তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ থাকবে না। তবে যদি সেটা না হয় তাহলে আপনাকে ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে।
৪. ডিসিপ্লিনারি স্টেটমেন্ট সঙ্গে নিতে পারেন
ডিসিপ্লিনারি মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়া মানসিক চাপের একটি বিষয় এবং অনেক সময় ভীতিকর অভিজ্ঞতাও হয়ে থাকে। সেই কারণে অনেক সময় যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে নজর দিতে ভুলে যান অথবা মালিকপক্ষ যে বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন সেটা পাশ কাটিয়ে চলে যান। সেই কারণে আপনার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ ওঠে, তাহলে ডিসিপ্লিনারি মিটিংয়ে সাথে করে ডিসিপ্লিনারি স্টেটমেন্ট বা বিবৃতি নিয়ে যাবেন।
বিবৃতির বেশ কিছু কপি নিয়ে সকল বোর্ড মেম্বারকে সরবরাহ করবেন। আপনি আপনার বিবৃতিতে আপনি কী করেছেন, সেটার পাশাপাশি আপনার ভুলের ব্যাপারেও উল্লেখ করবেন। আপনি যে ভুল কাটিয়ে উঠবেন এবং কোম্পানির সুনাম ও স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখবেন,সে বিষয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন।
৫. আপিল করতে পারেন
আপনার বিরুদ্ধে নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে যদি আপনি একমত না হতে পারেন, তাহলে আপনি অবশ্যই আপিল করবেন। প্রত্যেক কর্মচারীর তার বিরুদ্ধে নেয়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকার রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আপিল করার সুযোগ দেন না। তারপরও লিখিত আকারে তাদের সিদ্ধান্তে বিষয়ে আপিল করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি তাদের সিদ্ধান্তের কোন অংশটি মেনে নিতে পারছেন না, সেটি উল্লেখ করবেন।
আপিল করার পর সংস্থাটি তৃতীয় কোনো পক্ষের একজন স্বাধীন ব্যক্তির মাধ্যমে আপনার বিরুদ্ধে নেওয়া শাস্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।
সবশেষে, আপনার যদি মনে হয় আপনার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে, তাহলে কর্মচারী হিসেবে শ্রম অধিকারবিষয়ক ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
Featured Image: nowinnofee.co.nz