ব্লগিং এর অলিখিত কিছু নিয়ম

বর্তমান সময়ে প্রতি আধা সেকেন্ডেই কেউ না কেউ ব্লগ লিখছেন। তাই এই বিষয়টি মোটেও অবাক করার মতো নয় যে, ইন্টারনেট এখন আর যুব সমাজের অদ্ভুত সব মিম আর হতাশাগ্রস্ত চিন্তাধারা দিয়ে ভরপুর নয়। সৃজনশীল বিষয়বস্তু, একই বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় এবং পছন্দসই যেকোন বিষয়ে কল্পনাতীত জ্ঞান অর্জন করার ক্ষেত্রে ব্লগের তুলনা হয় না।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

যদি এখনও পর্যন্ত আপনি দ্য ব্লগিং ব্যান্ডওয়াগনে ঢুঁ না মেরে থাকেন, তবে ব্লগিং শুরু করাটা একটু দুর্বোধ্য মনে হতে পারে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। আজকের এই লেখা থেকে ব্লগিং শুরু করার কিছু অলিখিত নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন। পছন্দ মতো একটি ক্ষেত্র নির্বাচন করে নাম বাছাই করুন এবং এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে বানিয়ে ফেলুন আপনার অসাধারণ একটি ব্লগ।

  • ব্লগের একটি বিষয়বস্তু থাকতে হয়। ব্লগ নিজের জন্য করুন বা অন্যের জন্য, যা নিয়ে কাজ করছেন সে বিষয়ে যদি স্পষ্ট ধারণা থাকে তবে আপনার জন্য বিষয়টি খুব সহজসাধ্য হবে। এছাড়াও আপনার বিষয়বস্তুটি হতে পারে বিশদ যেন সে সম্পর্কিত সব তথ্যই আপনার ব্লগে সম্বলিত থাকে। এখানে আরও নির্দেশিকা রয়েছে যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে, আসলেই আপনার ব্লগ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে।
  • পরবর্তীতে নির্দ্বিধায় আপনি আপনার ব্লগের বিষয়বস্তু পরিবর্তন করতে পারেন। তবে অবশ্যই এই বিষয়ে স্বচ্ছতা এবং ধারণা দেয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও আচমকাই পরিবর্তন না আনাই ভালো। এতে করে পাঠকরা বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারেন এবং পরবর্তীতে তাদের ব্লগে ফিরে আসার সম্ভাবনাটাও কমে যেতে পারে।
  • একেবারে প্রথম দিকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন যে, ইন্টারনেটে আপনি ঠিক কতোটা অজ্ঞাতনামা বা নাম না প্রকাশ করে থাকতে চান না। ব্লগিং এর শুরুতেই বেশিরভাগ মানুষ অনেক সচেতনতা অবলম্বন করেন এবং নিজেদের গতিতেই কাজ করার সময় ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো যে, একবার কোন বিষয় ইন্টারনেটে চলে আসলে কখনোই তা পুরোপুরিভাবে ইন্টারনেট থেকে চলে যায় না।
ছবিসূত্র: Public Domain Super Heroes – Fandom
  • অনুসারীদের ব্লগে নিয়মিত করতে হলে, প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারবার পোস্ট দেয়ার চেষ্টা করুন। আর যদি প্রতিদিন একটা করে দিতে পারেন তাহলে তো আরও ভালো! একটি নীলনকশা বা পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং সে অনুযায়ী নিয়মিত কাজ করুন। এতে করে আপনার ব্লগের পাঠকরাও নতুন কোন বিষয় আপনার ব্লগে যোগ হলো কিনা তা নিয়ে উৎসাহিত ও আগ্রহী থাকবে।
  • একটি আদর্শ ব্লগ পোস্ট সাধারণত ৫০০ থেকে ৭০০ শব্দের মধ্যে হয়ে থাকে। কোন বিষয় নিয়ে লেখার জন্য এই শব্দ সংখ্যাটি যথেষ্ট বড়। আবার স্ক্রল করার সময় চোখে পড়ার মতো যথেষ্ট ছোটও বটে!
  • শুধুমাত্র এক ক্ষেত্রে আপনি আপনি সপ্তাহে একটি পোস্ট করতে পারেন। আর তা হলো যে, যদি আপনার কন্টেন্ট খুব বেশি বড় (এখানে দুই হাজার বা তার চেয়েও বেশি শব্দ বোঝানো হচ্ছে) এবং অসম্ভব দুর্দান্ত হয়। তবে অবশ্যই আপনার এবং আপনার পাঠকদের বিষয়টি মাথায় রাখবেন। আপনার কি সারাদিন ধরে বেশ বড়সড় একটা কন্টেন্ট পড়তে ভালো লাগবে? সম্ভবত আপনার উত্তরটা এই ক্ষেত্রে না-ই হবে। তাই আপনি নিজেই যদি এটা পছন্দ না করেন, তবে আপনার পাঠকদের কাছে বিষয়টি ভালোলাগার কোন যৌক্তিকতা তো অবশ্যই থাকতে পারে না।
ছবিসূত্র: Floret Media
  • অন্যান্য ব্লগারদের পোস্ট দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া এবং তাদের মতো একই বিষয় নিয়ে লেখাটা স্বাভাবিক। তবে আপনার পোস্টে তাদের নাম ও কৃতিত্ব উল্লেখ করতে অবশ্যই ভুলবেন না যেন। আপানার সামান্য কৃতিত্ব দেয়াটাই বন্ধুত্ব বা শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্কের তফাৎটা সৃষ্টি করতে পারে।
  • যদি আপনি ছবি ব্যবহার করে থাকেন, (যদিও অবশ্যই ছবি ব্যবহার করা উচিত) তবে অবশ্যই উচ্চ মানের ছবি দেয়ার চেষ্টা করেবেন। ঘোলাটে ধরনের ছবি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। ভালো একটি ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলুন অথবা বিনামূল্যে ভালো মানের ছবি পেতে এই সাইটগুলোর যেকোন একটিকে বিবেচনা করতে পারেন।
  • নিজের তোলা ছবি ব্যবহার না করে অন্য কোন জায়গা থেকে নিলে উৎস উল্লেখ করতে অবশ্যই ভুলবেন না। ছবিসূত্র, উৎস এসব লিখে উৎসের নামটি উল্লেখ করে দিন এবং যেই পেইজ থেকে ছবিটি নিয়েছেন সেই পেইজের লিংকটি কপি করে তার সাথে দিয়ে দিন। অনেক ক্ষেত্রে ছবির কৃতিত্ব না দেয়া হলে ছবির স্বত্বাধিকার তা নিয়ে অভিযোগ তুলতে পারেন। তাই আপনার ব্লগে ছবি যোগ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন।
ছবিসূত্র: The Conversation
  • একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস রাখুন যেখানে আপনাকে মানুষ বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে ও প্রশ্ন করতে পারবে। এতে পাঠকরা যেকোনো পোস্টের কমেন্ট বক্সে অপ্রাসঙ্গিক ম্যাসেজ করা থেকে বিরত থাকবে।
  • আপনার পোস্টে কেউ কমেন্ট করলে যত দ্রুত সম্ভব তার রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করুন। তবে আপনার প্রতিউত্তরটি যেন চিন্তা বা মননশীল হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন। পাঠকদের সবসময় জড়িত রাখার মাধ্যমে তাদের আপনার ব্লগে বারবার ফিরে আসা এবং একই মনোভাবের মানুষের সাথে সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • ব্লগ যেহেতু আপনার, সেহেতু ব্লগের যেকোনো কমেন্ট ডিলিট করার সম্পূর্ণ অধিকার আপনার আছে এবং বিষয়টি নির্ভরও করে আপনার ইচ্ছার ওপর। কিন্তু অবশ্যই এর জন্য একটি ধরা বাঁধা নিয়ম রাখুন। যেমন- আপনার ব্লগের পোস্টে যেসব বাজে বা অপ্রাসঙ্গিক কমেন্ট আসে সেগুলো খুঁজে বের করে আপনি বা আপনার ব্লগের এডমিন ডিলিট করে দিন এবং বারবার একই ব্যক্তি এই কাজ করতে থাকলে তাকে ব্যান করে দিন।
ছবিসূত্র: Reddit
  • সোশ্যাল মিডিয়া বাটন যদি রাখতেই চান তবে আপনার ব্লগের একেবারে উপরের দিকে রাখুন যেন খুব সহজেই মানুষ তা খুঁজে পায়।
  • অ্যাবাউট নামের পেইজটি যেন আপনার ব্লগে অবশ্যই থাকে এবং সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করুন। কারণ নতুন কোন ব্লগে মানুষ যেসব জিনিস সবচাইতে প্রথমে খেয়াল করে সেগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
  • ট্যাগ করার বিষয়টি কাজে লাগান। এতে একই রকমের পোস্টগুলো সংঘবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। এছাড়াও যখন কেউ আপনার ব্লগে নির্ধারিত কোন পোস্ট খুঁজবে তখন সহজেই পেয়ে পাবে।
  • আপনার ব্লগ টাকা আয় করার মতো যথেষ্ট বড় হয়েছে কিনা তা নিয়ে ভাবছেন? যদি আপনার ব্লগে প্রতি মাসে ১,০০,০০০ ও প্রতিদিন ১,০০০ ভিজিটর হয়ে থাকে, তবে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সংস্থার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আয় করার সম্ভাবনা থাকে।
ছবিসূত্র: Don’t Sweat The Recipe
  • যদি ব্লগে প্রচারমূলক কন্টেন্ট দিয়ে থাকেন, তবে প্রতি সপ্তাহে বা মাসে এরকম কন্টেন্ট কয়টি দিচ্ছেন সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। কারণ কোন পাঠকই এই বিষয়টি খুব বেশি একটা পছন্দ করবেন না।

Feature Image Source: Shaw Academy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *