বাজারের যত নিত্যনতুন প্রযুক্তি

আধুনিক এই বিশ্বে প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু আবিষ্কার হচ্ছে। সেগুলো মধ্যে আবার অনেক আবিষ্কার বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে এবং পৌছে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। সেইরকম কিছু পণ্য নিয়ে আমাদের এই ফিচার।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১. ত্রিমাত্রিক মেটাল প্রিন্টার

যদিও ব্যক্তিগত এবং বড় বড় কোম্পানি ত্রিমাত্রিক প্রিন্টিং প্রযুক্তি গত এক যুগের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। তবে সেটা ছিলো বিভিন্ন শৌখিন মানুষ আর বড় কোম্পানিগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কারন প্লাস্টিকের ছাড়া অন্য কোন ধাতুর প্রিন্টিং অত্যন্ত ব্যয়বহুল আর বিরক্তিকর ভাবে ধীর।

তবে এইসব বিভিন্ন সীমাবদ্ধতাকে দূর করে বাজারে মার্কফোর্জড এবং ডেক্সটপ মেটাল নামের এই দুইটি কোম্পানি ত্রিমাত্রিক মেটাল প্রিন্টার বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করছে। তাদের তৈরি এই প্রিন্টারের ব্যবহার খরচ বেশ কম আর বৃহদাকারে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়া আগেভাগে পণ্য তৈরি করা আর সেগুলো জমা রাখার প্রয়োজনীয়তা দূর করে দিবে এই প্রিন্টার। কারন আপনার যদি গাড়ির কোন একটা পার্টস যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়ে থাকে সেটা আপনি কোম্পানিকে জানানোর সাথে সাথে তারা প্রিন্ট করে দিবে। ফলে গুদামঘরের প্রয়োজনীয়তা শেষ।

Source: technologyreview

এই টেকনোলজি হালকা, শক্তিশালী, জটিল গঠনের এবং আকারে ধাতব ডিজাইন ও উৎপাদন করতে সক্ষম। যেগুলো বর্তমানের ব্যবহৃত অন্যান্য প্রযুক্তি দিয়ে করা অসম্ভবই বলা চলে। তার উপর নিখুঁতভাবে ধাতুর মাইক্রো স্ট্রাকচার ডিজাইনিংয়ের সক্ষমতা তো রয়েছেই। ২০১৭ সালে লরেইন্স লিভারমোর ন্যাশন্যাল ল্যাবরেটরি ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের কার্যকারিতা নিয়ে বলেছিলেন, “এই প্রিন্টার বর্তমানের তৈরি বিভিন্ন ধাতুর যন্ত্রাংশ থেকে দ্বিগুণ শক্তিশালী যন্ত্রাংশ তৈরি করতে পারে।”

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

২০১৭ সালে বোস্তনের কাছাকাছি মার্কফোর্জড কোম্পানি তাদের কারখানা বসায়। আর প্রথম ত্রিমাত্রিক মেটাল প্রিন্টার বিক্রি শুরু করে। যার দাম তারা ধরেছিলো প্রায় এক লাখ ডলারের মত। একই বছরে একই শহর বোস্তনে ডেক্সটপ মেটাল কোম্পানি তাদের কারখানা বসায় আর বড় আকারের ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার বিক্রি শুরু করে। যার কাজের ক্ষমতা ছিলো আগেরকার প্রিন্টার থেকে প্রায় একশত গুণ দ্রুত। ২০১৭ সনেই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের বাজারে চেহারা দেখায় জিই নামের আরেক কোম্পানি। যারা বর্তমানের এভিয়েশনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরির কাজে যুক্ত রয়েছে।

আমাদের ছোটখাটো কোম্পানি উদ্যোক্তাদের জন্য এই ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার বেশ কাজে দিলেও এর বর্তমান দাম বেশিরভাগই উদ্যোক্তাদের আয়ত্বের বাহিরে। তবে আশাহত হওয়ার কিছু নেই। কোম্পানির এক সূত্র আশা করছে ২০২০ সালের মধ্যে এর দাম অর্ধেকে নেমে আসবে।

২. বাবেল ফিশ ইয়ারবাড

আমরা বিভিন্ন সাইন্স-ফিকশন মুভিতে প্রায়ই দেখি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় সবাই কথা বলছে কিন্তু কানে লাগানো ট্রান্সলেটর যন্ত্র সেটা নিজের ভাষায় পরিবর্তন করে দিচ্ছে। সেটা এখন শুধু সাইন্স ফিকশন মুভি বা সাহিত্যই নয়, বাস্তবেও সম্ভব। আর এই কল্পনাকে বাস্তবতার রূপ দিয়েছে বিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন কোম্পানি গুগল এবং বাইডু।

Source: technologyreview

বাবেল ফিশ ইয়ারবাড গুগল বাজারে ছাড়ছে মাত্র একশত ঊনষাট ডলারে পিক্সেল বাড নামে। পিক্সেল বাড বিশ্বের যেকোন ভাষা দ্রুত সনাক্ত করার পাশাপাশি প্রায় সাথে সাথে অনুবাদ করতে পারে। তবে এই প্রযুক্তি আপাতত পিক্সেল ফোনগুলোতেই করা যাচ্ছে। তবে খুব দ্রুতই এন্ড্রয়েড এবং আইফোনে ব্যবহার করা যাবে বলে জানিয়েছে গুগল।

৩. অনলাইন প্রাইভেসি “জিরো নলেজ”

বর্তমানে আমরা সবাই অনলাইন প্রাইভেসি নিয়ে কমবেশি সচেতন। আমাদের কাজে কেউ সারাক্ষণ নজরদারি করলে সেটা স্বাভাবিকভাবেই কারোই ভালো লাগেনা। আর এই প্রাইভেসি রক্ষা করতে আমরা অনলাইন জগতে ব্যবহার করছি বিভিন্ন পদ্ধতি, টাকা পয়সা লেনদেনে ব্যবহার করছি ক্রিপ্টো-কারেন্সি। তবে সমস্যা হচ্ছে বিট-কয়েন আর অন্যান্য পাবলিক ব্লকচেইন সিস্টেমের অর্থ লেনেদেন সবাই দেখতে পারে। যদিও থিউরিক্যাল ভাবে প্রতিজনের পরিচয় গোপন থাকে, তবে অন্যান্য ডেটার সাথে মিলিয়ে লেনদেন করা ব্যক্তির পরিচয় বের করা অসম্ভব কিছু নয়।

Source: technologyreview

আর এই সমস্যা থেকে মুক্তিসহ আরো বিভিন্ন ফিচার নিয়ে বাজারে এসেছে “জিরো নলেজ সাক্সিন্ট নন-ইন্টারএক্টিভ আর্গুমেন্ট অফ নলেজ। যাকে সংক্ষেপে জেকে-এসএনএআকে বা জিরো নলেজ বলা হয়। এই টেকনোলজি মূলত জেক্যাশের সাথে একসাথে মিলে ক্রিপ্টো কারেন্সি নিয়ে কাজ করে থাকে। যেটা কিনা ২০১৬ সালের শেষের দিকে বের হয়েছিলো। এই পদ্ধতির উদ্ভাবনের প্রাথমিক উদ্যেশ্য ছিলো কোনরূপ তথ্য প্রকাশ না করে, প্রমান করা যে ব্যবহারকারীর বয়স আঠারোর উপরে এবং নিশ্চিত করা সেবা গ্রহন করার জন্য তার একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমান অর্থ রয়েছে।

৪. জেনেটিকসের ভবিষ্যৎ

আধুনিক বিশ্বে ডিএনএ রিপোর্ট অনেক কাজেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। হয়তো নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাবে যাবে বাচ্চা জন্ম হওয়ার সাথে সাথে ডিএনএ রিপোর্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আর সেখানে উল্লেখ করা হচ্ছে সন্তান ভবিষ্যতে কি কি রোগে আক্রান্ত হতে পারে, তার বুদ্ধিমত্তা কেমন হবে অথবা মাদক দ্রব্যে সে আক্রান্ত হবে কিনা। ভাবতে কিছুটা অবিশ্বাস্য হলেও আসলে এমন হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নয়নের পাশাপাশি আমরা ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা অনেককিছু জানতে পারছি। ফলে নিকট ভবিষ্যতে যে এমনটা হতে পারে সেটা কল্পনা করাটা দোষের কিছু নয়।

Source: technologyreview

জেনেটিক্স নিয়ে গবেষণায় বর্তমানে সবথেকে এগিয়ে রয়েছে হেলিক্স, মাদ্রিদ জেনেটিক্স, ইউকে বায়ো-ব্যাংক  আর ব্রড ইন্সটিটিউট। তাদের ভাষ্যমতে মানুষের সাধারণত আচরন, বুদ্ধিমত্তা ও বিভিন্ন রোগের সম্ভবনা এখন আগেভাগেই জানা সম্ভব। ফলে সাথে সাথে এর প্রতিকার নেওয়া সম্ভব হবে। যেমন ধরা যাক জেনেটিক্স পরীক্ষায় একজন মহিলার প্রোটেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ধরা পড়লো। তখন যদি আগে থেকে তার প্রতিকার এবং প্রয়োজনীয় ঔষুধ সেবন করা হয় তাহলে সেই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দূর হয়ে যাবে। হ্যাঁ সম্ভাবনা বলছি, কারণ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাবনা যাচাই করা হয়। তবে এটা রোগের ডায়াগনোসিস নয় যে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব।

তবে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী আগামী কয়েকবছরের মধ্যে জেনেটিক্স গবেষণায় যথেষ্ট উন্নয়ন হবে ফলে তারা নিশ্চিতভাবে জেনেটিক্সের ভবিষ্যতবাণী করতে সক্ষম হবেন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *