কিছু মানুষের জন্মই হয় চমৎকার ক্যারিয়ার নিয়ে, অথচ বেশিরভাগ মানুষ মাঝ বয়সে এসেও নিশ্চিত করতে পারে না তাদের যথার্থ ক্যারিয়ার কী হবে! যারা জীবনের শুরুতে নিজেদের আদর্শ ক্যারিয়ার খুঁজে পায় তারাই শেষ পর্যন্ত সফল হয়, আর যারা খুঁজে পায় না তারা খুঁজতে খুঁজতেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
আপনি হয়তো বছরের পর বছর একই পেশায় আছেন এবং নতুন কিছু খুঁজছেন, নতুন কিছু করতে চাইছেন, কিন্তু কি করতে চান তাই আপনি জানেন না! আসলে আমরা জীবনের প্রয়োজনেই ছুটে চলি এবং সবকিছুর মধ্যে সুখ খুঁজে ফিরি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই সুখ খুব কম লোকের কাছেই ধরা দেয়! সিংহভাগ মানুষের কাছে সুখ ধরা না দেওয়ার বড় কারণ তারা সঠিক সময়ে সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়।
আপনিও যদি নিজের সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে থাকেন, তবে এই নিবন্ধটি আপনার জন্য। কোন ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া আপনার জন্য যথার্থ হবে? কিভাবে বুঝবেন এই কাজটি আপনার জন্য পারফেক্ট? নিজের সঠিক ক্যারিয়ার বুঝে নেয়ার জন্য এখানে কয়েকটি চমৎকার পরীক্ষামূলক আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা হল। আমার বিশ্বাস এই পরীক্ষার নিরীক্ষে আপনি যথার্থ ক্যারিয়ার খুঁজে পেতে সমর্থ হবেন।
নিজেকে আবিষ্কার করুন
কোনো কিছু করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিশ্চিত করুন এটি এমন কোনো কাজ যা আপনি খুব উপভোগ করেন অথবা আপনি খুব ভালোবাসেন। যদি কাজটি আপনার ভালোবাসার হয় তবে তা করতে দ্বিতীয় বার ভাবার প্রয়োজন নেই। এখন আপনার প্রয়োজন শুধু একটি জিনিস, তা হল আত্মবিশ্বাস!
এখন বলুন, আপনি কি রোজ আরামের বিছানা ছেড়ে পরিশ্রম করতে প্রস্তুত? যদি পারেন তবে সাফল্য আপনারই! যেকোনো কাজ শুরুতে যতটা কঠিন মনে হয় কাজে নেমে পড়লে দেখবেন আসলে ততটা কঠিন নয়। ভয়কে জয় করা এক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ। যারা জয় করতে পারে তাদেরই স্বপ্নপূরণ হয়।
এরপরও যদি সংশয় থাকে, তাহলে স্থির হয়ে বসুন, ভাবুন; যা করতে চলেছেন তা কি আপনি সত্যিই ভালবাসেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন। যদি উত্তর “হ্যাঁ” হয়, তবে আপনার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা কাগজে লিখে ফেলুন।
তবে মনে রাখা দরকার, কোনো কিছুর ব্যাপারে তীব্র আকাঙ্ক্ষা বা প্যাশন থাকাটাই সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচনের একমাত্র বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে প্যাশন অবশ্যই ক্যারিয়ার নির্বাচনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ।
যদি সত্যিই আপনি কোনো কিছু আনন্দের সাথে করতে ভালোবাসেন তবে অবশ্যই তা আপনার খারাপ দিন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। তার মানে এই নয় যে, এটিই আপনার একমাত্র ক্যারিয়ার! বরং কখনো কখনো প্যাশন যথার্থ ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য অনুষঙ্গ হয়ে থাকে মাত্র।
সুতরাং নিজেকে আবিষ্কার করুন সবার আগে। নিজের স্বপ্নের কথা লিখে ফেলুন, গবেষণা করুন; এটি কি শুধুই আপনার ভালো লাগা নাকি আপনি সারাজীবন এটি করে যেতে চান? কখনো কি এই ভালো লাগা পরিবর্তন হতে পারে? এই ভালো লাগা কি আপনার ব্যবসায়িক স্বার্থে, নাকি নিছক চিত্তবিনোদন থেকে?
এই প্রশ্নগুলো জরুরী এই কারণে যে, ভালো লাগা ও ভালোবাসার রকমফের আছে। ধরুন, কাউকে যদি আপনি ভালোবাসেন তাহলে তাকে সারাজীবন ভালোবেসে যেতে চান, কিন্তু এটা নিশ্চয়ই আপনার ক্যারিয়ার না। তেমনি অনেক ভালোলাগা বিষয় থাকে যা আমরা প্রথম জীবনে ক্যারিয়ার ভেবে ভুল করি। সুতরাং মনে রাখতে হবে, যথার্থ ক্যারিয়ার অবশ্যই প্যাশন থেকে আসে তাই বলে যেকোনো প্যাশনই ক্যারিয়ার হতে পারে না।
G+P+V পদ্ধতির ব্যবহার
G = গিফট অর্থাৎ উপহার। এই উপহার অর্থ প্রকৃতির উপহার যা আসলে আপনার শক্তিমত্তা। আপনি কোন কাজে ভালো সেটা ভাবুন এবং লিখে ফেলুন।
P = প্যাশন। প্যাশন অর্থ হলো আসলেই আপনি কি বা কে তা খুঁজে বের করা। আপনি কি অন্য মানুষদের সাহায্য করতে ভালোবাসেন? আপনি কি একা কাজ করতে ভালবাসেন? সমস্যা সমাধান করতে আপনি বেশি পটু? এই প্রশ্নগুলো নিরূপণ করবে আপনার প্যাশন কেমন।
সর্বশেষ V = ভ্যালুজ অর্থাৎ মান। এই মান আসলে আপনার ব্যক্তিত্ব এবং জীবনশৈলী। আপনি কেমন ব্যক্তিত্বের মানুষ? কেমন জীবন পছন্দ করেন? কিভাবে থাকতে ভালোবাসেন?
এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটাতে হবে একসাথে; আপনি কেমন শ্রম দিতে জানেন? আপনি কেমন প্রকৃতির মানুষ? এবং কেমন জীবনধারা পছন্দ করেন? আপনার ক্যারিয়ারের মধ্যে এই তিনটি বিষয়ের প্রতিফলন থাকা চাই। যদি এর কোনো একটি অনুপস্থিত থাকে অর্থাৎ কোনো একটি কাজ করতে এই তিনটির কোনো একটির অভাব বোধ করেন তবে সেই ক্যারিয়ার আপনার জন্য নয়।
বিভ্রান্তি দূর করতে একজন মেন্টর তথা পরামর্শদাতা খুঁজে বের করুন
নিজের সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে একজন যথার্থ পরামর্শদাতার শরণাপন্ন হওয়া সত্যিই খুব ভালো সিদ্ধান্ত। একজন যথার্থ পরামর্শদাতা আপনার ক্যারিয়ার ভাবনাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। ব্যাপারটা ঠিক ঘরের কোনো আপনজনের সাথে পরামর্শ করে পরখ করে দেখা যে, আপনি সঠিক পথে আছেন কিনা।
তবে আপনি যদি নিজেকে একজন যথার্থ পরামর্শদাতা খুঁজে পাওয়ার অযোগ্য মনে করেন তবে নিম্নোক্ত পন্থায় চেষ্টা করতে পারেন,
আপনি যখন ভালো লাগা কোনো ক্যারিয়ার নিয়ে ভাববেন তখন কয়েকদিনের জন্য আপনার এই ভালো লাগা কাজটি নিয়ে অন্যান্য বিভিন্ন লোকের মধ্যে একটি গবেষণা পরিচালনা করুন। বিভিন্নজনের কাছ থেকে পরামর্শ নিন, আলোচনা করুন, তাদের মতামত জানুন – দেখবেন এইসব আলোচনা থেকে একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত বের হয়ে আসবে, যা সত্যিই আপনার কাছে স্পষ্ট করে তুলবে আপনার ভালো লাগা কাজটি সত্যি আপনার ক্যারিয়ার হতে পারে কিনা।
এই নিবন্ধ এখানেই শেষ নয়। পরবর্তী নিবন্ধে এমন আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার আশা রাখছি।