বাংলাদেশ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এদেশটি যেন প্রকৃতির এক লীলাভূমি। একদিকে যেমন পাহাড় পর্বত অন্যদিকে সবুজের সমারোহ। দক্ষিণে আছে বঙ্গোপসাগর। সুজলা সুফলা শস্য শ্যমলা এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিনিয়ত দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। ছোট্ট এদেশটিতে আছে ভ্রমণের অনেক অসাধারণ সব স্থান। তাই আপনি যদি ভ্রমণপিপাসুদের একজন হয়ে থাকেন তাহলে আজই ঘুরে দেখুন আপনার নিজের দেশকে। ভ্রমণের জন্য এখানে আপনি যেমন পাবেন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, তেমনি আছে ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে পাবেন ছোট বড় অনেক পাহাড়, সিলেটে পাবেন চা-বাগান, ময়মনসিংহে আছে বিরিশিরি। সেই সাথে আছে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন।
১. কক্সবাজার
বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতের নাম কক্সবাজার। এটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২৫ কি.মি. বাংলাদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর নিকট এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। রাজধানী ঢাকা থেকে বাসে যেতে ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগে। এছাড়া বিমানে খুব সহজেই আপনি যেতে পারেন। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে অসংখ্য হোটেল এবং রিসোর্ট সেখানে গড়ে উঠেছে। সমুদ্রসৈকতের আশেপাশে কেনাকাটার জন্য মার্কেট গড়ে উঠেছে। সেই সাথে সমুদ্রের পাড়ে বসেই আপনি উপভোগ করতে পারেন বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক মাছ যেমন রুপচাঁদা, লইট্টা, চিংড়ি, টুনা ইত্যাদি। কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকত ছাড়াও হিমছড়িতে পাহাড় এবং ছোট ছোট ঝর্ণা দেখার মতও কিছু স্থান রয়েছে।
২. সেন্টমার্টিন দ্বীপ
কক্সবাজারের শেষ মাথায় টেকনাফ হতে জাহাজ যোগে সমুদ্রপথ পেরিয়ে যেতে হয় সেন্টমার্টিন দ্বীপে। প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্যে সাজানো এই দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত এ দ্বীপটি মাত্র ৮ বর্গ কি.মি. সেন্টমার্টিনে যাওয়ার জন্য সকালে সাধারণত জাহাজ টেকনাফ হতে যাত্রা শুরু করে এবং দুপুরে আবার জাহাজটি কক্সবাজার ফেরত আসে। আপনি চাইলে সেন্টমার্টিনে রাত্রীযাপনও করতে পারেন। এখানে অনেক রিসোর্ট গড়ে উঠেছে এবং আস্তে আস্তে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটছে। সেন্টমার্টিনের সাথে আরেকটি ছোট দ্বীপ রয়েছে যার নাম ছেঁড়া দ্বীপ। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ দ্বীপে পর্যটকের যাতায়াত করার অনুমতি রয়েছে। বাকি সময়টুকু কর্তৃপক্ষ সেখানে সাধারণ জনগণের চলাচল বন্ধ রাখে।
৩. সুন্দরবন
সুন্দরবনকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। সুন্দরবন অবশ্য পুরোটুকু বাংলাদেশের অংশ নয়। এর কিছু অংশ প্রতিবেশী দেশ ভারতে রয়েছে। সুন্দরবনে রয়েছে বাংলার বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, কুমির এবং আরো অনেক জীব। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট সহ ভারতের কয়েকটি জেলা নিয়ে সুন্দরবন। এর আয়তন ৬০০০ বর্গ কি.মি. ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেনে খুলনা গিয়ে সেখান থেকে কোটকা হয়ে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সুন্দরবন।
৪. বান্দরবন
বাংলাদেশের পূর্বে রয়েছে চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা হলো বান্দরবন। বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র বান্দরবনের পাহাড় এবং ঝর্ণাগুলোকে কেন্দ্র করে বর্তমান সময়ে গড়ে উঠেছে। বাস যোগে ঢাকা থেকে বান্দরবন পৌঁছে আপনি দেখে আসতে পারেন নীলগিরি, নীলাচল, চিম্বুক, মেঘলা সহ বান্দরবনের অন্যান্য পর্বতমালা। এছাড়া বান্দরবনে রয়েছে বৌদ্ধদের স্বর্ণমন্দির। এছাড়া আপনি যদি দুর্গম পাড়ি দিতে প্রস্তুত থাকেন তাহলে বান্দরবনের আরেকটু ভেতরে থানচি, আলিকদম, আমিয়াখুম, নাফাকুম এসব নৈসর্গিক সুন্দর এলাকাগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।
৫. সিলেট
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এলাকা হলো সিলেট। সিলেট মূলত বিখ্যাত চা-বাগানের জন্য। রাজধানী ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে খুব সহজে সিলেট যাওয়া যায়। এছাড়া সিলেটে বিমানবন্দরও রয়েছে। সিলেটে বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্রগুলো হল জাফলং, লালাখাল, বিছানাকান্দি এবং রাতারগুল। এছাড়া হরিপুরের গ্যাসফিল্ড সহ বিভিন্ন চা বাগানও অনেকে ঘুরে দেখেন। এছাড়া সিলেট জেলার বাইরে সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওর বর্ষাকালে ভ্রমণের জন্য খুবই সুন্দর একটি জায়গা। সেই সাথে শ্রীমঙ্গলে রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হামহাম ঝর্ণা। এছাড়া সিলেটে বর্ষাকালে আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ। হচ্ছে মাধবকুন্ড ঝর্ণা।
৬. বিরিশিরি
ঢাকা থেকে একটু উত্তরেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ। বাস অথবা ট্রেন যোগে খুব সহজেই ময়মনসিংহ পৌঁছানো সম্ভব। দিন দিন পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠছে ময়মনসিংহ। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ বিরিশিরি। প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের এক অনন্য সমাহার এই বিরিশিরি। নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলায় এই বিরিশিরি অবস্থিত। এটি মূলত কারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানে এক বৈচিত্রময় সোমেশ্বরী নদী রয়েছে। সেখানে নৌকা বা ফেরি পার হয়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন চিনামাটির পাহাড়ে। বিরিশিরি শহর হতে একটু দূরে হওয়ায় সেখানে তেমন ভালো হোটেল কিংবা রিসোর্ট এখনো গড়ে উঠেনি। আপনি যদি ২/১ দিনের জন্য ছোট্ট কোনো ট্যুর দিতে চান তাহলে বিরিশিরি আপনার জন্য খুব ভালো একটি পর্যটনকেন্দ্র।
৭. সাজেক
রাঙ্গামাটি জেলার অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ হলো সাজেক উপত্যকা। বাংলাদেশ আর্মির সহায়তায় সেখানে একটি নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়েছে যাতে পর্যটকরা খুব সহজে সেখানে যাতায়াত করতে পারেন। সাজেক উপত্যাকাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০০ ফুট উপরে। যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় সাজেক উপত্যাকাটি অবস্থিত কিন্তু এখানে যাওয়া আসা করার জন্য খাগড়াছড়ি সবচেয়ে ভালো উপায়। খাগড়াছড়ি হতে চান্দের গাড়িতে করে দিঘিনালা বাজার হয়ে সাজেক যেতে হয়। দিঘিনালা থেকে চান্দের গাড়ি ছাড়া আর কোনো যানবাহন সেখানে পাওয়া যায় না। সাজেকের সূর্যদোয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য সবার মন হরণ করে।
আপনি যদি ভ্রমণপিপাসু হন অথবা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে দু’চোখ ভরে দেখতে চান তাহলে অবশ্যই এই কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখবেন। কিন্তু মনে রাখবেন পর্যটনকেন্দ্রগুলো আপনার দেশের অংশ। এগুলো আপনার দেশের সম্পদ। তাই যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে এই ভ্রমণস্থানগুলোর পরিবেশকে দূষিত করবেন না। নিজেরা সচেতন হন, অন্যকেও সচেতন করুন এবং নিরাপদে ভ্রমণ করুন।