শত শত বছর ধরে আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়ে আসছে। পরিবর্তন হচ্ছে চলমান জীবনধারা। ভাষা পরিবর্তনশীল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভাষার পরিবর্তন হয়। আমাদের চারপাশে লোকের মুখে মুখে শব্দগুলো বিচরণ করে। আর আমরা আমাদের বাক্যের সাথে সেই পরিচিত শব্দগুলো জুড়ে দেই। ভাষার পরিবর্তনশীলতা সমাজের জন্য কল্যাণস্বরূপ। তবে ভাষা যখন অতি আধুনিকতার সাথে সাথে ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় দেয় কিংবা কতিপয় শব্দ বা ভাষা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে ব্যবহারের উপযোগী না হয় তাহলে সে ভাষা অর্থহীন হয়ে যায়।
টেলিভিশনের কোন নাটক থেকে অথবা ফেসবুক থেকে ভাষা শিখে সবসময় আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে ব্যবহার করা যায় না। অফিসের যেকোনো প্রয়োজনে কোনো ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফরমালিটি মেনে চলতে হয়। অথচ আমারা আমাদের রোজকার আড্ডায়, গল্পে বিভিন্ন ধরনের শব্দের ব্যবহার করি যা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে ব্যবহার করা যায়না। আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে এইসব শব্দ ব্যবহার করলে ব্যক্তিত্বের ভালো দিক প্রকাশ পায় না। তাই যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে চাইলে আজ থেকে নিম্নোক্ত শব্দগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
একচুয়ালি অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে
অফিসে বা ব্যবসায়িক কাজের ক্ষেত্রে একচুয়ালি অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যের ভুল ধরার চেষ্টা করবেন না। অনেকের স্বভাব শুধু অন্যের ভুল ধরা। মানুষ মাত্রই ভুল। তার মানে এই নয় সর্বদা অন্যের ভুল ধরতে হবে। অন্যের ভুল ধরা মানুষকে কেউ পছন্দ করেন না। তাই চেষ্টা করবেন অন্যের ভুল ধরা থেকে বিরত থাকতে। তবে হ্যাঁ, প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য বা ছোট ছোট ভুলকে সংশোধন করে নিতে পারেন।
কিন্তু
আমরা আমাদের বাক্যে ‘কিন্তু’ শব্দের ব্যবহার করি। নিশ্চয় আপনিও করেন। যোগাযোগ দক্ষতার উন্নয়নের জন্য কিন্তু শব্দ ব্যবহার বাদ দিন। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ধরুন, আপনি বললেন,“আমি তার পুরোটা কাজ পছন্দ করেছি কিন্তু……” .কিন্তু দিয়ে আরেকটি নেতিবাচক বাক্য জুড়ে দিলে আপনি যার সাথে কথা বলছেন সে আপনাকে নেতিবাচক মনোভাবের ভাবতে পারে।
অনুমান করা
আপনি যে কোম্পানিতে চাকরি করেন সে কোম্পানি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা আপনার নৈতিক দায়িত্ব। ক্লায়েন্টের সাথে অথবা অন্য পেশার কোন লোকের সাথে কথা বলতে গিয়ে আপনি যদি সব প্রশ্নের উত্তর আনুমানিক বা ধারণা করে দেন তাহলে আপনার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তি আপনাকে নিয়ে ভালো ধারণা পোষণ করবে না। কোম্পানির বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকলে ও মনোযোগ দিয়ে সেশন উপভোগ করলে সহজে সহকর্মীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে যাবে।
ডুড
কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় হয়ত আপনি ‘ডুড’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু অফিসের কলিগদের সাথে এমন শব্দ ব্যবহার করবেন না। অফিসের কলিগদের সাথে মিশুন, ভালো আচরণ করুন। কোন কলিগের সাথে পরিচয় না থাকলে পরিচিত হোন। চেষ্টা করুন সবার নাম মনে রাখতে।
দোষ
আপনি যদি কাজের ক্ষেত্রে অন্যের দোষ ধরেন তাহলে ব্যক্তিত্ব হারাবেন। আপনার সহকর্মীরা এই ব্যাপারে কোন আগ্রহ পোষণ নাও করতে পারে। তাই অন্যের দোষ পেলে তা নিয়ে হাসাহাসি, কানাকানি করবেন না। এটা কর্মক্ষেত্রে শোভনীয় নয়। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিন। অন্যের ভুল হলে তা কিভাবে সংশোধন করতে হয় তা শিখিয়ে দিন। তাহলে অন্যের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করতে পারবেন।
সুন্দর
কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা ভালো ও যুক্তিসঙ্গত। তবে সব ব্যাপারকে সুন্দর বলা কখনো কখনো ভালো নাও হতে পারে।
Guys অর্থাৎ গাইজ
কর্মক্ষেত্রে Guys অর্থাৎ গাইজ শব্দটি ব্যবহার করবেন না। এটা অনানুষ্ঠানিক শব্দ। কর্মক্ষেত্রের সার্বিক পরিস্থিতির সাথে এই শব্দটি মানানসই নয়। এই শব্দের পরিবর্তে অন্য শব্দ ব্যবহার করুন। আপনারা গাইজ শব্দটির পরিবর্তে ‘হ্যালো’ শব্দের ব্যবহার করতে পারেন।
অনেস্টলি বা সত্যিকার অর্থে
কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন কথোপকথনে অনেস্টলি শব্দের ব্যবহার করবেন না। এই শব্দের ব্যবহার উপকারের চেয়ে বরং অপকার করবে বেশি। অন্যান্য কর্মীরা আপনাকে ফেক বা মিথ্যা মনে করবে। আপনি যদি সতিকারের হিরো বা নেতা হন তাহলে অন্যের কাছে নিজেকে ব্যাখা দেয়ার প্রয়োজন নেই। নিজেকে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হিসেবে প্রকাশ করতে চাইলে অনেস্টলি শব্দ ব্যবহার করবেন না।
ইট বা ইহা
আমাদের কথার মাঝে সর্বনামের ব্যবহার দেখা যায় প্রচুর। প্রতিনিয়ত সর্বনামের ব্যবহার কখনো কখনো ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে। তাই ইট বা ইহা এই সংক্রান্ত সর্বনামের ব্যবহার কমানো উচিত।
জাস্ট
জাস্ট হলো এমন একটি শব্দ যা শুনলে মনে হয় আপনি আপনার কথা বা আলোচনাকে সংকুচিত করেছেন। আপনি যদি কর্মীকে কোন কাজ দিয়ে বলেন ‘জাস্ট এটা করে নিয়ে আসেন’ তাহলে সে হয়তো আলসেমি করে কাজটা দেরিতে করবে। কাজটি দ্রুত পাওয়া আপনার প্রয়োজন। তাই এমনভাবে বলুন যেন সে সঠিকভাবে কম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে আপনাকে জমা দেয়।
লল
ফেসবুকের এই যুগে মানুষ লল শব্দের ব্যবহার করে বেশি। এটি নিতান্তই অনানুষ্ঠানিক শব্দ। এই শব্দের ব্যবহার আনুষ্ঠানিক কাজে চলে না। মূলত আপনার সহকর্মী কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই শব্দ শুনলে আপনাকে পছন্দ নাও করতে পারে।
নোপ
স্বভাবত প্রতিষ্ঠানে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ শব্দের ব্যবহার হয়। আপনি যদি অতি আধুনিকতা দেখাতে গিয়ে নোপ শব্দের ব্যবহার করেন তা অন্যের কাছে দৃষ্টিকটু হতে পারে।
উচিত
আপনি হয়ত একটি ভালো কাজ করেছেন কিংবা অন্য একটি প্রোজেক্টের সাথে যুক্ত হয়েছেন। আপনার সহকর্মীদের কখনো বলবেন না ঐ প্রোজেক্টের সাথে তাদেরও যুক্ত হওয়া উচিত।
চেষ্টা করবো
যেকোনো মানুষের সাথে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ‘চেষ্টা করবো’ শব্দের ব্যবহার করবেন না। চেষ্টা করবো এর বদলে বলুন করবো অথবা করবো না। ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি বলে দিন।