ওয়ার ডগ: যুদ্ধ এবং সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করা হয় যেসব কুকুরের প্রজাতি

Source: Animal Planet

আমাদের নিজেদের বাসাবাড়ির নিরাপত্তা থেকে যুদ্ধক্ষেত্রেও রয়েছে কুকুরের প্রয়োজনীয়তা। তবে আপনি যদি ভেবে থাকেন বিভিন্ন সেন্ট্রিপোস্টগুলোতে গার্ড দেওয়া এবং পুলিশ অথবা আর্মির টহলেই শুধুমাত্র কুকুরের ব্যবহার রয়েছে তাহলে আপনার ধারণা ভুল। সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন কাজে কুকুর ব্যবহার করা হয়। যেমন স্কাউট ডগের কাজ হচ্ছে স্নাইপারের সাথে থেকে তার নিরাপত্তা দেওয়া, শত্রুর আগমণের করা আগেভাবে নিঃশব্দে জানানো এবং বিভিন্ন ফাঁদ থেকে তার মালিককে সর্তক করা।

আছে ম্যাসেঞ্জার কুকুর, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে তথ্য বহন করা। মাইনিং ডগের কাজ হচ্ছে শত্রুপক্ষের বসানো মাইন সেটা ধাতুর হোক বা অধাতুর তৈরি হোক সেগুলো থেকে আগেভাগে সর্তক করা। যুদ্ধের সময় নিজের দেশের আহত সেনাদের খুঁজে বের করা করার কাজেও কুকুর ব্যবহার করা হয়। তবে এসব কাজ তো শুধু ট্রেনিং দিলেই হয় না, কুকুরের জাতের উপরও অনেককিছু নির্ভরশীল। আর যুদ্ধক্ষেত্রে ট্রেনিং দেওয়া কুকুরের সেই প্রজাতিগুলো নিয়েই আমাদের এই ফিচার।

১. জার্মান শেফার্ড

মোটামুটি কমবেশি সবাই অন্তত এই প্রজাতির কুকুরের নাম শুনেছেন। এই প্রজাতির উৎপত্তি তাদের নামের মাধ্যমেই জানা যায়। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে কুকুরের এই প্রজাতি অস্তিত্ব ছিলো না। জার্মান শেফার্ডের উচ্চতা সাধারণত ২২ থেকে ২৬ ইঞ্চির মত হয়। ওজন ৭০ থেকে ৯০ পাউন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর সাধারণত ১৩ থেকে ১৫ বছরের মত বাঁচে।

Source: Animal Planet

জার্মান শেফার্ড শুধু আকার আকৃতিতে বড় আর শক্তিশালীই নয়, এরা অত্যন্ত প্রভুভক্ত প্রাণীও বটে। আর এর বুদ্ধিমত্তা সাধারণত অন্যান্য প্রজাতির কুকুরদের হতে বেশি হওয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে জার্মান শেফার্ড সঙ্গী হিসাবে অসাধারণ বটে। মজার বিষয় হচ্ছে জার্মান শেফার্ড একমাত্র প্রজাতি যারা ছবি তোলার সময় পোজ দিয়ে থাকে।

২. বেলজিয়ান মালিনোয়া

Source: Animal Planet

ভালো করে না তাকাতে আপনি বেলজিয়ান মালিনোয়া আর জার্মান শেফার্ডের সাথে পার্থক্য ধরতে পারবে না। উচ্চতা আর আয়ুর দিক থেকে জার্মান শেফার্ডের মিল থাকলেও ওজনের দিক থেকে কিছুটা কম। শুধুমাত্র জেনেটিক্স দিক থেকে নয় এদের উৎপত্তিও ঘটেছে ইউরোপের একই অঞ্চল হতে। সাধারণত পুলিশ সদস্যরা কুকুরের এই প্রজাতি তাদের কাজে ব্যবহার করে থাকেন।

৩. ডোবারম্যান পিন্সার

শক্তিশালী দেহ, প্রখর বুদ্ধিমত্তা আর প্রভুভক্তির জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকেই ইউএস মেরিনের সঙ্গী ডোবারম্যান পিন্সার। ডোবারম্যান আর আর ডোবারম্যান পিন্সার ভিন্ন নামে একই প্রজাতি, যার উৎপত্তি আমেরিকায়ই হয়েছে। ৬০ থেকে ৯০ পাউন্ড ওজন আর ২৪ থেকে ২৮ ইঞ্চি উচ্চতার কুকুরের এই প্রজাতির সর্বোচ্চ ১৪ বছর বাঁচে।

Source: Animal Planet

সেনাবাহিনীর থেকে পুলিশ ফোর্সে এর ব্যবহার রয়েছে। ডোবারম্যান পিন্সার শত্রুদের উপর তার হিংস্রতার জন্য খ্যাত। বাজে আচরণের জন্য ডোবারম্যানকে আমেরিকান ডেভিল ডগ বলা হয়ে থাকে। এর অন্যতম স্বভাব হচ্ছে সরাসরি শত্রুপক্ষের কন্ঠনালীতে কামড় দেওয়ার।

৪. রটয়লার

Source: Animal Planet

খিটখিটে আর বদমেজাজের অধিকারী রটয়লার প্রজাতির কুকুর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে সৈন্যদের সঙ্গী। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তথ্য আদানপ্রদান করার কাজে রটয়লার ব্যবহার করা হয়েছিলো। আর জেনেটিক্সে ডোবারম্যান পিন্সার সাথে এই কুকুরের রয়েছে বেশ ভালো মিল। ভারী শরীরের অধিকারী রটয়লারের উচ্চতা সাধারণত ২২ থেকে ২৭ ইঞ্চির মধ্যে হয়ে থাকে। ওজন ৮৫ থেকে ১৩০ পাউন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর আয়ু সাধারণত ১০ থেকে ১২ বছর হয়ে থাকে।

৫. বক্সার

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে বিভিন্ন সেনাবাহিনীর কাজে বক্সার ব্যবহার হয়ে আসছে। বার্তাবাহক, স্কাউট অথবা টহলদারি কাজ হোক, সকল কাজেই এই প্রজাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বক্সারের জেনেটিক্সের সাথে বুলডগ আর বুলটেরিয়য়ের রয়েছে ভালো মিল। শক্তিশালী পা আর ভয়ানক ডাক ছাড়ে এই প্রজাতি। উচ্চতা ২১ থেকে ২৫ ইঞ্চি আর ওজনে সাধারণত ৫৫ থেকে ৭০ পাউন্ড হয়ে থাকে। বক্সারের গড় আয়ু ১২ বছরের মত।

Source: Animal Planet

বক্সার প্রজাতির প্রথম দেখা মিলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে। জার্মানের কসাইরা গরু পালন করার কাজে এবং শিকারিরা বন্য শুয়োর, বাইসন শিকারের জন্য এই প্রজাতির কুকুর পালন করতো। ডগ ফাইটে এদের ব্যবহার করা হতো সেখান থেকে এদের নামকরণ করা হয়। মিলিটারী আর পুলিশি কাজে প্রথম দিকের ট্রেনিং দেওয়া কুকুরের প্রজাতিগুলোর মধ্যে বক্সার অন্যতম।

৬. আলাস্কান মালামুট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুধুমাত্র খোলা মাঠ বা বন জঙ্গলেই ঘটেনি। বরফের দেশ গ্রিনল্যান্ডে ইউরোপ থেকে ফেরা কয়েকটি বিমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্রাশ করেছিলো। তখন পাইলটদের খুঁজতে সর্বপ্রথম আলাস্কান মালামুট প্রজাতির কুকুর উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা হয়। গড় আয়ু ১৩ বছর আর উচ্চতায় ২৩ থেকে ২৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে এই প্রজাতি।

Source: Animal Planet

মালামুটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এরা শীত প্রধান দেশের কুকুর। বাহিরে যতই ঠান্ডা হোক না কেন, এই প্রজাতির কুকুর কোন সমস্যা ছাড়াই দিনের পর দিন বরফের দেশে কাটাতে পারে। প্রচীন আলাস্কার অধিবাসী ইনুটরা মালামুট প্রজাতির কুকুর পুষে আসছে। শিকার কাজ থেকে গাড়ি টানার জন্য তারা এই কুকুরের প্রজাতির উপর নির্ভর করতো।

৭. এয়ার্ডেল টেরিয়ার

Source: Animal Planet

স্বভাবে একরোখা হলেও এয়ার্ডেল টেরিটর তার মনিবের প্রতি অনুগত এবং প্রতিটি নির্দেশ মেনে চলে। তবে অপরিচিতদের সাথে অত্যন্ত বাজে ব্যবহারের স্বভাব আছে এই প্রজাতির যে কারণে স্কাউটিং বা টহলদারি কাজে এয়ার্ডেল টেরিয়ার আদর্শ প্রজাতি বলা চলে। গন্ধ শুঁকে চলার অসাধারণ ক্ষমতার কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে বিভিন্ন উদ্ধার কাজে এই প্রজাতির কুকুর ব্যবহার করা হয়। এয়ার্ডেল টেরিয়ার উচ্চতায় ২৩ থেকে ২৮ ইঞ্চি আর ওজনে ২০ থেকে ৬০ পাউন্ডের মত হয়ে থাকে। ইংলান্ডের কুকুরের এই প্রজাতি সাধারণত ১০ থেকে ১৩ বছরের মত বাঁচে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *