আমরা প্রতিদিন অনেক সমস্যার মুখোমুখি হই এবং তার সমাধানও করি নিজেই। তবে আমাদের জ্ঞানের ঝুলিতে যদি কিছু দৈনন্দিন টিপস থাকে তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান আরো সহজে করা যাবে। এমন অনেক টিপস আছে যা শুধু কাজেই লাগে না এসব ব্যবহৃত হয় প্রজন্মের পর প্রজন্ম। সময়ের সাথে সাথে আমরা হয়তো টিপসগুলো ভুলে যাব কিন্তু আমি আপনাকে বলছি- আপনি বুড়ো বয়সে আপনার নাতি-পুতিদের শিখিয়ে যাবেন এইসব টিপস। তাই এমন কালজয়ী কিছু বুদ্ধির ব্যবহার নিয়ে আজকের পোস্ট।
১. সূর্যাস্তের আর কত বাকি?
সন্ধ্যা হতে আর কত দেরি কিংবা এখন কয়টা বাজে এরকম বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবেন নিচের টিপসটি ফলো করলে। প্রথমে চিত্রের মতো আপনার হাতের তালু সূর্যের বিপরীতে রেখে আঙুলগুলো একসাথে রাখুন। একটি জিনিস খেয়াল রাখবেন আপনার বুড়ো আঙুল থাকবে সূর্যের সাথে। বাকি চার আঙুল গণনা করুন দিগন্তের সীমারেখার সাথে। প্রতিটি আঙুল প্রায় ১৫ মিনিট নির্দেশ করবে। যদি আপনার বৃদ্ধাঙ্গুল থেকে দুই আঙ্গুল নিচে দিগন্তের সীমারেখা থাকে, তার মানে (১৫*২) = ৩০ মিনিট বাকি আছে সূর্যাস্তের।
২. কোন মাসে কতদিন
এই টিপসিটি আমি শিখেছি অনেক পরে, কলেজে পড়তে গিয়ে। এর আগে কোন মাসে কত দিন মুখস্থ করতে করতে নিজের চুল ছিঁড়েছি। আর আপনি না জানলে শিখে নিন টিপসটি।
হাত মুঠ করুন, মুঠ করা হাতের উপরে দেখবেন উঁচু নিচু অংশ। এই উঁচু নিচু অংশ বা নাকলকে এক একটা মাস হিসাবে ধরুন। উঁচু অংশ ৩১ দিনের মাস আর নিচু খাদের মতো অংশ ৩০ দিনের মাস। এখন এইভাবে একহাত থেকে আরেক হাত মিলিয়ে দেখুন নিজেই অবাক হবেন!
৩. চাঁদের আকার নির্ণয় এবং ঋতুর ধারণা
আমরা জানি চাঁদ পৃথিবীর নিজস্ব উপগ্রহ। তাই চাঁদ আর পৃথিবীর অবস্থানের উপর নির্ভর করে জোয়ার ভাটা এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো ব্যাপার ঘটে। কিন্তু কিভাবে আমরা বুঝবো এই পরিবর্তন? চাঁদের আকার দেখে। যেমন- রমজানের রোজার শেষে আমরা দেখি নতুন চাঁদ, আর সেই নতুন চাঁদের উপর নির্ভর করে উদযাপন করি ঈদ। এর থেকে আমরা ধারণা পাই মাসের এমনকি ঋতুর। চীন দেশে তো রীতিমত চাঁদের উপর নির্ভর করে তৈরি করা চন্দ্র ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়।
চাঁদের আকার বলতে বুঝানো হয় মুন ফেজ বা পৃথিবীর সাথে চাঁদের অবস্থানের পার্থক্য। নিজে এবং ছোটদের এই মুনফেজ শেখাতে পারেন ইংলিশ অক্ষর দিয়ে।
ফুল্মুন বা জ্যোৎস্নার চাঁদ – O
প্রথম অর্ধেক চাঁদ – C
শেষ অর্ধেক চাঁদ– D
৪. রোমান সংখ্যা মনে রাখার উপায়
ছোট ক্লাসে আপনি শিখেছিলেন রোমান সংখ্যা, মনে আছে নিশ্চয়ই? আপনি ভুগেছিলেন কিনা জানি না তবে আমি এই সংখ্যা মনে রাখতে গিয়ে খুব ভুগেছি। সংখ্যা আবার অক্ষর দিয়ে হয় কী করে, সব সময় ভুল হতো আমার। তবে আপনি যদি এই লাইনটি মনে রাখতে পারেন তবে খুব সহজে বের করে ফেলতে পারবেন রোমান সংখ্যা।
Мy Dear Сat Loves Хtra Vitamins Intensely.
In descending order: M (1,000), D (500), C (100), L (50), X (10), V (5), I (1).
এই লাইনের প্রত্যেকটি শব্দের প্রথম অক্ষর রোমান সংখ্যাকে প্রকাশ করে।
৫. ব্যাটারি ভালো তো
ব্যাটারি আমাদের বাজারের লিস্টে মাঝে মাঝেই থাকে। টেলিভিশনের রিমোট থেকে শুরু করে মশা মারার ব্যাট কিংবা ইমারেজেন্সি টর্চ সবখানেই ব্যাটারি লাগে। মাঝে মাঝে ব্যাটারি বদলাতে হয় চার্জ শেষ হলে, এখন বুঝবেন কীভাবে ব্যাটারি সত্যি খালি! সাধারণত আমরা জিহ্বার আগায় ঠেকিয়ে বুঝতে পারি কিন্তু এটা ভালো সমাধান নয় কখনোই। নিচের বুদ্ধিটা ব্যবহার করে দেখুন, কাজে দিবে।
যে ব্যাটারি পরীক্ষা করবেন সেটি টেবিল থেকে ১–২ সেমি উপরে ধরে ছেড়ে দিন, ব্যাটারি খালি হলে পড়ে যাবে বা লাফ দেবে।
৬. আঙ্গুল দিয়ে গুণ করা
সাধারণত বাচ্চারা ছোট ছোট সংখ্যার গুণ সহজেই করতে পারেন গুণের নামতা দিয়ে। কিন্তু বড় সংখ্যা যেমন ৬,৭,৮ এইসব ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে তারা ভুল করে। তাই আপনাদের বাচ্চাদের আঙ্গুল দিয়ে গুণ করার এই বুদ্ধিটি শিখিয়ে দিন।
যাতে বাচ্চারা বড় গুণ সহজে করতে পারে বা মনে রাখতে পারে সেজন্য এই পদ্ধতি। দুই হাতের তালুকে আপনার মুখ বরাবর করে প্রতিটি আঙ্গুলকে ৬-১০ দ্বারা চিহ্নিত করবেন। এরপর ছোট আঙ্গুল থেকে গণনা শুরু করবেন যেমনটা ছবিতে দেখানো আছে। ধরুন, আপনি ৭*৮ করবেন। আপনার এক হাতের ৭ নাম্বার আঙ্গুল এবং অপর হাতের ৮ নাম্বার আঙ্গুল কে এক সাথে করেন। এরপর নিচের দিকের আঙ্গুলগুলোকে গণনা করবেন এবং এর সাথে জোড়া করা আঙ্গুলকেও গণনায় ধরা লাগবে, যেই সংখ্যা আসবে তা হলো আপনার গুণফলের দশক ( আমাদের জন্য ৫) পরবর্তীতে উপরের দিকে বাম হাতের অবশিষ্ট আঙ্গুল সংখ্যাকে ডান হাতের অবশিষ্ট আঙ্গুল সংখ্যা দিয়ে গুণ দিবেন(এক্ষেত্রে ৩*২=৬)
ব্যাস উত্তর হয়ে গেলো!
৭. দৈর্ঘ্য গণনা
হঠাত দরকার পড়লো কোনো জিনিসের দৈর্ঘ্য মাপার কিন্তু হাতের কাছে কোনো স্কেল বা টেপ পাচ্ছেন না। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে সহজেই এর সমাধানও করা যায়। আপনার হাত দিয়ে মাপতে পারবেন যদি আপনি জানেন যে, সাধারণত মানুষের বুড়ো আঙ্গুল থেকে পরের আঙ্গুল বা ফোর ফিঙ্গারের দূরত্ব ১৮ সেমি (প্রায় ৭ ইঞ্চি) এবং আপনার বুড়ো আঙ্গুল থেকে কড়ে আঙ্গুলের দূরত্ব ২০ সেমি (প্রায় ৭.৮৭ ইঞ্চি)।
ব্যক্তির শারীরিক আকারের জন্য এই দৈর্ঘ্য ধ্রুব না হলেও কাছাকাছি হয় কিছুটা। তবে আপনি চাইলে নিজের আঙ্গুলের দূরত্ব বর্ণনা অনুযায়ী মেপে নিন আজই। এরপর হঠাৎ কোনো দরকার পড়লে সেই জানা মাপের উপর ভিত্তি করে মেপে নিতে পারেন যেকোনো কিছুর দৈর্ঘ্য।
৮. কোন কিছুর জ্যামিতিক কোণ মেপে নিন
আমরা অনেকে চোখের আন্দাজে কোনো কিছুর জ্যামিতিক কোণ নির্ণয় করি তবে এর চেয়ে সহজ এবং বিশ্বাসযোগ্য উপায় হচ্ছে হাত দিয়ে কোণ মাপা।
প্রথমে আপনার হাতের তালু ছড়িয়ে দিন পুরোপুরি। হাতের তালুকে ভূমি হিসাবে কল্পনা করুন। কড়ে আঙুল থাকবে ভূমির সমান্তরাল মানে ০ ডিগ্রি। কড়ে আঙুল এবং বৃদ্ধাঙ্গুলের মাঝে দূরত্ব হচ্ছে ৯০ ডিগ্রি বা সমকোণ। কড়ে আঙুলকে ভূমি ধরে বাকি আঙুলগুলো যথাক্রমে ৩০,৪৫ এবং ৬০ ডিগ্রি কোণ নির্দেশ করে।
আমাদের চারপাশেই আছে কত সমস্যার সুন্দর আর সহজ সমাধান। অনেকটা একটি গণিত সমস্যার অনেক সমাধানের মতো। তবে আমরা যদি এরকম কিছু বুদ্ধি আগে থেকে জানতাম তবে কত কিছুই না আরো সহজ হয়ে যেত। আশা করি উপরের টিপসগুলো আপনার যেমন কাজে লাগবে তেমনি আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও কাজে দেবে।