কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাওয়ার জন্য সিভি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সিভির কভার লেটারও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং শুধু সিভি তৈরি করা শিখলে হবে না, আকর্ষণীয় সিভি কভার লেটার লেখাও শিখতে হবে।
ইতিপূর্বে একটি নিবন্ধ আমি জানিয়েছি কিভাবে আকর্ষণীয় কভার লেটার লিখতে হয়। কিন্তু শুধুমাত্র কভার লেটার আকর্ষণীয় করার সূত্রগুলো জানলেই হবে না। একই সাথে জানতে হবে কভার লেটার আকর্ষণীয় করতে কোন কোন বিষয় এড়িয়ে চলা উচিত, অর্থাৎ কভার লেটার লেখার সময় কোনো কাজগুলো করা যাবে না।
১. বানান ভুল এবং ব্যাকরণগত ত্রুটি সংশোধন করুন
যেহেতু এই সিভি এবং কভার লেটারটি আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা এবং পেশাদারিত্বের প্রথম পরিচয়, তাই এখানে শব্দ বিন্যাস এবং ব্যাকরণগত সকল ভুল দূর করতে হবে। কোনোভাবেই সিভি এবং কভার লেটারে বানান ভুল বা কোনো ব্যাকরণগত ত্রুটি থাকা চলবে না।
ভেবে দেখুন নিয়োগকর্তা আপনাকে এখনও চোখে দেখেননি, তার কাছে এখন পর্যন্ত আপনার সার্বিক যোগ্যতার একমাত্র দলিল আপনার সিভি। সুতরাং আপনার সিভি এবং কভার লেটারে যদি ভুল থাকে তাহলে নিয়োগকর্তা আপনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন!
তাছাড়া এটাও মনে রাখবেন সিভির কভার লেটার অনুপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করে সৃজনশীলতা প্রদর্শনের জায়গা নয়। এখানে প্রতিটি ভুল আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দূরদর্শিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
শব্দ চয়ন নিয়ে ছোট্ট তিনটি নির্দেশিকা:
“you’re.” ব্যবহারের পরিবর্তে “your” ব্যাবহার করুন।
“there.” এর পরিবর্তে “their” ব্যবহার করুন।
“been.” পরিবর্তে “being” ব্যবহার করুন।
২. কর্মসংস্থান গ্যাপ এবং ক্যারিয়ার পরিবর্তনের ব্যাখ্যা
কর্মজীবনে আপনার নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যে কোনো কারনে দু-এক বছর চাকরি শূন্য থাকতে পারেন। এটা কোনো ভাবেই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না। এমনকি এই শূন্যতা নতুন চাকরির জন্য আপনাকে অযোগ্যও করে তোলে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরং এই গ্যাপ আপনার জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনে।
তবে এই সব কিছু নির্ভর করে কর্মজীবনের এই শূন্যতা আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করছেন তার উপর। অর্থাৎ কর্মজীবনের শূন্যতার যথাযথ ব্যাখ্যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ঐতিহ্যগত সিভি ফরমেটে এই ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কোনো জায়গা নেই। সুতরাং আপনার সিভি কভার লেটার হতে পারে সংক্ষিপ্ত এই ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। কাজেই সিভির কভার লেটারে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরুন আপনার সমস্যার কথা।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আপনার আবেদনে যদি ক্যারিয়ার পরিবর্তনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তবে তারও যথাযথ ব্যাখ্যা দিন। যেমন আপনি হয়তো দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যসেবা খাতে চাকরি করেছেন। সুতরাং এই ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা বিস্তর। কিন্তু এখন যেখানে আবেদন করেছেন তাতে আপনি বিপণন জগতে প্রবেশ করতে চাইছেন। এই ক্যারিয়ার পরিবর্তনের কারণ নিজ থেকেই আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে।
আপনার অতীত অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলুন। আপনার বর্তমান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরুন। আপনার অতীত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি কিভাবে মার্কেটিং জগতে ভূমিকা রাখতে পারে তাও বলার চেষ্টা করুন।
৩. পূর্ববর্তী বসের খারাপ দিক উল্লেখ করা বন্ধ করুন
মনে রাখবেন আপনার সিভি কভার লেটার জীবনের ঘটনা প্রবাহ দিয়ে সাজানোর, বা আত্মজীবনী লেখার জায়গা নয়। সুতরাং এখানে সকল প্রকার বাহুল্য বর্জন করুন। আপনি পূর্ববর্তী চাকরি থেকে যেকোনো কারণে বিতাড়িত হতে পারেন বা ছেড়ে আসতে পারেন। কিন্তু নতুন চাকরিতে নিয়োগকর্তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে পূর্ববর্তী বসের নিন্দা করা বন্ধ করুন।
আশ্চর্যজনকভাবে অসংখ্য সিভি এবং কভার লেটারে পূর্ববর্তী বস এবং প্রতিষ্ঠানের নেতিবাচক দিক উল্লেখ করতে দেখা যায়। আপনি যদি সত্যিই নতুন চাকরিটা পেতে চান তবে কোনোভাবেই এ জাতীয় কোনো কিছু উল্লেখ করবেন না। নতুন নিয়োগকর্তার মনোযোগ পেতে একজন আত্মবিশ্বাসী, নির্ভরযোগ্য, ও সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন আবেদনকারী হিসেবে উপস্থিত হোন।
৪. সিভি কপি করা বন্ধ করুন
অসংখ্য আবেদনকারী কভার লেটারে সরাসরি সিভির অংশ কপি করে পেস্ট করে থাকেন। তারা মনে করেন কভার লেটার হল সিভির সারসংক্ষেপ। সুতরাং সিভিতে থাকা সকল তথ্যের মধ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো কপি করে তারা কভার লেটারে পেস্ট করেন।
কখনোই এই কাজটি করবেন না। সিভি এবং কভার লেটারে একই তথ্য থাকলেও নতুন শব্দচয়নে কথাগুলো লেখার চেষ্টা করুন। সংক্ষিপ্ত আকারে নিজের সব যোগ্যতা তুলে ধরার অর্থ সিভি থেকে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতাগুলো কপি-পেস্ট করা নয়।
৫. লিঙ্গ নিরপেক্ষ সম্মোধন
আবেদনপত্রে সম্মোধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বেশিরভাগ আবেদনকারী “Dear sir/ma” অথবা “to whom this may concern.” লিখে সম্মোধন করে। আমি আপনাদের এজাতীয় সম্মোধন ত্যাগ করার পরামর্শ দিব।
কেননা প্রথমতঃ আপনি আপনার সম্ভাব্য ব্যবস্থাপক বা নিয়োগকর্তার লিঙ্গ জানেন না। সুতরাং এভাবে সম্বোধন করলে তাকে ভুল ভাবে সম্বোধন করা হতে পারে। দ্বিতীয়তঃ এটি অলসতার প্রমাণ। কেননা এমনটাই সিংহভাগ মানুষ করে থাকে।
সুতরাং এ জাতীয় সম্বোধনের পরিবর্তে আপনি Dear hiring manager অথবা Dare XYZ team লিখে সম্বোধন করতে পারেন। লক্ষ্য করুন এজাতীয় সম্মোধন সম্পূর্ণ লিঙ্গ নিরপেক্ষ। সুতরাং আপনার বস নারী বা পুরুষ যেই হোন না কেন, এমন সম্মোধন তাকে খুশি করার জন্য যথেষ্ট। কাজেই সিভির কভার লেটারে সবসময় লিঙ্গনিরপেক্ষ সম্মোধন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৬. কোম্পানি গবেষণা
আরেকটি বিকল্প উপায় হতে পারে আপনি যে কোম্পানিতে চাকরি নিতে চান সে কোম্পানি সম্বন্ধে গবেষণা করা। উক্ত কোম্পানিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কারা? তাদের সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করুন। আপনার নিয়োগকর্তাকে চেনার পর তাকে সম্বোধন করার উপযুক্ত শব্দ লিখে সম্বোধন করুন।
তাছাড়া আপনি যে কোম্পানিতে চাকরি নিতে চাইছেন সেখানে আপনার অবস্থান কী হবে, কী কাজ করতে হবে, সেসব বিষয়ে জানার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ আপনি একটি কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ের দায়িত্ব নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। সুতরাং এই কোম্পানির উক্ত পোষ্টের জন্য কী কী কাজ নির্ধারিত আছে সে ব্যাপারে গবেষণা করুন এবং তার উপর ভিত্তি করে আপনার কভার লেটার প্রস্তুত করুন।