আপনার কি এমন কোনো বন্ধু আছে, যিনি বিভিন্ন জায়গায় সুবিধা পাওয়ার জন্য আপনাকে ব্যবহার করেন বা আপনাকে অনুরোধ করতে বলেন? অথচ আপনার পক্ষে তার আবেদনে সাড়া দেয়া সম্ভব না।
এমন বন্ধু বা আত্মীয় প্রায় সবারই থাকে। চাকরি বা পদোন্নতি পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য যারা আপনার মুখাপেক্ষী হন এবং তাদের জন্য সুপারিশ করতে বলেন। আসলে তারা নিজেরা কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য যোগ্য হয়ে ওঠেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় কাটিয়ে, আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করেছেন এবং চাকরির জন্য যেসব সনদ অর্জন করা প্রয়োজন, তার সবগুলো অর্জন করতে পারেননি। তাই এখন তাদের আপনার সুপারিশের প্রয়োজন।
এমন অবস্থায় পড়লে আপনি কী করবেন?
অবশ্যই অন্যকে সহযোগিতা করা ভালো। নিশ্চয় আপনারও অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। সুতরাং সব মানুষেরই সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করা উচিত। কিন্তু এই সহযোগিতা যদি আপনার কর্মক্ষেত্র ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে বা পেশাজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে, তবে নিশ্চয়ই তা দ্বিতীয়বার ভাবার অবকাশ রাখে। আপনি যদি এমন কারো চাকরির জন্য সুপারিশ করেন, যিনি অফিসের ডেস্কে বসে ঘুমান, মোবাইল ফোনে ক্লাশ অফ ক্লান গেম খেলেন অথবা দেরি করে অফিসে যান, তবে আপনার গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য।
কাজেই ভেবে দেখুন আপনার আত্মীয়ের আত্মীয় বা আপনার বন্ধুর বন্ধু, যাকে আপনি ভালোভাবে চেনেন না, তার জন্য কোথাও চাকরির সুপারিশ করবেন কিনা।
মনে রাখবেন, দূরের যে আত্মীয়র জন্য আপনি চাকরির সুপারিশ করছেন, তার কাজকর্মের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি তাকে আপনি ভালোভাবে চেনেন না। অথচ তার জন্য নিজের সম্মান এবং পদমর্যাদা কাজে লাগিয়ে চাকরির সুপারিশ করলে আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে পস্তাতে হবে। জোডনি স্পায়ার নামে একজন লেখক এ বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন। তার পরামর্শের ভিত্তিতে নিচে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. সহজ ভাষায় সংক্ষেপে বুঝিয়ে বলুন
যে ব্যক্তিকে আপনি ভালোভাবে চেনেন না অথবা যার কারণে আপনার সম্মান এবং পদমর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, তার পক্ষ থেকে চাকরির জন্য সুপারিশ করার অনুরোধ পেলে তাকে সহজে এবং সংক্ষিপ্তভাবে বুঝিয়ে বলুন।
লেখক জোডনি স্পায়ার বহুবার এভাবে সুপারিশ করে বিপদে পড়েছেন। তিনি বলেন,
এমন পরিস্থিতিতে পড়লে বলুন, আমি আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য সঠিক ব্যক্তি নই অথবা আমি এই কাজের জন্য উপযুক্ত নই। আপনি বরং অন্যভাবে চেষ্টা করুন। আপনার জন্য শুভকামনা।
তবে কোনোভাবেই নিজের অবস্থান নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। যতটা সম্ভব বিনয়ের সাথে সংক্ষেপে তাকে প্রত্যাখ্যান করুন। শুধু তার কথা শুনবেন এবং তাকে উত্তর দিবেন। তবে অবশ্যই তার পক্ষ থেকে ‘কেন’ প্রশ্নটি শোনার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। কেননা অবশ্যই সে আপনার অসহযোগিতার কারণ জানতে চাইবে। এক্ষেত্রে নিজের অবস্থানে আপনাকে দৃঢ় থাকতে হবে। কোনোভাবেই আপনার সিদ্ধান্তের জন্য ব্যাখ্যা দিতে যাবেন না।
তবে সুপারিশ করার বিষয়টি এতটা সহজে অগ্রাহ্য করা যায় না। অন্যান্যদের পক্ষ থেকে আপনার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে। সেই পরিস্থিতির জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। অতিরিক্ত পীড়াপীড়ি করলে সংক্ষেপে বলুন, “ঠিক আছে, আমি চেষ্টা করে দেখব।”
এমন পরিস্থিতিতে সম্ভব হলে দূর থেকে এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা অধিক যুক্তিযুক্ত। একটি ইমেইল বা এসএমএসের মাধ্যমে আপনার সিদ্ধান্ত তাকে জানিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে শব্দচয়নের ব্যাপারে আপনি অধিক সতর্ক হতে পারবেন।
২. অন্য উপায়ে সাহায্যের প্রস্তাব
সরাসরি কাউকে সহযোগিতা করার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করার পর আপনি তাকে অন্যভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। সম্ভাব্য অন্যান্য উপায়ে তাকে সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিন। যেমন, তার উপযুক্ত নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করা বা সন্ধান দেওয়া, চাকরির সাক্ষাৎকার সম্বন্ধে তাকে আরো সচেতন করে তোলা এবং চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করায় তাকে সহযোগিতা করা।
তাকে বুঝিয়ে বলুন, আপনাকে সবসময় চোখ কান খোলা রেখে চলতে হয় এবং আপনি সবসময় তাদের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু সুনির্দিষ্ট যে ক্ষেত্রে সুপারিশ করার জন্য বলা হচ্ছে, আপনি তা করতে অপারগ।
৩. সৎ থাকুন
প্রত্যাখ্যান করলে যে কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারেন। তাই কখনোই কঠিন হওয়া যাবে না। চেষ্টা করুন, নিজের বিনয় ধরে রেখে সৎ থাকতে। আপনি যদি কিছু মানুষকে সুযোগ দেন আর কিছু মানুষকে প্রত্যাখ্যান করেন তবে নিশ্চয়ই সমালোচনার মুখে পড়বেন। তাই সব সময় সৎ থাকার চেষ্টা করুন।
৪. সাদা মিথ্যা
কোন কিছু এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বা কারো বিশেষ প্রশংসা করার জন্য ‘সাদা মিথ্যা’ বা সামান্য মিথ্যে কথা বলা হয়ে থাকে। যে মিথ্যার জন্য সাধারণভাবে কোনো অপরাধ হয় না বা কারো ক্ষতি হয় না। কিন্তু কার্যসিদ্ধি হয়।
লেখক জোডনি স্পায়ার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “বেশ কয়েক বছর আগে একজন সম্পাদককে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তিনি আমাকে ও তার কয়েকজন সাবেক সহকর্মীকে ডেকে তার পক্ষে সুপারিশ করার জন্য অনুরোধ করেন। আমরা তার আবেদনে কোনো সাড়া দেইনি। কোন ইস্যুতে যদি আপনার কিছুই বলার না থাকে, তাহলে সেই বিষয়টি উপেক্ষা করুন। আমরা ঠিক এই কৌশলই প্রয়োগ করলাম। তার আবেদনে কোনো সাড়া দিলাম না। পরবর্তীতে নিজের ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে তার অনুরোধ পুরোপুরি এড়িয়ে গেলাম।”
৫. ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে ফোকাস করুন
কিছু কিছু আবেদন কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। বিশেষ করে নিকটাত্মীয় এবং পরিবারের সদস্য হলে। যদি গভীর সম্পর্কের কারণে আপনাকে সুপারিশ পত্র লিখতেই হয়, তবে ব্যক্তির ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরুন। এমনভাবে সুপারিশ পত্রটি লিখুন, যেন আপনি তার নেতিবাচক দিক সম্বন্ধে কোনো ধারণাই রাখেন না।
Feature photo: video blocks