কাজের নজরদারী করতে গিয়ে আপনার ঘাড়ের কাছে এসে বস যদি নিশ্বাস নেন। এটা নিশ্চয়ই আপনার জন্য খুব একটা স্বস্তিদায়ক বিষয় হবে না। বসের এমন আচরণ শুধু যে অস্বস্তিকর তাই নয়, বরং আপনার কাছে এটাও প্রমাণ করে যে, তিনি আপনাকে বিশ্বাস করেন না বা আপনার কাজে ভরসা রাখতে পারেন না। এমন একজন খুঁতখুঁতে স্বভাবের বসের সাথে কাজ করা সত্যিই জেগে থেকে দুঃস্বপ্ন দেখার মতো।
এমন বসের অধীনে কাজ করলে অফিসে ঢোকার মুহূর্ত থেকে আপনার মনে হবে এই অফিসে আপনার সবকিছু অন্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আপনার দৈনিক সব কাজের বিস্তারিত তারা জানবেন। যেকোনো কাজ করতে তাদের নির্বাচিত পদ্ধতিই একমাত্র পদ্ধতি। তারা একই দিনের মধ্যে কয়েকবার আপনার কাজের অগ্রগতির খোঁজ নেয়। তারা দিন শেষে আপনার কাছ থেকে কী কাজ চায় তা আপনাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়, এমনকি আপনি যদি নিজের দায়িত্ব সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতন থাকেন তবুও।
আপনার বস কী সবকিছুর ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়? সম্ভবত সবক্ষেত্রে না।
প্রথমেই আপনাকে বুঝতে হবে, তারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাদের আত্ববিশ্বাসের অভাব বা দুশ্চিন্তার কারণে। এই নিয়ন্ত্রণের অর্থ এটা নয় যে, আপনার কাজ ভাল নয়। একবার নিজেকে তাদের জায়গায় বসিয়ে চিন্তা করে দেখুন। আপনাকে বুঝতে হবে তাদের অনেক দায়িত্ব। আপনি হয়তো কেবল নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভাবছেন, কিন্তু তাদের ভাবতে হচ্ছে বিশাল একটি কর্মীদলকে নিয়ে। তাদের অধীনে অনেক মানুষ কাজ করেন। সুতরাং নিয়ন্ত্রণহীনতা কাজে বিশৃঙ্খলা আনতে পারে। তাই যেকোনো উপায়ে তারা সম্পূর্ণ অফিসের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান। এক্ষেত্রে আপনি যেহেতু নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সব কাজ ঠিকঠাক ও সময়মতো করেন, তাই আপনার কাছে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা অযাচিত মনে হতে পারে।
আপনি যদি পরিস্থিতির পরিবর্তন না করেন, তবে আপনার অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হতে পারে
আপনার বস একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ সৃষ্টি করার সাথে সাথে নিজের অজান্তে আপনাকে নীতিভ্রষ্ট ও বিক্ষিপ্ত করে তোলার পরিবেশও সৃষ্টি করে থাকে, যা আপনার স্বাভাবিক কাজে হয়তো বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে আপনার কাজের ও পদের উন্নতিও বাধাগ্রস্থ হয়।
আপনার সৃজনশীলভাবে কাজ করার বা চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই। অফিসে আপনার সকল পদক্ষেপ খুব সতর্কতার সাথে অন্য কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, আপনার সকল কাজ আগে থেকে পরিকল্পিত, আপনি নতুন কোনো প্রচেষ্টা চালিয়ে পেশাগতভাবে এগিয়ে যেতে পারছেন না।
হ্যাঁ, সত্যিই এমন পরিবেশ খুবই বিরক্তকর! কিন্তু আপনি তাদের নিয়ন্ত্রণে থেকেও কাজ করতে পারেন। আপনাকে মেনে নিতে হবে সবরকম নিয়ন্ত্রণ। তারা তো আপনার ব্যক্তি জীবন নিয়ন্ত্রণ করছেন না, করছেন কর্মজীবন। সুতরাং কাজের প্রয়োজনে মেনে নিন অথবা এমন কিছু পরিবর্তন আনুন যা আপনার প্রতি বসের আস্থা বাড়িয়ে দেয় এবং তিনি আপনার প্রতি আরও সহজ হন।
আপনার বসের নিয়ন্ত্রিত নেতৃত্ব থেকেও নিজেকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন
বসের আগেই কাজের পূর্বাভাস দিন
নিজে থেকে নিয়মিত কাজের আপডেট দিলে অল্প দিনেই বসের দৈনন্দির কাজের সাথে সুপরিচিত হয়ে যাবেন, যা তার সাথে আপনার সম্পর্ক উন্নয়ন করবে। সুতরাং তাদের নির্দেশনা আসার আগেই রোজ নির্দিষ্ট কাজ করুন।
উদাহরণস্বরূপ: বসের জিজ্ঞাসা করার আগেই আপনার সাম্প্রতিক প্রকল্প বা কাজের অগ্রগতি তাকে অবহিত করুন। এটা বসকে অযথা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিবে, যা নানান কারণে আপনার উপর তার ছড়ি ঘুরানো প্রবণতা রোধ করবে। আপনি খুব সহজেই বসের খবরদারি থেকে রেহাই পাবেন। আপনি নিয়মিত এমন করলে বস একসময় নিজে থেকেই দিনে দশবার কাজের ব্যাপারে আপনাকে তাগাদা দেওয়ার আর কোনো সুযোগই খুঁজে পাবেন না।
নিজেকে তাদের সাহায্যকারী হিসেবে গড়ে তুলুন
আপনার বস নিশ্চয়ই মাথায় নানান কাজের চাপ নিয়ে থাকেন। যদি তাদের আচরণ বোঝা খুব কঠিনও হয়, তবুও সময়ের সাথে সাথে চেষ্টা করুন তাদের ভাবনা, অনুভূতি এবং কী ধরনের চাপের মধ্য দিয়ে তারা দিন পার করে তা বুঝতে।
আপনার আচরণ দিয়ে প্রমাণ করুন তাদের দুশ্চিন্তা, চাপ আপনারও দুশ্চিন্তা এবং আপনি তাদের কাজের চাপ কমাতে দিনভর ভাবছেন, কাজ করছেন।
তাদের কাছে নিজেকে বিশ্বাসী করে গড়ে তুলুন
আপনার কাজ এবং কথা দিয়ে বসকে বুঝিয়ে দিন কর্মীদের প্রতি তাদের নিয়ন্ত্রণ খুব ভাল কাজ করছে। পূর্বের চেয়ে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে, কাজে গতি এসেছে। এক কথায়, এমন খুঁতখুঁতে স্বভাবের বসেরা যেমন ভাবেন, তাদের কাছে সেটাই প্রতিষ্ঠা করে দিন যে, তারা যা করছে তা সবই সঠিক। আপনার জন্য যে কাজটি আরও ফলপ্রসূ হবে তা হলো, তাদের বুঝিয়ে দিন আপনি সবকিছু খুব মনোযোগ দিয়ে খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে কাজ করছেন।
তাদের কাছে নিজ থেকে এমন কাজ চেয়ে নিন যা আপনি অন্য কারো হস্তক্ষেপ ছাড়াই ভালোভাবে করতে পারেন। যদি আপনি সত্যিই তা করতে পারেন তাহলে তারা বুঝবে আপনাকে সবসময় বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখার প্রয়োজন নেই। তাদের এই বোধ আপনাকে আরও কাজের স্বচ্ছন্দ ও স্বাধীনতা দিবে।
আপনার দায়িত্ব কী?
ক্রমাগত বিরক্তি থামাতে বসের সাথে বিনয় বজায়ে রেখে সরাসরি কথা বলুন এবং আপনার দৈনিক কাজের তালিকা নিশ্চিত করে নিন। যেমন অগ্রগতি প্রতিবেদন লেখা, ফাইল তৈরি করা, অন্য কর্মীদের সাহায্য করা এবং সবকিছু ঠিকমত হচ্ছে কিনা তা দেখভাল করা। আপনার উপর ন্যস্ত এই কাজগুলো তাগাদা দেওয়ার আগেই সময়মতো করে ফেলুন। তাহলে বসের অযাচিত নিয়ন্ত্রণ একটু হলেও কমবে।