আজকের দিনের শিশুরা সবজি খেতে খুব বেশি পছন্দ করে না। তারা বাইরের খাবার বিশেষ করে পিৎজা, বার্গার, পাস্তা, এ জাতীয় ফাস্ট ফুড খেতে বেশি পছন্দ করে। সচেতন মায়েদের কাছে এটাই সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। বুদ্ধিমান মায়েরা একই সাথে সন্তানের এই ইচ্ছার গুরুত্ব দেন, আবার তাদের পর্যাপ্ত সবজি খাওয়াও নিশ্চিত করেন।
কিন্তু কীভাবে? কৌশলটা কী? মায়েরা বাড়িতে সবজি দিয়ে ফাস্ট ফুডের মতো বিভিন্ন মুখরোচক আর সুস্বাদু খাবার তৈরি করে। এমনকি তারা রেস্টুরেন্টের সসের পরিবর্তে সবজি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আচার এবং চাটনি তৈরি করেন। যার ফলে শিশুরা একই সাথে ফাস্ট ফুড খাওয়ার স্বাদ পায়, আবার শরীরে সবজি চাহিদাও পূরণ হয়। অর্থাৎ খাবার তৈরির সময় মায়েরা কৌশলে সবজির উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ এর মধ্যে লুকিয়ে রাখেন।
মায়েদের এই মুখরোচক এবং সুস্বাদু খাবার তৈরীর মত উদ্যোক্তা হিসেবে আমরা পণ্য বা সেবা আকর্ষণীয় করে তুলতে চাই। একই সাথে পণ্যের গুণগত মানও ঠিক রাখতে চাই। কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে কি মায়ের এই ছেলেভোলানো কৌশল প্রযোজ্য?
বাড়িতে তৈরি খাবারের মধ্যে সবজির গুনাগুণ লুকিয়ে রাখলেও আপনার সংগঠন বা ব্যবসার সুযোগ সুবিধা এভাবে লুকিয়ে রাখবেন না। একই সাথে আপনার গ্রাহক, ক্রেতা এবং কর্মীদের কাছে ব্র্যান্ডকে আকর্ষণীয় করে তোলার কারণগুলোও লুকাবেন না।
আর এখন সময় পাল্টেছে। মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। তাই এখন শুধু বাহ্যিক চাকচিক্যে ক্রেতা সন্তুষ্ট হন না। জানতে চান, এই চাকচিক্যের পেছনের কারণ। আজকের নিবন্ধে আপনাদের জানাবো, গ্রাহক বা ক্রেতার টেবিলে কীভাবে সকল তথ্য সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায়।
১. গ্রাহকদের সাথে স্পষ্টভাবে যোগাযোগ করুন
অনেক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে সকল তথ্য প্রকাশ করতে চায় না, অথবা গ্রাহকের সকল প্রশ্নের জবাব দেয় না। আজকের দিনে ব্যবসা করতে হলে আপনাকে এই প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে। গ্রাহকের কাছে তথ্য লুকানো বা গ্রাহককে দোষী সাব্যস্ত করা বন্ধ করুন। সকল তথ্য সহজ এবং পরিষ্কারভাবে তাদের কাছে উপস্থাপন করুন। আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কিত তথ্য যত সহজে গ্রাহকের কাছে প্রকাশ করবেন, তাদের কাছে আপনি তত বেশি আস্থাভাজন হয়ে উঠবেন।
কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে আপনার প্রতিযোগী ব্যবসায়ীদের চেয়ে সেরা, তা যথাযথভাবে প্রকাশ করুন। এমনকি মানসিক এবং আবেগপূর্ণ সুযোগসুবিধাগুলোও প্রকাশ করুন। আপনি কী করতে চান, কীভাবে গ্রাহকের মন জয় করতে চান, কীভাবে তাদের জীবন আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে চান, তা গ্রাহকদের সামনে তুলে ধরুন।
২. কর্মীদের সাথে সমান আচরণ করুন
ক্রেতা এবং গ্রাহকের জীবন সুখী ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে গিয়ে কর্মীদের কথা ভুলে গেলে চলবে না। আপনার প্রদত্ত সকল সুযোগ সুবিধা আপনার কর্মীরা ঠিকভাবে বুঝতে বা গ্রহণ করতে পারছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন। ভাববেন না আমি সকল কর্মীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং যথাযথ কর্মঘন্টা নিশ্চিত করার কথা বলছি। স্বাস্থ্যসেবা এবং নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা সকল কর্মীর আইনি অধিকার। এর জন্য বিশেষ পরামর্শের প্রয়োজন নেই।
কর্মীদের কাছে নিজের প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার সেরা জায়গা হিসেবে উপস্থাপন করুন। তবে রাজনৈতিক নেতাদের মতো কর্মীদের প্রতি আপনার ভালোবাসা মুখে প্রচার করার প্রয়োজন নেই। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম নীতি এবং সুযোগ সুবিধা এমনভাবে নিশ্চিত করুন, যেন আপনা থেকেই তারা সকল সুযোগ সুবিধা পায়। এই উদ্যোগ কর্মীদের কাছে আপনাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য, আন্তরিক এবং মহান করে তুলবে।
৩. পরিবেশ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা
পরিবেশ এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করা বর্তমান সময়ে মার্কেটিং এবং কর্পোরেট দায়িত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যবসা করার জন্য এই দায়িত্ববোধ অবশ্যই থাকতে হবে। পরিবেশগত এবং সামাজিক দায়দায়িত্ব ভুলে শুধু নিজের লাভের জন্য কাজ করার দিন চলে গেছে।
সুতরাং আপনার গ্রাহক, কর্মী এবং সম্পর্কিত সকলকে জানিয়ে দিন, কিভাবে আপনার ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে আরও সুন্দর করার জন্য আপনি প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। শুধু লাভের জন্য কাজ না করে অন্যান্য দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে মানুষের প্রশংসা আদায় করুন।
৪. নিজেকে প্রকাশ করুন
কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নেতা হিসেবে নিজেকে ইমেইল বা ডেস্কের পিছনে লুকিয়ে রাখলে চলবে না। আপনাকে সবার সামনে দৃশ্যমান হতে হবে। পায়ে হেঁটে বিভিন্ন মানুষ এবং কর্মীদের সাথে কথা বলুন, যোগাযোগ করুন, তাদের সুবিধা ও অসুবিধার কথা জানার চেষ্টা করুন। আপনার পরিকল্পনা, ভাবনা এবং প্রত্যাশার কথা নিয়মিত কর্মীদের সাথে শেয়ার করুন।
প্রয়োজনে একটি ব্লগ সাইট খুলতে পারেন। যেখানে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সকল তথ্য, হালনাগাদকৃত বিষয়বস্তু নিয়মিত আপলোড করতে পারেন। সহজেই কর্মীরা সেখান থেকে সবকিছু জানতে পারবে এবং নিজেদের মতামত শেয়ার করতে পারবে।
আপনার গ্রাহকদের সাথে সরাসরি কথা বলুন। শুধু আপনার ব্যবসার উন্নতি নয়, বরং আপনার পণ্য বা সেবার মাধ্যমে কিভাবে গ্রাহকের জীবন পরিবর্তন করতে পারেন, তা নিয়ে তাদের সাথে কথা বলুন। গ্রাহক এবং কর্মী সবার কাছে সহজ এবং সাবলীল হোন। নীতিকথা এবং নিয়মের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলবেন না। মনে রাখবেন, কর্মী এবং গ্রাহকদের যত কাছাকাছি থাকতে পারবেন, আপনার সাফল্য লাভের পথ ততটা সহজ হবে।
৫. সবকিছু উপভোগ করুন
কর্পোরেট প্রধান বা কোনো প্রতিষ্ঠানের নেতা হিসেবে অনেক দায়িত্ব থাকে। প্রচন্ড ব্যস্ততার মধ্যে দিনযাপন করতে হয়। কিন্তু তাই বলে হাসতে ভুলে গেলে চলবে না। সুতরাং নিজের মত করে জীবন উপভোগ করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, টিমের মধ্যে মজা করার মত মানুষ থাকলে টিম সবসময় প্রাণবন্ত থাকে। সুতরাং কাজের মধ্য দিয়ে জীবন উপভোগ্য করে তুলুন।
ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে শিশুদের খাবার মুখরোচক করার মত সব কিছু যেমন আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হবে, তেমনি সকল তথ্য আত্মবিশ্বাসের সাথে সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। তবেই আসবে সাফল্য এবং সমৃদ্ধি।
Feature photo: whiteboard-mktg