কাজ এড়িয়ে চলা এবং দ্বিধাগ্রস্ত মানুষেরা কেন সবসময় ব্যর্থ হন?

আমাদের সমাজে নানান ধরনের মানুষ আছে। নানা রঙের মানুষ আছে। এই অসংখ্য মানুষের মধ্যে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ সফল হয়। বাকিরা সফল হওয়ার সব যোগ্যতা থাকা সত্বেও কখনোই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে পারে না।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: incarabia

এই ব্যর্থদের মধ্যে কিছু বিশেষ ধরনের মানুষ আছে, যারা অন্যদের তুলনায় মেধাবী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন। তা সত্বেও তারা সারাজীবন ব্যর্থ থাকে। তাদের একটি শ্রেণী হীনমন্যতার কারণে কাজ এড়িয়ে চলে, এবং অন্য শ্রেণী সবকিছুতেই দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। আপনার চারপাশে নিশ্চয়ই এই দুই শ্রেণীর মানুষ খুঁজে পাবেন। আজকের নিবন্ধে সুনির্দিষ্টভাবে এই দুই শ্রেণীর মানুষের মানসিক ভাবনা, ব্যর্থতার কারণ, এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

এভাইডার

এভাইডার অর্থ এড়িয়ে চলেছেন যিনি। এই শ্রেণীর মানুষ যে কোনো কাজ শুরু করতে ভয় পায়। কেননা তারা মনে করে সে সব কিছু সামাল দিতে পারবে না। তাই কোনো কাজ শুরু করে ভুল করলে অন্যের দ্বারা সমালোচিত হওয়ার ভয়ে তারা সম্পূর্ণ কাজ এড়িয়ে চলেন।

photo: timandjulieharris

এই শ্রেণীর মানুষ জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ায়। পরিবার এবং সমাজে তাদের বিশেষ কোনো অবদান থাকে না। এমনকি তারা ক্রমশ পরিবারে গৌণ ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং আপনার মধ্যে যদি এই এড়িয়ে চলার প্রবণতা থাকে তবে আজই তা সংশোধন করুন।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

এভাইডারদের প্রতি পরামর্শ

ইমেইল, ফেসবুক, ও ইউটিউবের নোটিফিকেশন খুবই আকর্ষণীয় জিনিস। নোটিফিকেশন গুলো সব সময় আমাদের প্রলুব্ধ করে চেক করার জন্য। কিন্তু আপনি যদি দিনের শুরুতেই ইমেইল চেক করতে বসেন, বা ফেসবুক-ইউটিউবের নোটিফিকেশন চেক করে অন্যদের আপডেট দেখা শুরু করেন, তাহলে আপনার দিনটাই এলোমেলো হয়ে যাবে।

বেশিরভাগ মানুষ এই অজুহাতে অন্যান্য কাজ এড়িয়ে যায়। সুতরাং দিনের শুরুতে কখনোই এ ধরনের নোটিফিকেশন চেক করা আপনার দৈনন্দিন কর্ম তালিকায় রাখবেন না। কেননা এই অভ্যাসটি আপনার অজান্তেই দিনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেয়।

এর বদলে দিনটা শুরু করুন চমৎকার পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে। আপনার দিনের প্রথম কাজ হোক সারা দিনের সেই সব কাজ খুঁজে বের করা, যে কাজগুলো সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। দিনের প্রথমে চ্যালেঞ্জিং কাজ গুলো আলাদা করতে পারলে এই কাজগুলো সম্পন্ন করার মানসিক শক্তি এবং পরিকল্পনা আপনার মধ্যে স্থির হবে। দিনের শুরুতে স্বচ্ছ পরিকল্পনার মাধ্যমে সময়ের যথাযথ ব্যবহার করে দিনের সব কাজগুলো শেষ করতে পারবেন।

ভয় পেয়ে কাজ এড়িয়ে না গিয়ে সারাদিনের কর্ম তালিকা স্থির করুন, এবং দিনের সব কাজ কয়েক ভাগে বিভক্ত করুন। দিনের প্রতিটি অংশ কিভাবে ব্যয় করবেন তা ভেবে নিন, এবং কল্পনা করুন প্রতিটি আলাদা আলাদা কাজ সম্পন্ন করতে কী পরিমাণ সময় প্রয়োজন হবে।  বাস্তবসম্মত পরিসংখ্যান ব্যবহার করুন। একটা একটা করে সব চ্যালেঞ্জিং কাজ সম্পন্ন করুন।

photo: lifehack

উদাহরণস্বরূপঃ আপনাকে ২০০০ শব্দের একটি প্রতিবেদন লিখতে হবে। আপনি যদি সম্পূর্ণ কাজ একবার চিন্তা করেন তাহলে মনে হবে কাজটা সত্যিই ভীতিকর। হয়তো আপনি এক দিনে শেষ করতে পারবেন না। কিন্তু এই দুই হাজার শব্দের প্রতিবেদন লেখার কাজ বিভিন্ন অংশে ভাগ করে ফেলুন। তারপর দেখবেন কাজটা কত সহজ হয়ে গেছে!

যেমন:

সূচনা: প্রায় ১০০ শব্দ। এর জন্য প্রয়োজন হবে ১৫ মিনিট।

দ্বিতীয়তঃ বিষয়বস্তুর সারণি। খুব সংক্ষিপ্ত এই অংশটির জন্য ব্যয় হবে মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিট।

এরপর আর্থিক অবস্থার বিবরণ। সর্বোচ্চ ১০০ শব্দ। এর জন্য প্রয়োজন হবে ১০ মিনিট।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

তারপর কেস স্টার্ডি। এ অংশের তিনটি পর্ব থাকবে। তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা মডেলের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি ১০০ শব্দের প্রতিবেদন লিখতে হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রতিটি পর্বের জন্য ৪০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

সর্বশেষ উপসংহার এবং বিস্তারিত বর্ণনা। সর্বোচ্চ ৮০০ শব্দ। এর জন্য সময় লাগতে পারে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। এভাবেই সম্পূর্ণ কাজ ভাগ করে নিলে নিশ্চয়ই কাজটা সহজ মনে হবে?

দ্বিধান্বিত

এই শ্রেণীর মানুষ সবসময় দ্বিধান্বিত থাকে। তারা সব কিছুতে বেশি চিন্তা করে। কিন্তু সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারে না। তারা কাজের অগ্রাধিকার নির্ণয় করতে পারে না, অর্থাৎ কোন কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বা কোন কাজটি তার জন্য বেশি কল্যাণকর তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা তাদের থাকে না।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: insights for professionals

তারা সব কাজ নিয়ে সমানভাবে চিন্তা করে, এবং দ্বিধাগ্রস্ততার মধ্যেই দিন যাপন করে। এমনকি সব সময় তারা মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ অনুভব করে, অথচ এক অজানা ভয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে না।

দ্বিধাগ্রস্তদের জন্য পরামর্শ

এই শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রথম পরামর্শ হলো গুরুত্বপূর্ণ আর জরুরি কাজের তফাৎ বুঝতে শিখুন। নিজের কাজের অগ্রাধিকার বুঝতে শিখুন। কোনটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং কোনটি জরুরী কাজ তা নির্ধারণ করতে জানতে হবে। কেননা জরুরী কাজ সব সময় গুরুত্বপূর্ণ হয় না। আবার গুরুত্বপূর্ণ সব কাজেই জরুরি নয়।

সুতরাং কোন কাজটি আগে করতে হবে এবং কোন কাজটি পরে করা যাবে তা বিচক্ষণতার সাথে নির্ণয় করুন। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য এবং ফলাফল আগে বিবেচনা করুন। উদ্দেশ্য আর ফলাফল অনুধাবন করতে পারলে খুব সহজেই নির্ধারণ করতে পারবেন কোন কাজটি আগে করতে হবে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
photo: lifehack

উদাহরণস্বরূপঃ কোনো একটি প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার কোনো একজন ক্লায়েন্ট ইমেইল পাঠিয়েছে। আপনাকে সেই ইমেইলের উত্তর দিতে হবে। যত দ্রুত উত্তর দিতে পারবেন আপনার জন্য ততই ভালো। অপরদিকে কোম্পানির পণ্য সরবরাহের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আপনার কাধে রয়েছে।

ক্লায়েন্টের ইমেইলের জবাব দিতে মাত্র ৫ মিনিট সময় লাগবে। সুতরাং এই কাজটি করা সহজ। তার বিপরীতে পণ্য সরবরাহের দায়িত্ব সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তবে এর সাথে কোম্পানির বৃহৎ স্বার্থ জড়িত। এমনকি এক্ষেত্রে গড়িমসি করলে আপনার কোম্পানি বিরাট লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে। এ অবস্থায় আপনি কোন কাজটি আগে করবেন?

ভেবে দেখুন, ই-মেইলের জবাব এই মুহূর্তে না দিলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না। কিন্তু পণ্য সরবরাহের কাজটি বিলম্ব হলে আপনার এবং কোম্পানির বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং এখানে ইমেইলের জবাব দেয়া জরুরী কাজ হলেও, পণ্য সরবরাহের কাজটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং এ জাতীয় জরুরী কাজ উপেক্ষা করে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশি মনোযোগী হতে হবে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *