চাকরি হচ্ছে এমন একটি পেশা যার মাধ্যমে পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষ তাদের জীবনধারণ করে থাকেন। অনেকে একটি ভালো চাকরি করেই তার পুরোটা জীবন কাটিয়ে দেন। আবার অনেকেই একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় অন্য কোনো ভালো চাকরির অফার বেছে নেন। তবে এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে যাওয়ার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা চাকরি ছাড়ার মতো বিষয়গুলো চাকরি ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তির সিভিতে চিহ্ন রেখে যায়।
তাই চাকরি ছাড়ার পূর্বে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিকট কিছু উপযুক্ত কারণ দর্শানো প্রয়োজন। এতে করে আপনার সিভিতে চাকরি ছাড়ার ব্যাপারটি একটি চিহ্ন রেখে গেলেও সে চিহ্নটি যেন ইতিবাচক হয়ে ধরা দেবে নতুন কোনো কর্মক্ষেত্রে। চলুন আজ জেনে নেয়া যাক, ‘চাকরি কেন ছেড়ে যেতে চাইছেন?’ প্রশ্নটির উত্তর কোন কোন উপায়ে করবেন।
ভাল কোনো কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হবার সুযোগ
চাকরি ছেড়ে যাবার জন্যে যে কারণটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী মানুষ দেখিয়ে থাকেন, সেটি সম্ভবত ভালো কোনো কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হবার সুযোগ পাওয়া। সুতরাং আপনি যদি আগের কর্মস্থলের চেয়ে ভালো কোথাও যাওয়ার সুযোগ পান, তাহলে আপনাকে এই কারণটি দর্শাতে হবে।
সেক্ষেত্রে আপনার বর্তমান প্রতিষ্ঠানটি খুব স্বাভাবিক নিয়মেই একটি পাল্টা প্রশ্ন করে বসতে পারে, “আপনি চাকরি ছেড়ে যে কর্মস্থলে যেতে চাইছেন , সেটিকে বর্তমানের তুলনায় কেন ভালো বলে মনে করছেন?” সেক্ষেত্রে আপনার দিক থেকে উত্তরের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, নতুন কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে এমন কিছু সুবিধাদি উল্লেখ করা, যেগুলোর জন্যে কোনো কোম্পানিতে একজন চাকরিজীবী কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি চালিয়ে যেতে পারেন।
কর্মস্থল পরিবর্তন
অনেকেই অনেক সময় পার হয়ে যাবার পর বুঝতে পারেন, যে সেক্টরে তিনি বর্তমানে কাজ করছেন, সে সেক্টরটি তার জন্যে নয়। তার পছন্দের জায়গা অন্য একটি সেক্টর, যেখানে একদিকে তিনি যেমন অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, ঠিক তেমনি সে জায়গায় কাজ করা তার ক্যারিয়ারের জন্যও ভালো হবে।
এরকম একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যখন আপনি আপনার বর্তমান চাকরিটি ছেড়ে এসে নতুন একটি সেক্টরে যুক্ত হতে চাইবেন, স্বাভাবিকভাবেই ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রথম আপনাকে যে প্রশ্নটি করা হবে , “এটি যদি আপনার পছন্দের সেক্টর হয়ে থাকে, তাহলে এত বছর কেন আপনি অপছন্দের একটি সেক্টরে কাজ করছিলেন?”
সেক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব হবে যুক্তিসহকারে ধাপে ধাপে সে কারণগুলো গুছিয়ে বলা, যাতে করে ইন্টারভিউয়ার আপনার উত্তর শুনে সন্তুষ্ট হন। এছাড়া গোছানো উত্তর দিয়ে আপনার বর্তমান কর্মস্থলের বসকেও আপনি খুশি করতে পারবেন।
নিজের অর্জিত জ্ঞানকে বিকশিত করা
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, আপনি কোনো একটি কোম্পানির একটি নির্দিষ্ট সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে। যে সেক্টরে আপনি কাজ করে যাচ্ছে, সেটি আপনার পছন্দের ক্ষেত্রও বটে। কিন্তু সে সেক্টরটি আপনার অর্জিত জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক নয়। এখন এই সহায়ক না হবার ব্যাপারটি কোম্পানিতে সেরকম উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ার জন্যও হতে পারে। কিংবা কোন কারণে আপনি কোম্পানির পরিবেশের সঙ্গে সেভাবে খাপ খাওয়াতে না পারার জন্যেও হতে পারে।
সেক্ষেত্রে আপনার জন্যে ভালো একটি উপায় হচ্ছে, এমন একটি কর্মক্ষেত্র বেছে নেয়া, যা একদিকে যেমন আপনার ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে অনুকূল হবে, ঠিক তেমনি আপনার সেক্টর সম্পর্কিত জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রেও সহায়তা করবে। আপনার পুরনো চাকরিটি ছেড়ে দেবার সময় ভালো একটি কারণ হিসেবেও এটিকে দর্শানো যেতে পারে।
সরকারি চাকরিতে যোগদান
প্রাইভেট সেক্টরে বছরের পর বছর চাকরি করছেন, কিন্তু একদিনের জন্যেও কখনো নির্ধারিত শিফটের বাইরে কাজ করতে হয়নি, এমন ব্যক্তি হয়তোবা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। বর্তমানে অনেক দেশি ও বিদেশি ভালো মানের প্রাইভেট কোম্পানি গড়ে উঠলেও সেখানে কাজের চাপ তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট বেশি থাকে।
এছাড়া কর্পোরেট জগতে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার এক অনন্ত প্রতিযোগিতা তো আছেই। এসকল ঝামেলা থেকে নিজেকে রেহাই দিতে অনেকেই সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকতে চান। কারণ যেখানে প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজের দায়িত্ব থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যেকোনো প্রাইভেট সেক্টরের তুলনায় বেশ কম চাপ থাকে। আপনার বর্তমান চাকরি ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণগুলোর একটি হিসেবে এটিকেও বিবেচনা করতে পারেন।
কর্মসন্তুষ্টির অভাব
পৃথিবীর প্রতিটি কাজের মত চাকরিক্ষেত্রেও কর্মসন্তুষ্টি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীর প্রায় সকল কোম্পানির বেলায় চাকরিজীবীদের চাকরি ছেড়ে আসার অন্যতম কারণ হচ্ছে কর্মসন্তুষ্টির অভাব।
আপনি যদি এই কারণে আপনার বর্তমান চাকরিটি ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তবে আপনার নতুন কর্মক্ষেত্রে আপনার চাকরিদাতা নিশ্চয় আপনাকে প্রশ্ন করবেন, “চাকরিক্ষেত্রে কর্মসন্তুষ্টি বলতে আপনি কি বোঝেন?” সেক্ষেত্রে প্রশ্নটির উত্তর আপনাকে বেশ সাবধানীভাবে দিতে হবে। সেজন্যে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে নিন।
নতুন চাকরি থেকে আপনার চাহিদাগুলো কী কী, সেগুলোও আপনার চাকরিদাতাকে বুঝিয়ে বলুন। আপনি যদি চাকরিদাতার সামনে নিজেকে একজন যোগ্য প্রার্থী হিসেবে প্রমাণ করতে পারেন, তবে আপনি অবশ্যই সামনের দিনগুলোতে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
মোটকথা, পুরনো চাকরি ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পুরো প্রক্রিয়াটি সুপরিকল্পিত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে হঠাৎ একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য ব্যক্তিগত জীবনেও আপনাকে অনেক বড় ধরনের মাশুল গুনতে হতে পারে। সুতরাং যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে সাবধানী হোন।