প্রবাদে আছে, কর্মীরা চাকরি ছাড়ে না, তারা তাদের বস কে ছেড়ে দেয়। কেন এত নিয়োজিত ব্যক্তিগণ ফেসবুকে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে এটির উত্তর জানতে গিয়ে জানা গিয়েছে ভিন্নরকম কিছু তথ্য। গবেষকবৃন্দ বলেছেন, যখন আমরা যেকোনো মূল্যেই কর্মীকে রাখতে চাই, এরপরও তারা যখন চাকরি ছেড়ে দেয় সেটা অবশ্যই ব্যবস্থাপককের জন্য নয়, হয়তো তাদের প্রত্যাশার জায়গাটি তারা ঠিকমতো পূর্ণ করতে পারছে না বলেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে। অবশ্যই যখন বস অনেক বেশি ধৃষ্ট আচরণের হয়,কর্মীরা তখন চাকরি ছেড়ে দেবে স্বাভাবিক।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন কাজ এবং সময় ব্যয় করেছি একজন ভালো ব্যবস্থাপক গড়ে তোলার জন্য এবং কর্মীরা অনেক বেশি খুশিও ছিলো তাদের ব্যবস্থাপক নিয়ে। তারা তাদের চাকরি ছেড়েছে তাদের কাজের অবস্থানের জন্য। কর্মীরা চাকরি ছেড়েছে যখন তাদের কাজ তাদের নিকট আর উপভোগ্য ছিলো না, যখন তাদের দক্ষতাগুলোকে কাজে লাগাতে পারছিলো না, যখন তারা তাদের কর্মজীবনে কোন সাফল্য পাচ্ছিল না। আর তাই ফেসবুকের ক্ষেত্রে কর্মীরা তাদের বসকে ছাড়ে নি, তারা তাদের কাজকে ছেড়ে দিয়েছে। আর তাই আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের ধরে রাখতে চাইলে,বিশেষ করে কিছু দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী যাদেরকে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সাফল্যের জন্য প্রয়োজন তাদের রাখতে হলে, তাদের কাজের পরিকল্পনার দিকে অধিক মনোযোগী হতে হবে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছেন, আমাদের ব্যবস্থাপকগণ সাধারণত বিপরীত কাজটিই করে থাকেন। তারা যখন কোন প্রতিভাসম্পন্ন কাউকে খুঁজে পান তখন তারা তাদেরকে মুক্তভাবে কাজের জায়গা খুঁজে নিতে বলেন। যাতে কর্মীরা তাদের মেধার সদ্ব্যবহার করতে পারেন। একইসাথে আমরা যখন আমাদের কর্মী বিশ্লেষণ দলের সাথে কাজ করেছি তখন আমরা একটি জরিপ করেছি আগামী ছয় মাসে কারা চাকরি করবেন আর কারা চাকরি ছেড়ে দিবেন তাদের উপর। যারা চাকুরীতে থাকবেন তাদের ব্যাপারে আমরা বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছি।
তাদের নিকট তাদের কাজ ৩১ শতাংশ বেশি উপভোগ্য, ৩৩ শতাংশ বেশি তাদের কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারছে এবং ৩৭ শতাংশ বেশি তাদের আত্নবিশ্বাসকে প্রকাশ করতে পারছে যা কিনা তারা তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারছে তাদের কর্মজীবনকে উন্নত করার জন্য। এই তিনটি উপায়ে ব্যবস্থাপকগণ তাদের কর্মীদের অভিজ্ঞতা অর্জণে সাহায্য করতে পারে ; তাদেরকে সেই কাজের জন্য নিয়োগ করা যা তারা পছন্দ করেন, তাদের দক্ষতাগুলোকে কাজে লাগাতে সহায়তা করা এবং তাদের কর্মজীবনের জন্য সেই সকল সুবিধা দেওয়া যাতে তারা ভবিষ্যৎ কাজের জন্য আরো বেশি দক্ষ হতে পারে।
১. চাকুরির ক্ষেত্রে নিজস্বতা, নৈপুণ্যতা এবং উপযোগ্যতা
আমাদের অনেকেরই চাকুরির ক্ষেত্রে কিছু কিছু অনুত্তরিত জায়গা থাকে। অনেকেই অকপটে তা স্বীকার করেন অনেকে স্বীকার করেন না। কাজটাকে ভালোবাসার জায়গা করে নিতে আমরা অনেকেই পারি না। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের মেধার অভাব রয়েছে অথবা এমন একটি পেশায় আপনি রয়েছেন যেখানে আপনি কাজটাকে ভালোবাসতে পারেননি। যেহেতু আমরা সকলেই অধিকাংশ সময় কর্মস্থলে ব্যয় করি সেহেতু আমাদের হাতে সময় থাকে না এই অনুত্তরিত জায়গাগুলোকে ভালোবাসা বা শখের জায়গা হিসেবে দাঁড় করাতে। ব্যবস্থাপকগণ চাইলে চাকুরির জায়গাটাকে উপভোগ্য এবং শখের একটি জায়গা হিসেবে অবস্থান করে দিতে পারেন। ব্যবস্থাপকগণ চাকরিতে কাজগুলো এমনভাবে সাজাতে পারেন যাতে কর্মীরা অনুপ্রাণিত হন এবং কাজগুলোকে ভালোবাসতে পারেন।
সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো সেই কাজগুলোই কর্মীর মাঝে বণ্টন করা উচিত যা তারা করতে ভালোবাসে। কয়েক বছর আগে ফেসবুকের পরিচালক Cynthia HR business partner র অনেক বড় একটি দলকে পরিচালনা করছিলেন। কিছুদিন পর উনি উপলব্ধি করলেন তিনি যা করতে ভালোবাসেন- ক্লায়েন্টদের সমস্যার সমাধান; তার পেছনে তিনি সময় ব্যয় করছেন না। বড় একটি দল পরিচালনা করার মতো একটি বিশাল দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। যেহেতু পূর্বে তার অভিজ্ঞতা ছিলো ফেইসবুকের অনেক দলপতিদের বিশ্বস্ত উপদেষ্টা ছিলেন। কিন্তু এই কাজটি করার সময় তিনি উপলব্ধি করলেন তিনি তার কর্মদক্ষতাকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারছে না।
Cynthia তার পরিচালকের সাথে পরামর্শ নিয়ে দলে নতুন একজনকে নিয়োগ দিলেন পরিচালনা করার জন্য। এবং তিনি তার পূর্বের কাজে ফিরে যান। এভাবেই Cynthia তার কাজে আরো বেশি সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেন এবং তার নিয়োজিত কর্মীও সফলভাবে তার কাজ পরিচালনা করেছেন। প্রায়ই ব্যবস্থাপকগণ বুঝতে পারেন না তার অধীনস্থদের কোন কাজটি করতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়েই জেনে নেওয়া যেতে পারে কোন ধরণের কাজ কর্মীদের আরো বেশি সমৃদ্ধশালী করে তুলবে। কাজের জায়গাটাকে উপভোগ্য করতে পারলে কর্মীদের চাকুরী ছাড়ার হার কমে যায় অনেক শতাংশেই।
২. অব্যবহৃত দক্ষতাগুলোকে কাজে লাগানো
সাধারণত কর্মক্ষেত্রে কাজের পরিসর এককেন্দ্রিক হওয়ায় কর্মীরা অন্য দক্ষতাগুলোকে কাজে লাগাতে পারে না। যেকোন একটি দিকে একই কাজ বার বার কাজের ক্ষেত্রে বিরক্তিকর মনোভাব নিয়ে আসে। একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক কর্মীদের কাজের পরিসর বাড়াতে সাহায্য করে। তাদের এমন প্রতিভাগুলোকে সামনে এনে দাঁড় করায় যা তাদের কর্মজীবনে উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করে। নতুন একটি ভূমিকায় কাজ করার উদ্দেশ্য শুধু নতুন দক্ষতাকে কাজে লাগানো শুধু তাই নয় বরং পুরো পৃথবীই কিন্তু জ্ঞান অর্জন এবং বিতরণের প্রতিযোগিতা এবং যোগাযোগে আবদ্ধ হয়ে আছে। একজন দক্ষ ব্যবস্থাপকের তাই কর্মীদের সকল প্রতিভাকে কাজে লাগানোর সুযোগের উদ্দশ্যে কাজগুলোকে এমনভাবে সাজানো উচিৎ যাতে কর্মীরা তাদের সকল দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারেন।
৩. কাজের সময় সাজানো
প্রায় সব ক্ষেত্রেই কাজের জন্য যখন একটি দরজা খুলে যায় তখন আরো অনেক দরজাই কিন্তু বন্ধ হয়ে যায়। কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের জন্য বাবা, মাকে সময় দেওয়া যায় না আবার কোন বড় প্রমোশনের ব্যস্ততার জন্য বাচ্চাদের সময় দেওয়া হয় না। চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিটি নতুন ভূমিকা আমাদের পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ফেসবুক কতৃপক্ষ বলেছেন, তাদের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপকগণ কর্মীদের সাথে এক হয়ে কাজের সময় এবং দায়িত্বগুলো এমনভাবে সাজিয়েছে যেখানে কর্মীদের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোও গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে।
কর্মীরা চাকুরী ছেড়ে দেয় আর এটা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব কাজকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে তারা চাকরি ছেড়ে না যায়। মহৎ বস কর্মীদের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করে। তারা তাদের কর্মীদের সকল প্রকার বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য পাশে থাকে। এমনকি তারা তাদের কর্মীদের জন্য নিত্যনতুন শিক্ষা এবং সুযোগের দরজা খুলে দেয়। তারা তাদের কর্মীদের সুযোগ করে দেয় কাজের মাধ্যমে আরো বেশি সমৃদ্ধশালী হবার জন্য, কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে যেন সর্বোচ্চ ভালোভাবে কাজ করতে পারে এবং কর্মজীবনে যেন সাফল্যের সাথে এগিয়ে যেতে পারে। এমন একজন ব্যবস্থাপক যে কিনা আপনার খুশি এবং সাফল্যের খেয়াল রাখে, আপনার কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবনের গুরুত্ব দেয়, এমন ব্যবস্থাপকের সাথে কাজ না করার ভাবনা কর্মীরা ভাবতে পারে না।