সকালের নাস্তায় কেলগস্ কর্ণফ্লেক্স খাননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। মিশিগানে জন্মগ্রহণ করা সফল উদ্যোক্তা উইল কেয়হ কেলগের নামানুসারেই এই কোম্পানির নামকরণ করা হয়। তিনি যে শুধুমাত্র সফল উদ্যোক্তাই ছিলেন তা-ই নয়, বরং মানবতার প্রতি তার অবদানও ছিলো অসামান্য। কেমন ছিলো তার পথচলা, কী কী বাধা তিনি অতিক্রম করেছেন এই পথ পাড়ি দিতে?
শৈশব
উইল কেইথ কেলগ ১৮৬০ সালের ৭ই এপ্রিল মিশিগানের ব্যাটেল ক্রিকে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার মা অ্যান জেনেট ও জন প্রেস্টনের ১৬ জন সন্তানের মধ্যে ৭ম সন্তান ছিলেন। তার বাবার ঝাড়ু তৈরির ব্যবসায় ছিলো। উইল ছোটবেলা থেকেই ব্যবসায়িক কাজের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। ১৩ বছর বয়স থেকেই তিনি প্রায় স্থানীয় মুদির দোকানগুলোতে তার বাবার তৈরি করা ঝাড়ুগুলো বিক্রি করার জন্য যাওয়া আসা করতেন। কৈশোরের মাঝামাঝিতে তিনি স্কুলে পড়াশোনা করা ছেড়ে দিয়ে বাবার ব্যবসায়ে যোগ দেন।
![](https://youthcarnival.org/wp-content/uploads/2018/07/mnjhy.png)
কর্মজীবন
উইল কেইথ কেলগ তার বাবার সাথে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। এরপর তিনি কালামাযোর কাছাকাছি পারসন্স বিজনেস কলেজে তিন মাসের একটি প্রোগ্রাম সম্পন্ন করার জন্য চলে যান। এই সময়ের মধ্যেই তার বড় ভাই জন এডনেন্টিস্ট হেলথ রিফর্ম ইন্সটিটিউটের দায়ভার নিয়ে নেন যা পরবর্তীতে ব্যাটেল ক্রিক স্যানিটারিয়াম হিসেবে নামান্তর করা হয়। জন কেলগ এমন একটি জীবনধারা সমর্থন করতেন যা ভেজিটারিয়ান ডায়েট, বিশুদ্ধ বাতাস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ শরীরচর্চা কেন্দ্রিক ছিলো।
উইল কেইথ কেলগ তার ভাইয়ের সাথে স্বাস্থ্যনিবাসে যোগ দেন। এই স্বাস্থ্যনিবাসটি বেশ জনপ্রিয় ছিলো এবং জন যেহেতু নিয়মিত সেখানে পরিচালনার কাজ পর্যবেক্ষণ করতে পারতেন না। তাই তিনি উইলকে তার ব্যবসায়ের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। উইল বেশ নিষ্ঠার সাথে তার দায়িত্ব পালন করতেন এবং বেশ রাত পর্যন্ত কাজ করতেন। তবুও তিনি তার কাজের কৃতিত্ব নেয়ার পক্ষপাতিত্ব ছিলেন না এবং তার বেতনও খুব কম ছিলো।
![](https://youthcarnival.org/wp-content/uploads/2018/07/mn6789.png)
এই সময়ে ডক্টর জন কেলগ নতুন ধরনের খাবার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন এবং রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর শাকসবজি জাতীয় খাবার বিকশিত করার চেষ্টা করতেন। ১৮৯৪ সালে উইল আকস্মিকভাবে গমের তৈরি ফ্লেক্স বানানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা একটি পুষ্টিকর সকালের নাস্তা হিসেবে প্রমানিত হয়। ভাইয়েরা এই আবিষ্কারে বেশ আপ্লুত হয়ে যায় এবং বুঝতে পারে যে এই একই প্রক্রিয়া ওটস্ (যব জাতীয় শস্যদানা), চাল এবং ভুট্টার ফ্লেক্স বানানো সম্ভব।
কেলগরা সব ভাই মিলে ১৮৯৭ সালের দিকে স্যানিটাস্ ফুড কোম্পানির যাত্রা শুরু করেন যা সকালের নাস্তা হিসেবে নিজেদের তৈরি হোল গ্রেইন সিরিয়ালকে স্বাস্থ্যকর এবং উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে প্রচার করেন। উইল কেইথ কেলগ দারুণ প্রচারণামূলক দক্ষতা ছিলো এবং গ্রাহক হিসেবে যাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছিলো তাদের কাছে বিক্রির বন্দোবস্তও তিনি করেন।
![](https://youthcarnival.org/wp-content/uploads/2018/07/bnaz.png)
উইল কেইথ কেলগ বিষয়টি উপলব্ধি করেন যে, সিরিয়াল বানানোর প্রক্রিয়াটির বেশ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে এবং অন্যদের দ্বারা নকল হওয়ারও ভয় রয়েছে। তাই তিনি তার ভাইকে সিরিয়াল বানানোর প্রক্রিয়াটি গোপন রাখতে বলেন। কিন্তু তার ভাই জন উইলের এই প্রস্তাবে অসম্মতি প্রকাশ করেন এবং গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কোন রকম পদক্ষেপ নেন না।
সি ডব্লিউ নামে জনের একজন রোগী সিরিয়াল বানানোর প্রক্রিয়াটি খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং খুব শীঘ্রই পোস্টাম সিরিয়াল নামে নিজস্ব ব্যবসায় খুলে বসেন যার মাধ্যমে তিনি বেশ মুনাফা লাভ করেন। এই বিষয়টি উইলকে খুবই রাগান্বিত করে দেয়। এর ফলস্বরূপ জনের সাথে উইলের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় এবং পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে উইল জনের স্বাস্থ্যনিবাস ছেড়ে নিজের ব্যবসায় শুরু করার জন্য বেড়িয়ে পরেন।
![](https://youthcarnival.org/wp-content/uploads/2018/07/mnj.png)
উইল কেইথ কেলগ ১৯০৬ সালে ব্যাটেল ক্রিক টোস্টেড কর্নফ্লেক্স কোম্পানি চালু করেন যা পরবর্তীতে কেলগ কোম্পানি হিসেবে নামান্তর করা হয়। শুরুর দিকে এই কম্পানি থেকে শুধুমাত্র কর্নফ্লেক্স নিয়ে কাজ করতো। এরপর ধীরে ধীরে তারা বিভিন্ন ধরনের ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উইল কেলগ দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতেন এবং তার পণ্য অনন্য এবং স্বাস্থ্যসম্মত প্রচার করে বিপণনের প্রতি বিশেষ নজর রাখতেন। তার বিপণন কৌশল বেশ কার্যকরী হয়েছিলো এবং অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালের বাজারে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেলগ একটি ছিলো।
বহু সময় ধরে তার আরবীয় ঘোড়ার প্রতি আগ্রহ ছিলো। তিনি ১৯২৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়াতে আরবীয় ঘোড়ার একটি খামারবাড়ি তৈরি করেন। ঘোড়া লালন পালনের জন্য এই খামারবাড়িটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়াও সেখানে প্রতি সপ্তাহে জনসাধারণের জন্য ঘোড়া প্রদর্শনের আয়োজন করা হতো। এই প্রদর্শনীতে হলিউডের তারকারাও নিয়মিত আসতেন। ১৯৩২ সালে কেলগ এই খামারবাড়িটি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করে দেন।
মুখ্য কাজ
উইল কেইথ কেলগ তার কেলগ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই অধিক পরিচিত। তার এই কোম্পানিতে নানান রকম সিরিয়াল ও সংরক্ষিত খাবার যেমন- কুকিজ, ক্র্যাকার, টোস্টার, পেস্ট্রি, সিরিয়াল বার এবং মাল্টি ফ্লেভারড স্ন্যাকস্ প্রস্তুত করা হতো। ১৮টি দেশে এই কোম্পানির পণ্য প্রস্তুত এবং ১৮০টি দেশে বাজারজাতকরণ করা হতো।
মানব-হিতৈষী কার্যক্রম
তিনি বেশ সুপরিচিত মানবপ্রেমিক ছিলেন যিনি নিজের সম্পদ মানবকল্যাণে বিলিয়ে দেন। ১৯৩০ সালে তিনি উইল কেইথ কেলগ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন যা আহত এবং অসুস্থ বাচ্চাদের চিকিৎসার খরচ দিয়ে সাহায্য করতেন। অবশেষে এই ফাউন্ডেশন্টি তাদের কাজের পরিধি বাড়ায় এবং বিস্তৃত আকারে দাতব্য কার্যক্রম পরিচালনা করে। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি, পমোনা (ক্যাল পলি পমোনা) উইল কেলগের দেয়া জমির ওপর নির্মাণ করা হয়। এছাড়াও কেলগ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় যুক্তরাজ্যের কেলগ কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হয়।
![](https://youthcarnival.org/wp-content/uploads/2018/07/vbghd.png)
ব্যক্তিগত জীবন
তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন এলা ডেভিস যাকে তিনি ১৮৮০ সালে বিয়ে করেন। তাদের ৫টি সন্তান ছিলো যার মধ্যে তিনজনই তার পূর্বেই মারা যায়। এলা মারা যান ১৯১২ সালে। তার দ্বিতীয় বিয়ে হয় ক্যারি স্টেইন্সের সাথে ১৯১৮ সালে। তার জীবনকাল বেশ দীর্ঘ ছিলো এবং জীবনের শেষ সময়ে তিনি মানবিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। উইল ১৯৫১ সালের ৬ই অক্টোবর কেইথ কেলগ ৯১ বছর বয়সে ব্যাটেল ক্রিকে মারা যান।
![](https://youthcarnival.org/wp-content/uploads/2018/07/mn76.png)
Feature Image Source: Oukas.info