এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যেকোনো কাজে, কনফারেন্সে, প্রযুক্তি থেকে স্বাস্থ্যসেবায় সবখানে সবচেয়ে বেশি যাদের উপস্থিতি থাকে তারা হলেন- পুরুষ প্যানেল, ইংরেজিতে যাকে মেইল প্যানেল বা ‘ম্যানেলস‘ও বলা হয়।
ম্যানেলস; image source: commondreams.org
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এই ম্যানেলস দেখা যায় নারী-পুরুষ সমতার আলোচনা সভাতেও। এই “ম্যানেল” কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য অনন্য নয়। কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো-২০১৮ প্রাথমিকভাবে মূল বক্তাদের একটি সিরিজ ঘোষণা করেছে যেখানে কেবল পুরুষের আধিক্য ছিল (পরে লাইনআপে মহিলা স্পিকার যোগ করা হয়)।
দেখা যায়, এখনো পরিচালকের পুরস্কার বিতরণে কেবল পুরুষদের কথাই উল্লেখ করা হয়। এটি এজন্যই যে, অনেকেই এখনো ব্যক্তির দক্ষতার চেয়ে পরিচয়ের শিরোনামে গুরুত্ব দেয়, আর ঐতিহাসিকভাবে সীমাবদ্ধ মানুষদের বর্জন করে। গত অক্টোবরে, নিউ আমেরিকার বেটার লাইফ ল্যাবের পরিচালক ব্রিজিড শুলটে, বিভিন্ন প্যানেল স্পিকার এবং লেকচারারদের পৃষ্ঠপোষকতায় কনফারেন্স আয়োজকদের এবং অন্যদের সাহায্যের জন্য সংস্থান সরবরাহের লক্ষ্যে নতুন মিশন চালু করেন। তিনি জানান প্যানেলের ভিন্ন উপস্থাপনা, কনফারেন্স এবং অন্যান্য কাজের ফাংশনগুলো পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই কর্মজীবনের উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যদি শুধু বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিবেচিত লোকেরা সব পুরুষ হয়, তবে তা থেকে কী প্রমাণিত হয়? পুরুষেরাই বিশেষজ্ঞ, পুরুষরা সবকিছু জানেন, এবং নারীরা কম গুরুত্বপূর্ণ। এটিই হলো পুরুষের প্রতি অবচেতন পক্ষপাত।
প্যানেল উপস্থাপনা, আলোচনা কেবল পুরুষদের কাজ নয় ; image source: wlghconference.org
প্রতিভাবান হওয়া সত্ত্বেও, খুব অল্প সংখ্যক মহিলা শীর্ষ ব্যবস্থাপনা অবস্থানগুলোতে স্থানান্তর করতে সক্ষম হন। সমস্যাটি এটি নয় যে যোগ্যতাসম্পন্ন নারীর দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে; বরং মূল সমস্যা সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা পালন করার জন্য নারীদের শিক্ষাদান ও বিকাশের জন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে যথাযথ সচেতন প্রচেষ্টার অভাব।
মহিলাদের সিনিয়র কাজের ভূমিকা পালনে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ সহযোগিতা করেনা; image source: dailymail.co.uk
প্রতিবছর কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী-পুরুষ নিয়োগের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন অভিজ্ঞতার সিঁড়ি বেয়ে কাজের দায়িত্ব আলাদা করে নেওয়ার সময় আসে তখনই কেন যেন নারীরা পেছনে পড়ে যায়, তখনই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এর একটি অন্যতম কারণ মেয়েদের পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা। যেটি ছেলেদের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই মেয়েদের সমান সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না। এছাড়াও কর্পোরেট সংস্কৃতিতে এখনো নারী নেতৃত্বকে সহজভাবে মেনে নিতে পারার অক্ষমতার জন্য নারীরা পিছিয়ে পড়ে। এভাবে প্রতিটি নারী প্রতিভার অপব্যয়ের জন্য, অর্থনৈতিক ক্ষতির একটি করে সম্ভাবনা বাড়ে।
মেয়েদের পারিবারিক দায়বদ্ধতা সবচেয়ে সবচেয়ে বেশি; image source: bestlifeonline.com
শুধু চাকরির ক্ষেত্রে নয়, ব্যবসা জ্ঞান এবং নেতৃত্ব শুধুমাত্র পুরুষদের কাছে আসে না। ব্যবসাক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অর্থনীতির জন্যেও কল্যাণকর রূপে দেখা যায়। মার্কেটের একটি বড় অংশ, নারী ভোক্তাদের আকৃষ্ট করা বা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার বড় সুযোগ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী উদ্যোক্তাদের হাতেই থাকে। এভাবেই বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি প্রতিনিধিত্ব করে নারীরা তাদের ভোক্তার চাহিদার প্রতি সূক্ষ্মদৃষ্টি আরোপ করে।
বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মহিলা উদ্যোক্তারা ; image source: womensdaycelebration.com
এখন পর্যন্ত বহু সফল নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন – জে.কে. রাউলিং, আরিয়ানা হাফিংটন, মার্থা স্টুয়ার্ট, সারা ব্ল্যাকলি, হুদা কাটানসহ আরো অনেকে। বাংলাদেশের অন্যতম সফল নারী ব্যবসায়ীরা হলেন- বিবি রাসেল, রুবাবা দৌলা, সাবরিনা ইসলাম, তাসলিমা মিজি প্রমুখ। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে নিয়ে গেছে নিজেকে এবং দেশের অর্থনীতিকে।
Rubaba Dowla, founder of ‘Pulse Healthcare Service’; image source: businesshaunt.com
এত সফল উদাহরণের পরেও দেখা যায় পৃথিবী এখনো অনভ্যস্ত নারী প্রতিভার বিকাশে, নারী সাফল্যে, নারী উদ্যোগে, নারী নেতৃত্বে। আমরা এখনো নারী বলতে ঘরের কাজে পটু মানুষটিকেই বুঝি, অথচ এখন সময় এসেছে বদলানোর। নারীরাও উদ্যোমী, তারা সৃজনশীল, তারা পারে দায়িত্ত্ব নিয়ে কাজ করতে।
নারীরাও উদ্যোমী; image source: incorp.asia
নারী পুরুষের ভেদাভেদটা আসলে সমাজের চিন্তায়, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে; সত্যিকার অর্থে উভয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা, সিদ্ধান্তগ্রহণে পটুতা, নিষ্ঠা ও সততা এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে যে কেউ নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম। তাই যেকোনো কর্মক্ষেত্রেই নারী-পুরুষ সকলের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিতে হবে। তথাকথিত ম্যানেল মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
feature image: businessinsider.com