হলিউড মুভিতে আমরা অহরহ দেখতে পাই বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স সংগঠনের কার্যক্রম। নামকরা বিভিন্ন ইন্টেলিজেন্স নিয়েই বিভিন্ন গল্প আর ফ্যান্টাসি উঠে আসে সেসব সিনেমায়। সিনেমায় দেখা সেসব দুর্দান্ত চরিত্র দেখে আমাদের মনে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন উঠে আসে আসলেই বাস্তবিক জীবনে তারা কতখানি কার্যকরী। কথাটা ভাবতে ভাবতে আপনি যদি সেসব অর্গানাইজেশন সম্পর্কে বিস্তারিত ঘেঁটে দেখেন তাহলে আপনার মনে হবে সিনেমার সেই দুর্দান্ত কাহিনীগুলো তাদের কাজের কাছে কিছুই না।
শুধু এমআই সিক্স, সিআইএ আর মোসাদ নয়, প্রতিটি দেশেই গঠন করা হয়েছে এমন দুর্দান্ত সব সংগঠন। যারা বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম থামাতে তৎপর। আর খেটে যাচ্ছে নিজের দেশের জন্য, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য। প্রতিটি ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন সেরাদের নিয়ে সংগঠিত। তবে সেসব সংগঠনগুলোর মধ্যকার সেরাদের মধ্যে সেরা কয়েকটা ইন্টেলিজেন্স সংগঠন নিয়ে আমাদের এই ফিচার।
অস্ট্রেলিয়ান সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এএসআইএস)
নামেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি অস্ট্রেলিয়ান ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন। ১৯৫২ সালের ১৩ মে এই সংগঠনটি পথ চলা শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় এর হেড কোয়ার্টার অবস্থিত। এএসআইএস বাহিরের দেশের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। তাদের সংগ্রহকৃত তথ্য হতে প্রয়োজনে তারা বিভিন্ন কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এএসআইএস অন্যান্য সংগঠন থেকে কিছুটা ভিন্ন। এর কারণ হচ্ছে তাদের গোপনীয়তার। এই অর্গানাইজেশন তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে এতটাই গোপনীয়তা বজায় রেখেছিলো যে, অস্ট্রেলিয়ান সরকার এর গঠন হওয়ার প্রায় বিশ বছর পর এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে।
ডিরেক্টরেট জেনারেল ফর এক্সটার্নাল সিকিউরিটি (ডিজিএসই)
ডিজিএসই মূলত ফ্রান্সের বহিরাগত নিরাপত্তা দেখার জন্য সৃষ্ট ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন। সরাসরি ফ্রান্সের মিনিস্টারি অফ ডিফেন্সের অধীনে থাকা এই সংগঠন সেন্ট্রাল ডিরেক্টরেট অফ ইন্টেরিয়র ইন্টেলিজেন্সের সাথেও কাজ করে। যদিও এর মূল লক্ষ্য বহিরাগত দেশেরসমূহের ইন্টেলিজেন্স ডাটা সংগ্রহ করা এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ডিজিএসইয়ের অতীত অন্যান্য ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন থেকে আলাদা। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮২ সনে সংগঠিত এই ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি মূলত গঠন হয়েছে পূর্বের বিভিন্ন সিক্রেট অর্গানাইজেশন এজেন্টদের নিয়ে। সংগঠনের সময় এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাহিরের সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আর্মিকে প্রদান করা আর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ করা। বর্তমানে ডিজিএসইয়ের সদস্য সংখ্যা পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। তবে নিশ্চিন্তে সন্দেহ করা যায় আসল সংখ্যা ভিন্ন।
ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস অফ রাশিয়ান ফেডারেশন (এফএসডি)
রাশিয়ান এই এজেন্সির আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়েছিলো ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসে। এসএসডি মূলত একটি রাশিয়ান ফেডারেশনের অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটি এজেন্সি। যেটা কিনা সোভিয়েত সময়কালের চেকা, এনকেভিডি আর কেজিবি সদস্য নিয়ে সংগঠিত। কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স, অভ্যন্তরীণ এবং বর্ডারের সিকিউরিটি ইস্যু, কাউন্টার টেরোরিজম এবং সার্ভাইলেন্সে কাজে রাশিয়ান এই এজেন্সি নিয়ন্ত্রণ করে করে থাকে।
কেজিবির পূর্ববর্তী হেড কোয়ার্টার ডাউনটাউন মস্কোর লুবায়ানকা স্কোয়ারের এফএসডির বর্তমান হেড কোয়ার্টার। রাশিয়ান যত ল’ এজেন্সি এবং ইন্টেলিজেন্স রয়েছে সবগুলো এই সংগঠনের নির্দেশ মতাবেক কাজ করে। রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয় ও নিরাপত্তা, এসপিওনাজ, সন্ত্রাস আর মাদক বিরোধী সকল কার্যক্রম এই এফএসডি সামলায়। সর্বমোট কতজন সদস্য এফডিসিতে সম্পৃক্ত এবং বাজেটের কত টাকা এর পেছনে খরচ করা হচ্ছে সেটা অজানা। সাথে সাথে এর এজেন্টের সংখ্যাও জনসাধারণের থেকে গোপন করা হয়েছে।
এম.আই সিক্স
জেমস বন্ড মুভি থেকে সবার কাছে পরিচিত এই ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির নাম। যদিও মুভির কাহিনী আনন্দদায়ক হলেও অবাস্তবিক। বস্তুত সিআইএর ব্রিটিশ প্রোডাকশন বলা চলে এমআই সিক্সকে। তবে সিআইএর থেকে এই অর্গানাইজেশন এগিয়ে রয়েছে দুইটি বিশেষ ক্ষমতার কারণে। প্রথমটি হচ্ছে তারা ব্রিটিশ অফিসিয়াল সিক্রেট এক্টের আন্ডারে কাজ করার ক্ষমতা রাখে এবং সাথে সাথে তথ্যের পাচার বন্ধ করতে ডি নোটিশের ব্যবহার নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী যখন-তখন করতে পারে।
১৯০৯ সালে এমআই সিক্স আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠিত হয়। লন্ডনের ভক্সহল ক্রসে এদের হেড কোয়ার্টার অবস্থিত। এই এজেন্সির সর্বমোট সক্রিয় সদস্য সংখ্যা অজানা। এছাড়া এদের পিছনে ব্রিটিশ সরকার কী পরিমাণ বাজেট ব্যয় করে সেটাও কখনো প্রকাশিত করা হয়নি। গুজব রয়েছে সাব-সনিক এয়ারলাইনার টিইউ – ১৪৪ এর সাবোটাজের সাথে তারা জড়িত। এছাড়া তথ্য পরিবর্তন করে সেই ডকুমেন্ট ধোঁকাবাজি করার উদ্দেশ্যে কেজিবির হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা তারা করেছিলো এমনটাও শোনা যায়।
ইন্টার – সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)
নিজেদের কাজে এই এজেন্সি যে সেরাদের সেরা সেটা তাদের কাজের সাফল্যের চিত্র দেখেই ধারণা করা যায়। পাকিস্তানি এই ইন্টেলিজেন্স সংগঠনের সৃষ্টি হয় বঙ্গভঙ্গের পরের বছর ১৯৪৮ সালে। মূলত ‘৪৭ সনের ভারত পাকিস্তানের কাশ্মীর যুদ্ধের পরে নিজ দেশের মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে এটি গঠন করা হয়। নিজেদের কাজে পাকিস্তানি এই ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি এতটাই দক্ষতা অর্জন করেছিলো যে, তখনকার সময়ের সেরা, কেজিবি এদের সাথে টক্কর দিতে ব্যর্থ হয়েছিলো।
ইতিহাসের সবথেকে বেশি ডবল এজেন্ট তৈরি করেছে আইএসআই। রাশিয়ান পারমাণবিক বোমার নকশা চুরির প্রচেষ্টা, ভারতের সাথে বিভিন্ন সমস্যা এই এজেন্সি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছিলো। রাষ্ট্রীয় সকল আইন এবং ক্ষমতার উর্দ্ধে এই ইন্টার – সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স। তাদের কোনো কাজের জন্য জবাবদিহিতা করতে হয় না। শুধুমাত্র আর্মির লোকেদের সাথে ব্যতীত অন্য কারো সাথে এদের কাজের সম্পৃক্ততা নেই। বিশ্বাস করা হয়, এদের এজেন্টের সংখ্যার বিশ হাজারেরও কাছাকাছি। তবে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, সেখানকার একজন এজেন্টকে এখন পর্যন্ত কোনো ক্যামেরার ফুটেজে ধরা যায়নি। আইএসআইয়ের সদরদপ্তর পাকিস্তানের ইসলামাবাদে।