বিশ্বের সেরা অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন

সূত্রঃ wall.alphacoders.com

তিনি কখনো অভিনয়ে অস্কার পাননি। পেয়েছেন অস্কারের চেয়ে বেশি কিছু। মৃত্যুর চার দশক পেরিয়ে গেলেও তার জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকু। বলছি বিশ্বসেরা কমেডিয়ান চার্লি চ্যাপলিন এর কথা। পুরো নাম চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন। তিনি ছিলেন একাধারে চলচ্চিত্র অভিনেতা, সুরকার, পরিচালক, লেখক। মঞ্চ কিংবা পর্দা দুই জায়াগায় ছিলেন হিট। তার তুলনা কেবল তিনি নিজেই। নিজের ভেতর কান্না লুকিয়ে তিনি হাসিয়েছেন গোটা দুনিয়াকে। চলুন জেনে অাসি এই ব্রিটিশ অভিনেতার জীবনের সংগ্রামী গল্প।

সূূত্রঃ wall.alphacoders.com

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

চার্লি চ্যাপলিন ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন চার্লস চ্যাপলিন সিনিয়র। মায়ের নাম ছিল হান্নাহ চ্যাপলিন। বাবা-মা দুজনই মঞ্চে অভিনয় করতেন। চার্লি চ্যাপলিন ৪ বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন; মিলড্রেড হ্যারিস, লিটা গ্রে, পলেট গডার্ড এবং ওনা ওনিল। ৪ স্ত্রীর সংসারে চার্লি চ্যাপলিনের ১১ জন সন্তান জন্ম নেয়।

সংগ্রামী জীবন

চার্লি চ্যাপলিনের শৈশব কাটে দারিদ্রের মাঝে। ১৮৮১ সালে বাবা মায়ের বিচ্ছেদের কারণে ফলে অভাব অনটনে দিন পার করতে হয় তাকে। অল্প বয়সেই বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। তার বাবা তাদের খোঁজ নিতেন না। তার মা সেলাই অার নার্সের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। প্রায়ই মানসিক সমস্যায় ভুগতেন হান্নাহ চ্যাপলিন। অভাবের কারণে মাত্র ৯ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়েন চ্যাপলিন। কখনো কর্মশালা, মুদি দোকান কখনো বা ডাক্তারখানা অার ছাপাখানায় কাজ করতে হয়েছে তাকে।

সূত্রঃ wall.alphacoders.com

অভিনয় জীবনের শুরু

দারিদ্র তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই পুষে রাখতেন মনের মধ্যে। চার্লি চ্যাপলিনের বয়স যখন ৯ বছর তখন থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার অাগ্রহ তৈরি তার। প্রথমে তিনি ‘এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস ক্লগ’ নৃত্য দলের সদস্য হন। এই দলের হয়ে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ১৮৯৯-১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কঠের পরিশ্রমের কারণে অল্প সময়েই পরিচিতি পান তিনি। তবে নাচ করতে তার ভালো লাগতো না। কৌতুক অভিনয়ে তিনি ভীষণ অাগ্রহী ছিলেন। চার্লি চ্যাপলিনের বয়স যখন ১৪ বছর তখন তিনি লন্ডনের ওয়েস্ট এন্ড’র একটি মঞ্চদলের সঙ্গ যুক্ত হন। এ দলে যোগ দেয়ার কিছু দিন পর মঞ্চে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।

হ্যারি অার্থার সেন্টসবারির ‘জিম, অ্যা রোমান্স অব ককেইন’ নাটকে সংবাদ পত্র বিতরণকারীর চরিত্রে প্রথমবারের মতো অভিনয়ের সুযোগ হয় তার। নাটকটি মঞ্চস্থ হয় ১৯০৩ সালের জুলাই মাসে। দর্শক মহলে নাটকটি তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। কিন্তু চার্লি চ্যাপলিন হাল ছাড়েননি। এরপরে তিনি চার্লস ফ্রোহম্যানের শার্লক হোমস নাটকে অভিনয় করেন। এই নাটকটিতেও তিনি সংবাদপত্র বিতরণের চরিত্রে অভিনয় করেন। এই নাটকে অভিনয়ের পর চার্লি চ্যাপলিন প্রশংসিত হন।

নিপুণ অভিনয়ের কারনে উইলিয়াম জিলেটের সাথে মূল শার্লক হোমস নাটকে অভিনয় করার জন্য তার ডাক অাসে। তাকে অার পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। তিনি ১৮ বছর বয়সেই হয়ে ওঠেন পুরোদমে কৌতুক অভিনেতা। ১৯০৬ সালে চার্লি চ্যাপলিন ফ্রেড কানো কোম্পানীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। এই কোম্পানিতে শুরুতে ছোট খাটো চরিত্রে অভিনয় করলেও দক্ষ অভিনয়ের কারণে এক সময় সুযোগ মেলে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের।

মর্ডান টাইমস ছবির একটি দৃশ্যে চার্লি চ্যাপলিন; সূত্রঃ wall.alphacoders.com

চলচ্চিত্রে অাগমন

ফ্রেড কানো কোম্পানীতের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবার পর ইংল্যান্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে অাসেন। মূলত যুক্তরাষ্ট্র থেকেই ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রে প্রবেশ ঘটে তার। চার্লি চ্যাপলিন ১৯১৪ সালে ২৫ বছর বয়সে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন। ছবিটির নাম ছিল ‘মেকিং অ্যা লিভিং।’ ছবিটির পরিচালক ছিলেন কিস্টোন স্টুডিওর হেনরি লেহরম্যান। ১৯১৪ সালে ২ ফেব্রুয়ারি ছবিটি মুক্তি পায়। ছবিটির ব্যাপ্তি ছিল ১০ মিনিট। বক্স অফিসে ছবিটির তেমন অায় না হলেও চার্লি চ্যাপলিন নিজের জাত চেনাতে ভুল করেননি। তার অভিনীত দ্বিতীয় ছবি ছিল ‘কিড অটো রেনেস অ্যাট ভেনিস।’ এ ছবিতে চার্লি চ্যাপলিন এক ভিন্ন চরিত্রে হাজির হন।

দ্য ট্রাম (ভবঘুরে) চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ঢিলেঢালা প্যান্ট, কালো কোট, মাথায় কালো টুপি, হাতে লাঠি, নাকের নিচ বরাবর ছোট গোঁফ, পায়ে কালো জুতা চার্লি চ্যাপলিনের এমন সাজ অার চোখ মুখের অঙ্গভঙ্গি দর্শক ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে। মূলত তিনি ছিলেন মূকাভিনেতা।

সূত্রঃ wall.alphacoders.com

পরিচালক হিসেবে অাত্মপ্রকাশ

অভিনয়ের পাশাপাশি চার্লি চ্যাপলিন সিনেমা পরিচালনাও করেছেন। তার পরিচালিত প্রথম ছবি ছিল ‘কট ইন দ্য রেইন।’ ১৯১৪ সালের ৪ মে ছবিটি মুক্তি পায়। চার্লি চ্যাপলিনের পরিচালনায় অন্যতম একটি ছবি হলো সিটি লাইট। এটি ছিল নির্বাক চলচ্চিত্র। সিটি লাইট ছবিটি ছিল কমেডি এবং রোমান্টিক ধাঁচের। ছবিটির জনপ্রিয়তা এখনও শীর্ষে। চার্লি চ্যাপলিন বহু ছবির পরিচালনা করেছেন। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, তিনি নিজের ছবিতে নিজেই অভিনয়, সঙ্গীত পরিচালনা এবং প্রযোজনা করতেন। চার্লি চ্যাপলিন ছিলেন নির্বাক চলচ্চিত্রের হাসির রাজা।

উল্ল্যেখযোগ্য ছবি

সব মিলয়ে চার্লি চ্যাপলিনের অভিনয় জীবন ৭৫ বছরের। তিনি ৮০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। মুক্তির তারিখ সহ তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমার নাম দেয়া হলো মেকিং অ্যা লিভিং (২ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৪), কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস (৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৪), আ ডগস লাইফ (১৪ এপ্রিল, ১৯১৮), শোল্ডার অার্মস (২০ অক্টোবর, ১৯১৮), দ্য কিড (৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২১),  দ্য গোল্ড রাশ (২৬ জুন, ১৯২৫), দ্য সার্কাস (৬ জানুয়ারি, ১৯২৬), সিটি লাইটস (৬ জানুয়ারি, ১৯৩১), মর্ডান টাইমস (৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬), দ্য গ্রেট ডিক্টরট (১৫ অক্টোবর, ১৯৪০), লাইমলাইট (১৬ অক্টোবর, ১৯৫২), আ কিং অব নিউইয়র্ক (২ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭) ইত্যাদি।

সূত্রঃ wall.alphacoders.com

পুরস্কার

চার্লি চ্যাপলিন অভিনয় জীবনে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।  তিনি কমান্ডার অব দ্য অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ারের নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। সম্মান সূচক ডক্টর অব লেটার্স পান ১৯৬২ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব তাকে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার প্রদান করে ১৯৭২ সালে। অাজীবন সম্মাননা পান ‘লিংকন সেন্টার ফিল্ম সোসাইটি’ থেকে। তিনি ৩ বার একাডেমি পুরস্কার জেতেন। এছাড়াও ব্রিটিশ একাডেমী অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন অার্টস ১৯৭৬ সালে তাকে ফেলোশিপ প্রদান করে।

চার্লি চ্যাপলিনের লেখা অাত্মজীবনীমূলক বই ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি; সূত্রঃ amazon.com

লেখক চার্লি চ্যাপলিন

অভিনয় অার সঙ্গীত পরিচালনা ছাড়াও চার্লি চ্যাপলিন ছিলেন একজন লেখক। তিনি বেশ কিছু বই লিখেছেন। ১৯৬৪ সালে চার্লি চ্যাপলিন ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’ নামে অাত্নজীবনীমূলক বই লিখেন। তার লেখা অন্যান্য বই; মাই লাইফ ইন পিকচার, আ কমেডিয়ান সিজ দ্য ওয়ার্ল্ড, মাই ট্রাপ এ্যাবরোড, মাই ওয়ান্ডারফুল ভিজিট ইত্যাদি।

মৃত্যু

চার্লি চ্যাপলিন ১৯৭৭ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর ৮৮ বছর বয়সে সুইজারল্যান্ডে মৃত্যু বরণ করেন। চার্লি চ্যাপলিনের কর্ম তাকে যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *