আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা অথবা একজন চাকরিজীবী। আপনি নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদের মতোই আপনার সকল কাজ একদম শিডিউল মেনেই হয়। কিন্তু সমস্যাটা পরবর্তীতে হয় এই শিডিউল মেলাতে গিয়েই। কারণ হয়ত আপনি সঠিকভাবে আপনার ক্যালেন্ডার মেনে চলছেন না। মানে হচ্ছে সময়ের কাজ সময়ে হয়ে উঠছে না। কিন্তু কেন এই সমস্যা হচ্ছে? কারণ আপনি সঠিকভাবে ক্যালেন্ডার মেনে চলছেন না! আচ্ছা বলুন তো শেষ কবে আপনি ক্যালেন্ডার দেখেছেন আর সেই ক্যালেন্ডার মেনে কাজের দিনক্ষণ ঠিক করেছেন? সময়মত কাজ না করতে পেরে ঠিক এই জায়গাতেই আমাদের ভুল হয়ে থাকে।
কীভাবে বুঝবেন সময়মত কাজ করছেন না আপনি?
সব সময় বলেন “হাতে যথেষ্ট সময় নেই”
যখনই আপনার হাতে কোনো কাজ আসে তখনই আপনি বলেন আপনার হাতে সময় নেই। আপনি প্রচুর ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু দিনশেষে সেই ব্যস্ততার ফলাফলও মেলে না। আর কাজও গোছানোভাবে শেষ হয় না। শেষ মুহূর্তে এসে কাজের শিডিউল এলোমেলো হয়ে যাওয়া, সময়মত কাজ জমা দিতে না পারা এমন অনেক সমস্যা দেখা দেয়। এই বিষয়টি নিয়ে লেখক জ্যাকসন ব্রাউন জুনিয়রের একটি মন্তব্য আছে। তিনি বলেন, ‘কাজকে না করতে নেই। কখনও বলা যাবে না আপনার হাতে সময় নেই। আপনি ঠিক ততটাই সময় পান যতটা পেয়েছিলেন হেলেন কিলার, মাইকেল এঞ্জেলো, মাদার তেরেসা, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, থমাস জেফারসন, আলবার্ট আইনস্টাইন। তাহলে তারা যদি নিজেদের কাজ নিয়ে এতটা বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারেন আপনি কেন পারবেন না?’
কাজ করার সময় বলা যাবে না আপনার হাতে সময় নেই; image source: pokervip.com
কাজ নিয়ে অভিযোগ করার বদলে সময়কেই কাজে লাগিয়ে দেখুন। অন্যদের চাইতে আপনি কিন্তু সময় কম পাচ্ছেন না। সময়ের হিসাবটা একটু মিলাতে বসুন। একটু ভেবে দেখুন ঠিক কোন কোন কাজে কতটুকু সময় ব্যয় হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় চলে যাচ্ছে কিনা সেটিও একটু খেয়াল করুন। সময় আপনার, কাজ আপনার। সাফল্য পেতে হলে তাই সময়মত কাজ করাটাই জরুরি।
সময় নিয়ে সচেতন নন আপনি
কিছু মানুষ আছেন তারা সব কাজেই দেরি করেন। অফিস যেতে দেরি, কাজ করতে দেরি, কাজ জমা দিতে দেরি, মিটিং এ দেরি। এই ব্যাপারগুলোকে তারা খুব একটা আমলে নেন না। তাদের ধারণা কাজ তো হচ্ছেই, সে দেরি করে হলেও। এটা খুব ভুল একটা ধারণা। যে কোনো প্রতিষ্ঠানেই আপনি কাজ করতে যান না কেন সবার আগে সচেতন হতে হবে সময় নিয়ে। কারণ সময়মত সব কাজ করলে যেমন প্রশংসা মিলবে তেমনই কাজেও অগ্রগতি হবে।
কর্মক্ষেত্রে সময় নিয়ে সচেতন থাকা খুব জরুরি; image source: thriveglobal.com
শেষ কবে ক্যালেন্ডার দেখেছেন মনে নেই আপনার
হ্যাঁ কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়ার এটাও একটা কারণ। আপনার মনেই নেই শেষ কবে আপনি ক্যালেন্ডার দেখেছিলেন। তাই রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে ক্যালেন্ডারটা ভালো করে দেখে নেবেন। কী একটু অবাক লাগছে শুনতে? লাগুক! কোনো ক্ষতি নেই এতে! যে কোনো প্রস্তুতিই সব সময় আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
যে কোনো কাজ গোছানোভাবে করার জন্য ক্যালেন্ডারে লিখে রাখা জরুরি; image source: Evelyn home Inc
ধরুন, সকালে আপনার ক্লায়েন্টের সাথে যে মিটিংটা ছিল সেটা বদলে অন্য একটা মিটিং ঠিক হয়েছে। কিন্তু অনেক কাজের ভীড়ে সেটি আপনি ভুলেই গেছেন। ফলাফল, কাজে এলোমেলো অবস্থা। কিন্তু এই তথ্যটি যদি ঘুমানোর আগে আপনি ক্যালেন্ডারে মার্ক করে রেখে সকালে উঠে দেখেন তাহলে কিন্তু আর খুব বেশি ভাবতে হয় না। একদম প্রস্তুত হয়েই আপনি যথা সময়ে মিটিং এ চলে যেতে পারছেন।
কোনো অনুরোধ ফেলতে পারেন না
অফিস শেষে কোনো দাওয়াতের জন্য বেশ আগে থেকেই শিডিউল রেডি করা আপনার। আর ঠিক যাওয়ার মুহূর্তেই হাতে কাজ চলে আসল। কী করবেন তখন? হ্যাঁ কাজ অবশ্যই জরুরি তবে আগে থেকে ঠিক করে রাখা দাওয়াতটাও গুরুত্বপূর্ণ। কলিগ বা ম্যানেজার যিনিই হোক তাকে বুঝিয়ে বলুন এ বিষয়ে। তাকে জানান দাওয়াত আপনি আগে থেকে শিডিউল করে রেখেছিলেন এবং আপনি আপনার বাকি সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করেই বের হচ্ছেন। পরদিন এসে কাজটি আপনি করে দেবেন বলেও নিশ্চিত করুন।
অনুরোধ রাখা উচিত তবে সব সময় নয়। বিশেষ করে যখন অন্য কোনো শিডিউল আগে থেকেই করে রাখা হয়। যদি সব সময় সবার অনুরোধ রাখতে থাকেন তবে পরিবার, বন্ধুদের সাথে সম্পর্কও মলিন হয়ে যেতে পারে।
মনে মনেই তৈরি করেন শিডিউল
আগামীকাল আপনার বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি আছে। কোনো ক্যালেন্ডার না দেখে আপনি বলে দিলেন সেখানে যাওয়ার কথা। এদিকে, ঠিক সে সময়ই তৈরি হয়ে আছে আপনার অফিসের আরেকটি মিটিং। দুটোর সময়ই একদম এক। এখন কোনটা বেছে নেবেন আপনি? দুটোই জরুরি!
যত কাজই হোক মনে মনেই শিডিউল সাজিয়ে ফেলেন আপনি যা একদম উচিত নয়; image source: Asana
এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে। কারণ আমরা মনে মনেই কাজের শিডিউল বানিয়ে ফেলি। সেগুলো নিয়ে কোনো প্রস্তুতি থাকে না। এগুলো কোনো সমাধান তো দেয়ই না বরং জীবনে বাড়তি চিন্তা যুক্ত করে। ক্যালেন্ডার দেখে আগে নিশ্চিত হোন কোন সময়ে আপনি ফ্রি আছেন। সেই সময়টিতে অন্য কোনো প্ল্যান ফিক্সড করুন।
প্রায় সময়ই অজুহাত দেওয়া
‘অজুহাত’ শব্দটি নিশ্চয়ই আপনারও পছন্দ নয়। আপনি সময়মত কাজ না করে যদি সবাইকে বলেন, আপনার হাতে যথেষ্ট সময় ছিল না আর তাই কাজটি করতে পারেননি এটা সকলের কাছেই তখন দৃষ্টিকটু লাগবে। আপনি দিনে ঠিকই অন্যদের মতো ২৪ ঘন্টা সময় পাচ্ছেন তবে কেন কাজ সময়মতো করতে পারবেন না? ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল সময় নিয়ে একবার বলেছিলেন, ‘আমি আমার সাফল্যের মূলমন্ত্র হিসেবে বলি: আমি কখনও কোনো কাজে অজুহাত দিইনি।’
যে কোনো কাজেই আপনি অভিযোগ জানান, যা কর্মক্ষেত্রে একদম উচিত নয়; image source: Monster
মনে রাখবেন, কেউ আপনার অজুহাত শুনতে চায় না। তাই ক্যালেন্ডারকে ব্যবহার করুন যথাযথভাবে আর সময়কে কাজে লাগান সঠিক উপায়ে।
Feature image: entrepreneur.com