দীর্ঘভ্রমণের নাম শুনলেই অনেকের মাথা ব্যাথা করে কিংবা বমি বমি ভাব হয়। বাসে বমি হয় একথা শুনে আমরা অভ্যস্ত হলেও বিমানে বমি হয় তা শুনে অভ্যস্ত নই। এটা সত্য যে বিমানেও বমি করেন অনেকেই। বিমানে অনেকেই অস্বস্তিবোধ করে থাকেন। বিশেষ করে খালি পেটে ভ্রমণ করলে, উচ্চ রক্তচাপ হলে, কোনো কিছু নিয়ে অধিক চিন্তা করলে বিমান ভ্রমণে অস্বস্তিবোধ ও বমি হয়ে থাকে। উক্ত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য মানতে হবে কিছু সতর্কতা ও সচেতনতা। যে পরামর্শ গুলো মেনে চললে দীর্ঘভ্রমণে আপনি অস্বস্তিবোধ থেকে মুক্তি পাবেন তা হলো-
বিমানে ওঠার পূর্বে স্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন
ফ্লাই করার পূর্বে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খালি পেটে বিমান ভ্রমণ করলে আপনি স্বভাবতই অসুস্থতা অনুভব করবেন এবং বিরক্তিকর অনুভূতির উদ্রেক ঘটবে। খাওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনি কি খাচ্ছেন। চর্বিযুক্ত খাবার, লবণাক্ত খাবার, ঝাল খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। হালকা খাবার অথবা টোস্ট, ডিম যুক্ত পুষ্টিকর খাবার খান। এটা আজই নিশ্চিত করুন পরবর্তী ভ্রমণ থেকে খালি পেটে ভ্রমণ করবেন না।
আপনার ভ্রমণ সম্পর্কে কল্পনা করুন
বিমানে অসুস্থতার অন্যতম প্রধান একটি কারণ হলো ভয়। বিমানে ভ্রমণের আগে কিংবা বিমান বন্দরে পৌঁছানোর পূর্বে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে, ভয়কে জয় করতে মেডিটেশন করুন। এতে আপনার পুরো ভ্রমণের সময়টা হবে শান্ত ও সুন্দর। আপনার মন মানসিকতা ভয়হীন ও শান্ত থাকলে খারাপ লাগা, বমি হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন। ফ্লাইটে ওঠার এক থেকে দুই দিন আগে কাল্পনিক ফ্লাইটে নিজেকে গাইড করুন। নিজেকে নিজে নির্দেশ দিন আপনি পুরো ভ্রমণে খুব ভালো থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।
নিজেকে নিজে আশ্বস্ত করুন আপনি ঠিক আছেন
যদি ইতিমধ্যে আপনি বিমানে থাকেন এবং আপনার উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় খুব ভয় পেয়ে যান তাহলে নিজেকে নিজে আশ্বস্ত করুন আপনি ঠিক আছেন এবং সবকিছু ঠিক আছে। নিজেকে আশ্বস্ত করার মাধ্যমে আপনি উদ্বেগ কিংবা ভয় থেকে মুক্তি পেতে পারেন। প্রথমত বসার আসনটি যতটুকু পেছনে যায় তা ঝাঁকিয়ে নিন। তারপর শ্বাস প্রশ্বাস নিন। লক্ষ্য রাখবেন, স্বাভাবিকভাবে শ্বাস প্রশ্বাস চললেই হবে। স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিন এবং প্রশ্বাস ত্যাগ করুন গভীরভাবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে জানান দিবে আপনি ঠিক আছেন।
শান্ত থাকুন
উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা ও উদ্রেককে বিদায় জানাতে লেয়ার পরে নিন। আপনার শান্ত মনোভাব আপনাকে অসুস্থ হতে বাধা দিবে যা আপনার জন্য একান্ত জরুরী। তাছাড়া আপনার মাথার উপর ফ্যানটি চালু রাখুন। এতে বায়ু সঞ্চালন ঠিক থাকবে। সর্বদা বিমানে চলার শিষ্টাচার নিয়ম মেনে চলুন। ভ্রমণের সময় যে শিষ্টাচারগুলো মেনে চলা আমাদের সবার কর্তব্য তা হলো-
- নিরাপত্তার লাইনে দাঁড়িয়ে অন্য কাজ করবেন না বা অযথা লাইন ধরে রাখবেন না।
- আপনার পাশের ভ্রমণকারীকে সহায়তা করুন।
- পরিবারের সদস্যদের সাথে আসন পরিবর্তন করুন।
- আপনার সীমিত স্থানকে যথাযোগ্য ব্যবহার করুন।
- কথোপকথনে সচেতন থাকুন।
- অধিক ঘ্রাণযুক্ত খাবার বহন করা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- নিজের মালামাল নিরাপদ স্থানে রেখে ঘুমান।
- বিমান থেকে নামার সময় শান্ত হয়ে নামুন।
আদা কিংবা মেন্থল মুখে রাখুন
আদা এবং মেন্থল আপনাকে শান্ত রাখবে এবং বমির হাত থেকে বাঁচাবে। ভ্রমণের সময় আদার ফ্লেভার যুক্ত চকোলেট অথবা মেন্থলের চকোলেট চুষলে খারাপ লাগা, অস্বস্তিবোধ থাকে না। তাছাড়া এদের স্বাদও মুখরোচক। তাই বিমানে এ দুটোকে প্রাধান্য দিন। অথবা বিমানবালার কাছে জিজ্ঞেস করুন আদা মিশ্রিত পানীয় পাওয়া যাবে কিনা। যদি পাওয়া যায় তাহলে তা নিঃসন্দেহে খেতে পারেন।
আকুপ্রেসার
আকুপ্রেসার খুব সহজ যা আপনি বিমানে বসেও করতে পারেন। আপনার রক্ত সঠিকভাবে সঞ্চালনের জন্য, আপনার মস্তিষ্ককে শান্ত রাখার জন্য আকুপ্রেসার খুব কাজে দিবে। খুব স্বাভাবিকভাবে এক হাতের বুড়ো আঙ্গুল ও বাকি চারটি আঙ্গুল দিয়ে অন্য হাতে যেখানে ঘড়ি পরা হয় সেখানে চাপ দিন। প্রশান্তির জন্য পাঁচ থেকে দশ মিনিট তা অনুশীলন করুন।
বেশি বেশি পানি পান করবেন
বিমানে থাকাকালীন ও বিমান থেকে নামার পরও বেশি করে পানি পান করুন। বেশি করে পানি পান করলে আপনি উদ্রেক, বিষন্নতা থেকে বাঁচার সাথে সাথে বেঁচে যাবেন জল শুষে নেয়া থেকেও। চেষ্টা করুন কফি, কোমল পানীয় থেকে বিরত থাকতে। কফি, কোমল পানীয় ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করে। বিমানে আপনার ত্বক হঠাত শুষ্ক হয়ে যেতে পারে তাই বেশি পানি পান করুন।
দিগন্তে বা আকাশে চেয়ে থাকুন
বিমান ভ্রমণের সময় আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার সাথে উদ্বেগ, অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্পর্ক কি তা গবেষকগণ সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেননি। হোফম্যান বলেন, মানুষ যখন আকাশপানে তাকিয়ে থাকে, তার সৌন্দর্য নিয়ে ভাবে, আকাশে তাকিয়ে থেকে থেকে যখন পূর্বের সুখকর স্মৃতি রোমন্থন করে তখন অসুস্থতা, বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
জানালার পাশে বসার আসন নির্বাচন করুন
আপনি যদি বিস্তীর্ণ আকাশ দেখতে চান, মেঘমালা দেখতে চান, প্রকৃতি্র অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে জানালার পাশে বসার স্থান নির্বাচন করুন। পুরো সময় ধরে মেঘ দেখার অন্যান্য অনেক সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।
বই পড়বেন না
বিমানে ভ্রমণের সময় বই পড়া এবং এক দৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকা অসুস্থতার অন্যতম কারণ। যদি আপনি খুব আকর্ষণীয় গল্প পড়া শুরু করেন তাহলে তা শেষ করুন এবং তারপর সাথে সাথেই বইটি বন্ধ করুন। আপনার পাকস্থলি আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে।