স্টুডেন্ট হিসেবে বিল গেটস তার গণিতের উপর দক্ষতার মাধ্যমে প্রফেসরদেরকে মুগ্ধ করেছিলেন। ১৯৭০ সালে একাধিক ফ্যাকাল্টি মেম্বার তার গণিতের উপর দখল দেখে বিস্মিত হতেন। তিনি “pancake sorting” নামে একটি সমাধান দিয়েছিলেন এবং তার সেই ধারণা ১৯৭৯ সালে “Journal Discrete mathematics” এ প্রকাশিত হয়েছিল যা হার্ভার্ড এর প্রফেসর ক্রিস্টস পাপাদিমিত্রো্র সাথে ছিল। পাপাদিমিত্রো বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া তে কম্পিউটার সায়েন্স এর প্রফেসর হিসেবে আছেন। কয়েক বছর আগে বিল গেটস এর সাথে কম্পিউটার মেশিনারির একটি প্রকাশনীর জন্য এক সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।যেখান থেকেই বিল গেটস ঠিক কতটা মেধাবী ছিলেন এই প্রশ্নের সূত্রপাত হয়।
যে গল্প থেকে বোঝা যায় যে সফল ব্যক্তিরা সর্বদাই আমাদের চেয়ে আলাদা হন।
পাপাদিমিত্রোঃ আমি যখন হার্ভার্ড এ অ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর ছিলাম বিল তখন জুনিয়র। আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে বলেছিলাম, “এখানে একজন আন্ডারগ্র্যাড আছে যাকে আমার দেখা সব চেয়ে স্মার্ট মনে হয়েছে”।
সেই সেমিস্টার এ গেটস “pancake sorting” নামক একটি অংক নিয়ে ব্যস্ত ছিল। আপনি 3-4-2-1-5, সংখ্যাগুলোকে আগের পদের উপর আলোকপাত করে কীভাবে সাজাবেন? আপনি 4-3-2-1-5 পাবার জন্য প্রথম ২টি সংখ্যার উপর আলোকপাত কতে পারবেন এবং শেষের ৪ টি শেষ করার জন্য যেমনঃ 1-2-3-4-5। মাত্র ২ বার কিন্তু n সংখ্যক এর জন্য কেউই বলতে পারবেন না। বিল এটাকে সমাধান করেন মাত্র 1.67n সংখ্যক দিয়ে। বিল তার পদ্ধতি সঠিক প্রমাণ করেন এবং আমরা 1.06n এর একটি সীমা বেঁধে দেই যে এটি দ্রুত করা সম্ভব না। এটি তখনকার সময়ে একটি হাস্যকর সমস্যা ছিল কারণ মানুষের ক্রোমোজোম এই পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয়।
২ বছর পর আমি বিলকে ডেকে বললাম যে আমাদের লেখা একটি ভাল গণিত ম্যাগাজিনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।শোনার পর তাকে মাত্রাতিরিক্ত নির্লিপ্ত মনে হয়েছিল। বিলকে একটি ছোট কোম্পানীর হয়ে মাইক্রোপ্রসেসর এর কোড লেখার জন্য নিউ মেক্সিকোতে যেতে হয়েছিল। তখন আমি মনে মনে বলেছিলাম, “অসাধারণ মেধার এমন অপচয়”।
৩০ বছর পর আমাদের গবেষকরা এমন একটি কৌশল বের করেছেন যা মাত্র ১% দ্রুত কাজ করতে পারবে। NPR interview অনুযায়ী হ্যারি লিউস নামে আরেকজন প্রফেসর যিনি ১৯৭০ সালে গেটসকে শিক্ষা দিতেন; তারা শক্তিশালী কম্পিউটারের সাহায্য নিয়েছিলেন। যেখানে তরুণ গেটস শুধুমাত্র তার নিজের জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল ছিল (তাছাড়া সে কম্পিউটার এর বড় বড় সমস্যা সমাধানে সাহায্য করেছিল)। আগের সব নিয়ম ভেঙ্গে দেয়া সহজ-যে নিয়ম ২০ বছর বয়সে জিনিয়াস না হয়েও করতে পারে। কিন্তু গবেষণার একটি বড় অংশ বলে যে, বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যৎ জীবনে সম্পদশালী ও সফল হবার পূর্বলক্ষণ।
২০১৩ সালে ডিউক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জনাথন ওয়াই তাদের Talent Identification Program এর একটি লেখা প্রকাশ করেন যাতে বলা হয়েছে যে, বেশীরভাগ ভাগ্যবান CEO এবং বিলিওনাররা ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আন্ডারগ্র্যাড বা গ্রাজুয়েশন করে থাকেন। এমনকি ০.০০০০০০১% সম্পদশালীরাও শিক্ষিত।
ওয়াই গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে, ১,৯৯১ জন CEO এর মধ্যে ৪০% উন্নত স্কুলে গিয়েছেন যার মানে তারা ১% নিজেদের জ্ঞান কাজে লাগিয়েছেন। তিনি আরো দেখিয়েছেন যে, উচ্চ শিক্ষিত CEO রা কোম্পানী পরিচালনায় খুব ভাল হয়। তিনি দেখান যে উন্নত স্কুলে ভর্তি হতে হলে SAT এ ভাল স্কোর থাকা লাগে আর SAT এ ভাল স্কোর বুদ্ধিমত্তার সাথেই জড়িত।
ওয়াই’র পদ্ধতি ও সিদ্ধান্ত সমালোচিত হত যেমনঃ স্টিভ সেইবল্ড “How Rich People Think” বইয়ের লেখক এবং ওয়াই মনে করেন যদি সম্ভব হত তিনি মানুষের SAT এ ভাল স্কোর করাটকেই বেছে নিতেন।একটি প্রবন্ধে তিনি স্বীকার করেন যে, “নামী-দামী স্কুল থেকে যারা পাশ করে তারা ব্যান্ডের নাম, নেটওয়ার্ক এর ক্ষমতা, মান ইত্যাদি ক্ষেত্রে অন্যদের উপর প্রভাব বিস্তার করে”।
ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির আরেকটি ছোট গবেষণায় দেখা যায় যে, ৩২০ জন স্টুডেন্ট এর মধ্যে যারা ২৩ বছরের আগে SAT এ 1o,ooo এর উপরের লেভেলে 1 এর বেশী স্কোর করেছে তারা অন্যদের তুলনায় নামকরা কোম্পানীতে ৩৮ বছর বয়সের আগেই বেশী সম্মানজনক চাকরি করে করে।
বিল গেটস তার বুদ্ধিমত্তা ও পেশাগত সফলতার মধ্যে সমন্বয় করতে পেরেছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি Forbes কে বলেছেন, “মাইক্রোসফট অবশ্যই IQ যুদ্ধে জয়ী হবে, নয়তো আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই”।
কারো সফলতার পেছনে বুদ্ধিমত্তার অবদান বেশী এটা ভাবা উচিত না। এই সব গবেষণা বা জরিপের মানে এই না যে আপনি বুদ্ধিমান নন বলে জীবনে কিছুই করতে পারবেন না, আপনি ও হতে পারেন ভবিষ্যতের বিল গেটস।
সবাই চাই সফলতা অজন করার জন্য।