ক্যারবীয় ক্রিকেটের রাজপুত্র ব্রায়ান চালর্স লারা

“ক্যারবীয় ক্রিকেটের রাজপুত্র ব্রায়ান চালর্স লারা”

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

ব্রায়ান লারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট  দলের বিখ্যাত খেলোয়াড়। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের অন্যতম বলে স্বীকৃত ব্রায়ান লারা। টেস্ট ক্রিকেট ও প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট, উভয়ইটিতেই এক ইনিংস সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের বিশ্ব রেকর্ড তার। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি এক ইনিংসে ৪০০ রান করেন। সবমিলিয়ে টেস্ট ১১০০০ এর উপরে রান করেছেন। এটিও একটি রেকর্ড।

চৌদ্দ বছর বয়সেেই তিনি স্কুল বয়েজ লীগে 745 রান (গড় ইনিংসে 126.16 রান) সংগ্রহ করেন। যা তাকে ত্রিনিদাদের অণূধর্ব 16 জাতীয় দলে ডাক পাইয়ে দেয়। 15 বছর বয়সে তিনি তার প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অণূধর্ব 19 টূর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। ওই বছরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অণূর্ধ্ব 19 দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগের জুনিয়র ফুটবল এবং টেবিল টেনিস খেলতেন। তিনি কিন্তু বিশ্বাস করতেন তার সাফল্যের পথ ক্রিকেটই। তার পথিকৃৎ হিসেবে ভাবতেন গর্ডন গ্রিনিজ, ভিভ রিচার্ডস, রয় ফ্রেডরি কসকে এবং তাদেরকেই অনুসরণ করতেন।

রেকর্ড রেকর্ড আর রেকর্ড। ব্রায়ান লারা মানে এক একটি রেকর্ড নতুন করে তৈরী করা। শচীন নাকি এই যুগের ব্রাডম্যান। আর ব্রায়ান লারা? রেকর্ডের বরপুত্র। ক্রিকেটে শচীনের এত এত রেকর্ড, তবুও রেকর্ডের বরপুত্রের খ্যাতি ক্যারবীয় যুবরাজ লারার। ক্রিকেট পন্ডিতরা বলেন, ব্র্যাডম্যানের পর দ্রুত রান তোলাই লারায় সেরা। তাকে এ স্বীকৃত কিন্তু এমনিতেই দেওয়া হয় নি। ব্যাটে ঝলকানিতেই আদায় করে নিয়েছেন লারা।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

লারার ব্যাটিং মানেই রানের বন্যা। একদিনে 300 রান! ভাবা যায়। অনেক আগ্রাসী ব্যাটসম্যান বলবেন এটা অসম্ভব? সেই অসম্ভব কাজটি তিনি করেছেন আজ থেকে 18 বছর আগে। 1994 সালের 6 জুন। ব্রায়ান লারা একদিনেই করেন 300 রান।

কাউন্টিতে তার 501 রানের মহাকাব্যিক ইনিংসের কথা কি মনে আছে? প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এক ইনিংসে এটাই প্রথম কোন ব্যাটসম্যানের পাঁচ শতাধিক রান। জি ই মরিসকোকে বাউন্ডারি মেরেই রানের এই এভারেস্টে পা রাখেন লারা।

এই 500 রানের পথে কত যে মাইলস্টোন স্পর্শ করেছেন লারা তার ইয়াওা নেই। এই ধরুন না বাউন্ডারি, 60টি চার 9টি ছক্কা, মোট 69টি বাউন্ডারি। এটাও নতুন এক ইতিহাস! যা আজও অক্ষত। অনেকদিন রেকর্ডটি নিজের করে রাখা পেরিনকে নেমে যেতে হয় দুই নাম্বারে। পেরিনের বাউন্ডারি ছিল 68টি। তবে তার সব ছিল চার। একটি ছক্কা ও ছিল না।

বীরোচিত 500 রানের পথে লারা স্পর্শ করেন ডন ব্রাডম্যানকে। 325 রানের মাথায় মাত্র সাত ইনিংসে তিনি ওই বছর হাজার রানের মাইইলফলক স্পর্শ করেন। 1938 সালের ডন ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড ছোঁয়া তাতেই। 386 রান করে বাঁহাতিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডটিও তিনি টপকে যান এ ইনিংসেই। আগের কৃতিত্ব ছিল বি সাচলিফিক তার রেকর্ডটি গড়ে ছিলেন।

1987 সাল ছিলো সাফল্যের অন্যতম একটি সাল লারার জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইয়ুথ চ্যাম্পিয়ন শিপে আগের বছরে কাল হুয়ারের গড়া 480 রানের রেকর্ড ভেঙ্গে 498 রানের নতুন রেকর্ড গড়েন। 1988 র জানুয়ারিতে লারা তার প্রথম ফাস্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর হয়ে লিওয়ার্ডে আইল্যান্ডের বিপক্ষে। তার দ্বিতীয় ফাস্ট ক্লাস ম্যাচেই তিনি 92 রান করেন বারবাডোস এর বিপক্ষে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই কিংবদন্তী জোয়ল গার্নার এবং ম্যালকম মার্শালের দুরন্ত আক্রমণ এর বিপক্ষে। জাতীয় দলে ডাক পেয়েও তাকে পিছাতে হয় তার বাবার মৃত্যুর কারণে। 1989 সালে তিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বি দলের নেতৃত্ব দেন। 1990 সালে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর সর্ব কনিষ্ঠ অধিনায়কের সম্মান পান এবং দলকে গেডেস গ্রান্ট শিল্ড জিতে এনে দেন।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ব্রায়ান লারার অভিষেক হয়। তার প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। শুরুটা তার ভালো হয় নি। লাহারোর গাদ্দাফি স্টেডিয়াম অভিষেক ম্যাচটা লারা প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৪ ও ৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন। প্রায় ১৬ বছর টেস্ট খেলার পর ক্রিকেটের এই বরপুত্র তার শেষ টেস্ট খেলেন ২০৬ সালের ১ ই ডিসেম্বর পাকিস্তানেরই বিপক্ষে। সে ম্যাচে তিনি প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে উমর গুলের বলে বোল্ড ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৯ রানে উমরগুলের বলে শোয়েব মালিকের হাতে তালুবন্দি হন। টেস্টে তার ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানটা এ রকম ১৩১ ম্যাচে মোট রান ১১ হাজার ৯৫৩ , হাফ সেঞ্চুরী ৪৮ টি, সেঞ্চুরী ৩৪ টি। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ৪০০ অপরাজিত ( ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ) এবং ১২ টি আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হয়েছেন লারা।

১৯০ সালের ৯ নভেম্বর পাকিস্তানের জাতীয় স্টেডিয়াম, করাচিতে ওয়ানডে অভিষেক হয় ব্রায়ান লারার। সেই ম্যাচে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান 20 বলে ১১ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওয়াকার ইউনুসের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে। সে ম্যাচে পাকিস্তান ৬ রানের জয় পায়। ১৭ বছর এই কিংবদন্তী একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে তার পথ শেষ করেন ২১ শে এপ্রিল ২০৭ এ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইট পর্বে। সেই ম্যাচের ৩৯ বল খেলে মাত্র ১৮ রানেই পিটারসেন এর হাতে রান আউট হন। তিনি ওয়ানডেতে ২৯৯ ম্যাচ খেলে ১0000 হাজার ৪০৫ রান সংগ্রহ করেন। হাফ সেঞ্চুরী ৬৩ টি, সেঞ্চুরী ১৯ টি। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ১৬৯ ( শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯৯৫ সালে)। এবং ৩২ টি ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন। ক্যাচ নিয়েছেন ১২০ টি। তিনি ৩০  টি আন্তর্জাতিক একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন।

ব্রায়ান চার্লস লারার স্ত্রী ডারহাম কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সাবেক অভ্যর্থক এবং বিট্রিশ মডেল লিনসি ওয়ার্ড। ২০০০ সালের শেষের দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়ার্ড লারার অর্ধাঙ্গিনী হন। তার বড় মেয়ের নাম সিডনি এবং ছোট মেয়ের নাম টায়লা। লারা বলেন আমার যদি একটা ছেলে থাকত তাকে আমি শচীন টেন্ডুলকার এর মত হতে বলতাম।

লারার সময়ে তার প্রিয় ক্রিকেটারদের তালিকায় রয়েছে শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, শেন ওয়ার্ন, জ্যাক ক্যালিস।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

২০০৭ সালের ১৯ শে এপ্রিল লারা সকল প্রকার ক্রিকেট থেকে অবসর এর ঘোষণা দেন। বলেন যে আগামী ২১ শে এপ্রিল, ২০০৭ ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে ম্যাচটি হবে আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কিন্তু তিনি ২০১৩ সালে তিনি আন্তর্জাতিক টুয়েন্টি খেলার জন্য প্রত্যাবর্তন করেন। পরে ২০১১ সালে আবার অবসর গ্রহণ করেন।

Written By 
Mohammad Ali

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *