আপনি একটি চাকরি করছেন। কিন্তু এই চাকরি নিয়ে আপনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। এর পেছনে থাকতে পারে বেশ কয়েকটি কারণ। যেমনঃ
১। আপনি যা করছেন, তা আপনার প্যাশনের সাথে ঠিক যায় না। তাই কাজ করে আপনি আনন্দ পাচ্ছেন না।
২। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুসারে আপনি আরো ভালো অবস্থান দাবী করেন।
৩। আপনার মতে কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক কম।
৪। আপনি প্রাইভেট জব করছেন, তবে সরকারি সেক্টরে যেতে চান।
৫। এর উল্টোটাও হতে পারে, সরকারি চাকরি অথবা যে কোনো চাকরির পোস্টিং কিংবা বদলিজনিত কারণে আপনাকে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে।
৬। অনেকেই ভালো ক্যারিয়ারের জন্য ঘন ঘন চাকরি পরিবর্তনকে ফলপ্রসূ মনে করে থাকেন, যা সবক্ষেত্রে কাজে নাও দিতে পারে।
৭। বিসিএস ক্যাডারদের অনেক সময় দেখা যায় তিনি যে পদে আছেন, তার চেয়ে উঁচু ক্যাডার পদের জন্য আবার চেষ্টা করতে।
৮। কাজে একঘেমেয়িতা এবং অফিসে কাজের পরিবেশ কারো কাছে অপছন্দের হওয়াও চাকরি ছাড়তে চাওয়ার অন্যতম কারণ।
উপরের কারণগুলো চাকরি পরিবর্তের জন্য বেশ যুক্তিসংগত কারণ বটে। তবে সহকর্মী চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন অবস্থানে বেশ ভালো আছেন- তা দেখে চাকরি ছাড়ার ঘটনাও কিন্তু অহরহ দেখা যায়। সহকর্মী যেভাবে সফল হয়েছেন, আপনিও একইভাবে সফল হবেন – তা কিন্তু সবসময় সত্যি নয়! এই আটটি কারণের এক বা একাধিক কারণ যদি আপনার সাথে মিলে যায় সেক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন –
১। একজন পেশাদার ব্যক্তি হিসেবে আপনি যে পেশায় আছেন, তা ঠিকভাবে করে যাওয়াই আপনার দায়িত্ব। হ্যাঁ, আপনি চাকরি পরিবর্তনের চেষ্টা অবশ্যই করবেন। অবশ্যই পেশাদারিত্ব বজায় রেখে।
২। চাকরি ঘন ঘন পরিবর্তন কিন্তু সব পেশার জন্য ফলপ্রসূ নয়। সাধারণত, আইটি সেক্টরে দেখা যায় কাজ করার সাথে সাথে দক্ষতা বাড়ে, তাই কর্মীদের চাহিদা বা ডিমান্ডও বাড়ে। আবার এক চাকরিতে বেশ কিছুদিন কাজ করার ফলে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বাড়ে, যাতে কর্মীদের চাহিদাও বেড়ে যায়।
৩। আপনার বর্তমান চাকরি আপনার কাছে পছন্দ হচ্ছে না মানে এই নয় যে ভবিষ্যৎ চাকরি আপনার পছন্দ হবে! সব প্রতিষ্ঠানেই ভালো লাগার অনেককিছুই যেমন থাকবে, খারাপ লাগার অনেককিছুও কিন্তু থাকবে। তাই চাকরি পরিবর্তনের আগে এ ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তা করতে পারেন।
৪। চাকরি পাওয়ার আগেই হুট করে বর্তমান চাকরি ছেড়ে দেওয়াও কিন্তু খুব বুদ্ধিমানের কাজ নয়। প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির বাজারে তাই খুব ভেবে-চিন্তে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
৫। সরকারি চাকরিতে যেমন দেখা যায় (বিশেষ করে বিসিএসে) একটি পদের জন্য হাজারো প্রার্থী থাকে। আপনি সেই পদটি পেলেন, যোগদানও করলেন, কিন্তু কিছুদিন পর সেটি কোন এক কারণে ছেড়ে দিলেন।
কী ভাবছেন, পরেরবার এই পোস্টে লোক নেয়া হবে, পোস্ট তো ফাঁকা থাকবে না। হ্যাঁ, পদ হয়তো ফাঁকা থাকবে না, কিন্তু আপনি যে সময় চাকরিটি পেলেন, সে সময় আপনি যোগদান না করলে হয়তো অন্য কোন যোগ্য প্রার্থী ঐ পদটি পেতে পারতেন। যার হয়তো পরেরবার চাকরির আবেদনের বয়স থাকবে না।
এসব ব্যাপার কিন্তু খুব মানবিক, আমরা অনেকেই তা খেয়াল পর্যন্ত করি না। ভেবে দেখুন ব্যাপারটা কিন্তু আপনার সাথেও হতে পারতো।
৬। কোনো চাকরিতে যোগদানের সাথেই সাথেই আমি সব পারব, আমার সব ভালো লাগবে – এমন ভাবনা কিন্তু খুবই অমূলক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথম চাকরির সময় মানুষ এমনটা মনে করে, আর বাস্তবে এর উল্টোটা দেখে দ্রুত হতাশ হয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়।
কিন্তু তা একদমই ঠিক নয়। যে কোনো চাকরিতেই পুরোপুরি কাজ শিখতে ও অফিসের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে মাস খানিক সময় লাগাটা স্বাভাবিক।
৭। আপনি আপনার বর্তমান পেশার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত? হুট করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে এ পেশায় আছেন – এরকম সিনিয়র বা অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিন। পরিবারের সাথে কথা বলুন। ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিন।