চাকুরী ক্ষেত্রে আপনি যেসব সমস্যায় আপনি পড়তে পারেন এবং তার সমাধান

0

সচরাচর জমজ ছাড়া একজন মানুষের সাথে অন্য মানুষের চেহারা এক রকম হয় না। এই বিচিত্র মানুষগুলোর মধ্যে আচারআচরন, কথাবার্তা, চালচলনের বৈচিত্র এবং বৈসাদৃশ্য হিসাব করতে গেলে আপনার সারাটা জীবন লেগে যাবে। কিন্তু আপনি যদি এই বিচিত্র রঙের বিচিত্র মানুষগুলোকে নিয়ে সাদৃশ্যের চিন্তা করেন তাহলে খুব অল্প সময়ে তাদের সবার মাঝে যে সাদৃশ্য খুঁজে পাবেন সেটা হলো তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা। প্রত্যেকটা মানুষ একটা সুন্দর সুখের ভবিষ্যৎ কল্পনা করে। প্রত্যেকেই চিন্তা করে জীবনের কোন একটা পর্যায়ে তারা কোন চাকরী করবে এবং সুন্দর সুখের জীবন কাটাবে। কিন্তু বাস্তব চিন্তা করে বলুন তো, এই শতকোটি মানুষ যারা জীবনের কোন একটা পর্যায়ে তাদের কাঙ্খিত স্বপ্নের দেখা পেয়ে সেটাকে কতোটা সাফল্যমন্ডিত করতে পারে? সুখ এবং সাফল্যের পাশে তাদের জীবনে হতাশাও কি কম যুক্ত হয় না? আজকের টিউনে আমরা আলোচনা করবো ক্যারিয়ারের এমন ৫টি বিপর্যস্ত দিকের কথা যেগুলো শুধু মানুষিক নয় শারীরিকভাবেই ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়।

সাধারনত কী হয় একটা জব পাওয়ার পরে?

সব সময় মানুষের ভবিষ্যৎ চিন্তাগুলো থাকে খুব সুন্দর! একটা দুঃচিন্তামুক্ত সুন্দর সুখের চিন্তায় মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে। যেখানে অসম্ভব বলতে কিছু নেই, ডানা মেললেই উড়ে যাওয়া যায় পাখির মতোন। কিন্তু বাস্তব আর মানুষের কল্পনায় অনেক ফারাক থাকে। চাকরী পাওয়া নিয়ে আমরা যতো স্বপ্নই মনের ভেতর আঁকিনা কেন চাকরী পাওয়ার পরে তার অনেক অংশই বদলে যায়। আমরা কখনোই কল্পনা করিনা কেউ আমাদেরকে দিয়ে তাদের কাজ করানোর জন্যই আমাদেরকে চাকরীতে নিয়োগ দেয়। আমাদের কাজের বিনিময়েই জোটে আমাদের বেতন। সাধারনভাবে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির সমতা না থাকলেও মনে জমাট বাঁধে হতাশা। কাজের প্রতি অনিহা। আজ এরকম ৫টি কারন আপনাদের সাথে বর্ণনা করবো।

চাকরী পাওয়ার আগের জীবন এবং পরের জীবনের মাঝে খুব বেশি পার্থক্য করে ফেললেও আপনার স্বাভাবিক জীবন অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। সব কিছুকেই সহজভাবে গ্রহণ করার মানুষিকতা সব সময় প্রয়োজন। আপনাদের স্বাভাবিক জীবন ধারা বজায় রাখা এবং আপনাদের জীবনকে আরও সুন্দর করায় আমার টিউনের আজকের প্রত্যাশা।

নির্দিষ্ট সময়ের কাজ শেষ করতে না পারার সমস্যাঃ

যেকোন কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে কাজ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। একজন চাকরীজীবির সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সে তার কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে শেষ করতে পারছে কিনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে আমরা অধিকাংশরাই সময়ের কাজ সময়ের ভিতরেই শেষ করতে পারিনা। এর পরিণামে আমাদের মাঝে জন্ম নেয় হতাশা এবং কার্মদক্ষতার প্রতি হীণমন্যতাবোধ। আশ্চর্যজনক ভাবে আপনার এই সীমাবদ্ধতা আপনার ভেতরে একটা মারাত্বক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যা আপনাকে শুধু মানুষিকভাবে নয় শারীরিকভাবেও অনেকটা কাবু করে ফেলতে পারে। এর ফলে আপনার মাথা ব্যাথা, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, উচ্চ রক্তচাপ সহ আরও অনেক রোগের সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া চাকরীর ক্ষেত্রে এটা আপনার হাইয়ার অথোরিটির প্রতি আপনার মনে এমন এক ধারনার জন্ম দিতে পারে যে, তারা আপনাকে অতিরিক্ত কাজের চাপ দিচ্ছে। যারফলে কাজের প্রতি আপনার ভালোবাসা লোপ পেয়ে কাজের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয়।

সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ঃ

সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আপনার মনোবলকে চাঙ্গা করুন। আপনার সহযোগিদের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করুন। যেকোন সমস্যা আপনার উর্ধ্বতন অথোরিটিকে বলুন। প্রয়োজনে তাদের সাথে আলোচনায় বসে আপনার সমস্যাগুলো খুলে বলুন। মনে রাখবেন, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং নিজের মনোবল আপনাকে যেকোন সমস্যা থেকে মুক্ত করার ক্ষমতা রাখে।

নেতৃস্থানীয়দের মাঝে চিন্তার দ্বন্দঃ

আপনি আধা গ্লাস পানি নিয়ে দুজন মানুষকে বিষয়টা আলাদা আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করতে বলুন। তাদের একজন বলবে গ্লাসটা অর্ধেক পানিতে ভরা এবং অন্যজন বলবে গ্লাসটি অর্ধেক খালি। আসলে প্রত্যেকটা মানুষের চিন্তা অন্যজনের কাছে থেকে আলাদা। এখন কথা হলো আপনার অফিসে উর্ধ্বতন দুজন কর্মকর্তা আছেন। অফিসের প্রয়োজনে মনে করুন একটা ওয়েব পেইজ ডিজাইন করতে হবে। একজন কর্মকর্তা বললো পেইজে যেন লাল রঙ্গের আধিক্য বেশি থাকে এবং অন্যজন বললো পেইজে যেন সবুজ রঙ্গের আধিক্য বেশি থাকে। এখন আপনি কোনটা করবেন? এরকম পরিস্থিতি আপনাকে খুব তীব্র মানুষিক চাপের মধ্যে ফেলে দিবে। এর ফলে আপনার মাথা ব্যাথা, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, উচ্চ রক্তচাপ সহ আরও অনেক রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ঃ

সব সময় চেইন অব কমান্ড মেনে চলার চেষ্টা করুন। সিনিয়র কর্মকর্তার পছন্দ যাই থাকনা কেন আপনি আপনার ইমিডিয়েট সিনিয়রকে মেনে চলুন। তাহলে দেখবেন যে আপনি ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন। সাথে আপনার ইমিডিয়েট সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে আপনার সম্পর্কেরও উন্নতি হতে পারে।

অপ্রাসঙ্গিকঃ ইমিডিয়েট সিনিয়র যে কী জিনিস এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেদিন প্রথম পা দেই সেদিন বুঝতে পারছিলাম। অরিয়েন্টেশন ক্লাসে গিয়ে ক্লাসমেটদের সাথে পরিচিত হওয়ার পরিবর্তে সকলেই বড় ভাইদের নাম মুখস্ত করার প্রতিযোগিতায় নামতে হয়েছিলো। কারন যেকোন বিষয়ে ইমিডিয়েট সিনিয়র ছাড়া নাকি কাউকে কিছু বলা যাবে না। আর ভাইদের তো তোর নাম ছাড়া ডাকা যাবে না। (যদিও নাম মুখস্ত করতে বাধ্য করা হয়েছিলো) আজও সেই চেইন অব কমান্ড মেনে চলছি আমরা, আমাদের জুনিয়র, তার জুনিয়র, তার জুনিয়র।

সহযোগিদের আচরনের সাথে নিজেকে মানিয়ে চলতে না পারা

একসাথে একের অধিক মানুষ থাকলেই একের সাথে অন্যের আচরনের অমিল পরিলক্ষ্যিত হবে। আপনি হয়তো চুপচাপ থাকতে ভালোবাসেন কিন্তু আপনার পাশের কলিগ ক্রমাগত কথা বলে। অথবা আপনি নীরিবিলি পছন্দ করেন কিন্তু আপনার সহকর্মী অনেক শব্দ করে কথা বলে কিংবা ফুল ভল্যিয়মে গান শুনে। ভদ্রতার খাতিরে কিছু না বললেও আপনার মনে এই ব্যাপারে একটি খারাপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।

সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ঃ

আমাদের বাস্তব জীবনে আমরা যে কাউকে যদি আমাদের পছন্দ না হয় তাহলে তাকে এড়িয়ে চলতে পারি। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ণ অসম্ভব। আপনি চাইলেই অফিসের কোন কর্মকর্তাকে বা কলিগকে এড়িয়ে চলতে পারেন না। আপনার যদি তাদের আচরনগত কারনে সমস্যা হয় তাহলে তাদের সাথে একটু কৌশলি হতে হবে। তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং বিনীতভাবে আপনার সমস্যা তার সামনে তুলে ধরুন। আমার বিশ্বাস অবশ্যই কাজ হবে। যদি না হয় সেক্ষেত্রে আপনাদের তত্ত্বাবধায়কের সাথে যোগাযোগ করুন।

অত্যাধিক কাজের চাপ

এটাতো আর নতুন কিছু নয়, প্রত্যেকটা কাজের জন্য চাপ তো অবশ্যই থাকবে। তবে সেই চাপ যদি আপনার শারীরিক এবং মানুষিক ক্ষতির কারন হয় তবে সেটাই আলোচনার বিষয়। অত্যাধিক কাজের চাপ আপনাকে শারীরিক এবং মানুষিকভাবে প্রবল সমস্যার ভেতর ফেলতে পারে। অফিশিয়াল কর্মকর্তাদের মাঝে ৭০% এর বেশি শুধুমাত্র অধিক কাজের চাপের কারনে শারীরিক এবং মানুষিকভাবে বিভিন্ন রোগের শিকার হয়।

সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ঃ

যদি সম্ভব হয় বেশি কাজের মূহুর্তে অন্য কারও সাহায্য নিতে পারেন। অধিক কাজের চাপ তখনই হয় যখন কোন কাজের ক্ষেত্রে আপনি অলসতা করে সময় ক্ষেপন করে ফেলেন। এক্ষেত্রে টেকটিউনস CEO & CTO মেহেদী হাসান আরিফ ভাইয়ের একটি কথা আমি সব সময় মনে রাখি। তিনি বলেছিলেন, কাজের ক্ষেত্রে আপনার প্রত্যেকটা কাজের প্রায়োরিটি ঠিক করুন। অনেকগুলো কাজ যদি একসাথে সাথে তাহলে তার মাঝে গুরুত্ব অনুসারে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে শেষ করুন। তাহলেই দেখবেন সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। 

নিয়ম এবং কাজ ব্যাপারে অস্পষ্টতা

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা। আপনি যখন কোন কাজ শুরু করেছিলেন তখন হয়তো কী ধরনের কাজ করতে হবে তার সঠিক ব্যাখ্যা আপনার কাছে দেওয়া হয়নি। আপনি কাজ শুরুর পূর্বে ভেবেছিলেন একটা আর কাজ পরে দেখলেন অন্যটা। এই ক্ষেত্রে মেজাজের ভারসাম্য রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে এবং কাজের প্রতি আপনার মনযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর সব সময় মনে রাখবেন মানষিক সমস্যা থেকেই অধিকাংশ শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ঃ

আগের কথা ভুলে যান। আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনায় বসুন। ভালোভাবে জেনে নিন আপনার কাজ কী আর কোম্পানি আপনার কাছ থেকে আসলে কী প্রত্যাশা করে। তারপর কোম্পানির প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করুন এবং আপনার লক্ষ্যে পৌছে যান।

আশা করি টিউনে উল্লেখিত প্রত্যেকটা বিষয় আপনারা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন। এখন সমস্যা গুলোকে এড়িয়ে চলে সম্ভবনাগুলোকে কাজে লাগিয়ে শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা। আপনার পথ চলা আরও সুন্দর হোক। তবে যারা এখনো চাকরী শুরুই করেননি তাদের জন্য রয়েছে আমার ইন্টারভিউ রিলেটেড এক্সক্লুসিভ টিউন, আশা করি নিচের লিংক থেকে একনজর দেখে আসবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *