তাজমহলের পিছনের ইতিহাস

 

তাজমহল ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রায় মনুষ্য সৃষ্ট পৃথিবীর সাতটি বিস্ময়ের একটি, এটি যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত।তাজমহলের সৌন্দর্যের বর্ণনা করা যেকোন ভাষারই অতীত।১৮৭৪ সালের দিকের কথা ব্রিটিশ রাজার রাজদূত এবং পর্যটক”এডওয়ার্ড লিয়ার”আগ্রার তাজমহল দেখে বলেছিলেন,

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

”আজ থেকে বিশ্ববাসীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হোক। একটা শ্রেণী যারা তাজমহল দেখেছে এবং আরেকটা শ্রেণী যারা তা দেখেনি।“

পৃথিবীর স্বাভাবিকতা থেকে বেরিয়ে কিছুটা স্বর্গের স্বস্ত্বি নিতে ঘুরে আসতে পারেন পৃথিবীর এ অমর কীর্তি তাজমহল থেকে।এই অনন্য স্মৃতিসৌধটি স্ত্রীর ভালবাসার প্রতিকরূপে মুঘল সম্রাট শাহজাহান এমনভাবে নিমার্ণ করেছেন যে সচক্ষে না দেখলে বুজতেই পারা যায় না এটি পৃথিবীর সপ্তাচার্যের একটি কেন হলো।                                                                                                             সম্রাট শাহজাহানের অনবদ্য ও অমর এক কীর্তি এই তাজমহল যা তিনি তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজকে ভালবেসে তৈরি করেছিলেন।ভালবাসার এত বড় নিদর্শন কেউ তৈরি করে দেখাতে পারেননি আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে।২০ হাজার শ্রমিক ২২ বছর সময় নিয়ে তাদের নিপুন হাতে এ মহাকীর্তিটি নির্মাণ করেছেন ভাবতেই যেন অবাক লাগে।বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রত্যহ ভিড় জমায় হাজারো পর্যটক এই তাজমহল দেখার জন্য।বর্তমানে তাজমহলে বছরে ২ থেকে ৩ মিলিয়ন পর্যটক আসে যার মধ্যে ২,০০,০০০ পর্যটক বিদেশী।পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে প্রথম থেকেই ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই তাজমহল।

স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগমকেকে এত বেশি ভালবাসতেন যে( মমতাজ মহল)   সম্রাট শাহজাহান, রাজকর্ম থেকে শুরু করে সামরিক অভিযান সব কাজেই সাথে রাখতেন তার প্রিয়তম স্ত্রীকে।কিন্তু  তাদের মধুর ভালবাসার স্থায়ী ছিল মাত্র ১৮ বছর। ১৪টি সন্তান আসে এ সময়ের মধ্যে তাদের সংসারে।১৬৩০ সাল, সম্রাট শাহজাহানের এক সামরিক অভিযান কালে সর্বশেষ সন্তান আসার সময় মৃত্যু সন্ধিক্ষনে পড়েন মমতাজ,তখন তাদের চতুর্দশ কন্যা সন্তান গৌহর বেগমের জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।স্বামী শাহজানের কাছে চারটি প্রতিশ্রূতি নিয়েছিলেন মৃত্যর কোলে থাকা মমতাজ।যার অন্যতম হলো তার মৃত্যুর পর শাহজাহান যেন তাদের ভালবাসার পবিত্রতাকে অমর ও চির স্মরনীয় করে রাখতে এমন একটি সৌধ নির্মাণ করেন যা পৃথিবীতে অদ্বীতিয় থাকে। প্রিয়তমার মৃত্যুর পরই প্রতিশ্রূতি অনুযায়ী তাকে তপতী নদীর তীরে সমাহিত করে সৌধ নির্মাণের কাজে হাত দেন সম্রাট শাহজাহান। পরিকল্পনা ও নকঁশা চুড়ান্ত করেই নির্মাণ শুরু করেন তিনি ১৬৩১ সালে আর ২২ বছর সময় নিয়ে ১৬৫৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ করেন অপূর্ব সৌধটির নির্মাণ।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

সেই সময়ের প্রায় ৩২ মিলিয়ন রুপি অপরূপ সৌন্দর্যের এ সৌধটি নির্মাণে ব্যয় হয়।দিল্লি, কান্দাহার, লাহোর এবং মুলতানের সুদক্ষ কারিগররা নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন বলে জানা যায় আর এই তাজের বা তাজমহলের বিশেষ কাজগুলো করেন বাগদাদ, বোখরার ও শিরাজ দক্ষ মুসলিম নির্মাতারাই। সেখানে সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ মুসলিম স্থপতি ওস্তাদ ঈসা খাঁয়ের নাম লিখা রয়েছে নির্মাণ কাজের প্লেটে নির্মাতাদের প্রধান হিসেবে।

একটি বর্গাকার ক্ষেত্রের প্লাটফর্মের ওপর মোড়ানো চৌকোনার তাজমহলটি অসমান অষ্টভুজাকৃতির আকার ধারণ করেছে। এটি নির্মিত হয়েছে সারা এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা উপাদান দিয়ে।এরমধ্যে রাজ্যস্থান থেকে আনা হয়েছিল আলো প্রবাহী সাদা মার্বেল।ইয়াশম, লাল, হলুদ ও বাদামী পাথর পাঞ্জাব থেকে, সবুজ পাথর ও স্ফুটিক টুকরা চীন থেকে আনা হয়েছে। বৈদূর্য মনি ও সবুজ-নীলাভ রত্ন তিব্বত থেকে, নীলকান্ত মনি আফগান থেকে, উজ্জ্বল নীল রত্ন শ্রীলঙ্কা থেকে এবং রক্তিমাভ, সাদা ও খয়েরি রঙের মূল্যবান পাথর আনা হয়েছিল আরব থেকে।এতে মোট আটাশ ধরণের মূল্যবান পাথর বসানো হয়েছে সাদা মার্বেলের ওপর আর এক হাজারের বেশি হাতি নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল।

চমৎকার এ সমাধী সৌধটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। গেট পেরিয়ে মূল ফটকে যেতে বেশ খানিকটা পথ পায়ে হেটে পারি দিতে হবে। এরপর মূল বেদিতে পৌঁছতে নিচ থেকে ২১টি চমকপ্রদ সিঁড়ি পার হতে হবে। শুধু সমাধি সৌধ নয় সম্পূর্ণ তাজমহলের বেষ্টনি ও এর আশপাশ যেন এক স্বপ্ন রাজ্য।

এই স্বপ্ন রাজ্য ঘুরা শেষ করতে না করতেই আপনার মনে পড়ে যাবে যে ব্যক্তি এত সুন্দর করে এ মহাকীর্তি সৃষ্টি করেছেন তার সর্ম্পকে কিছু জানার। আর তার সর্ম্পকে জানতে ও তার শেষ জীবনের কষ্টের কিছু উপলব্ধি নিতে আপনাকে দেখতে হবে তারই আশেপাশের কিছু নিদর্শন।

আগ্রা ফোর্ট: কখনোই আগ্রা ফোর্টটি দেখতে ভুলবেন না তাজমহল দেখতে আসলে।এ এক বেদনা গাঁথা ইতিহাস।এখানেই শাহজানকে দীর্ঘ আটটি বছর আটকে রেখেছিলেন তার পুত্র আওরঙ্গজেব। বন্ধী থেকেও শুধু প্রিয়তমার কবরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কেঁদেছিলেন শাহজান আর এখানেই  মৃত্যুর সাধ নিয়েছেন প্রিয়তমার দিকে তাকিয়েই।

এটিও যমুনা রই তীরে অত্যন্ত প্রাচীন একটি অবস্থানে অবস্থিত। ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবরের তৈরি এই দুর্গ তাজমহল থেকে ২কিমি দূরে, এর আকর্ষণও তাজমহলের  থেকে কোন অংশেই কম নয়। ইউনেস্কোর অন্যতম বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত আগ্রা ফোর্ট। এই ফোর্টের ইতিহাস অনেক বড়। এর স্থাপত্য শৈলী যে কোন মানুষের মন কাড়ার মতো।

 

ফতেহপুর সিক্রি: মোঘলদের সব সৃষ্টিই যেন এক আকর্ষণীয় মায়ার টানের মতোই।আগ্রা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে ফতেহপুর সিক্রির। একটি ঐতিহাসিক শহর এটি।১৫০০ খ্রিস্টাব্দে রাজপুত মহারাজা সংগ্রাম সিংহ ফতেহপুরে রাজধানী স্থাপন করেন। সম্রাট আকবরের সৈন্যবাহিনী সাতবার ফতেহপুর আক্রমণ করেন এবং সপ্তমবারে ফতেহপুর দখল করেন। উঁচু এই আঙ্গিনায় রয়েছে দেওয়ানী খাস, দেওয়ানী আম, মসজিদ, ইবাদতখানা,মসজিদ, আকবরের স্ত্রী যোধা বাঈ এবং মুসলিম স্ত্রীর দুটি বাড়ি ও আকবরের নবরত্ন সভার সদস্য এবং প্রিয় মন্ত্রী বীরবলের ঘর। এছাড়াও রয়েছে ট্রেজারি, টাকশাল, ওয়ার্কশপ, সরাইখানা, দারোগার ঘর ইত্যাদি।বিশাল এই চত্বরের দক্ষিণ প্রান্তে দীন-ই-এলাহীর প্রচার কার্যালয়ও রয়েছে।রয়েছে পাঁচ মহল এটি পাঁচতলা একটি বিরাট ইমারত। উপরের তলাগুলো ক্রমশই ছোট।১৭৬টি গোলাকৃতির খাম্বার ওপর স্থাপিত। সকল ইমারত লাল বেলে পাথরে তৈরি এই ফতেহপুর সিক্রির।ফতেহপুর সিক্রি এক বিস্ময়কর নির্মাণ।১৫ বছরব্যাপী এই পরিকল্পিত শহর নির্মাণ করে হাজার হাজার শ্রমিক।

আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আগ্রায় রয়েছে এগুলো ছাড়াও।যার মধ্যে ১৫২৮ খ্রি. সম্রাট বাবর কর্তৃক নির্মিত আরামবাগ। তাজমহল থেকে বাগানটির দূরত্ব ৩ কিমি।আবার ১৩ কিমি দূরত্ব সিকান্দ্রার। সম্রাট আকবরের কবর রয়েছে এখানে।সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন। অসাধারণ কারুকার্য খচিত কবরটির ওপরে আল্লাহর ৯৯ নাম লেখা রয়েছে। দেখা যাবে ইতমাদ উদ দৌলা বা মির্জা গিয়াস উদ্দিন বেগের সমাধি। মির্জা গিয়াস উদ্দিন ছিলেন সম্রাট আকবরের অর্থমন্ত্রী। আকবরের মৃত্যুর পর বিচক্ষণ গিয়াস উদ্দিন বেগকে কিন্তু সম্রাট জাহাঙ্গীর চীফ মিনিস্টার করেন।গিয়াস উদ্দিনের আনিন্দ্য সুন্দরী কন্যা মেহেরুন্নেসাকে জাহাঙ্গীর বিয়ে করেন।এই বিদূষী মহিলা ১৬২২ থেকে ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৬ বছরে পিতা গিয়াস উদ্দিন বেগের কবরে দৃষ্টিনন্দন ইমারত নির্মাণ করেন।

কখন যাবেন: বেশি বৃষ্টির দিনে ও খুব গরমের সময় আগ্রায় না যাওয়াই ভালো। এ স্থানটিতে ভ্রমণকে আরাম দায়ক ও স্বপ্নীল করে রাখতে আপনাকে আসতে হবে নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

কিভাবে যাবেন:ঢাকা থেকে সরাসরি আগ্রায় যাওয়ার কোন বাস কিংবা ট্রেন নেই। তাই আপনাকে প্রথমেই ভারতের কলকাতা কিংবা দিল্লী যেতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যেতে বিমান, বাস ও ট্রেন যে কোন মাধ্যমেই কলকাতা যাওয়া যায়। আর দিল্লী শুধুমাত্র বিমানে যেতে হবে। কলকাতা থেকে প্রতিদিন হাওড় জয়পুর এক্স,গোয়ালিউর-উদয়পুর সুপার এক্স ও মরুধর এক্স নামে তিনটি ট্রেন আগ্রাতে যায়। আবার একই ট্রেন কলকাতা নিয়ে আসে। এসব ট্রেনের ভাড়া পড়বে ১৭৫০ থেকে দুই হাজার রুপি।

অন্যদিকে দিল্লি থেকে প্রতিদিন উদ্যান আভা তুফান এক্স নামে একটি ট্রেন একবার যায় এবং দিল্লিতে ফিরে আসে। যার ভাড়া ৭৫০ টাকা। এছাড়া কলকাতা ও দিল্লি থেকে বাসের সুবিধা প্রায় সব সময়ই পাবেন। তবে এসব বাসের ভাড়া ট্রেনের তুলনায় একটু বেশি।

কোথায় থাকবেন: আগ্রায় বিভিন্ন মানের ও দামের হোটেল রয়েছে। আপনি আপনার সামর্থের মধ্যে যে কোনো হোটেলে থাকতে পারবেন। এখানকার হোটেল গুলোর মধ্যে হোটেল গ্রালাক্সী, হোটেল ক্যালকাটা হোটেল,আগ্রা ডিলাক্স,অশোক হোটেল,দ্যা প্রেসিডেন্ট হোটেল,পার্ক ভিউ হোটেল অন্যতম। এসব হোটেলে ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় রাত্রি যাপন করা যাবে।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

কি খাবেন: এখানকার হোটেলগুলোতে ভারতীয়, চাইনিজ, বাঙ্গালীসহ বিভিন্ন দেশের খাবার পাওয়া যায়। তাছাড়া বিরিয়ানি ও মোগলাই নিরাপদ খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন যে কোন সময়। তবে আগেই দাম ঠিক করে কিনবেন অবশ্যই।

সর্তকতা থাকুন : কেবল শুধু আগ্রাতে নয় ভারতের যে কোন জায়গায় ভ্রমণে আপনাকে থাকতে হবে অত্যান্ত সর্তক। এখানে দালালদের দৌরাত্ব অনেক বেশি। বাস, সিএনজি, হোটেল, পার্কসহ যে কোন জায়গায়ই আপনার উপকারের নামে তারা ঘাড়ে চড়ে বসবে। আর আপনি একটু সর্তক না হলেই সব ক্ষেত্রে আপনাকে দিতে হবে অনেক বেশি টাকা।আবার  অন্যদিকে পুলিশ ও টোকাইরা সব সময়ই ওঁৎ পেতে বসে থাকবে আপনাকে বিপদে ফেলার জন্য। তাই সব সময় আপনাকে অবশ্যই সাথে রাখতে হবে আপনার ভিসাসহ সকল কাগজপত্র।

তবে কেউ যদি একটু বেশি সময় নিয়ে ভ্রমনকে আনন্দময় ও নিরাপদ করতে চান তাহলে নিতে পারেন প্যাকেজ ট্যুর অফার। এক্ষেত্রে কম টাকায় এবং কোন হয়রানি ছাড়াই ঘুরতে পারবেন সব আকর্ষনীয় স্থান। এজন্য বিভিন্ন প্যাকেজ ট্যুরের অফার দিচ্ছে বাংলাদেশের বিভ্ন্নি ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। ৫ থেকে ১০ দিনের প্যাকেজ ট্যুরে ঢাকা থেকে দিল্লী হয়ে আগ্রা পর্যন্ত ভ্রমণে সব সুবিধাসহ ঘুরতে পারবেন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। বাংলাদেশে বিডিট্যুরসট                      ট্যুরিস্টপ্লাস,আইআরএয়ারটিকেটিংএন্ডট্রাভেল,ট্রাভেলকুকলিমিটেড,ম্যাপলট্যুরসএন্ডট্রাভেলস্, লেক্সাসহলিডেজ,গ্যালাক্সীহলিডেজ,বাংলাদেশরিসোর্টএন্ডহোটেললিমিটেড,এ্যামাজিংহলিডেজ, কেয়ারীট্যুরসএন্ডসার্ভিসেসলিমিটেড,ইউনিকট্যুরসএন্ডট্রাভেলসসহ বেশ কয়েকটি এজেন্সি কাজ করে এ বিষয়ে।তবে খরচ খুব বেশি পার্থক্য হয় না। তবে কয়েকটা ট্রাভেলে খোজ নিলে দুই থেকে তিন হাজার টাকা কমেও যেতে পারবেন আপনার ।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *