তেঁতুলিয়ায় সাদামাটা মুস্তাফিজ

একতলা বাড়িটি দোতলা পর্যন্ত উঠেছে। নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। বাড়িতে বালু-সিমেন্টের ব্যাগ এর প্রমাণ। সামনে কলাগাছ, আমগাছ। সিঁড়ি ঘরে রাখা সম্প্রতি কেনা অ্যালিয়ন ব্র্যান্ডের খয়েরি রঙের প্রাইভেট কার। বাবা-মার জন্য কারটি কিনেছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। সরু কাঁচা রাস্তাটি ইট দিয়ে পাকা করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এই রাস্তা দিয়েই দূরদূরান্ত থেকে প্রতিবেশী, সাংবাদিক, ভক্তরা আসছেন ক্রিকেট তারকাকে দেখতে। কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে, কেউ বা হেঁটে, কেউ প্রাইভেটকারে করে।
 
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এখনো সেই লজ্জার রেশ রয়ে গেছে। সাতক্ষীরা শহর থেকে কালিগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামটির দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ভক্ত-সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা দিতে কার্পণ্য করেননি ২০ বছর বয়সী কাটার মাস্টার, যিনি কিছুদিন আগেও বিশ্বের কাছে ছিলেন অচেনা-অপরিচিত। অটোগ্রাফ নিতে হাত বাড়িয়ে দিলে তিনি কাউকেই নিরাশ করছেন না। স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে সব বয়সী ভক্ত তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করছেন।
 
সাতক্ষীরার অজপাড়াগাঁর এই ছেলে একদিন যে এত বড় মাপের ক্রিকেটার হয়ে উঠবেন তা কে জানত। স্কুলে লেখাপড়ায় যার মন ছিল না। কেবলই ক্রিকেট ছিল তাঁর দুনিয়া। গ্রামের নবজীবন ক্লাব ছিল তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা।
 
বাড়ির সামনে ভিড় করা সাংবাদিকদের সামনে মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিজের দেশে, নিজের মানুষের কাছে ফিরে এসে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। মায়ের কাছে ফিরে আমি আনন্দিত।’ কথাবার্তায় এখনো সরল-সহজ এ বাঁ-হাতি পেসার। সংবাদ মাধ্যমের সামনে কথা বলা নিষেধ আছে জানালেও তা মেনে চলতে পারলেন না। জানালেন, কবুতর পালন তাঁর অন্যতম শখ।
 
মুস্তাফিজের বাবা আবুল কাসেম বলেন, ‘আমার ছেলে এখন দেশের মানুষের সন্তান। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জাতীয় বীর ঘোষণা করায় আমরা গর্বিত।’
 
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলে, গ্রামের মানুষ স্কুল মাঠে বড় পর্দা টানিয়ে মুস্তাফিজের খেলা দেখেছে।
 
স্থানীয় তারালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল ইসলাম ছোট বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ছেলে মুস্তাফিজ। আমাদের জাতির গর্ব। তাঁর মতো মুস্তাফিজ ঘরে ঘরে আরো গড়ে উঠুক।’ তিনি বলেন, মুস্তাফিজ বিশ্বে বাংলাভাষার মর্যাদাও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
 
তেঁতুলিয়ার মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে মুস্তাফিজকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি না করেছেন।
 
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) কাঁপিয়েছেন বিশ্বসেরা পেসার। ১৬ ম্যাচে ১৭ নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
 
গত বছর ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে তো হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশের মাটিতে। দেশের এ সব সাফল্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল মুস্তাফিজের।
 
২০১৭ সালের ১ জুন অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও মুস্তাফিজ জয় করে নিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভক্তরা।
https://youtu.be/Rgi3WHXXW7k
Courtesy: NTV

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *