দ্যা মুঘল এম্পায়ারঃ রাইজ অফ দ্যা মুঘলস -পর্ব ৪
ভাগ্যহারা সুলতান বাবর অনেক ভাগ্যবিরম্বনার পর কাবুলে এসে থিতু হলেন। কিন্তু তাঁর মনে সবসময়ই ভারত জয়ের স্বপ্ন ছিলো। ভারত যেনো বাবরকে স্থির হয়ে বসতে দিতে চাইতো না। বাবর ভারত জয়ের জন্য শুধুমাত্র উপযুক্ত সুযোগ আর সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন। তা ছাড়া এত বড় একটা সাম্রাজ্য আক্রমণ করতে হলে উন্নত অস্ত্রশস্ত্রসমৃদ্ধ দক্ষ একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলা আবশ্যক। তিনি সেভাবেই তাঁর সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে লাগলেন।
যে কোন যুদ্ধেই প্রভাবক হিসেবে পাঁচটি মৌলিক ফ্যাক্টর সরাসরি কাজ করে। মোরাল ইনফ্লুয়েন্স বা নৈতিক প্রভাব, আবহাওয়া, যুদ্ধক্ষেত্রের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, সেনাপতিদের ব্যাক্তিগত দক্ষতা এবং সেনাবাহিনীর ডক্ট্রিন বা লজিস্টিক অবস্থা। সেনাবাহিনী তখনই কারো জন্য যুদ্ধ করবে, যখন প্রতিটি সেনা জানবে তারা কোন নৈতিক কারণেই তাদের জীবনের উপর বাজি ধরতে যাচ্ছে (মার্সেনারীদের কথা ব্যাতিক্রম)। আর তাই বাবরের জন্য ভারত আক্রমণের নৈতিক একটি কারন প্রয়োজন ছিলো। আর সত্যিকার অর্থে সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বাবরের কাছে যথাযথ একটি কারন ছিলোও। বাবর একজন তৈমুরীয় শাসক ছিলেন। তার পুর্বপুরুষ তৈমুর লং ১৩৯৮ সালে ভারতে অভিযান চালান। সিন্ধু নদ অতিক্রম করে তিনি তার অভিযান শুরু করে দিল্লী সালতানাতের সীমানা পর্যন্ত চলে আসেন। সে সময় দিল্লী সালতানাতের সিংহাসনে ছিলেন তুঘলক রাজবংশের সুলতানরা। তৈমুরের ভারত অভিযানে দুর্ভাগ্যবশত এতো বেশি রক্তপাত হয় যে, তৈমুর খুব ভালোভাবেই বুঝে যান তিনি সরাসরি কখনোই ভারতকে শাসন করতে পারবেন না। তাছাড়া ভারত শাসনে তার ইচ্ছা ছিলো এমন কথাও সমসাময়িক তথ্যসূত্রে পাওয়া যায় না। যাই হোক, ভারত ত্যাগের পূর্বে তৈমুর খিজির খান নামক তার অনুগত একজনের কাছে পাঞ্জাবের শাসনভার অর্পন করেন।
খিজির খান আবার সৈয়দ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে দিল্লী সালতানাত অধিকার করেন। পরবর্তীতে সৈয়দ রাজবংশের পতন ঘটায় আফগান লোদী রাজবংশ। আর তাই বাবর নিজেকে লোদী রাজবংশের বৈধ উত্তরাধীকারী দাবী করে ইব্রাহীম লোদীর কাছে পাঞ্জাব হস্তান্তর করতে পত্র পাঠান। খুব স্বাভাবিকভাবেই ইব্রাহীম লোদী বাবরের এই দাবীকে প্রত্যাখ্যান করেন। যা হবার তাই হলো! বাবর ভারতে অভিযান চালানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী একটি কারন পেয়ে গেলেন। তবে ভারত অধীকার করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী সেনাবাহিনী না থাকায় বাবর ভারত সীমান্তে ছোটখাট বেশ কিছু অভিযান পরিচালনা করেন- সেনাবাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে, সেই সাথে নিজেরও। এসব অভিযানেই ভারত আক্রমণের ক্ষেত্রে কান্দাহারের গুরুত্ব বুঝতে পেরে তিনি কান্দাহার দখল করে সেখানে নিজের শক্তিবৃদ্ধি করেন।
লোদী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বাহালুল লোদী। সৈয়দ বংশের শাসনের সময় তিনি ছিলেন সিরহিন্দের গভর্নর। ১৪৫১ সালে সৈয়দ বংশের শাসক আলাউদ্দীন আলম শাহের ইচ্ছায় তিনি রাজসিংহাসনে বসেন। এই সময় দিল্লী সালতানাত বেশ অগোছালো অবস্থায় ছিলো। আর তাই বাহালুল লোদীকে বেশিরভাগ সময়ই যুদ্ধ করে কাটাতে হয়েছিলো। ১৪৮৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পূর্বে লোদী সাম্রাজ্যকে তাঁর পুত্র ও আত্মীয়দের ভেতরে বন্টন করে যান। এবং এর সাথে সাথেই সম্ভবত তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করে ফেললেন। কারন অল্প কিছু সময়ের ভেতরে লোদী বংশের শাসকরা ক্ষমতা নিয়ে নিজেদের ভেতরে যুদ্ধে জড়িয়ে পরবেন।
বাহালুল লোদীর পর তাঁর দ্বিতীয় পুত্র সিকান্দার লোদী “সিকান্দার শাহ” খেতাব নিয়ে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহন করেন। আর বাবরের প্রতিদ্বন্দ্বী ইব্রাহীম খান লোদী ছিলেন সিকান্দার শাহের জ্যৈষ্ঠ পুত্র। ইব্রাহীম লোদীর শাসনামলে এসে লোদী বংশের অন্তর্দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারন করে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিলো যে, ইব্রাহীম লোদীর আফগান আমিররা ইব্রাহীম লোদীর কাছে কেবলমাত্র দিল্লী আর তাঁর ছোটভাই জালালউদ্দীন লোদীর কাছে জৈনপুরের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়ে বাকী সমগ্র লোদী সাম্রাজ্যকে নিজেদের ভেতরে ভাগ করে নেয়ার ষড়যন্ত্র করে ফেলে! ব্যাক্তিগত জীবনে ইব্রাহীম লোদী দুঃসাহসিক ছিলেন। রাজ্যের এই ক্রান্তিলগ্নে এসে তিনি বেশ কঠোরপন্থা অবলম্বন করেন। যার ফলে তাঁর আফগান আমিররা তাকে অপছন্দ করতে শুরু করে। তাদের উপর কর্তৃত্ব বজায়ের চেষ্টা চালাতে গেলে তারা বিদ্রোহ করে। ইব্রাহীম লোদী নিষ্ঠুরভাবে তাদের বিদ্রোহ দমন করেন। কিন্তু এই নিষ্ঠুরতার ফলে আবার নতুন করে বিদ্রোহের জন্ম নেয়। এর ভেতরে ইব্রাহীম লোদীও বেশ কিছু ভুল করে ফেলেন। তিনি বেশ কিছু রাজনৈতিক হত্যাকান্ড ঘটান। এমনকি ঘুমন্ত অবস্থায় হাসান খান নামক এক আমীরকে হত্যা করা হলে বাকী অবাধ্য আমীররা বুঝে যান তাদের সময় শেষ! তারা যে কোন মূল্যে ইব্রাহীম লোদীর পতন ঘটাতে একমত হয়। ইব্রাহীম লোদীর মাত্রারিক্ত নিষ্টুরতার স্বীকার হয়ে বিশ্বস্ত আমীররাও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যান!
এদিকে লাহোরের গভর্নর দৌলত খান লোদী বিদ্রোহ করে পরিস্থিতি আরো ঘোলাতে করে ফেলেন। কিন্তু ইব্রাহীম লোদীর কাছে পরাজিত হয়ে তিনি লাহোর ত্যাগ করেন। মিত্রদের কাছ থেকেও কোন সাহায্য না পেয়ে তিনি কাবুলের সুলতান বাবরের কাছে নিজের পুত্র দিলাওয়ার খানকে পাঠান। দিলাওয়ার খান তার পিতার পক্ষে থেকে বাবরকে ভারত অভিযানের আমন্ত্রণ জানান! দৌলত খান লোদী বাবরের কাছে পাঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়ে দিল্লী দখলে বাবরের সহায়তা কামনা করেন। এমনকি তিনি বাবরকে নিজের অধীরাজ হিসেবেও স্বীকার করে নেন। বাবরের সাথে ভারত আক্রমণ নিয়ে চুক্তি করতে আগ্রহী ছিলেন ইব্রাহীম লোদীর চাচা আলম খান আলাউদ্দীনও। মজার ব্যাপার হচ্ছে মেবারের রাজপুত রাজা রানা সংগ্রাম সিংহও একই বার্তা দিয়ে বাবরকে ভারত অভিযানে আমন্ত্রণ জানান এবং বাবরে অভিযানের সময় ভারত ভূখন্ডের ভেতর থেকে বাবরকে সহায়তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন! রানা সংগ্রাম সিংহের ধারনা ছিলো বাবর ভারত আক্রমণ করে ধনসম্পদ নিয়ে কাবুল ফিরে যাবেন। আর বাবরের আক্রমণের ফলে দুর্বল লোদী সাম্রাজ্যকে পরাজিত করে তিনি সমগ্র ভারতের উপরে তিনি আধিপত্ত বিস্তার করবেন। কিন্তু বাস্তবতা রানা সংগ্রাম সিংহের হিসাবের ধারে কাছে দিয়েও যায় নি!
বাবর দৌলত খান লোদীর প্রস্তাবে সাড়া দেন কিন্তু ইব্রাহীম লোদীর আত্মীয় হওয়ায় বাবরের ব্যাক্তিগত ইচ্ছা ছিলো আলম খানকে সিংহাসনে বসানো। দৌলত খান লোদীকে সিংহাসনে বসানোর কোন ইচ্ছাই বাবরের ছিলো না। কারন এই ধুর্ত দৌলত খান ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার বাবরের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করে ফেলেছিলো! কিন্তু ভারতের অন্যান্য নেতৃস্থানীয় আমিররা আলম খানের বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলে বাবর নিজেই দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
১৫২৫ সালে নভেম্বরের শেষের দিকে বাবর পঞ্চম ও শেষবারের মতো ভারতে তাঁর অভিযান পরিচালনা করেন। ঝিলাম নদী অতিক্রমের সময় বাবরের সাথে লাহোরের সেনাদের একটি অংশ এসে যোগ দেয়। ১০ ডিসেম্বর বাবর পেশোয়ারে প্রবেশ করেন। এরপর বাবর রাভী নদী অতিক্রম করে পাঞ্জাবে পৌছান। এখানে তিনি মুসলিম জানজুয়া রাজপুতদের কৌশলগত সমর্থন অর্জন করেন।
পাঞ্জাবে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে বাবর সিন্ধু নদ অতিক্রম করেন। এ সময় তাঁর সাথে মাত্র ১২ হাজারের একটি অশ্বারোহী সেনাবাহিনী ছিলো। বিশাল ভারত আক্রমণের জন্য সত্যিই খুব ছোট আকারের সেনাবাহিনী। কিন্তু এই বাহিনীর প্রতিই বাবরের ছিলো প্রবল আত্মবিশ্বাস। বাবরের সেনাবাহিনী তাদের প্রতি সুলতানের আত্মবিশ্বাসে কখনই চিড় ধরতে দেয় নি!
সিন্ধু অতিক্রমের পর বাবর সিরহিন্দ হয়ে আম্বালার পথে যাত্রা করেন। বাবরকে বাঁধা দিতে হিসার ফিরোজার হামিদ খানের নেতৃত্বে ইব্রাহীম লোদী একটি বাহিনী পাঠান। আম্বালায় পৌছানোর পর বাবর এই বাহিনী সম্পর্কে জানতে পারেন। ইব্রাহীম লোদী এ সময় মূল সেনাবাহিনী নিয়ে দিল্লীর উত্তর দিকে অবস্থান করছিলেন। বাবর শাহজাদা মীর্জা হুমায়ুনের নেতৃত্বে একটি বাহিনীকে হিসার ফিরোজার দিকে যাত্রা করতে নির্দেশ দেন। হিসার ফিরোজা থেকে ২৫/৩০ মাইল দূরে হামিদ খানের সাথে মীর্জা হুমায়ুন মুখোমুখি হন। অল্প সময়ের মধ্যেই শাহজাদা মীর্জা হুমায়ুন যুদ্ধে জয়ী হন। ১০০-২০০ যুদ্ধবন্দী আর ৮ টি হাতি আটক করা হয়। যুদ্ধের ক্ষতিপূরন হিসেবে ২ কোটি রুপী আদায় করে হুমায়ুন মীর্জা পিতার সাথে দেখা করেন। এ সময় হুমায়ুনের বয়স ছিলো মাত্র ১৭ বছর!
হিসার ফিরোজায় হুমায়ুনের জয়লাভের পর বাবর দক্ষিণ দিকে তাঁর অগ্রযাত্রা বজায় রাখেন। বাবরকে বাঁধাদানের জন্য ইব্রাহীম লোদী আবারো ৬ হাজার সৈন্যের একটি সেনাবাহিনী পাঠান। এই বাহিনীকে মোকাবেলার জন্য বাবর জুনায়েদ মির্জা বারলাস ও সুলতান মির্জার নেতৃত্বে একটি বাহিনী পাঠান। ইব্রাহীম লোদী সত্যিকার অর্থেই দুর্ভাগা ছিলেন। কারন অতর্কিত আক্রমণে ইব্রাহীম লোদীর এ বাহিনীটিও পরাজিত হয়।
বাবর সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। ১৫২৬ সালের ১২ এপ্রিল তিনি উত্তর-পশ্চিম ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের “পানিপাত” নামক জেলার একটি শহরে যেয়ে পৌছান। জায়গাটি ইতিহাসে পানিপথের প্রান্তর নামে পরিচিত। বাবরের যাত্রাপথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাহিনী এসে তাঁর বাহিনীতে যোগ দেয়। পানিপথের প্রান্তরে এসে পৌছানোর সময় বাবরের সেনাবাহিনীর আকার ২৫০০০ এ যেয়ে পৌছায়। ইব্রাহীম লোদী এ সময় বাবরের অবস্থান থেকে মাত্র প্রায় ১২ মাইল দূরে অবস্থান করছিলেন। বাবর সেনাপতিদের সাথে আলোচনা করে পানিপথের প্রান্তরেই ইব্রাহীম লোদীকে মোকাবেলা করতে সিদ্ধান্ত নেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাবর তাঁর সারা জীবনে অসংখ্য যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন কিংবা পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু সুশৃংখল কোন সেনাবাহিনী বা সত্যিকার অর্থে কোন সাম্রাজ্যকে মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা বাবরের ছিলো না। আর তাই পানিপথের এই যুদ্ধটি বাবরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ন ছিলো।
বাবরকে বাঁধা দেয়ার জন্য ইব্রাহীম লোদী প্রায় এক লাখের একটি সেনাবাহিনীর সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। সাথে ছিলো প্রায় ১০০০ এর মত হাতি। প্রাচীন কাল থেকেই হাতি ভারতীয় যুদ্ধগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। হাতির বিশাল আকার আর উদ্ভট চিৎকারে বিপক্ষ দলের ঘোড়াগুলো ঘাবড়ে যেতো। কোন মতেই ঘোড়াগুলোকে হস্তীবাহিনীর সামনে নেয়া যেতো না। যার ফলে শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতো। হস্তীবাহিনীর পেছনে অশ্বারোহী আর পদাতিকরা থাকতো। হস্তীবাহিনীর কাজ শেষ হলে অশ্বারোহী আর পদাতিকরা শত্রুর উপরে ঝাপিয়ে পরতো। আর এভাবেই আক্রমণকারী শত্রুকে পরাজিত করা ছিলো চিরাচরিত ভারতীয় যুদ্ধের রীতি। একদিকে ইব্রাহীম লোদীর সেনাবাহিনীর বিরাট আকার বাবরের জন্য সত্যিকার অর্থেই চিন্তার ব্যাপার ছিলো। তার উপরে আবার আছে হস্তিবাহিনীর উপদ্রব!
আর তাই ইব্রাহীম লোদীকে মোকাবেলার জন্য বাবরকে উন্নত ট্যাকটিক্সের উপরে নির্ভর করতে হয়েছিলো। বাবরের প্রাথমিক কৌশলটি ছিলো অনেকটা অটোমানদের মতো। তুর্কী পদ্ধতিতে তিনি গরু আর ঘোড়ার গাড়িগুলোকে চামড়ার সাহয্যে পাশাপাশি বেঁধে বাঁধা তৈরি করেন। গাড়িগুলোর মাঝে আবার অনেকটা জায়গাজুড়ে ফাঁদ পাতা থাকতো। এসব ফাঁদের পেছনে বাবর তাঁর সৈন্যদের মোতায়েন করেন। অটোমান সেনাবাহিনী গাড়িগুলোকে বাঁধতো লোহার চেইনের সাহায্যে। এই কৌশলকে বলা হতো “আরাবা”।
তীরন্দাজ আর পদাতিক সৈন্যদের মাঝেও বাবর একটি সরুপথ খোলা রাখেন, যেনো যুদ্ধের সময় বিপক্ষদলের সৈন্যরা এই সরুপথে এসে আটকে যায়। হস্তীবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য বাবর নিজ বাহিনীর অবস্থানের সামনে একটি পরিখা খনন করান। পরিখাটি গাছ-লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখেন যেনো দূর থেকে বোঝা না যায়। আর পরিখার ডান ও বামপাশ বরাবর নিয়োজিত করেন একদল সৈন্যকে, যাদের মূল কাজ ছিলো আক্রমণ শুরু হলে যুদ্ধক্ষেত্রের পার্শ্বদেশ দিয়ে সামনে এগিয়ে ইব্রাহীম লোদীর বাহিনীর পেছন দিক দিয়ে ঘিরে আক্রমণ করা।
ভারতবর্ষে বাবর একটি নতুন অস্ত্র নিয়ে আসেন, যাকে আমরা এখন কামান নামে চিনি। বাবরের নিয়ে আসার পূর্বে ভারত কখনো কামান দেখে নি। ভারতবাসীর কামানের গর্জন শোনা ছিলো নতুন এক অভিজ্ঞতা। তবে এটাও সত্য, বাবরের সময়ের কামানগুলোর কার্যকারীতা খুব অল্প ছিল। এসব কামানের রেঞ্জ অল্প ছিলো, গোলার বিষ্ফোরণ ক্ষমতা অল্প ছিলো। একটি গোলা ছোড়ার পর আরেকটি গোলা ছোড়ার জন্য পুনরায় কামানকে প্রস্তুত করতেও অনেক সময় লেগে যেতো। কিন্তু তাও বাবরের কামান একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্রে এই যুদ্ধে তার কার্যকারীতা প্রকাশ করে। বাবর তাঁর কামানগুলো সংগ্রহ করেছিলেন উসমানীয় সুলতানের কাছ থেকে। ইব্রাহীম লোদীর কাছে যেহেতু কোন কামান ছিলো না, তাই বাবর নিশ্চিতে আরাবা কৌশলের নিরাপত্তায় তাঁর কামানগুলোকে মোতায়েন করে দেন। বাবরের কামানগুলোকে পালটা আক্রমনের জন্য ইব্রাহীম লোদীর কোন আর্টিলারী ব্যাকআপ ছিলো না বিধায় কামানগুলো কোনোরুপ বাঁধা ছাড়াই কামানগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে।
পানিপথের এ যুদ্ধে বাবর প্রায় ২০-২৪ টি কামান ব্যাবহার করেছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইব্রাহীম লোদীর সৈন্যরা দূর থেকে কামানগুলোকে দেখে উন্নত ধরনের তীর-ধনুক টাইপ অস্ত্র ভেবেছিলো!
এই যুদ্ধে আরেকটি নতুন অস্ত্র বাবর ব্যাবহার করেন। কামানের মতোই দেখতে কিন্তু আকারে ছোট বন্দুক জাতীয় এক ধরনের অস্ত্র তিনি এ যুদ্ধে ব্যাবহার করেছিলেন। এই বন্দুককে বলা হতো “ম্যাচলক”। তবে বাবরের সৈন্যরা ম্যাচলক অপেক্ষা তীর-ধনুকে বেশ স্বচ্ছন্দ ছিলো। কারন ধনুক থেকে খুব সহজে আর বেশি মাত্রায় তীর নিক্ষেপ করা যেতো, যা প্রথম দিকের ম্যাচলক বন্দুকে করা যেতো না। বাবরের আর্টিলারী কোরের দায়িত্বে ছিলেন অটোমান ওস্তাদ আলী কুলি খান। আর ম্যাচলকধারী সৈন্যদের নেতৃত্বে ছিলেন অটোমান মোস্তফা রুমি।
যুদ্ধের শুরুতেই বাবর তাঁর বাহিনীকে মোট ছয়টি ভাগে ভাগ করে ফেলেন। মূল বাহিনী, মধ্য বাহিনী, ডানবাহু, বামবাহু, অগ্রবর্তী বাহিনী ও রিজার্ভ বাহিনী। সেনাবাহিনীর অবস্থানের আশেপাশের এলাকার নিরাপত্তা বজায়ের জন্য ছিলো একটি বিশেষ প্রহরী বাহিনী। ডানপাশের বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন শাহজাদা হুমায়ুন মির্জা। বাম অংশের নেতৃত্বে ছিলেন বাবরের আত্মীয় সুলতান মির্জা। ডান এবং বাম অংশকে সহায়তা করার জন্য বাবর আরো দুটি ক্ষুদ্র বাহিনীকে রিজার্ভ হিসেবে রাখেন। পানিপথে অবস্থানের পুরোটা সময় মুঘল সেনাবাহিনী যুদ্ধের ফর্মেশনে থাকতো।
মূল যুদ্ধ শুরুর আগে দুই বাহিনী প্রায় ৭ দিন মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ কাউকে আক্রমণ করছিলো না। অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় বাবর নিজে প্রথমে আক্রমণ শুরু করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। তিনি বিভিন্নভাবে ইব্রাহীম লোদীকে আক্রমণ শুরুর জন্য প্ররোচনা দিতে থাকেন। কিন্তু ইব্রাহীম লোদীও প্রথমে আক্রমণ না করার ব্যাপারে অনড় থাকেন। আসলে ইব্রাহীম লোদীর জন্য এই যুদ্ধটি তেমন গুরুত্বপূর্ন কোন যুদ্ধ ছিলো না। কারন এই যুদ্ধে বিজয়ী হলেও ইব্রাহীম লোদীর অর্জন বলতে তেমন কিছুই হতো না। এ যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীর একমাত্র লক্ষ্য ছিলো বাবরকে পরাজিত করে তাঁর বাহিনীকে কাবুলের দিকে ঠেলে দেয়া। যেনো এই আপদকে বিদায় করতে পারলেই তিনি বেঁচে যান!
৭ দিন অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করেও মূল যুদ্ধ শুরু না হওয়ায় বাবর ইব্রাহীম লোদীকে আবারো প্ররোচিত করতে একটি ছোট আক্রমণ পরিচালনা করেন। এই উদ্দ্যেশ্যে বাবর ৪/৫ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনীকে ১৯/২০ এপ্রিল রাতে ইব্রাহীম লোদীর শিবিরের নিকট পাঠান। কিন্তু ইব্রাহীম লোদীকে প্ররোচনা দিতে গিয়ে বাবরের এই বাহিনীটি ব্যার্থ হয়ে মূল সেনাবাহিনী থেকে আলাদা হয়ে যায়। সফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখে ইব্রাহীম লোদী তাঁর মূল বাহিনী নিয়ে সামনে এগিয়ে আসেন। বাবর তাঁর পুত্র হুমায়ুনকে অগ্রবর্তী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সেনাদের উদ্ধারে পাঠিয়ে নিজে মূল বাহিনী নিয়ে সামনে এগিয়ে যান।
ইতোমধ্যেই ইব্রাহীম লোদী বাবরের সেনাবাহিনীর ডান অংশের উপরে আক্রমণ পরিচালনা করেন। বাবরের রিজার্ভ সৈন্যরা ডানবাহুকে সহায়তা করে আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। হঠাৎ করে থেমে যাওয়ায় লোদী বাহিনীর পেছন থেকে সামনের অংশে চাপ বেড়ে যায়, ফলে সামনের সৈন্যরা অসুবিধায় পরে যাচ্ছিলো। আর এদিকে বাবর তাঁর সেনাদের নিয়ে গাড়ির ফাঁদের মাঝ থেকে ইব্রাহীম লোদীর বাহিনীর উপরে ক্রমাগত আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন। ফলাফল এই দাঁড়ায়, প্রায় বিনা প্রতিরোধে লোদী সৈন্যরা মারা যেতে থাকে।
পানিপথের এই যুদ্ধে বাবর তুর্কী “তুগুলামা” কৌশলের সফল প্রয়োগ ঘটান। কৌশলটি হচ্ছে- গোটা সেনাবাহিনীকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে আক্রমণ পরিচালনা করা। বিপক্ষদলের আক্রমণের মুখে পিছু হটে পালানোর ভান ধরে হঠাতই ঘোড়া থেকে মুখ ঘুড়িয়ে তীর ছুড়ে মারা। এবং সেই সাথে শত্রুবাহিনীকে চারিদিক থেকে ঘিড়ে ধরা। বাবরের তুগুলামা ও আরাবা কৌশলের সফল প্রয়োগে ইব্রাহীম লোদীর বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে উঠে, কারন ইতিপূর্বে তারা এই কৌশলের সাথে পরিচিত ছিলো না।
ইতোমধ্যেই পরিখার দুইপার্শ্বে নিয়োজিত বাহিনী, যাদের মোতায়েন করা হয়েছিলো মূল যুদ্ধ এড়িয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের দুইপাশ দিয়ে এগিয়ে যেয়ে ইব্রাহীম লোদীর বাহিনীর পেছনের অংশে আক্রমণ চালানোর জন্য, তারা তাদের কাজ শুরু করে দেয়। একই সাথে লোদী বাহিনীর উপর তীব্রমাত্রায় তীরবর্ষণ চলতে থাকে। যুদ্ধের এ পর্যায়ে কার্যত ইব্রাহীম লোদীর বাহিনী মুঘল সৈন্যদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে যায়। সত্যিকার অর্থে এই কৌশলী তীব্র আক্রমণে ইব্রাহীম লোদী পাল্টা কোন আক্রমনের সক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেন।
মুঘল সৈন্যরা ইব্রাহীম লোদীর বাহিনীকে তিনদিক থেকেই ঘিরে ধরলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ইব্রাহীম লোদী তাঁর হস্তিবাহিনীকে সামনে এগিয়ে দেন। কিন্তু হস্তিবাহিনী পরিচালনা করেও তিনি তেমন সুবিধা করতে পারেন নি। কারন হস্তীবাহিনী পরিচালনার সাথে সাথেই বাবরের কামানগুলো একসাথে গর্জে উঠে। ভারতীয় এ হাতিগুলো কোনোদিনই কামানের বিকট গর্জন শুনে নি। কামানের গর্জনে তারা ভয় পেয়ে ফর্মেশন ছেড়ে ছোটাছুটি শুরু করতে থাকে আর নিজেদের সৈন্যদেরই পিষ্ট করতে থাকে। যদিও কামানের গোলাগুলো তেমন বিষ্ফোরণক্ষম আর কার্যকর ছিলো না, কিন্তু কামানের শব্দই গোলার থেকে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়। কামানের এই বিকট শব্দের কারণেই ইব্রাহীম লোদীর হস্তিবাহিনী বিধ্বস্ত হয়।
যুদ্ধক্ষেত্রে ইব্রাহীম লোদীর বাহিনী মুঘল সৈন্যদের সামনে অসহায় হয়ে পরেছিলো। এর আসল কারনটা অবশ্য টের পাওয়া যায় আরো পরে। প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ শুরুর কিছুক্ষনের (৩ ঘন্টা) ভেতরেই ইব্রাহীম লোদী কামানের গোলায় আহত হয়ে মারা যান, লোদীর সেনাপতি বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সৈন্য পরিচালনার কোন চেষ্টা বা তাদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করার কোন চেষ্টা না করেই পালিয়ে যায়। এর কারনও বোঝা যায় যুদ্ধ শেষের পর। বেতন বাকী থাকায় ইব্রাহীম লোদীর সৈন্য ও জেনারেলরা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলো। আর তাই তারা এই যুদ্ধে তেমন আগ্রহী ছিলো না। ইতোমধ্যেই যুদ্ধ শুরুর আগেই লোদীর বহু সৈন্য আর জেনারেলরা তাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়, আর বাহিনীর উল্ল্যেখযোগ্য সৈন্য যুদ্ধে অংশই নেয় নি!
ফলাফল অবশেষে এই দাঁড়ায় যে, পানিপথের এই যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদী পরাজিত হলেন, আর বাবরের সামনে ভারতের ভূ-খন্ডগুলো চিরদিনের জন্য খুলে গেলো।
মূলত এই যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীর পরাজয়ের কারণ ছিলো বাবরের উন্নত ট্যাকটিক্সের জবাবে উন্নত ট্যাকটিক্সের প্রয়োগ ঘটাতে না পারা, উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, সেনাদের মনোবল আর ত্যাগ করার মানসিকতার অভাব। অন্যদিকে বাবরের সেনাবাহিনী এসব স্বীমাবদ্ধতা থেকে সম্পূর্নরুপে মুক্ত ছিলো, মুঘল সেনাবাহিনীর দক্ষতা আর আনুগত্য ছিলো প্রশ্নাতীত। উপরন্তু পানিপথের এই যুদ্ধে বাবর টেরেইন বা যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থানগত প্রত্যেকটি সুবিধার সফল প্রয়োগ ঘটান, যে ক্ষেত্রে ইব্রাহীম লোদী চরম ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সেই সাথে আকারে বড় হওয়ার কারনে বাহিনীর উপরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিলো বেশ দুর্বল। এই দুর্বলতা পুষিয়ে নেয়া যেতো যদি তাঁর অফিসাররা নিবেদিতপ্রান হয়ে যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ করতো। কিন্তু তারা তা করেন নি। আসলে ইব্রাহীম লোদীর প্রতি সত্যিকার অর্থে বিশ্বস্ত সৈন্যের অভাব ছিলো খুব বেশি। যার কারনে ১ লাখের একটি সেনাবাহিনী নিয়েও শুধুমাত্র আন্তরিকতা আর আনুগত্যের অভাবে দুর্বল একটি বাহিনীর কাছে ইব্রাহীম লোদী হেরে যান। তারপরেও ইব্রাহীম লোদী যদি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আর কিছুক্ষণ যুদ্ধ পরিচালনায় সক্ষম হতেন, তাহলে হয়তো পানিপথের প্রথম যুদ্ধের ফলাফল সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো। কারন বাবর ইতিমধ্যেই তাঁর সবগুলো রিজার্ভ ফোর্সকে যুদ্ধে মোতায়েন করে ফেলেছিলেন, আর অন্যদিকে ইব্রাহীম লোদী তাঁর মূল সেনাবাহিনীর একটা বিরাট অংশকে যুদ্ধে মোতায়েনই করতে পারেন নি, অন্য অংশগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য!
যুদ্ধ শেষে ইব্রাহীম লোদীর মৃতদেহ অন্যান্য সৈন্যদের সাথে বিকেলের দিকে খুঁজে পাওয়া যায়। ইব্রাহীম লোদীর বীরত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর নিহত হবার স্থানেই তাঁকে দাফন করা হয়।
পানিপথের এই যুদ্ধে মুঘল সেনাবাহিনীর প্রায় ৪০০০ সৈন্য নিহত হন। অপর দিকে বাবরনামা অনুসারে ইব্রাহীম লোদীর ১৫-২০ হাজার সৈন্য এ যুদ্ধে জীবন হারান। তবে ভারতীয়দের হিসাবে এ যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৪০-৫০ হাজার।
পানিপথের যুদ্ধে জয়ী হয়ে বাবর সোজা দিল্লী অভিমুখে যাত্রা করেন। ২৭ এপ্রিল দিল্লীতে তাঁর নামে খুতবা পাঠ করা হয়। ৪ মে হুমায়ুন আগ্রা শহরটি অবরোধ করেন। দ্রুতই আগ্রার পতন ঘটে। এরপর একে একে জৈনপুর, কালপি ও জব্বলপুরে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
পানিপথের প্রান্তরে ভাগ্যবিরম্বনায় জর্জরিত কাবুলের সুলতান জহিরুদ্দীন মুহাম্মদ বাবর এবং দিল্লীর লোদী রাজপরিবারের ইব্রাহীম খান লোদীর মধ্যকার এ যুদ্ধটি পানিপথের প্রথম যুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি পায়। এ যুদ্ধের পর অখ্যাত পানিপথের এ প্রান্তরটি রাতারাতী ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে যায়। কারন ইব্রাহীম লোদী এবং বাবরের মধ্যকার এ যুদ্ধটি ছিলো ইতিহাসের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া একটি যুদ্ধ। যদি এ যুদ্ধে বাবর পরাজিত হতেন, বা পানিপথের যুদ্ধ নামে কোন যুদ্ধ কখনো সংগঠিতই না হতো, তাহলে হিন্দুস্থানের ইতিহাস নিশ্চিতভাবেই অন্যরকম হত। কিন্তু পানিপথের যুদ্ধটি হয়েছিলো এবং এ যুদ্ধে বাবর জয়লাভ করেছিলেন। বাবর নাগাল পেয়েছিলেন তাঁর স্বপ্নের হিন্দুস্থানের। যেখানে তিনি তাঁর ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য রেখে যাবেন উন্নয়নের অপেক্ষায় থাকা সমৃদ্ধিশালী একটি সাম্রাজ্যকে। তাঁরা নিজেদের মতো করে ভারতের ভূ-খন্ডগুলোকে সাজাবেন। বাবর এবং তাঁর বংশধরদের বীরত্বের কথা কিংবদন্তীর ন্যায় ছড়াতে থাকবে।
মুঘল ঘোড়াগুলো ভারতের উন্মুক্ত মাটিতে ছুটে বেড়ানোর জন্য অস্থিরভাবে পায়চারী করছে।…..
Author: Masud Ferdous Eshan
তৃতীয় পর্বঃ
১। https://goo.gl/7NZN9x (ফেসবুক মোবাইল ভার্সন)
২। https://goo.gl/FyhpZP (ফেসবুক ওয়েব ভার্সন)
বিশেষ কৃতজ্ঞতায়ঃ মেজর মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পিএসসি (অনুবাদক- আধুনিক দৃষ্টিকোণে সান জু’র আর্ট অব ওয়ার)