দ্যা মুঘল এম্পায়ারঃ রাইজ অফ দ্যা মুঘলস -পর্ব ২

0
দ্যা মুঘল এম্পায়ারঃ রাইজ অফ দ্যা মুঘলস -পর্ব ২
‘আমি জেগে উঠলে ভয়ে থরথর করে কেঁপে উঠবে পৃথিবী।’

চমৎকার সুন্দর একটি জেড পাথরের সমাধিতে আরবী হরফে খোদাই করা রয়েছে এই সতর্কবানীটি। সমাধির ভেতরে শুয়ে আছেন দ্বিগ্বীজয়ী তৈমুর লং। কারো কাছে তিনি বর্বর আর নিষ্ঠুর এক জেনারেল, আবার কারো কাছে মহান আমীর তৈমুর লং। আমাদের মূল আলোচনা তৈমুর লং-কে নিয়ে না, তাই এই প্রসংগ আপাতত তোলাই থাকুক।
তৈমুর বিন তারাগাই বারলাস জন্মগ্রহন করেন ১৩৩৬ সালে। ছোটবেলায় ঘোড়ার পিঠ থেকে পরে গিয়ে একটি পা খোঁড়া হয়ে যায় তাঁর। আর তাই তিনি পরিচিত হন তৈমুর লং নামে, যার অর্থ খোঁড়া তৈমুর। তবে খোঁড়া হলেও দুর্ধর্ষ আর বুদ্ধিমান এই জেনারেল তাঁর প্রবল শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিয়ে একে একে দখল করে নেন আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে শুরু করে মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অংশ যার মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এমনকি চীনের কাশগর পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠা করেন তৈমুরীয় (বা তিমুরীয়) রাজবংশ। ১৪০৫ সালে তৈমুর লং মারা গেলে তাঁর এই বিশাল সাম্রাজ্য ধরে রাখার মত একক যোগ্যতাসম্পন্ন কেউ ছিলো না। ভেঙ্গে পরে বিশাল তৈমুরীয় সাম্রাজ্য। তবে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত এই রাজবংশের কোনো না কোনো শাসক পৃথিবীর কোনো না কোনো অঞ্চল শাসন করেছেন।তৈমুর লং তো মারা গেলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পৌত্র আবু সাঈদ মির্জা বিশাল তিমুরীয় সাম্রাজ্যের হাল ধরেন। আবু সাঈদ মির্জার মৃত্যুর পর তিমুরীয় সাম্রাজ্য তাঁর পুত্রদের মাঝে ভাগ হয়ে যায়। তাঁর তৃতীয় পুত্র ওমর শেখ মির্জা নিয়ন্ত্রণ লাভ করেন ফারগানার। প্রিয় পাঠকগন, আমাদের কবুতর প্রেমী সুলতানের কথা মনে আছে তো, যিনি ভূমিধ্বসে কবুতরসহ ছাদ ভেঙ্গে নদীতে পরে মারা যান? হ্যা, তিনিই হচ্ছেন আবু সাঈদ মির্জার এই তৃতীয় পুত্র ওমর শেখ মির্জা।১৪৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী, রোজ বৃহস্পতিবার। হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৭ মুহাররম, ৮৮৮ সাল।
এই দিনে ফারগানা উপত্যকার আন্দিজানে একটি শিশু জন্মগ্রহন করে। পিতা ওমর শেখ মির্জা তো খুবই খুশি, আর তাই তিনি আয়োজন করেন বিশাল রাজকীয় ভোজ। মাওলানা মুনির মারগিলানিকে নবজাতক শিশুটির নাম রাখার জন্য অনুরোধ করেন ওমর শেখ মির্জা। মাওলানা মুনির মারগিলানি তাঁকে হতাশ করেন নি। তিনি শিশুটির নাম রাখলেন জহিরুদ্দীন মুহাম্মদ বাবুর।

ওমর শেখ একজন সত্যিকারের তিমুরীয় পরিচয় হিসেবে নিজের নামের শেষে মির্জা খেতাবটি ব্যাবহার করতেন। বাবরের মায়ের নাম কুতলুগ নিগার খানম। তিনি মোগলিস্তানের সুলতান ইউনূস খানের কন্যা চিলেন। ইউনূস খান আবার চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। আর তাই বাবরের ধমনীতে বইছে বিশ্ব শাসন করা দুই দুইটি রাজবংশের রক্ত। শীঘ্রই এই রক্ত তাঁকে অস্থির করে তুলবে।

বাবরের শৈশব কাটে ফারগানার উপত্যকায় ঘোড়া ছুটিয়ে আর যুদ্ধের বিভিন্ন কলাকৌশল শিখতে শিখতে। একমাত্র পুত্র হিসেবে পিতা ওমর শেখ মির্জা বাবরের ভেতরে কোনো কমতি রাখার ব্যাপারে মোটেও ইচ্ছুক ছিলেন না। ওমর শেখ মির্জা তাঁর মহান পূর্বপুরুষ তৈমুরের কথা ভাবতেন সবসময়। তৈমুরের মৃত্যুর পর তাঁর বিশাল সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন তাঁকে সবসময়ই কষ্ট দিতো। তিনি সবসময় চাইতেন সেই বিশাল সাম্রাজ্যকে আবার তার স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তিনি ছিলেন অপারগ। তিনি নিজে সফল না হলেও তাঁর পুত্র বাবরের ভেতরে কিন্তু তিনি ঠিকই সেই স্বপ্ন ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। বাবরও তাঁর পূর্বপুরুষ তৈমুর লং-এর ন্যায় এক মহান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন।

ওমর শেখ মির্জার কবুতর পালনের শখ ছিলো খুব। আকশী দুর্গের ছাদের এক কোণে কবুতরের জন্য খোপ বানিয়েছিলেন তিনি। দুর্গের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে নদী। ওমর শেখ মির্জার নিজ তত্বাবধায়নে কবুতরদের দেখাশোনা করা হতো। অন্য দিনের মতোই সেদিনও তিনি কবুতরদের দেখাশোনা করতে ছাদে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওমর শেখ মির্জার দুর্ভাগ্য। হঠাত ভুমিধ্বসে কেপে উঠলো আকশী দুর্গ। ছাদ ভেঙে কবুতর সহ নদীতে পরে তিনি মারা গেলেন। বাবরের বয়স তখন মাত্র ১২। হিসাব অনুযায়ী বাবরেরই পিতার শুন্য সিংহাসনে বসার কথা। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই ১২ বছর বয়স সিংহাসন দখলের জন্য ভয়াবহ মাত্রার বিপজ্জ্বনক। কে মাত্র ১২ বছর বয়সী এক কিশোরের আদেশ-নির্দেশগুলো বিনা প্রশ্নে মাথা পেতে মেনে নিতে চাইবে?!

পিতার মৃত্যুর পর বাবর সিংহাসন দখলের জন্য আন্দিজান থেকে দ্রুত প্রাসাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। সাথে একরাশ অনিশ্চয়তা। কারন ইতিমধ্যেই তিনি প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কথা জেনে ফেলেছেন। ওমর শেখের মির্জার নেতৃস্থানীয় অনেক সভাসদ বাবরকে সিংহাসনে বসাতে চাচ্ছে না। কাজেই এই অনিশ্চয়তার ভেতরে প্রাসাদের গেলে হয় তিনি কর্তৃত্ব পাবেন নয়তো তাঁকে বন্দী করা হবে। আর মাত্র ১২ বয়সের একজন বন্দী প্রতিপক্ষ হওয়া মানে তিনি কারো জন্যই তেমন কোনো হুমকি না, তাঁকে মৃত্যদন্ড দেয়া হতে পারে। এতোসব অনিশ্চয়তার মাঝেও বাবর তাঁর পৈতৃক অধিকার অর্জনের জন্য ফারগানার দিকে যাত্রা অব্যাহত রাখলেন। তাঁর সাথে রয়েছে তাঁর বিশ্বস্ত সব আমীর আর তাঁর নেতৃত্ব মেনে নেয়া গোত্রপতিরা। বাবরকে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সহায়তা করলেন বাবরের নানীজান আয়েশা দৌলত বেগম। বিভিন্ন প্রতিকূলতা স্বত্বেও বাবর ১৪৯৪ সালের ৯ জুন ফারগানার সিংহাসনে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হলেন।(ছবিতে ফারগানার সিংহাসনে উপবিষ্ট সুলতান বাবর)

সমসাময়িক পৃথিবীতে কি হচ্ছে তা একনজরে দেখে নেয়া যাক। এই সময় দিল্লীর সিংহাসনে উপবিষ্ট আছেন ইব্রাহীম লোদির পিতা সিকান্দার শাহ লোদি। অন্যদিকে অটোমান সেনাবাহিনী দুর্ধর্ষ সব অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সুলতান দ্বিতীয় বায়েজিদের নেতৃত্বে অটোমানদের প্রবল প্রতিপত্তি আর ক্ষমতায় গোটা ইউরোপ গর্তে ঢোকা ইঁদুরের ন্যায় আচরণ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই কন্সটানটিনোপল জয় করে ফেলেছেন বিজয়ী সুলতান মাহমুদ। তিনি কন্সটানটিনোপলের নাম রাখলেন ইস্তাম্বুল। বাবরের সিংহাসন লাভের আর কয়েকমাস পরে, একই সালে অটোমান সাম্রাজ্যের ট্রাবজোনে আরেকটি শিশু জন্মগ্রহন করবে। যার নাম রাখা হবে সোলায়মান। বাবরের মতোই মহান আরেকটি সাম্রাজ্যকে নেতৃত্ব দিবে এই শিশুটি। পৃথিবী শিশুটিকে চিনবে “সোলায়মান দ্যা মেগনিফিসেন্ট” নামে। শিশুটি সত্যিকার অর্থেই ন্যায়পরায়ণ আর মহানুভব হবে।

Author: Masud Ferdous Eshan

#The_Mughal_Empire
#Rise_of_the_Mughals

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *