পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদের ক্রমবর্ধমান ব্যর্থতা আর হতাশার মুল কারণ নিয়ে অনেকদিন থেকেই লেখার ইচ্ছা ছিল।একটু বড় হয়ে গেল, এবং পড়ে কারও খারাপ লাগলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন-
এ যুগের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারী ফান্ডে (লিটারেলি পানির দরে) অধ্যায়ন্তরত ছাত্ররা সবাই কম/বেশি হতাশ। অত্যন্ত মেধাবী এই মানবসম্প্রদায় তুখোড় প্রতিযোগিতায় লাখো আপ্লিকেন্ট কে হার মানিয়ে তাঁদের এই অবস্থান নিশ্চিত করেছিল। আর পরাজিত দের জায়গা হয়েছিল ব্যায়বহুল প্রাইভেট ইউনিভারসিটি বা সরকারী কলেজে (যাদেরকে সাধারণত আমরা গুনায় ধরতে নারাজ)।কিন্তু চার বছর পরে এই মেধাবীদের ভবিষ্যৎ যখন অনিশ্চিত, সিস্টেম তখন নিশ্চয়ই ত্রুটিপূর্ণ………? তাইকি????
পাবলিক ভার্সিটির সিস্টেমটি একটু রিভিউ করা যাকঃ
বাংলাদেশে অফিসিয়ালি দুইটি সেমিস্টার চলে, প্রতিটি ১৩ সপ্তাহ করে। অর্থাৎ ২৬ সপ্তাহ অফিসিয়ালি শিক্ষা কার্যক্রম চলে আর ২৬ সপ্তাহ ছুটি। সেটি পিএল/সামার ভেকেশন/রমজান যে নামেই থাকুক না কেন!!! বিশ্বের যে কোন উন্নত জাতি এটিকে ৫০% সময় অপচয় বল্লেও আমরা জানি আমরা কতটা পেরা/ধকলের মদ্ধ্যে থাকি। এর পরে ফেটিগ কাটাতে অন্তত ৩২ সপ্তাহ ছুটি থাকা যথার্থ ছিল!! নয় কি?
এবার আসি ১৩ সপ্তাহের একটি সেমিস্টারের ধকলের হিসাবেঃ
তওই কৌশল বিভাগে এক সেমিস্টারের সর্বোচ্চ লোড (থিউরি+ল্যাব) ২১.২৫ ক্রেডিট বা ২১.২৫ ঘন্টা।একটু বারিয়ে ধরে নিলাম ২৫, না থাক ৩০ ঘন্টা (৪১% অতিরিক্ত)।
এবার আমরা জানি- সপ্তাহে ২ দিন ছুটি, সপ্তাহে ৫ দিন ক্লাস…
সুররাং প্রতিদিন ক্লাস =(৩০/৫)=৬ ঘন্টা [ধরি ৩ টি থিউরি ক্লাস (৩ ঘন্টা)+১টি ল্যাব (৩ ঘন্টা)]। তারমানে সকাল ৮ টা থেকে শুরু করলে দুপুর ১.১০ এর মদ্ধ্যেই (৪১% অতিরিক্ত ধরে নেওয়া) একাডেমিক কার্যক্রম শেষ।
১.১০-২.৩০ লাঞ্চ এর জন্য। প্রতিটি ল্যাবের একটি রিপোর্ট লিখতে হয়, যা লিখতে অন্তত ৩ ঘন্টা সময় লাগে (কপি করতে লাগে ২০ মিনিট). সুতরাং ২.৩০-৫ টা পর্যন্ত সময়টি লেগে যাবে ল্যাব রিপোর্ট লিখতেই! (এই হিসাবটি সপ্তাহে ৫ টি ল্যাব ধরে নিয়ে করা, কিন্তু বাস্তবে সপ্তাহে ৩ টির বেশি ল্যাব অনেক রেয়ার)
৫ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত খেলাধুলা/ঘুরাফেরা/রিলেক্স করার জন্য। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর গুরুত্ত অনস্বীকার্য.
এরপর আমরা জানি আর্লি টু বেড & আর্লি টু রাইজ…… সুররাং ১০ টায় বিছানায় যাওয়া জরুরী. সো হাতে সময় পাচ্ছি ৩ ঘন্টা (৭ টা-১০টা).
সপ্তাহে হাতে সময় পাওয়া যায় ৩*৫=৩৫ ঘন্টা + ২ দিন=???? আচ্ছা ২ দিন তো ছুটি ই! ওকে, সপ্তাহে ৩৫ ঘন্টা।
থিউরি মতে এক সেমিস্টারে এই ৩৫*১৩=৪৫৫ ঘন্টা (+১৪ দিন পিএল) পরাশুনার জন্য থাকার কথা ছিল।কিন্তু একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে কত কাজ করতে হয়, রাজনীতি করতে হয়, জুনিয়র দের ভদ্রতা শিখাতে হয়, হল কমিটি চালাতে হয়, হল টুর্নামেন্ট খেলতে হয়, কালচারাল প্রোগ্রাম করতে হয়, টিটি খেলতে হয়, কার্ড খেলতে হয়, বার্সেলোনা- রিয়েলমাদ্রিদ, আইপিএল, বিপিএল, ওয়াল্ড কাপ, ক্যাম্পাসের প্রতিটি হলের প্রিমিয়ার লিগ…… আরও কত কাজ……! ফেইসবুকের হিসাব বাদ ই দিলাম!
প্রতিদিনের এই ৩ ঘন্টা করে সপ্তাহে ৩৫ ঘন্টা যে কইদিয়ে চলে যায়, আমরা কখনো টেরই পাইনা! কিজে পেরার মধ্যে থাকি সারাটা সপ্তাহ, বাইরের লোকজন এগুলো বুঝবে না কোনদিনও!!! নয় কি?
কিছু পাবলিক অপিনিয়নঃ
কোনোএক প্রক্তন কুয়েটিয়ানের স্ট্যাটাস দেখেছিলাম, মালয়শিয়ার গিয়ে সে দেখতে পায় মানুষের হবি হচ্ছে বই পড়া। তাঁরা লাইব্রেরিতে পড়ে, বাসে জার্নির সময় পড়ে, রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময়ও পড়ে! ১০ মিনিটের একটি সুযোগ পেলেই স্মার্ট ফোনে বই পড়ে। তার কাছে জানার খুব ইচ্ছা ছিল, তাঁদের দেখে দেখে তুমি কইটা বই পরেছ?
আরেকজন কুয়েটিয়ান আমাকে বলেছিল, “লাইব্রেরী রাত ৮টার সময় বন্ধ হয়ে যায় দেখে সে পড়তে পারে না”। তাঁকে আমি একটি অনলাইন লাইব্রেরীর লিঙ্ক দিয়েছিলাম, http://gen.lib.rus.ec/ (যাতে কুয়েটের লাইব্রেরীর অন্তত ১০০ গুন বেশি বই আছে). তার কাছেও সেইম তথ্যটি জানার খুব সখ রয়েই গেল। যদিও এটি হয়ত অজানাই রয়ে যাবে! -_-
ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি হবে “3 Idiots” মুভির মতঃ
বাবা রঞ্ছর দাস ঠিকই বলেছিলেন, এক্সিলেন্স করতে পারলে সাকসেস তোমার পিছনে ছুটবে। তবে রিয়েল লাইফে রঞ্ছরের মতকরে কাউকে টিভি/ফ্রিজ খুলে ফেলতে বা জ্ঞান অন্বেষণ করতে কিংবা এক্সিলেন্সের পিছনে ছুটতে না দেখলেও প্রচুর ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার দেখতে পাওয়া যায়। বাট ওয়াইল্ড এর পর্যাপ্ত সাপ্লাই না থাকায় সুন্দরীদের ফটোগ্রাফি করি, সেটা ভিন্ন বিষয়। একবার শুধু ফটোগ্রাফিতে হিট করলেই হল, “মে খুশ রাহুঙ্গা আব্বা……”
কুয়েটের শিক্ষ্যা, শিক্ষক, সিস্টেমঃ
আমাদের অনেকেই রঞ্ছরের মত শিক্ষকদের শিখাতে চাই, “পারহাতে কেসে” বা “How to teach”। এটা মেনে নিতে আমার কোন আপত্তি নেই কুয়েটের শিক্ষকগন পড়াতে পারে না (কোন শিক্ষক আবার মামলা কইরেন না!গণতান্ত্রিক দেশে আমার বাক-স্বাধীনতা তো আছেই)! তবে MIT Open coursewire বা NPTEL বা coursera বা nanohub.org এসব ওয়েবসাইটে, যারা পড়াতে পারেন তাঁদের লেকচার দেখার মত সময় আমাদের মেধাবীদের কোথায়? সিস্টেমতো পেরা দিয়ে সময়গুলোকে কেঁড়ে নিয়ে জীবনটাই ধ্বংস করে দিল, আর বিশ্ববিদ্যালয়কে বানিয়ে দিল পতিতালয়!
পরিশেষেঃ
বিখ্যাত মাইকেলসন-মোরলে এক্সপেরিমেন্ট (আইন্সাইনের রিলেটিভিটি থিউরির সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে যেটি প্রমান করেছিল মহাজগতে কোন প্রমান প্রসঙ্গ কাঠামো নেই, সকল প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলোর বেগ সমান) এর সম্পূর্ণ সেটআপ টি বিজ্ঞানীগণ তৈরি করেছিলেন একটি ছুটির সময়ে।আর কুয়েটে (বাই থিউরি), দুই সেমিস্টারে আমরা ৪৫৫*২=৯১০ ঘন্টা পড়ার জন্য, ১৪*২=২৮ দিন পরিক্ষ্যা প্রস্তুতির জন্য পাই। আর ২৬ সপ্তাহ পাই ছুটি।তবে আমাদের করার মত অনেক কাজ আছে, আমরা বসে খাই না/সুধু সুধু সময় নষ্ট করি না। তাই এইসব ফালতু এক্সপেরিমেন্ট করা হয়ে উঠে না আরকি।
বাট, আমরা কিন্তু মেধাবী! চাইলেই এরকম কত শত করে ফেলে দিতে পারতাম!!! হতাশা শুধু একটাই, সিস্টেম আমাদের মত মেধাবীদের জীবন ধ্বংস করে দিল, বানিয়ে দিল ব্যাকলগার বা ড্রপআউট। তবে সিস্টেম তোমাকে বলে গেলাম, একদিন বিশ্ব জয় করে তোমাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেব ঠিকি। যাই হোক অত কঠিন বেপার আমি হাবারাম না বুঝলেও একটা বিষয় ঠিকই বুঝি, কেও তোমাকে বড় করে দিবে না। নিজের চেস্টাতেই মানুষকে বড় হতে হয়। একটি পথ সুগম না হলে আরেকটি দেখতে হয়, পথ খুজে না পেলে তৈরি করতে হয়।
সিস্টেমের দোষ দেওয়া অনেক সহজ, নিজে কষ্ট করে সাফল্যের আনন্দ ভোগ করাটা সত্যিই কঠিন। তবুও যদি সিস্টেমকে ত্রুটিপূর্ণ মনে কর, আগে বড় হউ। সবথেকে বড় হউ। তারপর সিস্টেমকে মেরামত কর। Otherwise no one really cares about you or your excuses. There is a will there’s a way. And not all dropout becomes steve jobs or bill gates. They became so because they made use of their time rather than giving excuses.
Courtesy : Nur K. Alam, Assistant professor at Khulna University of Engineering and Technology